Site icon খিচুড়ি

স্বপ্নের এলিয়েন

স্বপ্ন- কার না দেখতে ভাল লাগে? এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই স্বপ্ন দেখে, সে ছোট হোক কিংবা বড়! তবে সে স্বপ্ন যদি হয় এলিয়েনদের নিয়ে, তাহলেতো কথাই নেই। ইচ্ছে করবে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেই স্বপ্ন দেখে। যেখানে থাকবে শুধু রহস্য আর রহস্য। আর কিছু দুঃসাহসিক অভিযান। কি, চোখের ভ্রু কপালে উঠলতো? উঠারই কথা! কেননা এলিয়েনদের নিয়ে আমাদের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ঠিক এরকমই একটি কল্পনা নির্ভর সায়েন্স ফিকশন, এই মুহূর্তে আপনাদের সামনে আমার অপক্ক হাতের কলমী আচড়ে ফুটিয়ে তোলার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করছি। দেখা যাক, কতটা সফল হতে পারি আমি।

ইতু। সবে প্রাইমারী শেষ করে সিক্সে পা রেখেছে। বছরের শুরু, এখনো পুরো বইপত্র এসে পৌঁছায়নি। তাই ক্লাশও হচ্ছেনা তেমন। দু এক ঘন্টা হয়েই ছুটি হয়ে যাচ্ছে রোজ। সেই সুবাদে পড়া শোনার চাপ একেবারে নেই বললেই চলে। কাজেই বন্ধুদের সাথে দিনভর জমিয়ে আড্ডা মারা যায়। তাছাড়া রাতের বেলাতো ছোট চাচ্চুর মজার মজার আর অবাক করা সব গল্প রয়েছেই। এই করে দিনগুলো দিব্যি কেটে যাচ্ছে ইতুর।

ছোট চাচ্চু আজ এলিয়েনদের নিয়ে গল্প বলবেন। একথা আগেই জানা ছিল ইতুর। তাই তার বন্ধুদেরকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে সে গল্প শোনার জন্য। ইতু সহ তার সমস্ত বন্ধুরা ছোট চাচ্চুর বিছানায় একে একে বসেও পড়েছে চাচ্চুকে ঘীরে। সবার চোখে মুখে সে কি উত্সাহ! আজ তারা এলিয়েনদের ব্যাপারে জানতে পারবে। ভাবতেই সকলের কান খাড়া হয়ে গেল!

যাই হোক, ছোট চাচ্চু বলতে শুরু করলেন, অনেক অনেক বছর আগের কথা। তখন পৃথিবীর মানুষেরা কেবল বৈজ্ঞানিক চর্চা শুরু করেছিল, সে সময়কার ঘটনা। তখনি প্রথম এলিয়েনদের আগমণ ঘটেছিল পৃথিবীতে। তাও আবার একজন নয়, দু’জন নয়- একেবারে ৫ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ দলের দেখা মিলেছিল ইতালির একটি অঞ্চলে। যেখানকার লোকেরা বিজ্ঞান শাস্ত্রে ব্যাপক সাফল্য লাভে সক্ষম হয়েছিল। তারি পর্যবেক্ষণে মূলত এলিয়েনদের আগমণ হয়ে থাকতে পারে ঐ অঞ্চলে। যদিও এ বিষয়ে যথেষ্ঠ যুক্তি প্রমাণের ভাঁটা রয়েছে। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় এই যে, এলিয়েনদের দলটি না কি টানা পাঁচ বছর থেকেছিল সে এলাকায়। কিন্তু কেউ চিনতেই পারেনি তাদের! কি করে চিনবে? ওরা যে কেবল ছোট ছোট বাচ্ছাদেরকে দেখা দিত!

বাচ্ছাদের কথা শুনে ইতু জিজ্ঞেস করে বসল, আচ্ছা চাচ্চু, এলিয়েনরা কি বাচ্ছা? না হলে শুধু বাচ্ছাদের সাথে দেখা করতো কেন? ছোট চাচ্চু মুচকী হেসে জবাব দিল, এলিয়েনরা আসলে পৃথিবীর লোকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতো। কারণ পৃথিবীর মানুষদের ব্যাপারে তাদের খুব একটা ভাল ধারণা ছিল না।

তো এলিয়েনরা যেদিন প্রথম আগমণ করল, সেদিন একদল বদমায়েশ ছেলে নিরীহ দুটো ছেলেকে নির্বিচারে মারধর করছিল। যা দেখে এলিয়েনরা এগিয়ে এল ছেলে দুটোকে বাঁচানোর জন্য! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছিল, বদমায়েশ ছেলেগুলো তাদের কথার পাত্তাই দিলনা! উল্টো লাথি মেরে ফেলে দিল একজন এলিয়েনকে! তা দেখেতো বাকি এলিয়েনদের বেজায় রাগ হল, আর ওমনি বদমায়েশগুলোকে ধরে ইচ্ছে মত চড়াতে শুরু করে দিল। তবে মজার বিষয় হল, এলিয়েনদের চড়ে বেটাদের কিছুই হলনা! আর এতে তারা হোঁ হোঁ করে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে ওঠল। এ অবস্থা দেখেতো এলিয়েনরা আরো ক্ষেপে গেল! কাজেই পিঠে ঝুলানো ব্যাগ থেকে কিছু রশি বের করে বেঁধে ফেলল শয়তানগুলোকে। কিন্তু তবুও কিছুই হলনা তাদের!

