কিডন্যাপ

সময়টা পৌষ মাস, বাইরে প্রচণ্ড শীত, শীত মানে একেবারে হাড়কাঁপান শীত, শরিরে ২কেজি ওজনের একটা জ্যাকেট চাপিয়েও শিতের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছিনা, একটু হাঁটাহাঁটি করলে হয়ত শরীরটা গরম হতে পারে ভেবে তারাতারি পাঞ্জাবিটা পরে তার ওপর চাপিয়ে দিলাম আমার উত্তরাধিকারী সুত্রে পাওয়া আদিম  যুগের জ্যাকেট খানা।

এখন বাজে সকাল ৭ টা মোটামুটি ১ ঘণ্টা হাঁটলে শরিরে যা চাপিয়েছি তা থেকে আগুন বেরহবার সম্ভবনা আছে, সিদ্ধান্ত নিলাম চন্দ্রিমা উদ্যান যাব এক কালের জিয়া উদ্যান আর কি,

আম্মু ঘুমাচ্ছে, আস্তে করে দরজা খুলে পালতে হবে, জেগে গেলে আমার পরিকল্পনাটা মাঠে মারা পরবে, সবে মাত্র দরজাটা খুলেছি, এমন সময় পেছন থেকে আম্মুর গলা শুনে থমকে দাঁড়ালাম।

কিরে জিসান? এই সাত সকালে কোথায় যাচ্ছিস?

এইতো একটু…কোথাই যাব তা ইতিমদ্ধে গুলিয়ে ফেলেছি

যেখানে যাবি যা তবে তারাতারি চলে আসিস, আর শোন আসার সময় এক কেজি দুধ নিয়ে আসবি,

তারাতারি বাসা থেকে কেটে পরলাম, যাও অনুমতি পেয়েছে আবার সেটাও না হাত ছাড়া হয়ে যায়,

হাঁটতে হাঁটতে প্রায় উদ্যানের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম, এমন সময় দেখি একজন বয়স্ক লোক সেন্টু গেঞ্জি পরে জগিং করতে নেমেছে, মনে মনে ভাবলাম লোকটা হয়ত অনুভব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

দিনটি ছিল আমার কাছে অন্য দিনের ন্যয় একটি সাধারন দিন, কিন্তু কে জানতো আজ এমন এক ঘটনা ঘটবে যা আমাকে সৃতির পাতায় আটকে রাখতে বাধ্য করবে।

আমি হাঠছি এক মনে, পাশে শারি শারি গাড়ি পার্ক করা, হঠাৎ আমার বাঁ পাশে পার্ক করা একটা লাল গাড়ি থেকে একজন মধ্য বয়সী লোক বেড়িয়ে এলো, হাতে একটা সাদা কাগজ, আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল ভাই এই ঠিকানাটা একটু বলে দেনত , আমি ঠিকানাটা দেখার জন্য সামান্য মাথা ঝুকালাম আর অমনি লোকটা পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে আমার নাকে আস্তে করে বুলিয়ে দিল , আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথাটা চক্কর মেরে উঠল, কিন্তু যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম তখন বড্ড দেড়ি হয়ে গেছে, শরীরে একটুও বল পেলামনা নিজের শরীরটা নিজের কাছে বোঝা মনে হতে লাগল, লোকটা আমাকে ধরে নিয়ে গাড়ির ভেতর বসিয়ে দিল, তারপর এই আলোকিত দুনিয়াটা আমার কাছে আন্ধকার হয়ে গেল, জ্ঞান হাড়িয়ে গাড়ির সীটে ঢলে পরলাম।

 

পরে যখন আমার জ্ঞান ফিরল তখন নিজেকে একটা আন্ধকার আবদ্ধ ঘরে আবিস্কার করলাম, উঠে বসতে যেয়েও পারলাম না ঘারে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলাম, আস্তে আস্তে যখন রুমের আন্ধকারটা চোখে সয়ে আসল তখন বুঝতে পারলাম এই আবদ্ধ রুমে আমি একা নই আরও দুজন আছে তারা রুমের কোনায় গুটি শুটি মেরে বসে রয়েছে।

