Site icon খিচুড়ি

বিছানাকান্দি : দূর্গম এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান

বিছানাকান্দি বাংলাদেশ সীমান্তের এক অনিন্দসুন্দর দর্শনীয় স্থান। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা হিমশীতল জলের প্রবল স্রোত বয়ে চলেছে থরে থরে সাজানো পাথরের উপর দিয়ে। বিছানাকান্দি ভ্রমনের সর্বোত্তম সময় বর্ষাকাল।

বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আগে সিলেট পৌছাতে হবে। এর পর আপনার পৌছাতে হবে আম্বরখানা পয়েন্টে। আম্বরখানা পয়েন্টে রয়েছে হযরত শাহ্জালাল রহমতুল্লাহ্ (আ:) এর মাজার। চাইলে মাজার ঘুরে বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে রওনা হতে পারেন। আপনি যদি আমার মত সাধারণ ভ্রমণ পিপাসু হন এবং যদি আপনার নিজস্ব যানবাহন না থাকে তবে আপনাকে আম্বরখানা হতে সিএনজিতে বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে যেতে হবে।কারণ, বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য বাস বা অন্য কোন যানবাহনের ব্যবস্থা নেই। সিএনজি ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে। তবে সময় বিশেষে ১২০০ পর্যন্ত হতে পারে। ২০০০ টাকা চেয়ে বসলে ভরকে যাবেন না। ভাড়া মিটিয়ে নিবেন ভালো করে।
এরপর বিছানাকান্দি যাওয়ার পথে আপনার চোখে পড়বে রাস্তার পাশে মালিনিছড়া চা বাগান,কমলার বাগান। চাইলে সি.এস.জি থামিয়ে ঘুরে নিতে পারেন। বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত রাস্তা খুবই ভালো। এরপরের রাস্তা পাথর নিয়ে ট্রাক চলাচলের কারণে প্রায়ই বেহাল হয়ে যায়। আম্বরখানা থেকে বিছানাকান্দি প্রায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের পথ।

গোয়াইনঘাট পর্যন্ত হাওর অঞ্চলের চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে আসবেন

আম্বরখানা থেকে গোয়াইন ঘাট- হাদার বাজার হয়ে যেতে হয় বিছানাকান্দি। গোয়াইনঘাট পর্যন্ত হাওর অঞ্চলের চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে আসবেন।
গোয়াইনঘাট এর পর রাস্তা প্রচন্ড রকমের খারাপ। কোথাও উচু-কোথাও নীচু। কিন্তু রাস্তা বাঁক নিতেই দৃশ্যপট পাল্টায় ওই দূরে উকি পাহাড়। প্রথম দেখায় ভাবতে পারেন এটা তো মেঘেরই অংশ।
পাহাড়ের মধ্যে দূর থেকে দেখা যায় মায়াবতী ঝর্না। দেখে মনে হতেই পারে যেনো এক শিল্পকর্ম।
হাদার পাড় বাজার থেকে নৌকা নিয়ে যেতে হয় বিছানাকান্দি। নৌকায় প্রায় ৪০-৫০ মিনিটের পথ।প্রতি নৌকার ভাড়া প্রায় ৮০০-৯০০ টাকা। তবে দিনদিন বিছানাকান্দি এর কথা মানুষের কাছে পৌছাতে শুরু করেছে। ১২০০ – ১৫০০ দর হেকে মাঝিরা বসে থাকতেই পারে।তাই দর-কষাকষি আপনার নিজস্ব দায়িত্ব। যেতে যেতে দেখবেন নদী থেকে পাথর তোলার দৃশ্য, সাধারণ মানুষের জীবণ সংগ্রাম, মেঘালয় এর পাহাড়্গুলো। মেঘ আসছে ভেসে ভেসে… ভীনদেশী মেঘ…

ঝুলন্ত সেতু পাড় হলেই চলে যাওয়া যায় মেঘালয়। তারপরেই ‘শেষের কবিতার’ শিলং। কষ্টকর যাত্রার ক্লান্তি নিমিষেই চলে যাবে পাহাড়ের হাতছানিতে। মেঘে ঢাকা পাহাড় যেন ডাকছে। কিন্তু অদ্ভুত এক কাটাতারে যে আমাদের পা বাধা। র‍্যাডক্লিফ সাহেবের এক কলমের দাগে পাহাড়গুলো যে আমাদের পার্শবর্তী দেশের……

চারদিকে মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকা পাহাড়, ঝর্ণা বেয়ে নেমে আসা হিমশীতল পানি, আর পাথুরে মনোরম পরিবেশ। এই প্রকৃতির কাছাকাছি আসলে নিজেকে বড় ক্ষুদ্র ও অপান্তেয় মনে হয়।

Exit mobile version