হযরত উসমান (রাঃ): ইসলামের তৃতীয় খলিফা

দশ বছরের খিলাফতের পর হযরত উমর (রাঃ) এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। কিন্তু তাঁর চলে যাওয়ার মাত্র তিন দিন পর হযরত উসমান (রাঃ) মুসলমানদের নতুন খলিফা নির্বাচিত হন। তিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবি ছিলেন এবং সেই সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। হযরত উসমান (রাঃ) ১২ বছর ধরে খিলাফত পরিচালনা করেন। এই সময়ে তিনি মুসলমানদের একটি কুরআনের উপর ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনি ইসলামের প্রথম মুদ্রাও প্রবর্তন করেন। মক্কা ও মদিনার মসজিদগুলোর সম্প্রসারণ করা হয়, যা আজও অব্যাহত আছে। কিন্তু খিলাফতের প্রথম ও সবচেয়ে বড় বিদ্রোহও হযরত উসমান (রাঃ)-এর সময়েই সংঘটিত হয়। অন্য দুই খলিফা সম্পর্কে মানুষ বেশি জানে, কিন্তু হযরত উসমান (রাঃ) সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। তবে, হযরত উসমান (রাঃ)-এর জীবনী অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক।

হযরত উসমান (রাঃ): প্রাথমিক জীবন ও ইসলাম গ্রহণ
হযরত উসমান (রাঃ) মক্কার কোনো সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেননি। তিনি মক্কার সবচেয়ে ধনী গোত্র বনু উমাইয়ার একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আফফান ছিলেন একজন বড় বস্ত্র ব্যবসায়ী। তাঁর এই ব্যবসা মক্কা থেকে রোম এবং ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। হযরত উসমান (রাঃ)-এর খুব অল্প বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। মৃত্যুর আগে আফফানের দুটি সন্তান ছিল: পুত্র উসমান এবং কন্যা আমনা। ইসলামের আগে আরব সমাজে পিতার মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পত্তি পুত্র সন্তানের মধ্যে ভাগ হতো, কন্যারা কিছুই পেত না। এ কারণে, হযরত উসমান (রাঃ) অল্প বয়সেই পুরো ব্যবসা এবং সমস্ত সম্পদের মালিক হন। ফলে তিনি অল্প বয়সে মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন হয়ে ওঠেন। মক্কার যুবকরা হযরত উসমান (রাঃ)-কে তাদের আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করত।

এত অর্থ থাকা সত্ত্বেও হযরত উসমান (রাঃ) মক্কার অন্যান্য ধনী যুবকদের মতো বিলাসী জীবনযাপন করেননি। তিনি তাঁর পরিবারের ব্যবসায় মনোযোগ দেন এবং এটিকে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে রূপান্তরিত করেন। এই ব্যবসার কারণে তিনি মক্কায় অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। মক্কার মায়েরা তাদের সন্তানদের বলতেন, “আমি তোমাকে এতটাই ভালোবাসি যতটা কুরাইশ উসমানকে ভালোবাসে।”

যখন হযরত উসমান (রাঃ) মক্কায় তাঁর বস্ত্রের ব্যবসা করছিলেন, তখন হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর ব্যবসাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এখান থেকেই এই দুই মহান সাহাবির বন্ধুত্বের সূচনা হয়। যখন হযরত উসমান (রাঃ)-এর ব্যবসা মক্কায় শীর্ষে পৌঁছায়, তখন মক্কার একটি গুহায় নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর প্রথম ওহি নাযিল হয়। নবী (সাঃ)-এর পরিবারের পর হযরত আবু বকর (রাঃ) সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সরাসরি তাঁর বন্ধু হযরত উসমান (রাঃ)-এর কাছে যান এবং তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দেন। হযরত উসমান (রাঃ) মক্কার যুবকদের আদর্শ ছিলেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ মক্কার জন্য, বিশেষ করে তাঁর গোত্র বনু উমাইয়ার জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। সবাই জানত যে এখন মুসলমানদের অর্থের অভাব হবে না। হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর গোত্রের প্রথম ও একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি তাঁদের বিরুদ্ধে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।

