একদিকে ইতিহাস,ঐতিহ্য আর অন্য দিকে আরব টাকার ঝলকানি; কোনটি বেছে নেবেন লিওনেল মেসি? চলতি মৌসুম শেষে ফ্রেঞ্চ ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইর (পিএসজি) সাথে মেসির চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। পিএসজি চাচ্ছে বিশ্বকাপ জয়ী লিওনেল মেসি ফরাসি ক্লাবটির সাথে চুক্তি নবায়ন করুন। সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল সুটকেস ভর্তি টাকা নিয়ে মেসিকে সৌদি প্রো-লিগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর প্রতিদ্বন্দী হওয়ার প্রস্তাব করছে। অন্যদিকে মেসির সাবেক ক্লাব বার্সেলোনা তাকে ফিরিয়ে নিতে উদগ্রীব। আমেরিকান মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মিয়ামি চাচ্ছে মেসি আমেরিকায় আসুক। তাহলে পরের মৌসুমে কোন ক্লাবে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি?
ক্লাব বার্সেলোনার অর্থনৈতিক বিধি নিষেদের কারনে ২০২১ সালে পিএসজিতে পারি জমিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। তখনই চুক্তিতে একটি বিষয় উল্লেখ ছিল;উভয় পক্ষ যদি সম্মত থাকে তবে মেসি আরেক বছর প্যারিসে থাকতে পারবেন। পিএসজি এখন সেই চুক্তি মোতাবেক চাইছে ’স্বর্ণের ডিম পারা হাঁস’ লিওনেল মেসিকে ধরে রাখতে। এমনকি তারা মেসিকে নতুন করে আরও দুই বছরের চুক্তির প্রস্তাবও দিয়েছে।
কাতারি মালিকানায় আসায় পর থেকে তারকার হাট বসেছে পিএসজিতে। নেইমার, এমবাপ্পের পর মেসিকেও তাঁরা দলে ভিড়িয়েছে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও ইচ্ছা করলে প্যারিসে আনতে পারতেন পিএসজির সভাপতি নাসের আল খেলাইফি। তবে প্যারিসে দেখা দিয়েছে ’অধিক সন্নাসিতে গাজন নষ্ট’ সমস্যা। নেইমার ও এমবাপ্পের মধ্যে রেষারেষি ঠেসাঠেসি লেগেই আছে। মেসিকে নিয়ে সেই সমস্যা দেখা না দিলেও এত বড় বড় তারকা সামলাতে পিএসজির আগের কোচেরাও যেমনি হিমসিম খেয়েছেন তেমনি বর্তমান কোচ ক্রিস্টোফার গ্লাতারও আছেন ত্রাহির দশায়। তবে তিনিও চাচ্ছেন মেসি প্যারিসে থাকুন।
প্যারিসে থাকার ব্যাপার নিয়ে মেসির মনোভাব এখনো অস্পষ্ট। মেসির জার্সিতে একসময় ছিল শুধু কোপা আমেরিকা জয়ের লোগো। এখন সেই জার্সিতে যুক্ত হয়েছে পরম আরাধ্য বিশ্বকাপ জয়ের শিরোপার লোগো। ২০২৪ সালে আবার বসবে কোপা আমেরিকার আসর। বিশ্বকাপ জয়ী হিসেবে বড় কোন আসরে খেলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না মেসি। কোপা আমেরিকায় খেলার আগে ইউরোপের প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলের সাথেই থাকতে চাচ্ছেন মেসি। সেদিক থেকে তার প্যারিসে থাকার সম্ভাবনা কম নয়। প্যারিসে থাকলে তার ব্যাংক-ব্যালেন্সও ফুলে-ফেপে উঠতে থাকবে।
মেসি কি সত্যিই বার্সায় ফিরে যেতে পারেন?