একটা ব্যপার আমি ভালভাবেই উপলদ্ধি করতে পারলাম যে আমি কিডন্যপ হয়েছি।

এমন সময় কান্নার আওয়াজ পেলাম, সাথে সাথে আমার ষষ্ট ইন্দ্রিও টা সজাগ হয়ে গেল, বুঝতে পারলাম আওয়াজটা রুমের কোনা থেকে আসছে , যাইহোক করে নিজের শরীরটা টেনে হিঁচড়ে ওখানে নিয়ে গেলাম,

মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞাসা করলাম কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে?

আমার কথা শুনে ছোট একটা ছেলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে উঠল

ভাইয়া! আমাদেরকে বাঁচান, ওরা আমাদেরকে মেরে ফেলবে, আমি আম্মুর কাছে যাব, এতটুকু বলেই ডুকরে কেঁদে উঠল ছেলেটা।

আমার শরীরটা ঝাঁকার দিয়ে উঠল, মনে পরে গেল ছোট ভাই শামিমের কথা অনেক ভালবাসতাম ওকে, ওর বয়স যখন ১০ বছর তখন ও এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়, আজ অনেক দিন পর ওর কথা মনে পরতেই চোখের পাতা ভিজে উঠল, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম যে করেই হোক এই ছেলেকে আমি এখান থেকে মুক্ত করবই, আমি ওর গায়ে হাত বুলিয়ে বললাম “ তুমি ভয় পেওনা তোমার আম্মুর কাছে তোমাকে দিয়ে আসব।

আর আমি?

একটা মেয়েলি কণ্ঠ শুনে আমার চোখটা মাঝারী আকার ধারন করল এখানে যে আরও একজন আছে তা একেবারেই ভুলেই গেছিলাম, আমি প্রশ্ন করলাম কে আপনি? মেয়েটা উত্তর দিল আমি ওর বড় বোন, কোচিং থেকে আসার সময় আমাদের দুজনকে জোর করে গারিতে তুলে নিয়ে এসেছে।

বাসা কোথায়?

মহাম্মাদ পুরে টাউন হলের কাছাকাছি।

আমার বেশ ভাল লাগল আমারা একই এলাকাই থাকি, তবে আমার বাসা টাউন হলের কাছাকাছি না একেবারে টাউন হলের মধ্যেয়।  হাত ঘরিতে তাকিয়ে দেখি সকাল ছটা, রুমের ছোট্ট ভ্যানটিলেটার দিয়ে একটু একটু আলো আস্তে শুরু করেছে।

আম্মুর কথা মনে পরতেই মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল, শামিমকে হাড়িয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ওকে ভুলে থাকার চেষ্টা করতেন , আজ আমিও নিরুদ্দেশ।

নাহ! যে করেই হোক এখান থেকে আমাকে বেরুতেই হবে, কিন্তু কি ভাবে? চোখ বন্ধ করে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।

হঠাৎ কারো লাথি খেয়ে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল, আমার একটা বদ অভ্যাস আছে, কেও আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠালে মেজাজটা সপ্তমে চড়ে যাই, আজও তার বেতিক্রম হলনা, হাতটা মুঠো পাকিয়ে সোজা দাড়িয়ে গেলাম, যেই হকনা কেন, তার আর রক্ষে নেই, কিন্তু আমার সামনে দণ্ডায়মান লোকটার দশাসই চেহারা দেখে মেজাজটা একেবারে জিরোতে নেমে গেল, আস্তে করে বসে পরলাম।

লোকটা বাজখাই গলায় বলল “ নে যা দিয়েছি চুপচাপ খেয়ে নে ” এতটুকু বলেই দরজাটা বাইরে দিয়ে তালা বদ্ধ করে চলে গেল, হাত ঘড়িতে তখন সকাল ৯ টা বেজে ১৫ মিনিট, সূর্যের আলোয় রুমটা আলোকিত হয়ে গেছে।