মক্কায় কষ্ট ও হিজরত

যখন নবী (সাঃ) মক্কায় মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন, তখন প্রথমে লোকেরা মনে করত যে নবী (সাঃ) এটি শুধু তাঁর গোত্র বনু হাশিমের প্রভাব বাড়ানোর জন্য করছেন। তাই ইসলামকে তারা একটি গোত্রীয় ধর্ম মনে করত। কিন্তু হঠাৎ একদিন কুরআনের সূরা মাসাদ নাযিল হয়। এতে আল্লাহ মক্কার সকল মানুষকে বাদ দিয়ে নবী (সাঃ)-এর চাচা আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেন। এই আয়াতগুলো থেকে সবাই বুঝে যায় যে ইসলাম কোনো গোত্রের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য।

যে চাচার সম্পর্কে কুরআনের এই আয়াতগুলো নাযিল হয়েছিল, তারই দুই ছেলের সাথে নবী (সাঃ)-এর দুই কন্যার বিয়ে হয়েছিল। এই আয়াতগুলোর কথা জানতে পেরে আবু লাহাব ও তার স্ত্রী খুব রেগে যান। তারা নবী (সাঃ)-এর থেকে প্রতিশোধ নিতে তাদের ছেলেদের নির্দেশ দেন নবী (সাঃ)-এর কন্যাদের তালাক দিতে।

হযরত উসমান (রাঃ) দেখলেন যে নবী (সাঃ)-কে দুর্বল করার জন্য তাঁর কন্যাদের তালাক দেওয়া হয়েছে। তিনি সরাসরি নবী (সাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাঁর কন্যা রুকাইয়া (রাঃ)-এর হাত চান। এভাবে হযরত উসমান (রাঃ) নবী (সাঃ)-এর খুব কাছের হয়ে যান। এটি দেখে তাঁর গোত্র বনু উমাইয়া আর সহ্য করতে পারেনি। এটি তাদের জন্য একটি বড় অপমান ছিল।

এখন, অন্য মুসলমানদের মতো, বনু উমাইয়া হযরত উসমান (রাঃ)-এর মতো শক্তিশালী ব্যক্তির উপরও নির্যাতন শুরু করে। বলা হয়, তাঁর এক চাচা হাকাম তাঁকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারতেন। তাঁর পুরো গোত্র তাঁকে ইসলাম ত্যাগ করতে বলত। কিন্তু এতকিছুর পরেও হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর গোত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে নবী (সাঃ)-এর পাশে দাঁড়ান।

কিছু সময় পর মক্কায় এমন একটি সময় আসে যখন কিছু মুসলমান আর সেখানে থাকতে পারছিলেন না। মক্কাবাসীরা দুই মুসলমানকে শহীদ করে ফেলে। তখন নবী (সাঃ) এই মুসলমানদের নির্দেশ দেন যে তারা আরব ত্যাগ করে হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিজরত করুন। সেখানে একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ তাদের সাহায্য করবেন। নবী (সাঃ)-এর এই নির্দেশের পর হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর স্ত্রী রুকাইয়া (রাঃ) ও কিছু মুসলমানের সাথে আরব ছেড়ে হাবশায় চলে যান। সেখানে গিয়ে হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর ব্যবসায়িক দক্ষতা ব্যবহার করে একটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন।

মদিনায় অবদান ও “জিন্নুরাইন” উপাধি

হযরত উসমান (রাঃ) যখন হাবশায় ছিলেন, তখন মক্কাবাসীরা নবী (সাঃ) ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বয়কট ঘোষণা করে। তারা তাঁদের উপর অনেক অত্যাচার করে। কিন্তু হযরত উসমান (রাঃ) মক্কা থেকে অনেক দূরে থাকায় নবী (সাঃ)-এর সাহায্য করতে পারেননি। হাবশায় চার বছর কাটানোর পর হঠাৎ একটি গুজব ছড়ায় যে মক্কার সবাই ইসলাম গ্রহণ করেছে। এই খবর শুনে হযরত উসমান (রাঃ) ও অন্য মুসলমানরা হাবশা ত্যাগ করে মক্কায় ফিরে আসেন। কিন্তু এসে দেখেন যে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এখন মক্কায় ফিরে না গিয়ে নবী (সাঃ) মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। মদিনা মক্কার তুলনায় একটি অত্যন্ত দরিদ্র এলাকা ছিল। সেখানে মুসলমানদের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে তাদের পান করার জন্য পানিও মিলত না। এটি দেখে নবী (সাঃ) মদিনার সকল মুসলমানকে একত্রিত করেন এবং বলেন, “যে মুসলমান এই ইহুদির কাছ থেকে ‘বীর-এ-রুমা’ নামক কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে, তার জন্য জান্নাতে স্থান হবে।”

