Site icon খিচুড়ি

আমার নাম তোতা মিয়া

আমি অনেক বোকাসোকা মানুষ। তবে লেখাতে বেশ। মানুষ এটাই বলে। ইশ! যদি লেখার মতো হতে পারতাম। কি জানি কখনো হতে পারবো কিনা। মানুষ প্রায় পাগলও বলে। আমি পাগল? আসলেও? এইতোসেদিন রাস্তায় এক লোক জিগ্যেস করেছিলো।
-এ্যাঁই ছেলে! তোমার নাম কি?
-আমি বলি- তোতা মিয়া।
-লোকটা হো হো করে হেসে বললো-তাইলে ঠিকাছে। ব্যাক্তিত্বের সাথে নামটা মিলছে।
-বুঝলামনা ভাই।
-আপনি লুঙি,গেঞ্জি পরে এখানে হাঁটছেন কেনো? এই জাইয়গাটা হচ্ছে দর্শনীয় স্থান। কতো মানুষ আসে। আপানাকে তারা দেখছে আর হাসছে। হা হা।
-এইটা হাসির কি ভাই? আমি তো আর উলঙ্গ না। তাছাড়া আমায় দেখে মানুষ মজা পাবে এটা তো মজার বিষয়ই।
-ধুর পাগল। যা এখান থেকে।
লোকটা বকা দিয়ে চলে গেলো। আমি প্রায় সতেরো মিনিট ভাবলাম। তার বকা দেওয়া পিছনের হেতুটা খুঁজে পেলামনা। আমার মতো সব বোকারাই কি এভাবে সমাজের কাছে হেনস্তা হয়? কি জানি!সে যাক,বোকাই ভালো। মজা। বেশি দুঃখ নাই। তবে মাঝেমাঝে আমার দুঃখ হয় আমার আম্মা আমার প্রতি রাগ করেন। আমি নাকি বেশি লেখালেখি করি বলে বোকা রইলাম।

আমি অনেক গল্প লেখেছি। তবে এমন গল্প কখনো লেখেনি যে,একটা বোকা একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছে। হয়তো ভাগ্য এমন প্রেমের গল্পটা পরে লেখাচ্ছে। তাও আবার বাস্তব। আর সে বোকা আমি।
মেয়েটার নাম আলেয়া। পুরো নাম নিলীমা আক্তার। আমি আলেয়া বলি। আলেয়া নামটা আমার ভালো লাগে।
বাসা অনেকদূর না হলেও কিছুটা দূর। তাকে আগে চিনতামনা। তাকে দেখেছিলাম। রাস্তার একটা মোড়ে। রাস্তার নাম মনে নেই। ইদানীং আমার কোনো কিছুর নাম মনে থাকেনা।
প্রথমদিন দেখিছিলাম। সে হাঁটছে। আমার একটা বাজে স্বভাব। কোনো মেয়ে দেখলে,পা দেখি। নূপুর, পায়েল আছে কিনা। থাকলে, মনে মনে চোখটা বড় করে ফেলি। আর ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকি।
-এ্যাঁই, ছেলে। এভাবে নিচে থাকিয়ে আছো যে?
আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে চাই। এই নাগাত অনেক মেয়ের পা দেখেছি। কেউ কিছু বলেনি। আজ সে কিভাবে দেখে ফেললো কে জানে।
-কি? কথা বলছো না যে?
-না,মানে। আপনার নূপুরটা খুব সুন্দর।
-ফাজলামো করো? আমায় চিনো? একটা চড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো। ইডিয়েট কোথাকার!
-ইডিয়ট অর্থ আমি জানি। একটা বইয়ে পড়েছিলাম। আমি কি আসলেও ইডিয়ট? আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম-আপনার রাগ আছে? আমি না রাগ খুব ভয় পাই। আমার তেমন রাগ নাই।
-এখান থেকে গেলি? পাগল কোথাকার.!
-আচ্ছা আজ যাই আরেকদিন আবার দেখবো।
আমি আমার পথে হাঁটতে শুরু করি। বুঝা যাচ্ছে,মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে, অদ্ভুত তো!
কেমন করে কথা বললো!
এটা আমার কাছে নতুন না। প্রায় সবায়ই আমার সাথে কথা বলার পর এমন চিন্তা করে। আমার মনে হয়,আমার বোকা স্বভাব বলেই হয়তো এমন হয়।

°°°
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মেয়েটাকে একটা চিঠি লেখলাম। লেখাটা ছিলো-

