ছায়ানাথের আগমন

প্রাচীন কালে, যখন পৃথিবীতে দিন ও রাতের মাঝে সীমারেখা ছিল অস্পষ্ট, তখন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সূর্য ও চাঁদের মাঝামাঝি এক অজানা স্থানে, আলো ও অন্ধকারের সন্ধিক্ষণে, জন্ম নেয় এক রহস্যময় রাজ্য – মিথেরোহাবান।

প্রথম যুগে, এই রাজ্য ছিল শূন্য। না ছিল কোনো প্রাণী, না ছিল কোনো অস্তিত্ব। কিন্তু প্রতি সন্ধ্যায়, যখন দিনের আলো ম্লান হতে থাকত, তখন অদৃশ্য জগতের প্রাণীরা এখানে আসত বিশ্রামের জন্য। ধীরে ধীরে, এই অদৃশ্য প্রাণীরা এই রাজ্যকে তাদের আবাসভূমি হিসেবে বেছে নিল।
এক সময় এই প্রেতরা অনুভব করতে লাগলো যে রাজ্য পরিচালনার জন্য তাদের একজন শাসক দরকার। কিন্তু কে হবে সেই শাসক এই নিয়ে অনেকদিন কেটে গেলেও কেউ একমত হতে পারলোনা।

প্রতিটি প্রেত নিজেকে মনে করত অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কেউ বলত, “আমি সবচেয়ে ভয়ংকর, আমিই হব রাজা।” আবার কেউ বলত, “আমি সবচেয়ে প্রাচীন, আমার অধিকার বেশি।” এই নিয়ে তাদের মধ্যে চলত অবিরাম কলহ। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, মিথেরোহাবান জুড়ে চলত এই অশান্তি।
এমন সময় সামনে এগিয়ে এলেন হোরিনান। প্রাচীন কালের এই প্রেত ছিলেন অসাধারণ বুদ্ধিমান। তাঁর মুখটি ছিল কুমিরের মতো, চোখে ছিল হাজার বছরের জ্ঞান। একদিন সভায় দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “হে মিথেরোহাবানের বাসিন্দারা, আমাদের মধ্যে থেকে কেউই রাজা হতে পারবে না। আমরা সবাই একই রকম, একজন আরেকজনের ওপর শাসন করতে পারব না। আমার প্রস্তাব, আমরা মানুষের জগত থেকে আনব আমাদের রাজা।”

প্রথমে অনেকেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করল। কিন্তু হোরিনানের যুক্তি ছিল অকাট্য। তিনি বললেন, “একজন মানুষ যে প্রেতরাজ্যের শাসক হবে, সে হবে দুই জগতের সেতুবন্ধন। সে বুঝবে মানুষের ব্যথা, আবার জানবে প্রেতের শক্তি।”

সবাই শেষ পর্যন্ত রাজি হল। হোরিনান নিজে মানুষের রূপ ধারণ করে চলে গেলেন মর্ত্যলোকে, খুঁজতে লাগলেন সেই বিশেষ মানুষটিকে যে হবে মিথেরোহাবানের রাজা।
মাসের পর মাস খুঁজে চলেছেন হোরিনান। এমন সময় এক গভীর রাতে এক দূরের গ্রামে শোনা গেল করুণ চিৎকার। একটি কুটিরে আগুন লাগিয়েছে গ্রামের লোকেরা। কারণ সেখানে জন্ম নিয়েছে এক অদ্ভুত শিশু – যার শরীরের এক পাশ কালো, অন্য পাশ ধবধবে সাদা।
গ্রামের মানুষ বলাবলি করছিল, “এ নিশ্চয় কোন অপয়া সন্তান। এর জন্মে গ্রামে অমঙ্গল নেমে আসবে।” তাই তারা সিদ্ধান্ত নিল শিশুটিকে তার পরিবার সহ পুড়িয়ে মারার।
ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে এসে পৌঁছালেন হোরিনান। জ্বলন্ত কুটির থেকে ভেসে আসা শিশুর কান্না শুনে তিনি বুঝলেন, এই সেই শিশু যার জন্য তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। শিশুটির শরীরের দুই রঙ যেন দৃশ্য আর অদৃশ্য জগতের প্রতীক।

মুহূর্তের মধ্যে হোরিনান তার আসল রূপ ধারণ করলেন। তার কুমির-মুখী ভয়ংকর চেহারা দেখে গ্রামের মানুষ ভয়ে পালিয়ে গেল। তিনি জ্বলন্ত কুটির থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করলেন।
শিশুটিকে কোলে নিয়ে হোরিনান বললেন, “তুমি দুই জগতের সন্তান। তোমার মধ্যে আছে আলো আর অন্ধকারের মিলন। তুমিই হবে মিথেরোহাবানের রাজা।” তিনি শিশুটির নাম রাখলেন ছায়ানাথ – যার অর্থ ‘ছায়ার অধিপতি’।

এভাবেই ছায়ানাথের আগমন ঘটলো মিথেরোহাবানে। আমরা পরের পর্বে জানবো কিভাবে ছায়ানাথ বড় হয়ে উঠলেন আর কিভাবে একজন মানুষ থেকে হয়ে উঠলেন অসীম দৈব শক্তির অধিকারী।

যে বইগুলো কিনতে পারেন ডিস্কাউন্ট রেটে থেকে:

Loading books...