মদিনায় এমন কেউ ছিল না যে এই কঠিন পরিস্থিতিতে কূপটি কিনতে পারে। কিন্তু একমাত্র একজন ব্যক্তি ছিলেন যাঁর ব্যবসা শাম, ইয়েমেন ও হাবশা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল—তিনি ছিলেন হযরত উসমান (রাঃ)। তিনি সরাসরি সেই ইহুদির কাছে যান। কিন্তু ইহুদি বলে যে সে কূপটি বিক্রি করতে চায় না। সে কূপের পানির উপর কর আরোপ করেছিল এবং পানি বেশ মূল্যে বিক্রি করত। তখন হযরত উসমান (রাঃ) তার সাথে একটি চুক্তি করেন। তিনি কূপের অর্ধেক অংশ কিনে নেন। অর্থাৎ, একদিন কূপটি হযরত উসমান (রাঃ)-এর থাকবে এবং পরের দিন ইহুদির। ইহুদি এই প্রস্তাব খুশি মনে গ্রহণ করে।

কিন্তু কিছুদিন পর সে বুঝতে পারে যে সে একটি বড় ভুল করেছে। যেদিন কূপটি হযরত উসমান (রাঃ)-এর থাকত, সেদিন মদিনার সবাই এসে কূপ থেকে পানি নিয়ে যেত। পরের দিন ইহুদির কাছে কেউ পানি নিতে আসত না। ফলে তার আয় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তাই সে বাধ্য হয়ে হযরত উসমান (রাঃ)-এর কাছে এসে পুরো কূপটি বিক্রি করে দেয়। এভাবে হযরত উসমান (রাঃ) ২০,০০০ দিরহামে এই কূপটি কিনে মুসলমানদের জন্য দান করে দেন।

এটি হযরত উসমান (রাঃ)-এর এত বড় দান ছিল যে এটি আজও পুরো বিশ্ব স্মরণ করে। এই কূপ এবং এর পাশের জমি আজও সৌদি আরবে হযরত উসমান (রাঃ)-এর নামে নিবন্ধিত। এই কূপ ও এর আশপাশের জমি থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে মদিনায় হযরত উসমান (রাঃ)-এর নামে একটি বিশাল হোটেল নির্মিত হয়েছে। এই হোটেল প্রতি বছর হযরত উসমান (রাঃ)-এর নামে ৫০ মিলিয়ন রিয়াল আয় করে, যা প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সমান। এই পুরো অর্থ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। অর্থাৎ, হযরত উসমান (রাঃ) একমাত্র সাহাবি যাঁর নামে আজও আল্লাহর পথে কোটি কোটি টাকা দান করা হয়।

এই কূপ কেনার কিছু সময় পর ইসলামের প্রথম যুদ্ধের সময় আসে—যুদ্ধে বদর। এই যুদ্ধে নবী (সাঃ) ৩১৩ মুসলমান নিয়ে মদিনা থেকে বদরের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু সমস্যা ছিল যে হযরত উসমান (রাঃ) এই মুসলমান বাহিনীতে ছিলেন না, কারণ তাঁর স্ত্রী এবং নবী (সাঃ)-এর কন্যা রুকাইয়া (রাঃ)-এর স্বাস্থ্য খুব খারাপ ছিল। তাই নবী (সাঃ) হযরত উসমান (রাঃ)-কে মদিনায় থাকার নির্দেশ দেন।

কিন্তু যখন নবী (সাঃ) ও মুসলমানরা যুদ্ধে বদরে ব্যস্ত ছিলেন, তখন রুকাইয়া (রাঃ)-এর স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয় এবং তিনি এই দুনিয়া থেকে চলে যান। যুদ্ধে বদরে জয়ী হয়ে নবী (সাঃ) যখন মদিনায় ফিরে আসেন, তখন মুসলমানরা খুব খুশি ছিল এবং জয়ের উৎসব করছিল। কিন্তু ঠিক তখনই নবী (সাঃ)-কে তাঁর কন্যা রুকাইয়া (রাঃ)-এর মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। এই জয়ের দিনেও নবী (সাঃ)-এর খুব দুঃখ হয়।