“আমি আপনার নাম জানিনা। তাই অপরিচিতা।
তাই, অপরিচিতা!.
জানি আমি পাগল। সবাই তাই বলে। আসলে আমার তা মনে হয়না। আপনাকে আজ অত্যান্ত বিরক্ত করে ফেললাম। যেটা ঠিক হয়নি। আমি চাইও নি আপনি বিরক্ত হোন। আমি প্রায়ই মেয়েদের পা দেখি। কিন্তু, কেউ কখনো কিছু বলেনি। আসলে তারা দেখেইনি।
কিন্তু আপনি ধরে ফেললেন। আমি খুব দু:খিত। আর কখনো আপনার পায়ের দিকে তকাবোনা। তবে,সত্যি কথা আপনার নূপুরটা খুব সুন্দর। পা’র সাথে খুব মানানসই।
সে যাক,একটা কবিতা শুনাই। তবুও মাফ দেন। শুনেছি মেয়েরা কবিতা পছন্দ করে।

মাফ চাই আমি, ভুলের লাগি
দু:খ দেয়ায় অপরিচিতা
আপনি খুব সুন্দর চাঁদের মতো
জানেন আসলে কি তা?

ইতি,
ইডিয়ট নইতো পাগলা
(এটা লেখার পর অনেক চিন্তা করলাম। আসলে এই কবিতাটা কি দেয়াযোগ্য? সববাদে এটাই যুক্ত করলাম)

চিঠিটা শাদা ধবধবে কাগজে তুললাম। আমার হাতের লেখা খুব পঁচা। তবে লেখাগুলো খুব সুন্দর। আমার তাই মনে হয়। মেয়েটা আজেবাজে ফালতু কাগজ মনে করে না ফেলে দিলেই হলো। কতো কষ্ট করে লেখলাম।
ঘুমোতে গেলাম ঘুম এলোনা। শুধু মেয়েটির চেহারা চোখে ভাসছে। মেয়েটার ভালোবাসায় পড়ে যাচ্ছি না তো!.
প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টা পর আবিষ্কার করলাম,সত্যি সত্যি মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছি। আচ্ছা,একটা বোকা কি ভালোবাসতে পারে?

°°°
তিনদিন ধরে সে মোড়টায় গেলাম। তাকে পাইনা। লুঙির ভাজে চিঠিটা গুঁজে রেখেছি। আধ ঘণ্টা পরপর চিঠিটা হাতে নেই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে আবার লুঙিতে গুঁজে রাখি। চিঠিটা লুতলুতে হয়ে গেছে একটা কাগজে বেশি হাত দিলে এমনই হয়।
এদিকসেদিক হাঁটি। মেয়েটাকে কোথাও পাইনা। এখন ভালোবাসার অনেক সূত্র আবিষ্কার করতে পেরেছি। যেমন- দূরত্ব ভালোবাসা বাড়িয়েও তুলে।
মাঝেমধ্যে মনে হয়,আমি ভুলে আছি। এটা ঠিকা না। একটা বোকা ছেলে এতো সুন্দর মেয়েকে ভালোবাসতে পারেনা।
সেদিন লুঙিটা লুজ হয়ে গেছিলো। লুঙি ঠিক করার গেঞ্জিটা মুখ দিয়ে টেনে ধরে লুঙিটা ভাজ করলাম। সেদিকে চিঠিটা পড়ে গেছে। হাতে নিয়ে বা’দিকে হাঁটতে শুরু করি। মেয়েটাকে দেখতে পাই। এই এতোদিন পর দেখার অনুভূতিটা বলাবাহুল্য। আমি জোরসে হাঁটা দেই তার দিকে। তার সাথে দেখলাম কয়টা মেয়েও আছে।
-এ্যাঁই যে,আপনাকে ডাকছি।
-কে আপনি?
-ওইযে সেদিন আপনি বকা দিয়েছিলেন,ইডিয়ট। মনে আছে?
-ওও। আজ আবারও এলি কেনো? তোরা মেয়েদের পিছন চলা ছাড়া আর কিছু পারস?
-আসলে,আপনি যা যা বকছেন। এর কোনো কোটাতেই আমি পরিনা
যাক,এসেছিলাম,আপনাকে একটা চিঠি দিবো। প্লিজ। যদি ওইদিনের চড়টাও দিতে চান,দিবেন। তবুও চিঠিটা ফেলবেননা।
–আচ্ছা,দে। যা এখান থেকে।
-ভালো থাকবেন।
-একট মজার বিষয় লক্ষ্য করলাম। অন্য কেউ হলে বলতো- চিঠি কিসের? প্রেমের চিঠি? এটা সে বলে নাই। কি জানি, সে কী মনে করেছে। যাওয়ার সময় সাথের মেয়েগুলোকে বলছিলো- আরে এইটা পাগল। ওইদিনও…
এতটুকুই শুনতে পাই। কারণ তারা দূরে চলে যাচ্ছিলো সাথে সাথে শব্দরাও ছোট হচ্ছিলো..