ইতুর বন্ধু বাদল আগ্রহভরে জানতে চাইল, এরপর কি হল?

চাচ্চু বললেন, ছেলে গুলো এক ঝটকায় শরীরের বাঁধন ছিঁড়ে উল্টো এলিয়েনদেরকে ধরে পেটাতে শুরু করে দিল! আর বলতে লাগল, শালা ছাগলের দল, আমাদের পেটাতে চাস! এবার বুঝ পেটানি কাকে বলে?

এভাবে ইচ্ছেমত পিটিয়ে অজ্ঞান করে দিয়ে চলে গেল তারা।

সবাই একসাথে জিজ্ঞেস করে ওঠল, তারপর কি হল?

চাচ্চু জবাব দিলেন, তারপর- যে ছেলে দুটোকে বাঁচানোর জন্য ছুটে এসেছিল এলিয়ানরা, তারা নানা রকমভাবে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করতে লাগল! অবশেষে জ্ঞান ফিরে এলে ছেলে দুটোর সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল তাদের!

আজ এখানেই থাক, বাকি গল্পটুকু কাল বলব। চাচ্চুর মুখ থেকে এরকম কথা শুনে খুব করে বায়না ধরল ছেলেরা যে, বাকি গল্পটুকু আজই শেষ করতে হবে! নইলে আজ রাতে তাদের ঘুমই আসবেনা চোখে! ফলে ইতুতের জোরাজুরিতে বাকি গল্পটুকু বলতেই হল ছোট চাচ্চুকে!

এরপর ছেলে দুটোর কাছ থেকে ঐ বদমায়েশদের সম্পর্কে সবিস্তারে জেনে নিল এলিয়েনরা! আসলে ওরা প্রতিদিন এভাবেই ছেলে দুটোকে পিটিয়ে তাদের কষ্টার্জিত সারাদিনের উপার্জন ছিনিয়ে নিত!আর ওরা দুটো এতিম ছেলে খালি হাতে ফিরে আসত ঘরে!কাজেই অনেক দুঃখ ছিল তাদের!এ জগত সংসারে তাদের এমন কেউই ছিলনা যে, ঐ অত্যাচারীদের কাছ থেকে বাঁচাতে পারে!

ছেলে দুটোর দুঃখের কাহিনী শুনে প্রচন্ড খারাপ লাগল এলিয়েনদের।তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল,এর সমুচিত জবাব দেয়ার।সেইসাথে নিজেদেরকে পেটানোরও প্রতিশোধ নেয়ার।কিন্তু সমস্যা হল, পৃথিবীতে তাদের কোন শক্তিই কাজে আসছেনা। তাহলে কিভাবে তারা ওদের পরাস্ত করবে!

এমতাবস্থায় একজন এলিয়েন বলে ওঠল, আমাদের ক্ষমতা যদি এই ছেলে দুটোকে দেয়া হয়; তাহলে এরাই পারবে এ অন্যায়ের বদলা নিতে! কাজেই নিজেদের সকল শক্তির উত্স একটি বিশেষ ধর্মী পাওয়ার ট্রান্সফার মেশিন ছেলে দুটোর হাতে তুলে দিল তারা। সেইসাথে দিল একটি রেসিভার! যেগুলো বেঁধে দেয়া হল তাদের বাঁজুতে। এরপর বলা হল, এ দুটি মেশিন যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কাছে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যা খুশি তাই করতে পারবে! তবে সাবধান! এ ক্ষমতা তোমরা কোন অন্যায় কাজে লাগিয়োনা! তাহলে তোমরাই মারা পরবে!

এর পরদিন যখন সেই বখাটে গুলো আবার এল ছেলে দুটোকে পিটিয়ে তাদের সারাদিনের আয়ের টাকা কেড়ে নেয়ার জন্য, আশ্চর্যের বিষয়- উল্টো তারাই পেটাতে এসে পেটানি খেয়ে ধরাশায়ী হল! আর ছেলে দুটো আনন্দিত হয়ে ফিরে গেল বাড়িতে!

এ ঘটনার পর থেকে আর কোনদিন কেউ ছেলে দুটোকে মারধরের সাহস দেখালনা! কারণ তাদের মধ্যে অলৌকিক শক্তি আছে এরকম ধারণা জন্ম নিল লোকেদের মনে!ফলে আনন্দে দিন কাটাতে থাকল তারা!আর এলিয়ানরাও তাদের সাথে দীর্ঘ পাঁচটি বছর কাটিয়ে দিল পৃথিবীর বিজ্ঞান সম্পর্কে পান্ডিত্য অর্জন করার জন্য!এরপর এক সময় উধাও হয়ে গেল তারা!কিন্তু কোথায় গেল? যার খবর আজ পর্যন্ত কেউ বের করতে পারেনি!

Exit mobile version