রুকাইয়া (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর মদিনার লোকেরা লক্ষ্য করেন যে হযরত উসমান (রাঃ) খুব দুঃখী ও বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন, “রুকাইয়া (রাঃ)-এর মৃত্যুর দুঃখ তো আমার আছেই, কিন্তু এটাও আমার দুঃখ যে তাঁর চলে যাওয়ার পর নবী (সাঃ)-এর সাথে আমার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে।” এটি শুনে নবী (সাঃ) তাঁর অপর কন্যা উম্মে কুলসুম (রাঃ)-এর সাথে হযরত উসমান (রাঃ)-এর বিয়ে দেন। এরপর হযরত উসমান (রাঃ)-এর নাম হয় “জিন্নুরাইন”, যার অর্থ “দুই নূরের অধিকারী।”

যুদ্ধে বদরই একমাত্র ঘটনা যেখানে হযরত উসমান (রাঃ) মুসলমানদের সাথে ছিলেন না। কারণ বদরের পর তিনি উহুদ ও খন্দকের মতো ইসলামের প্রতিটি বড় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

খিলাফতের সূচনা ও মহান কাজ
নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পর হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রথম খলিফা হন। সেই সময় হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য ব্যবহার করে খিলাফতকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেন। হযরত উমর (রাঃ)-এর খিলাফতেও তিনি তাঁর অন্যতম প্রধান মন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর সেবা অব্যাহত রাখেন।

হযরত উসমান (রাঃ) ১২ বছর ধরে খিলাফত পরিচালনা করেন। তিনি মুসলমানদের একটি কুরআনের উপর ঐক্যবদ্ধ করেন, যা মতপার্থক্য দূর করতে সাহায্য করে। তিনি ইসলামী সাম্রাজ্যের জন্য নিজস্ব মুদ্রা প্রবর্তন করেন, যা ব্যবসা ও প্রশাসনকে সুশৃঙ্খল করতে সহায়ক ছিল। মক্কা ও মদিনার মসজিদগুলোর সম্প্রসারণ করা হয়, যা মুসলমানদের ইবাদতের জন্য আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। তাঁর সময়ে খিলাফতের বিরুদ্ধে প্রথম বড় বিদ্রোহও হয়, যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দেয়।

হযরত উসমান (রাঃ)-এর জীবনের প্রধান ঘটনা
হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়, উমরার জন্য মক্কায় যাওয়ার পথে মক্কাবাসীরা মুসলমানদের দূত হযরত উসমান (রাঃ)-কে বন্দী করে। এরপর নবী মুহাম্মদ (সাঃ) একটি গাছের নিচে মুসলমানদের কাছ থেকে হযরত উসমান (রাঃ)-এর জন্য লড়াই করার শপথ নেন। এটি “বায়তুর-রিদওয়ান” নামে পরিচিত। কুরআনেও এই গাছের উল্লেখ রয়েছে। পরে হযরত উমর (রাঃ) এই গাছটি কেটে ফেলেন, কারণ তিনি চাননি যে লোকেরা এটিকে মাজার বানিয়ে ফেলুক।
রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ৩০০০ মুসলমানের একটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করা হচ্ছিল। হযরত উসমান (রাঃ) এই অভিযানের জন্য ১০০০ উট, ৭০টি ঘোড়া, ১০,০০০ স্বর্ণমুদ্রা এবং ৭০,০০০ রৌপ্যমুদ্রা দান করেন। তাঁর এই দানে খুশি হয়ে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) দোয়া করেন, “আজকের পর উসমান যা-ই করুক, তাকে কোনো ক্ষতি হবে না।” যুদ্ধ না হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর দান মদিনার সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন।

হযরত উসমান (রাঃ)-এর জীবন, তাঁর সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করার ইচ্ছাশক্তি এবং কঠিন সময়ে নবী (সাঃ)-এর প্রতি তাঁর আনুগত্য আজও প্রেরণা যোগায়। তিনি এমন একজন নেতা ছিলেন যিনি ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সাফল্যকে ইসলামী সম্প্রদায়ের সেবায় নিয়োজিত করেন। তাঁর খিলাফত ইসলামী সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করেছে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে।