হেলেনঃ এক ধ্বংসের নাম

গ্রীকদের হাতে ট্রয়ের যখন পতন হলো তখন যার জন্য এই ধ্বংসযুদ্ধ সেই হেলেন রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে এক কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিলো। হেলেনকে অনুসরন করে তার আগের স্বামী মেনেলায়্যুস এবং আরেক বীর ওডিসিয়্যুস সেই কুঁড়েতে পৌঁছালে তাদের হাত থেকে হেলেনকে বাঁচাতে গিয়ে কুঁড়ের মালিক মারা গেলেন।

বাধ্য হয়ে হেলেন আবারও ছুটলো তবে এবারে মেনেলায়্যুস তাকে ধরে ফেললো। মেনেলায়্যুসের মনে প্রতিহিংসার আগুন; এক্ষুনী তলোয়ার দিয়ে হেলেনকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিবে! ঠিক সেই মুহূর্তেই তার মনে পুরাতন ভালোবাসা জেগে উঠলো। মেনেলায়্যুস হেলেনকে ক্ষমা করলো। নিয়ে গেলো আবারো স্পার্টায়।
সেখানেই তারা দীর্ঘদিন জীবন যাপন করে কোনরুপ ঝামেলা ছাড়াই।
ভালোবাসার কি মহত্ব তাইনা?

একটু পেছনে যাই। একদিন নিজের স্বামী এই মেনেলায়্যুসকে ফেলে হেলেন ভিনদেশী রাজপুত্র প্যারিসের হাত ধরে গ্রীস থেকে পালিয়ে ট্রয়নগরে চলে গিয়েছিলো। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্যই প্রলয়ঙ্করী ট্রয়ের যুদ্ধ শুরু হয়; চলে নয়বছর।
হাজারে হাজারে মানুষ মরে, মরে একিলিস আর হেক্টরের মতো দুই মহাবীরও। যারা বেঁচে থাকলে দুনিয়াকে আরো ভালো কিছু দিতে পারতো। যদি এমন হতো, হেলেন প্যারিসের সাথে পালিয়েছে প্যারিসকে ভালোবেসে!
তার কাছে প্যারীসই সব; তাহলে খুব একটা খারাপ হতো না। তবে এখানে একটা শুভংকরের ফাঁকি আছে!

দিনের পর দিন ট্রয়নগরী অবরোধ করেও গ্রীকরা যখন পেরে উঠছিলো না তখন এক জ্যোতিষী গ্রীকদেরকে বলেন যে, ট্রয়ের মন্দিরে দেবী অ্যাথেনার একটা মূর্তি আছে, সেটা চুরি করে আনতে পারলেই গ্রীকরা যুদ্ধে জয়লাভ করবে।
ওডিসিয়্যুস এবং আরেকজন যোদ্ধা ভিখারীর ছদ্মবেশে ট্রয়ে প্রবেশ করেন মূর্তি চুরির ধান্দায়। কেউ তাদেরকে চিনতে না পারলেও হেলেন কিন্তু ঠিকই চিনতে পেরেছিলো। সে করলো কি তাদের দুজনকে আঁড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করলো গ্রীকরা জিতলে তার পূর্বের স্বামী মেনেলায়্যুস তাকে হত্যা করবে নাকি আবারো গ্রহন করবে!ওডিসিয়্যুস বললেন যে গ্রহন করতেও পারে! তখন হেলেন তাদেরকে মূর্তি চুরীর পথ দেখিয়ে দিলো।
ওডিসিয়্যুস মূর্তি চুরী করে নিয়ে গেলেন! পতন হলো ট্রয়ের, লাখে লাখে মানুষ মরলো। ধ্বংস হলো সম্পূর্ন ট্রয়, বেঁচে গেলো কেবল হেলেন, শুধু বাঁচলোই না, খুব ভালোভাবেই বাঁচলো!

এ ধরনের লেখার শেষে একটা নীতিবাক্য জুড়ে দেয়া দরকার হয়। কিন্তু হেলেনের প্রতারনার উপযুক্ত কোন নীতিবাক্য খুঁজে পাচ্ছিনা। নীতিবাক্য নিজে নিজে খুঁজে পড়ে নেয়ার দায়িত্ব পাঠকের উপরই ছেড়ে দিলাম!

ছবিসূত্র