ইশা।নবম শ্রেণীর ছাত্রী।পড়ে শহরের এক নামকরা বালিকা বিদ্যালয়ে।ছোটবেলা থেকে শহরের পরিবেশেই বড় হয়েছে সে।তাই যথেষ্ঠ মডার্ণ বলা চলে তাকে।রূপেও কম নয়!যে একবার দেখে,তারই মাথা ঘুরে যায়!আর এ সুযোগটাই কাজে লাগায় ও।ছেলেদেরকে ছাগল ছানার মত পেছন পেছন ঘুরিয়ে মজা লুটে।বালিকা বিদ্যালয় বলে ক্লাশে থাকাকালীন সুবিধা হয়না।তবে আসা যাওয়ার পথে দেখা যায় তার রূপের মহরত।এমনভাবে হাঁটে,বুড়োরা পর্যন্ত যৌবন ফিরে পেতে চায়।নেশা ধরে যায় মনে।চরম নেশা!এ নেশা সহজে ছাড়েনা।কাজেই মাতাল হয়ে পাড়ার বখাটে ছেলেরা বাজে মন্তব্য ছুঁড়ে তার দিকে।কোথায় তাতে রাগ করবে সে,তা নয়! বরং উষ্ণ ছেঁকা দিয়ে যায় চোখ মেরে!কাজেই ছেলেরা উত্সাহ নিয়ে আরো লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ওর চলার পথে।মেয়ের সব কীর্তিই জানেন বড়লোক বাবা-মা।কিন্তু শাসন করাতো দূরের কথা,একটু জোরে কথাও বলেননা তারা।যদি মেয়েটা কষ্ট পায়!পাঁচটা না,দশটা না একটা মাত্র মেয়ে তাদের!ফলস্বরূপ দিন দিন ইশার ঔদ্ধত আরো বেড়ে যায়।
একদিন ইশা তার কয়েকজন বান্ধবীদের নিয়ে ক্লাশে বসে তার মোবাইল ফোন থেকে কি যেন একটা দেখছে।আর চরম পুলক অনুভব করছে।তখনো ক্লাশ শুরু হতে মিনিট বিশেক বাকি।এসময় ক্লাশে ঢুকল জেরিন।সবাইকে গোল হয়ে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল সে।ঘটনা কি দেখার জন্য যেই উঁকি দিল,হতবাক হয়ে গেল সে!ছিঃ!কিসব দেখছিস তোরা!তোদের এতটুকু লজ্জা নেই!ক্লাশে বসে এসব দেখছিস!ক্ষাণিকটা উত্তেজিত হয়ে উঠল সে।এসময় বাইরে থেকে একজন টিচার শোরগোলের আওয়াজ পেয়ে ক্লাশে এসে ঢুকল।ঢুকেই জানতে চাইল-কি হয়েছে?ইশাকে কিছু একটা লুকাতে দেখে টিচার বলে উঠলেন,কি লুকাচ্ছ ইশা?-কিছুনা ম্যাম!-কিছুনা বললেই হল,আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছ!এবার ভয় পেয়ে গেল ইশা!ম্যাম একটা ধমক দিতেই,বের করে দেখাল সেল ফোনটা।ম্যাম ফোনটা হাতে নিয়ে বললেন,তোমাদেরকে না নিষেধ করা হয়েছিল ক্লাশে সেল ফোন আনতে!ইশা কিছু বললনা।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।বাকিরাও চুপচাপ।এসময় ম্যাম জানতে চাইল-এখানে সেল ফোন নিয়ে কি হচ্ছিল?কেউ কিছু বললনা।ম্যাম ফোনটার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলেন!সাথে সাথে সুইচ অফ করে রেগে গিয়ে চড় বসিয়ে দিলেন ইশার গালে।এরপর ফোনটা মাটিতে আছরে ভেঙে দিয়ে বললেন,তোমরা জাতির ভবিষ্যত।আর তোমাদের কিনা এতটা অধঃপতন!ছিঃ!আমার গা ঘিন ঘিন করছে তোমাদের দেখে। দাঁড়াও!আজ এর একটা হ্যাস্ত ন্যাস্ত করে তবেই ছাড়ব।কথাগুলো শুনিয়ে বেশ চোটপাট দেখিয়ে ম্যাম বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।বিচার দিলেন হ্যাড ম্যামের কাছে।কিন্তু বিচারে কিছুই হলনা ইশার।উল্টো সেল ফোন নষ্টের দায় নিয়ে চাকরি হারাতে হল অভিযোগকারি ম্যামকে।কারণ এ স্কুল চলে ইশার বাবার অনুদানের টাকায়।
সেদিনের সেই ঘটনার পর থেকে জেরিনের উপর চরম ক্ষেপে আছে ইশা।তাকে একটা শিক্ষা না দেয়া পর্যন্ত মোটেও শান্তি পাচ্ছেনা সে।তাই একদিন জেরিনকে পটিয়ে তার সাথে কিছু ছবি তুলল স্মৃতিচিহ্নের কথা বলে।সরল প্রাণ জেরিন বুঝতে পারলনা ওর কুটচাল।কিছুদিন পরে সারা এলাকায় ছড়িয়ে গেল জেরিন একটা বাজে মেয়ে।তাকে নিয়ে ইন্টারনেটে নাকি কিসব বেরিয়েছে।স্কুল থেকে বহিস্কার করা হল তাকে।সবাই ছিঃ ছিঃ করে আঙ্গুল তুলল ওর দিকে।ফলে ঘর থেকে বেরুনো বন্ধ হয়ে গেল তার।সে অনেক করে বুঝালো যে,এসবের কিছুই জানেনা ও।তবুও কেউ শুনেনি তার কথা।এমনকি তার পরিবারের লোকেরাও।ফলে অভিমান করে একদিন নিজের ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে সে।এভাবেই সকলের মিথ্যাচার আর ইশার কুটচালে ঝরে যায় একটি নিষ্পাপ তাজা প্রাণ।
ওদিকে জেরিনের মৃত্যুতে উল্লাস করে ক্লাবে পার্টি দেয় ইশা।গভীর রাত পর্যন্ত হৈ হুল্লোর করে যখন বাড়ি ফিরে,তখন অর্ধমাতাল সে।কোনরকমে তাওড়াতে তাওড়াতে নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।ইশাকে এ অবস্থায় দেখে টনক নড়ে মায়ের।তিনি ভাবতে পারেননি আদরে আদরে মেয়েটা এতটা বৈদর হয়ে যাবে।পরদিন সকালে ১০ টা বেঁজে গেলেও ইশাকে ঘুম থেকে উঠতে না দেখে,তার রুমে গেলেন মা।মাথায় হাত দিতেই আঁতকে উঠলেন,জ্বরে যে গা পুড়ে যাচ্ছে!সাথে সাথে ফোন করে জানালেন ওর বাবাকে।তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরলেন একজন ডাক্তার নিয়ে।ডাক্তার সাহেব ইশাকে ভাল করে দেখে বললেন,আপনাদের মেয়ে ড্রাগ এডিক্টেড।ওর অবস্থা এখন খুবই আশঙ্কাজনক।এক্ষুনি হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।কথাগুলো শুনার পর উপর থেকে যেন ছাদ ভেঙে পড়ার দশা হল।চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল ক’ফোঁটা জলের কণা।কিন্তু ডাক্তার সাহেবের তাগাদার ফলে বেশিক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেননা তারা।মেয়েকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালের দিকে।
সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডাক্তার বললেন,আপনাদের মেয়ের ব্লাড এবং ব্রেইনের অধিকাংশই ড্যামেজ হয়ে গেছে।তাছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পচন ধরেছে,যদিও উপর থেকে কিছু বুঝা যাচ্ছেনা।আমার মনে হয় ও দীর্ঘদিন ধরে ড্রাগ নিচ্ছে।বাই দ্যা ওয়ে,আপনারা আরো আগে নিয়ে আসেননি কেন?ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ইশার মা।বাবারও কেমন যেন চোখ থেকে পানি বেরিয়ে আসতে চাইল।তবুও কোনরকমে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,এখন কি কিছুই করার নেই ডাক্তার সাহেব?ডাক্তার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জবাব দিলেন,এখন আর আমাদের কিছুই করার নেই।অনেক দেরি হয়ে গেছে।
এসময় একজন নার্স দৌড়ে এসে জানিয়ে গেলে ৭ নম্বর কেবিনের রোগি কেমন যেন করছে।ডাক্তার সাহেব কথাটা শুনে একপ্রকার দৌড়ে পৌঁছুলেন কেবিনে।সাথে সাথে পৌঁছুল ইশার বাবা-মা।ডাক্তার সাহেব ইশার নার্ভটা পরীক্ষা করে বলে উঠলেন,স্যরি,মি. খান!সি ইজ ডেইড!কথাটা শুনে অঝোরে কান্না জুড়ে দিল তারা।সেকি কান্না!সে কান্নায় নির্জীব দেয়ালও যেন শোক প্রকাশ করে উঠল।
এদিকে হঠাত্ পিঠে কিছু একটার আঘাত অনুভব করে বাস্তবে ফিরে এল ইশা।চোখ খুলে তাকাতেই দেখতে পেল জেরিনকে।চমকে উঠল সে।আসলে গত রাতে কিসব বাজে চিন্তা করে ঘুমাতে পারেনি,তাই ক্লাশেই চোখদুটো লেগে এসেছিল।এসময় জেরিন পিঠে থাপ্পর দিয়ে না জাগালে হয়তো আরো বীভত্স কিছু দেখতে হতো।ইশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।আর মনে মনে ভাবল,কল্পনায় যে পরিণতি আজ সে দেখতে পেয়েছে,তা যদি সত্যি সত্যি ঘটে যায়!না বাবা!আর জীবনেও উল্টো পাল্টা কিছু করা যাবেনা!এই দিব্যি করছি।এসময় জেরিন বলে উঠল,কিরে বাসায় যাবিনা?ইশা বলে উঠল,হ্যা!যাই….