°°°°

এই মূহুর্তে আমি মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। খুব ভয় হচ্ছে। রাগিদের আমি বরাবরই ভয় পাই। জুতাটা হাল্কা লেগে আছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় হুট করে ছিঁড়ে যেতে পারে। জুতা কেনার টাকাটা মাকে কিভাবে যে বলি-
-কি? জুতার দিকে কি দেখেন?
-আপনি একবার ‘তুই,আরেকবার আপনি’ আরেকবার কি তুমি করে বলবেন?
-চুপ!.বেশি কথা বলেন কেনো? চুপ।
-আচ্ছা।
-আপনাকে দেখে তো মনেহয় না বোকা।
আমি তার কথা টান দিয়ে বলতে থাকি- আমিও এটাই বলি। আমি বোকা না। তবে মানুষ,কিছু কিছু আচরণের জন্য এটা ডাকে। যেমন- আমি সবসময় লুঙি পরে থাকি। আমার প্যান্ট আছে। পরিনা। আর বোকার মতো এদিক সেদিক তাকিয়ে থাকি তো। তাই মানুষ এসব বলে। আর..
কিছু বলার আগেই সে ধমক দিলো-
-চুপ!.এতো কথা বলেন কেনো?
-আর বলবোনা।
-কেনো বলবেননা?
-আপনি না করেছেন,তাই।
-বাহ্। যাক,চিঠিটা ভালো ছিলো।
-জানি।
-আচ্ছা অন্যকেউ হলে তো অন্য রঙের কাগজ কিম্বা সাজিয়েগুছিয়ে সুন্দর করে দিতো। আপনি এভাবে দেন নাই কেনো?
-ভিন্ন জিনিষটা আমার পছন্দ। সাধারণত মানুষ যা করে তার বিপরীতের মতো করি। ভালো লাগে।
-তাও ঠিক।
-আপনি মানুষ ভালো। কি? চোখ বড় করছেন কেনো?
-এই প্রথম কেউ গুণ গাইলো। মজার বিষয়।
-আপনি হাত পিছনে রাখছে কেনো? এখানে পিটির মতো আরামে দাঁড়িয়েছেন?
আমি বললাম-এমনই তো মনে হচ্ছে। আচ্ছা সোজা দাঁড়াচ্ছি।
-বায় দ্য ওয়ে,আমার নাম নীলিমা। আপনার নাম?
-ইংরিজিটা বুঝিনাই। আমি ইংরেজি বুঝিনা। একটু বুঝি অবশ্যি।
-হা হা এটার অর্থ-সে যাক।
-ও, আচ্ছা। আমার নাম তোতা মিয়া।
-কি? তোতা?
-হুম। তোতা পাখি না আবার তোতা মিয়া।
-হা হা হা। মেয়েটা হো হো করে হাসছে। আমার খারাপ লাগছেনা। কারণ,আমার নাম শুনে সবায়ই হাসে। তাই এ পরিস্থিতির জন্য সবসময়ই প্রস্তুত থাকি।
-নামটা বদলাবেন। কেমন?
-না। অন্য নাম দিলে,কেউ হাসবেনা। এই নাম থাকলে হাসবে। হাসাটা আমার ভালোলাগে।
আপনি আমায় দেখে ডাক দিলেন। আমার সাথে বসে আলাপ করছেন এমন কখনো আমার সাথে হয়নি।
-তাই?
-আমি মাথা দুলালাম।
-সে যাক,আজ যাই। কাজ আছে।
-আচ্ছা। ভালো থাকবেন।
°°°°°

