গাছপালা সবুজ হয় কেন? আসলে গাছের মধ্যে ক্লোরোফিল নামক এক ধরণের সবুজ পদার্থ থাকায় গাছপালা সবুজ হয়। এই ক্লোরোফিলের একটা চমৎকার গুণ হচ্ছে সূর্যের আলোর সাহায্যে বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে দুই ভাগে ভাগ করা। এক ভাগে থাকে কার্বন, আরেক ভাগে থাকে অক্সিজেন। কার্বন দিয়ে গাছ তার খাদ্য তৈরী করে আর অক্সিজেনটুকু বাতাসে মিশে যায়।
অসবুজ গাছপালাও পৃথিবীতে আছে। ক্লোরোফিল না থাকার কারণেই এদের রঙ সবুজ হয় না। এরা নিজেদের খাবার তৈরী করতে পারেনা। এ ধরণের উদ্ভিদকে বলা হয় ফাঙ্গাস। এরা নিজেরা খাবার তৈরী করতে পারে না বলে অন্যের তৈরী খাবারের সাহায্যে বেঁচে থাকে। অধিকাংশ ফাঙ্গাসই খুব ছোট। খালি চোখে দেখা যায় না। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে হয়। তবে বড়ও আছে। যেমন- ব্যাঙের ছাতা।
ঘরে বসে তুমি ফাঙ্গাস সৃষ্টি করতে পারো। এক টুকরো পাউরুটিকে ভেজা খবরের কাগজ বা নিউজপ্রিন্টের উপর রেখে ঘরের এককোণে রেখে দাও। এটাই ফাঙ্গাস চাষের উপযুক্ত জমি। একটা পুরনো ময়লা ন্যাকড়া রুটির ওপর ঝেড়ে নাও। এটার মধ্যে ফাঙ্গাসের বীজ থাকবে। এবার রুটিটাকে একটা প্লেট দিয়ে ঢেকে অন্ধকারে রেখে দাও।
এবার একটা আতশিকাঁচ যোগাড় করতে হবে। প্রতিদিন প্লেট সরিয়ে আতশিকাঁচ দিয়ে রুটির টুকরাটা পরীক্ষা করো। দু’তিন দিনের মধ্যে দেখতে পাবে রুটির উপরটা কালচে রঙের একধরনের পশমের মত জিনিসে ভরে গেছে। কাচের ভেতর দিয়ে দেখতে পাবে সরু সরু গাছের মত এরা দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকেরই গোল গোল মাথা রয়েছে। এই মাথাগুলো লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা ইত্যাদি চমৎকার রঙের হয়। এগুলো পাকলে ফেটে গিয়ে ধুলোর মত অসংখ্য বীজ বের হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
পুরনো দেয়ালে, বাড়িতে, ছাদে, পাহাড়ে পর্বতে, সবুজ কার্পেটের মত এক ধরনের ফাঙ্গাস জন্মে, এদেরকে মস বলা হয়। এরা দালানকোঠার ভীষণ ক্ষতি করে। আরেক ধরণের ফাঙ্গাস আছে, যাদের বলা হয় ফার্ণ। এগুলো দেখতে সুন্দর বলে টবের মধ্যে চাষ করা হয়। অনেক দেশে সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়। ব্যাঙের ছাতা তো পৃথিবীর অর্ধেকের বেশী দেশে জনপ্রিয় খাদ্য। এগুলো দেখতে যেমন সুস্বাদু তেমনই পুষ্টিকর। পাউরুটি বানাতে যে ঈস্ট ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু এক ধরনের ফাঙ্গাস। পনির, মদ, দই ইত্যাদি খাবার তৈরীতেও ফাঙ্গাস সাহায্য করে থাকে। ফাঙ্গাস থেকে মূল্যবান ওষুধ তৈরী হয়। যেমন- পেনিসিলিন।
ফাঙ্গাস আমাদের কিছু ক্ষতিও করে। আলুর মড়ক, আখের লাল পচা রোগ,ইত্যাদি ফাঙ্গাসেরই কান্ড। তবে ক্ষতির তুলনায় উপকারের পরিমাণ এত বেশী যে, ফাঙ্গাসের ওপর রাগ করাটা মোটেও ঠিক হবে নয়।
ফাঙ্গাসের কথা
Loading books...