ভাইয়া, ডাক শুনে মাথা তুলে তাকালাম, দেখি মিষ্টি চেহারার একটা ছোট ছেলে আমার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে পাশে ওর বড় বোন, ওর বোনটাকে মনে হল আগে কোথাও দেখেছি তবে কোথায় তা মনে পরছেনা, মেয়েটার চেহারাটা গোলগাল ভারি মিষ্টি উচ্চতাই ২ ইঞ্চি ছোট হবে আমার থেকে,

ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি নাম তোমার?

সিয়াম।

ওর বোনটার দিকে তাকাতেই নাম বলে দিল।

সুমাইয়া।

খিদেয় পেটের ভেতর ছুচা দৌড়াদৌড়ি করছে, আর যা নাস্তা দিয়েছে তা আমি একাই সাবড়ে দিতে সক্ষম, নাস্তার অবস্থা ৬ টা পরটা আর আলুভাজি , আমি একটা খেয়ে রেখে দিলাম, সুমাইয়া আরও একটা খওয়ার জন্য জরাজুরি করল, আমি খেলাম না।

বড় অবাক লাগল আমার কাছে, এই অল্প সময়ের মধ্যেই ও আমার সাথে এত ফ্রি মাইন্ড হল কি ভাবে?

ফ্রি মাইন্ড হওয়ার কারণও আছে বটে, আমি ওদের কে কথা দিয়েছি এখান থেকে ওদেরকে মুক্ত করবই, আর ওদের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে আমার উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস আছে।

কিন্তু কি ভাবে যে বের হব তা নিজেও জানিনা, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, রুমটা একবার চক্কর মেরে দেখা যাক কোন ফাঁকফোকর পাওয়া যাই কিনা, প্রথমেয় বাথরুমে গেলাম, কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হল, আর রুমের ভ্যানটিলেটারটা যা ছোট টা দিয়ে সরবচ্চ আমার পা দুটো বের করা যাবে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে পুরা রুমটা নিরীক্ষণ করেও বেরুনর মত কোন জায়গা বের করতে কতে পারলাম না, শেষমেস চেহারাই একটা নিরাশ ভাব নিয়ে মেঝেতে ধপ করে বসে পরলাম, ওরা দু ভাই বোন এতক্ষণ আমার কার্যকলাপ দেখছিল, হঠাৎ আমাকে এভাবে নিরাশ হতে দেখে সুমাইয়া এগিয়ে এসে প্রশ্ন করল।

ভাইয়া! আপনার নামটা কি জানতে পারি?

আমি শুকনো মুখে উত্তর দিলাম, জিসান

শুধুই জিসান? আগে পরে কিছু নেই?

আপাতত মনে পরছেনা।

ও তাই! আচ্ছা আপনার বাসা টাউন হল বাজারের পশ্চিম পার্শে, তাইনা?

এবার আমি ওর দিকে ভাল করে তাকালাম, ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে, হঠাৎ ওকে আমার বড্ড পরিচিত মনে হতে লাগল কিন্তু চিনতে পারলাম না, ও আমার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল, সৃতির পাতা হাঁতড়াতে হাঁতড়াতে এক জাগায় থেমে গেলাম, আবার তাকালাম ওর দিকে ও তখন মিটিমিটি হাসছে, আমার মুখটা খুশীতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল,

এক রাশ বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলাম… সিমু তুই???!!!

