দিনের বিভিন্ন সময়ে তাজমহলের বিভিন্ন রঙ দেখা যায়। তাজমহল খুব ভোরে গোলাপী, দিনে সাদা ও চাঁদের আলোয় সোনালী রঙের দেখায়। তাজমহলের সাদা মার্বেল ও প্রতিফলিত টাইলস এর রঙের পরিবর্তে সাহায্য করে।
তাজমহলের পিলারগুলো বাহিরের দিকে হেলানো। ভূমিকম্প হলে এগুলো যেনো সমাধির উপরে না পরে এজন্যই এভাবে তৈরি করা হয়েছে।
এই অনন্য স্থাপনাটির স্থপতি ছিলেন আহমেদ লাহোরি। তাজমহল নির্মাণের জন্য তিনি ২২ হাজার মানুষ নিযুক্ত করেন, যারা ছিলেন শ্রমিক, স্টোনকাটার, চিত্রশিল্পী, সূচিকর্মশিল্পী ও ক্যালিগ্রাফার। তাজমহলের নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য ১০০০ হাতি ব্যবহার করা হয়েছিলো।
স্থাপত্যকলার এই বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ কাজটি করার জন্য সম্রাট রাজস্থান, আফগানিস্থান, তিব্বত ও চীন থেকে মার্বেল পাথর আনিয়েছিলেন। এছাড়াও ২৮ ধরণের মূল্যবান ও আধামূল্যবান পাথর সাদা মার্বেলের উপর বসানো হয়েছিলো। যার মধ্যে আকর্ষণীয় নীলকান্তমণি ও ছিলো।
তাজমহলের সব কিছুই প্রতিসম শুধুমাত্র একটি জিনিষ ছাড়া। আর সেটি হচ্ছে এর ভেতরের দুটি সমাধি। কারণ পুরুষের সমাধি মেয়েদের সমাধির চেয়ে বড় হয়।
তাজমহলের মূল্য ৩২ মিলিয়ন রুপি। যার বর্তমান মূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তাজমহলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিলো ১৬৩২ সালে এবং সম্পন্ন হয়েছিলো ১৬৫৩ সালে। এটি তৈরি করতে ২২০০০ শ্রমিকের ২২ বছর সময় লেগেছিলো।
তাজমহল সম্পর্কে একটি প্রচলিত মিথ হচ্ছে- নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিটা শ্রমিকের হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেন সম্রাট শাহজাহান। যাতে কেউ পুনরায় তাজমহল তৈরি করতে না পারে। তবে এটি সত্য নয়। আরেকটি মিথ হচ্ছে- তাজমহলের মতোই আরেকটি সমাধি এর বিপরীত পাশে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান কালো মার্বেল দিয়ে। কিন্তু ক্ষমতাচুত্য হওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মোঘল সম্রাটের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও তাজমহলের স্থাপত্যকলা ছিলো বিশ্বব্যপী অনুপ্রাণিত। এটি পারস্য, মধ্য এশিয়া ও ইসলামী স্থাপত্যের সমন্বয় করেছিলো।
তাজমহলের ভেতর ও বাহিরের ক্যালিগ্রাফির চমৎকার কাজ আছে। মমতাজ মহলের সমাধি ক্ষেত্রেও তাঁর পরিচিতি ও প্রশংসার শিলালিপি দেখা যায়। সমাধিক্ষেত্রের একপাশে আল্লাহর ৯৯ নাম ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপিতে অঙ্কিত আছে।
তাজমহলের উচ্চতা ১৭১ মিটার বা ৫৬১ ফুট দীর্ঘ যা কুতুবমিনারের চেয়েও বড়।
সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের স্মৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা জানাতেই তাজমহল তৈরি করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান। বর্তমানে তাজমহল বাগান, গেস্টহাউজ ও মসজিদ দিয়ে ঘেরা ১৭ হেক্টর জায়গা নিয়ে গঠিত। সম্রাট শাহজাহান যমুনা নদীতে বসে তাঁর এই স্বপ্নের সমাধীটিকে দেখতেন। বর্তমানে নদীটি শুষ্ক হয়ে গেছে।