ছোট্ট চড়াইয়ের মন খারাপ। বজ্জাত ইঁদুর টা রোজ হানা দিচ্ছে বাসাতে। ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে বাসাটা। যতবার চড়াই তার বাসা গড়ুক, ততবারই ইঁদুর এসে লন্ড ভন্ড করে দিচ্ছে সব। চড়াই কি আর ইঁদুরের সাথে পেরে উঠে। ইঁদুরের যে দাঁড়ালো দাঁত আছে। সেই দাঁতের শক্ত আঁচড়েই তো গত সপ্তায় চড়াইয়ের বাপ মা মরলো। তখন সবে পাখনা মেলে উড়তে শিখেছে সে। তাই সারাদিন একা একাই এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগতো তার। মাঝে মাঝে রাতের বেলাও বাসায় ফিরতো না। উড়ে বেড়াতো আপন মনে খোলা আকাশের নিচে।
সেদিনও এমন একটি রাত ছিল, যেদিন চড়াই বাসায় প্রথম হানা দিল ইঁদুর দল। চড়াই কর্তা আর চড়াই বউ তখন বাসায় ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ আক্রমণে তাই উড়ে পালাবার সুযোগ পেলোনা তারা। চতুর্দিক থেকে চারটি ইঁদুর এমনভাবে কামড়ে ধরলো যে একবারেই ডানা ভেঙে গেলো। তবু শেষ পর্যন্ত লড়াই করেই যতক্ষণ পারলো, টিকে থাকলো। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলোনা। ইঁদুর নেতা চিরিৎ এর ঘাড়ে কামড়ের বিষেই মরতে হলো তাদের।
সকাল বেলা সারা রাত আকাশ ঘুরে ছোট্ট চড়াই টা যখন বাসায় ফিরলো, আকাশ ভেঙে পড়লো মাথায়। বাবা মা দুজনের রক্তাক্ত মৃত দেহই যে লুটিয়ে আছে সেখানে। তার উপর কারোই দেহে মাথা নেই।
এ দৃশ্য দেখে ছোট্ট চড়াইটা খুব কষ্ট পেলো। কিন্তু কিইবা করার ছিল তার। তার এই ছোট্ট পাতলা দেহ নিয়ে তো আর ইঁদুরের সাথে পেরে উঠবে না। তাই সে আপাতত কিছু করার চিন্তা বাদ দিয়ে বাবা মার মৃত দেহকে সৎকার করলো। এরপর চোখের জলে লোম ভিজিয়ে সারারাত বাসায় কান্না করলো। কিন্তু সেই কান্নার আওয়াজও রাতের অন্ধকারের পর্দা ভেদ করে কারো দৃষ্টিগোচর হলো না।
পরদিন সকালে খাবার সন্ধানে বাইরে বের হতে হলো ছোট্ট চড়াইকে। তখন এক খোলা মাঠে অন্যান্য চড়াই ও পাখীর সাক্ষাৎ ঘটে তার। সব কথা শুনে সবাই সেদিন প্রতিশোধ নেওয়ার পরামর্শ দিল। কিন্তু ছোট্ট চড়াইটা কি মনে করে যেন সবাইকে না করে দিল।
এরপর থেকে অন্যান্য চড়াই ও পাখীরা তেমন একটা ভালো চোখে দেখতো না তাকে। সবাই কেমন দেখলেই মুখ ভেঙ্গচিয়ে চলে যেতো। এতে ছোট্ট চড়াই মনে কষ্ট পেলেও কারো কাছে শেয়ার করতে পারতো না।
একদিন তাই সে সিদ্ধান্ত নিল পুরনো বাসাটা ছেড়ে দিয়ে নতুন বাসা নেবে। নিলোও তাই। পেলো অনেক নতুন বন্ধু। শুধু পেলো না ইঁদুরের উৎপাৎ মুক্ত একটি নিরাপদ বাসা।