[su_box title=”আসা যাওয়ার মাঝে” style=”soft”]
গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ বিক্রম আদিত্য সেনগুপ্ত
প্রযোজনা সংস্থাঃ ফর ফিল্মস।
চিত্রগ্রাহকঃ মহেদ্র জ্বী শেঠি।
শব্দ বিন্যাসঃ মনিশ জন।
সম্পাদনাঃ বিক্রম আদিত্য সেনগুপ্ত
রঙ বিন্যাসঃ সিদ্ধার্থ মেয়ের
নির্বাহী প্রযোজকঃ জোনাকি ভট্টাচার্য।
সময়ঃ ৮৪ মিনিট [/su_box]
আসা যাওয়ার মাঝখানকার এই ক্ষনিক সময় আর একটা নিস্তব্দ আকাঙ্ক্ষার ৮৪ মিনিটের অনন্য ছন্দের প্রয়াস দেখিয়েছেন পরিচালক বিক্রম আদিত্য সেনগুপ্ত “আসা যাওয়ার মাঝে” চলচ্চিত্রে ।
চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে ফর ফিল্মস। সমসাময়িক সময়ে এই ধরনের ঘারানার গল্প বাঁ গল্প বলার ঢং কদাচিৎ।
ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী আর বাসবদত্তা চ্যাটার্জী আর নিস্তব্ধতা। শব্দের ব্যাস্ততা, ঐতিহ্য আকড়ানো চিলেকোঠার শহরে এক মধ্যবিত্ত দম্পতির দৈনন্দিন জীবনের একদিনের গল্প।
স্ত্রী একটি হাত ব্যাগ তৈরির ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন সেই সুবাদে সকালেই বের হয়ে যান, আর স্বামী মানে ঋত্বিক সারারাত একটা প্রিন্টিং প্রেসে চাকরি করে ভোরে ফেরেন। দুজনের এই আসা যাওয়ার মাঝখানের সময় যেন গোধূলি। কাজের প্রতি একাগ্রতা, সাহস, যত্ন আর সততার আদর ফুটে উঠেছে চলচ্চিত্রটির পরতে পরতে। নিপুন চিত্রকর্মের মতই শক্তিশালী গল্পের গাঁথুনি, ফ্রেম, রঙবিন্যাস, আর আবহ সঙ্গীতের ব্যাবহার।
চলচ্চিত্র শুরুর দিকে এই ক্ষানিক আঁধার মস্তিস্ককে যেন প্রস্তুত করে গল্পটি দেখার জন্য। পুরো সিনেমায় কোন সংলাপ নেই। অবশ্য সংলাপের কোন প্রয়োজনও পড়েনি বরং সংলাপ দিলে স্তব্ধতার এত সুন্দর ছন্দের বিন্যাস হয়তো থাকতো না। সিনেমার শুরুতে দুজনকে একবারও একসাথে না দেখিয়ে কেবল দুজনের একই রকম জলখাবার খাওয়া, একই গলির যাতায়াত, মধ্যবিত্ত জীবনযাপনের পোশাক, উঠোনে বালানো ধোয়া শাড়ি দেখানোর পর আঙ্গুল তুলে ওদের সম্পর্ক বলার দরকার হয় না। তেমন দরকার হয় না শুরুতে ব্ল্যাঙ্ক স্ক্রিনের পেছনে কারখানা শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া, আর মাঝে ট্রাম লাইনের ওপরে থাকা ইলেক্ট্রিক লাইনে বাম ভাবার্থ দেখানোর পর কেন ঋত্বিক সারাদিন বাসায় থাকে সেটা বলার।
মাস শুরুর বাজার, বাক্সে জমানো টাকা, দুপুরে খাওয়া শেষে হকারের চিৎকারে জানালা বন্ধ করে আলতো ফ্যানের বাতাসে পাঞ্জাবী সরে যাওয়া আর বাঙ্গালী জীবনের একটু জিরিয়ে নেওয়া এত সুন্দর করে একেছেন বিক্রম আদিত্য! খাওয়া শেষে এঁটো থালা সিঙ্কের উপরে রেখে দেওয়া , সূর্য অস্ত যাওয়ার সেই সোনালী মুহূর্তের পরিমিত ব্যাবহার, কবুতরের ঘরে ফেরার দৃশ্যের পর অপেক্ষার এই নিবিড় আকাঙ্ক্ষা বোঝার আর কিছু থাকে না। সেই সাথে আবহ সঙ্গীতের এত অসাধারন ব্যাবহার সত্যিই অনবদ্য। অসাধারন সেই মুহূর্ত যখন ঋত্বিক প্রায়ই একটা ফেন্টাসিতে হারিয়ে যায় সেই অপেক্ষায়। তেমনি অনন্য যেভাবে পরিচালক ধারাবাহিকতা আর গতি নিয়ন্ত্রন করেছেন। রাতে কাজ থেকে ফিরে বাসবদত্তার সেই ফ্যানের আলতো বাতাসকে ভারী করা, প্যান্ট সেলাই, সিঙ্কে রাখা বাসন ধোয়া, দুজনের এই সমান্তরাল চলাচল দায়িত্ববোধের এক স্বচ্ছ সমসত্ব মিশ্রন। এক জন আরেক জনকে ফোন করে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিচ্ছে কিন্তু কেউই ফোন ধরছে না, সেই গোধূলির অপেক্ষা এবং অবশেষে ভোরে ঋত্বিকের বাড়ি ফেরা আর ক্ষানিক পরে বাসবদত্তার যাওয়ার সময়, মাঝে রইলো সোনালী গোধূলি। এই সময়টাকে ধরার জন্য যেমন প্রস্তুতি পুরো গল্পজুড়ে ছিলো, অরন্যের ঐ বৈচিত্রকে সাক্ষি রাখা খুব একটা মহাপাপ নি বলেই মনে হয়। আর একজন চিত্রগ্রাহক হলো একজন পরিচালকের চশমা। এত সুন্দর দৃষ্টিকোণ নির্বাচন আর ফ্রেমিং। কোন কিছুই একটুও বারাবারি মনে হয়নি। ঋত্বিকের অভিনয় নিয়ে তার ইতিহাস আর ধারাবাহিকতা কথা বলে আর বাসবদত্তাও অত্যন্ত সাবলীল অভিনয় করেছেন। সবকিছুর এই সমান্তরাল পথচলাই মুগ্ধ করেছেন সকল চলচ্চিত্র জগৎকে।