Site icon খিচুড়ি

উইলিয়াম হার্ভেঃ চিকিৎসা শাস্ত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

চিকিৎসা বিজ্ঞানে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির নাম মনে করা হলে প্রথম সারিতেই উঠে আসবে ‘উইলিয়াম হার্ভে’ নামে এক ব্যক্তির নাম। মানুষের দেহ আর দেহের বিভিন্ন রোগ নিয়ে যারা গবেষণা করে গেছেন তাদের মধ্যে উইলিয়াম হার্ভে অন্যতম। মানবদেহে রক্তের সঞ্চালনপ্রক্রিয়া প্রথমবারের মতো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন ব্রিটিশ শারীরতত্ত্ববিদ উইলিয়াম হার্ভে।

আজ এই বিখ্যাত মানবের জন্মদিন। ১৫৭৮ সালের ১ এপ্রিল অর্থাৎ আজকের এই দিনে লন্ডনের ‘ফোকস্টনে’ উইলিয়াম হার্ভে জন্মগ্রহণ করেন। ইংল্যান্ডের কিংস স্কুলে তার শিক্ষাজীবনের শুরু। তারপর ১৫ বছর বয়সে তিনি ক্যামব্রিজে ভর্তি হোন এবং সেখান থেকে তিনি স্নাতক শেষ করেন। তারপর পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টর অফ মেডিসিন ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর ইচ্ছা ডাক্তারি, গবেষণা ও অধ্যাপনা তিনটিই একসঙ্গে করার। সেই চিন্তার ধারাবাহিকতায় ১৬০৭ সালে ক্যামব্রিজের চিকিৎসাবিদ্যার কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন উইলিয়াম হার্ভে। এরপর বার্থোলোসিও হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন।

এরপর তিনি মানুষের হৃৎপিণ্ড ও তার ক্রিয়া নিয়ে বেশ চিন্তাভাবনা শুরু করেন। হৃৎপিণ্ডের কথা ভাবার সাথে সাথে রক্ত চলাচলের ব্যাপারেও ভাবতে থাকলেন। উইলিয়াম হার্ভের জন্মের ১,৪০০ বছর আগে ইতালির রোমে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতেন গ্যালেন। তখন তিনি মানবদেহে রক্ত সঞ্চালনের একটি তত্ত্ব দাঁড় করান, যা ছিল ভুলে ভরা। একেবারেই সঠিক নয় যে তাও না, আংশিক সত্য বলা যেতে পারে। গ্যালেনের দেয়া ধারণাটি ছিলো, খাদ্যকণা হৃৎপিণ্ডের সংস্পর্শে এসে রক্তে পরিণত হয়। হৃৎপিণ্ড রক্তকে উষ্ণ করে। ধমনী ও শিরায় রক্তের জোয়ার-ভাটা হয়। সে সময় রক্ত হৃৎপিন্ডে যায় আর হৃৎপিন্ড থেকে নেমে আসে। এরপর হার্ভে রক্ত চলাচল নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করলেন এবং নয় বছরের গভীর গবেষণার পর অবশেষে তিনি প্রমাণ করলেন আগের সব ধারণা বেশিরভাগই ভুল। উইলিয়াম হার্ভে প্রমাণ করলেন, শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত শিরা পথে হৃৎপিণ্ডে আসে এবং হৃৎপিণ্ড থেকে ধমনির মাধ্যমে বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয়। হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৭২ বার স্পন্দিত হয়। প্রতি মিনিটে হৃৎপিণ্ড এক গ্যালনেরও বেশি পরিমাণ রক্ত সঞ্চালন করে। রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে একমুখি গতি নিয়ে পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে আবার হৃৎপিণ্ড ফিরে আসে; এই কথাগুলো আজ সবারই জানা। উইলিয়াম হার্ভে বুঝতে পারেন, হৃৎপিণ্ড আসলে বিশেষভাবে তৈরি একখণ্ড মাংসপেশি, যা প্রয়োজন মতো সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হতে পারে। সঙ্কুচিত অবস্থায় হৃৎপিণ্ডের ভেতরে থাকা রক্ত শিরার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসে পুরো দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই সঙ্কুচিত অবস্থায় হৃৎপিণ্ডকে ফ্যাকাসে দেখায় আর প্রসারিত হৃৎপিণ্ডকে লালচে দেখায়। কারণ তখন সেখানে রক্ত থাকে। রক্তের গতিপথও আবিষ্কার করেন বিখ্যাত এই চিকিৎসাবিজ্ঞানী। উইলিয়াম হার্ভের পর্যবেক্ষণের মূল কয়েকটি বিষয় ছিলো-

 

উইলিয়াম হার্ভের এই পর্যবেক্ষণ পুরোটাই গ্যালেনবিরোধী ছিলো। কিছুদিনের মধ্যেই এই খবর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে তাঁর এই ব্যাখ্যা কেউ মেনে নেয় নি। তাঁর এই ব্যাখ্যাকে লন্ডনের হাতুড়ে ডাক্তাররা বদ্ধ উন্মাদের প্রলাপ হিসেবে আখ্যা দেয়। ১৬২৮ সালে মানবদেহে রক্তপ্রবাহের প্রক্রিয়া নিয়ে ‘অ্যান অ্যানাটমিক্যাল এক্সারসাইজ অন দ্য মোশন অব দ্য হার্ট অ্যান্ড ব্লাড ইন লিভিং বিয়িংস’ নামে হার্ভের একটি বই প্রকাশিত হয়। ৭২ পৃষ্ঠা ও ১৭টি অধ্যায়ের বইটিতে তিনি মানবদেহে রক্ত চলাচলের সম্পূর্ণ নতুন ও যুগান্তকারী ধারণা প্রকাশ করেন। বই প্রকাশের পর বিরূপ সমালোচনা হলেও কেউ তাঁর গবেষণাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেননি। চিকিৎসকরাও আন্তরিকতার সঙ্গে বইটি গ্রহণ করেছিলেন। তারই সূত্র ধরে ১৬৫৪ সালে উইলিয়াম হার্ভেকে রয়্যাল সোসাইটির সভাপতি পদে মনোনীত করা হয়। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি তা গ্রহণ করতে পারেননি। ১৬৫৭ সালে প্রায় ৮০ বছর বয়সে উইলিয়াম হার্ভের মৃত্যু হয়।

চিকিৎসাশাস্ত্র  ও শরীরবিদ্যা তার কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবে।

যে বইগুলো কিনতে পারেন ডিস্কাউন্ট রেটে থেকে:

Loading books...
Exit mobile version