আজ সাত তারিখ!
রোজ মঙ্গলবার। ঘড়ির কাটা দুইটা চল্লিশ। সাড়ে তিনিটায় পোগ্রাম আছে। এখনো গাড়ি আসেনি। ফুয়াদ সাহেব বলে দিয়েছিলো দুইটার মধ্যে গাড়ি আপনার বাসার সামনে উপস্থিত থাকবে। এ যুগে মানুষের কথার ইস্টিশন থাকেনা। মুখ ফচকে যা পারে বের করে দেয়, কথাটা কতটুকু সত্য তার বিচার করেনা।
লেখতে বসি। হুট করে লেখতে বসার অভ্যাস হয়েছে,প্রায় নয় বছর আগ থেকেই। লেখালেখিতে নীলিমার সাথে কথা বলি। এ বিষয়টা খুব মজার। যখনই ইচ্ছা হয়। তখনই কল্পভাবে তার সাথে কথা বলি। যেমন এখন কথা বলছি এ বিষয় নিয়ে-
-আলেয়া!.
-নামটা খুব সুন্দর।
-জানি বলেই তো তোমায় ডাকি।
-হা হা।
-জানো? গাড়ি এখনো আসছেনা। ইচ্ছে হচ্ছে নিজের গাড়ি করেই চলে যাই। কিন্তু ফুয়াদ সাহেবের কথা রাখতে চাচ্ছি।
-অপেক্ষা করো। সমস্যা কি?
-হা হা। সে ফাঁকে তোমার সাথে কথাও হয়ে যাচ্ছে।
-হয়ে যাচ্ছে না। তুমি কথা বলাচ্ছো যেমন- তুমি যদি এখন লেখো। আলিয়া চলে যাও। আমার চলে যেতে হবে। তোমার কল্পনায় আমাকে বানিয়েছো। এখন তোমার হাতের ইশারায় চলতে হয়।
-হা হা। মনে আছে? সেদিন দেখা করার পর থেকে কই যে হারালে,তোমাকে আর খুঁজে পাইনি। অথচ তোমায় খুব ভালোবেসেছিলাম।
-হা হা।
-তুমি শুধু হাসতেই জানো? আর কিছু পারোনা?
-এটা তুমি হাসাচ্ছো। যদি লেখো যে সে কেঁদে দিলো। তাহলে আমার কাঁদতে হবে। তোমার কলমে আমি বন্দী।
-এটা কি খারাপ করেছি?
-নাহ। খারাপ করবে কেনো? আমার বাস্তবটা না হয় হারিয়েই গেলো। আমি তো তোমার কল্পনায় আছি। এটা কি বেশি নয়?
-সে যাক। জানো? এই অনুষ্ঠানটা কিসের? .
-না। জানাও আমাকে।
-এটা হচ্ছে আমার বই মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠান। একটা বইয়ের কথা আগেও বলেছিলাম। মনে আছে? বইয়ের নাম-নীলিমা।
-বাহ্। আমায় নিয়ে অনেকগুলো বই লেখে ফেললে।
-সব উপরওয়ালার ইচ্ছা দেখেছো? তিনি আমাকে কতো উঁচু করেছেন আজ?
-হুম। জানি।
-সে ফুয়াদ সাহেব, যদি আমার জীবনে না আসতো তাহলে আগেরই রইতাম। হা হা।
-হা হা।
-হাসো কেনো?
-তুমিই তো হাসাচ্ছো।
-জানো? আমার না অনেক স্বপ্ন ছিলো। এভাবে একটা লেখক হবো। অনেক বড় লেখক। সব মানুষ চিনবে। জানো? যারা যারা আমাকে ন’বছর আগে বকেছিলো। তাদের সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছা করে।
-ওহ্
–জানো? ফুয়াদ সাহেবের প্রকাশনীটাও অনেক ভালো। আমার সব বই’ই তার এখানে বের করেছি। অবশ্যি,বড় বড় প্রকাশনীরাও ডাকছে। যাচ্ছিনা,আপাতত।
-ওহ।

লেখার মাঝেই ফুয়াদ সাহেব ফোন দেয়।
-কই? গাড়ি তো পাঠালাম। দেরি হচ্ছে কেনো?
-ওও। গাড়ি হয়তো নিচে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি কি আবারো রহিম সাহেবকে পাঠিয়েছো?
-হ্যাঁ, সে ড্রাইভ করবে।
-হায় খোদা!.সে এতো ভীতু কেনো? আমায় নাকি খুব সম্মান করে তাই আমাকে বেশি ডাকেওনা। কি মানুষ। আচ্ছা,ফোন রাখো। আমি আসছি।
ফোন কেটে দিলো।

আমি আবার লেখটায় কলম লাগালাম।
–আলেয়া,যাই?
–যাও।
দুআ রাখবে। কেমন?
-আচ্ছা।

নিচে গিয়ে দেখি- রহিম সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে বললাম। আসো,তাড়াতাড়ি আসো। দেরি হয়ে যাচ্ছে।

Exit mobile version