পরের মৌসুমে মেসি কি তাহলে বার্সেলোনা ফিরে যাচ্ছেন? এটা মেসি না জানলেও মেসির বাবা জানেন। হ্যা, সত্যি তাই। কারন মেসির বাবা হোর্হে মেসে হচ্ছেন লিওনেল মেসির এজেন্ট। বার্সেলোনার একটি হোটেলে মেসির বাবা হোর্হে মেসির সাথে ক্লাব বার্সেলোনার সভাপতি হুয়ান লাপোর্তর একটি ছোট্ট মোলাকাত হয়েছে। মাত্র ২৫ মিনিটের এই মোলাকাত নিয়ে মিডিয়া পাড়ায় ইতিমধ্যে গুন্জন শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই বলছেন মেসির বার্সেলোনা ফিরে যাওয়ার দেনদরবার করার জন্যই হোর্হে ও লাপোর্তার এই গোপন মোলাকাত। তবে এই গুন্জনে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়ে লাপোর্তা বলেন, মেসিকে আমরা কিভাবে ’বিদায় অভ্যার্থনা’ দিব সেটা নিয়ে মেসির বাবার সাথে আলোচনা হয়েছে। অন্য কিছু নয়। তবে তার এ কথাতে গুন্জন থামছে না।
ক্লাব বার্সেলোনা থেকে কোন প্রকার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব এখনো মেসির টেবিলে দাখিল হয় নি। কিন্তু বার্সার প্রধান প্রশিক্ষক জাভি হার্নান্দেস নিয়মিত মেসির সাথে কথা বলছেন। জাভি তার কথায় মেসিকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি এখন যে দায়িত্ব পালন করছেন বার্সায় ফিরে এসেও তাকে একই কাজ করতে হবে। অর্থাৎ বার্সায় ফিরে আসলে মেসিকে দুই মধ্যভাগের খেলোয়াড়ের একজন হয়ে খেলতে হবে। সতীর্থ থাকা অবস্থায় মেসি যেমন জাভির পরামর্শ শুনে অনেক ফয়দা পেয়েছেন তেমনি নতুন করে জাভির কথা শুনে নাকি তাঁর চোখ জ্বল জ্বল করছে।
তবে বিপত্তি হচ্ছে টাকা পয়সার হিসেব-নিকেষ। যে টাকা পয়সার হিসেব-নিকেষ মিলাতে না পেরে বার্সেলোনা মেসিকে বিদায় বলতে বাধ্য হয়েছিলে তাঁদের সেই অবস্থার কোন পরিববর্তন হয় নি। উল্টো ধার দেনা আরোও ভারি হয়েছে। তাহলে বার্সেলোনা কিভাবে আবার মেসির দিকে নজর দিতে সাহস পেল? মূলত এবার তারা চাচ্ছে মেসির মাধ্যমে তাদের দেণ্যদশার উত্তরণ হবে। মেসি ফিরে আসলে বড় বড় খেলোয়াড় দলতে আসতে সম্মত হবে, মাঠে দর্শক বেশি হবে, টিকিটে দাম বাড়বে, টিভি স্বত্ব বাবদ বেশি টাকা আসবে।
এদিকে মেসি পিএসজিতে খুব একটা শান্তিতে নেই। লিঁওর বিপক্ষে পরাজয়ের পর লিগ ওয়ানে ঘরের মাঠে বছরের সপ্তম পরাজয়ে নিজেদের দর্শদক দ্বারা দুয়ো শুনতে হয়েছে। পিএসজির স্পোর্টিং প্রজেক্ট নিয়েও মেসি খুব একটা সন্তুষ্ট নন।
মেসি কি তবে সৌদি উড়াল দিবেন?
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান মানবাধিকার বিষয় অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিতে ফুটবল টনিক ব্যবহার করেছিলেন। সেই টনিক খুব কাজে দিয়েছে। সৌদি এখন দুই হাত উজার করে ফুটবলের পিছনে টাকা ঢালছে। ইংলিশ ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মালিকানা কিনে নিয়েছে সৌদি সরকার। আরও বড় চমক হচ্ছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সৌদি প্রো-লিগের ক্লাব আল নসর দলে টেনেছে। আল নসরের প্রতিপক্ষ আল-হিলাল মেসিকে ইতিমধ্যে প্রো-লিগে খেলার প্রস্তাব দিয়ে ফেলেছ। বার্ষিক ৪০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর চেয়ে বেশি প্রারিশমিক পাওয়া খেলোয়াড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে চাচেছ আল হিলাল। এত বড় প্রস্তাব পেলে যে কেউ ভীমড়ি খেয়ে পরে যেতে পারেন। তবে মেসি এখনো সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছেন। টাকার ঝলকানি এখনো তাকে কাবু করতে পারে নি। তবে শেষে কি হয় এখনো বলা যাচ্ছে না।
সব ছেড়ে মেসি যাবেন আমেরিকা?
আমারিকান মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিও ইতিমধ্যে মেসিকে দলে ভেড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ডিভিড বেকহ্যামের দল মিয়ামি মেসিকে দলে টানতে ক্লাবের শেয়ারের একটি অংশ মেসিকে দিতে রাজি, এমন গুন্জনও বাতাসে উড়ছে। মেসির সাবেক সতীর্থ সের্হিও বুসকেৎস চলতি মৌসুম শেষে মিয়ামিতে পাড়ি জমাচেছন। মিয়ামিতে গেলে মেসি অনেক পুরনো তারকাকেই তার সতীর্থ হিসেবে পাবেন। তবে কথা হচ্ছে মেসি এখনো যে দারুণ ফর্ম ধরে রেখেছেন, তাতে কি এখনই তার সকার লিগে খেলার সময় হয়েছে?
পিএসজি অথবা সৌদি লিগে খেললে মেসি যে টাকা-কড়ি কামাবেন বার্সেলোনা বা ইন্টার মিয়ামিতে গেলে সেরকম অর্থ আয় করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। মেসির ইউরোপে থাকার ইচ্ছাই বেশি, তার কথা ও হাব-ভাবে সেরকম বোঝা যায়। তবে এখনও যেহেতু তিনি সিদ্ধান্ত জানান নি, সেহেতু কোটি কোটি ভক্ত আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করছেন;মেসি পরের মৌসুমে কোন ক্লাবে খেলেন?