১৯৫৭ সালের ৩রা এপ্রিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফ ডি সি) গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই দিনকে স্মরণ করে ২০১২ সালে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন করা হয়। এরপর থেকে প্রত্যেক বছরের এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয়। একাধারে ৩রা এপ্রিল কে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবেও পালন করা হয়।
এফডিসি কেন্দ্রিক সিনেমা একসময় জমজমাট থাকলেও সে শিল্প আজ ধ্বংসের পথে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সুস্থ পরিবেশ গঠনে চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলেও আমাদের দেশে বর্তমানে চলচ্চিত্রের সে অবস্থা নেই। এফডিসি কেন্দ্রিক যেসব সিনেমা তৈরি হচ্ছে তাঁর বেশিরভাগই মানসম্মত নয়। বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই নির্মিত হচ্ছে ব্যবসায়িক চিন্তা মাথায় নিয়ে। অথচ চলচ্চিত্রগুলো সেভাবে ব্যবসাও করতে পারছে না; আবার এগুলো থেকে দর্শকরাও ভালো কিছু আহরণ করতে পারছে না। তাই একে একে সিনেমাহলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, আজকের জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস পালনের গুরুত্ব অনেক।
আমাদের এই বাংলাদেশ ভূ-খন্ডের চলচ্চিত্রের ইতিহাস অনেক পুরোনো। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) ১৮৯০ এর দশকে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০০ এর দশকে নির্বাক এবং ১৯৫০ এর দশকে সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন শুরু হয়। এখানকার সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে চলচ্চিত্রের প্রায় ৫০ বছর সময় লেগেছিলো। ১৯৫৪ সালে এই ভূ-খন্ডে প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। ১৯৫৯ সাল থেকে প্রতি বছরই এদেশে বিপুল পরিমাণ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে আসছে। এই ধারা অব্যাহত আছে এখনও। তবে চলচ্চিত্রের সেই সময়কার মতো সুদিন এখন আর নেই। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে এদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো শিক্ষা, তথ্য বিনোদন তথা সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিষয়ের জন্য দর্শকদের মন জয় করে আসছে। মহান ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান কিংবা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিককে আজও অনুপ্রাণিত করছে যে কোনো ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে। এর বাইরেও সমাজসচেতন মূলক অনেক চলচ্চিত্রই নির্মিত হয়েছে যেগুলোর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। এখন যেসব চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, তার মধ্যে হাতে গোনা দুয়েকটার নাম উল্লেখ করা যায়, যেগুলোতে নির্মাতাদের মেধা ও মননের ছাপ রয়েছে।
আমাদের এই মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রশিল্পকে জাগিয়ে তুলতে হবে। ভালো গল্পের, সুস্থ চিন্তাধারার সিনেমা তৈরি হলে মানুষ হলমুখী হবে এতে কোনোপ্রকার সন্দেহ নেই। যথাযথ শিল্পমান এবং কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন সিনেমা তৈরি হলে দর্শকরা দেশীয় সিনেমার দিকে ঝুঁকবে। আর সেজন্য সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববোধ খুব পরিমাণ প্রয়োজন। মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গেরা যদি সিনেমা শিল্পে মনোনিবেশ করেন তাহলে ভালো আউটপুট বের হওয়া সম্ভব এই শিল্প থেকে।
আজ জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে সচেতন নাগরিক হিসেবে সবার একটাই চাওয়া হোক- “চলচ্চিত্র হোক নির্মল বিনোদন, সুস্থ মানসিকতা বিকাশের মাধ্যম।”