কিরে  হরিপদ এতক্ষণ পরে চিনলি তাহলে, আমিতো তোকে প্রথম দেখেই চিনে ফেলেছি, ।

আমাদের দুজনের পরিচয় সেই প্রাইমারীতে, আমি যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি ও তখন আমাদের স্কুলে নতুন ভর্তি হয়, প্রতি ক্লাসেই প্রথম স্থানটা আমার দখলেই থাকত, কিন্তু যখনি সুমাইয়া আমাদের ক্লাসে এডমিশন নিল, ব্যস শুরু হয়ে গেল আমার দুর্দিন, তখন থেকে থ্রি পর্যন্ত মাত্র দুবার ফাস্ট হয়েছিলাম, তাও আবার ধাক্কে ধুক্কে।

এ কারনে ও ছিল আমার দু চোখের বিষ, পরে অবশ্য ঐ হয়েছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

আর আমার নাম হরিপদ হওয়ার পেছনে এক বিশাল ইতিহাস আছে, সেটা সংক্ষেপেই বলি।

আমার হাতের লেখা ছিল ভয়ানক খারাপ মাঝে মাঝে নিজের হাতের লেখা নিজেই বুঝতাম না, একমাত্র সুমিই আমারে লেখা ভাল করে বুঝত, একদিন টিফিন পিয়ডে ক্লাস রুমে কেও ছিলনা, ছিলাম একমাত্র আমিই, মনে মনে ভাবলাম ব্লাকবোর্ডে কিছু আঁকিবুঁকি করা যাক, যেই ভাবা সেই কাজ, চকটা তুলে নিলাম স্যারের টেবিল থেকে, সাথে সাথে মনে পরল এক আজব বাক্য “হরিপদ” বড় করে বোর্ডে লিখে ফেললাম সেটা, সুমাইয়া যে কখন থেকে আমার পেছনে দাঁড়ানো আমি টেরই পাইনি।

হঠাৎ  ও হরিপদ বলে চিৎকার করে উঠল, আমারে হাত কেঁপে চকটা মাটিতে পরে গেল, ঐ দিনই ত্যদরটা সারা ক্লাস মায় ঘসনা করে দিল আমাদের জিসান আজ থেকে হরিপদে রুপান্ত্রিত হল, আর ওর সুমি নামটা আমিই দিয়েছিলাম কি কারনে দিয়েছিলা তা আর মনে নেই, তার কিছুদিন পরেই আমাদের থ্রির ফাইনাল পরীক্ষা হল, ঐ পরীক্ষাই আমি হলাম ফাস্ট আর ও হল সেকেন্ড, তারপর আমি স্কুল ছেড়ে মাদরাসাই চলে আসি,  পরে ওর সাথে আর দেখা হইনি।

সেই সুমি কত বড় হয়ে গেছে, চেহারাই তেমন পরিবর্তন আসেনি ও আগের থেকে একটু লম্বা হয়েছে এই আর কি, আর ফর্সা হয়েছে।

 

সুমির কনুয়ের গুঁতা খেয়ে আতিত থেকে ফিরে এলাম।

কিরে কি ভাবছিস তুই? জানিস জিসান তোকে অনেক হ্যান্ডসম লাগছে, ও সম্ভবত আমাকে খেপানোর জন্নে বলেছে, সেই ছোট থেকেই যদি আমাকে কেও সুন্দর বলেছে তাহলে তার পিণ্ডি চটকে ছেড়ে দিতাম, যদিও এখন এমন আর হয়না।

তো…? কি বিশ্ব সন্দরির সরি সুন্দরার মুকট পরাবি নাকি?

ওসব কথা এখন বাদ দে, এখান থেকে কি ভাবে বের হওয়া জায় সেটা চিন্তা কর, আমি দারাতে দারাতে কথাটা বললাম।

তুই কি ভাবছিস?

মারামারি করে বের হব, তাছারা কোন উপাই নাই

মানে?

শোন এই রুম থেকে বের হবার মত কোন ফাঁকফোকর নেই, সুতরাং ওদের দুটকে শুইয়ে বের হতে হবে।

তোর মাথা খারাপ নাকি , তুই একটা পাঠকাঠি হয়ে লড়তে যাবি বাম্বু বাসের সাথে???!!

এত বকবক করা লাগবেনা আমি যা করব চুপচাপ দেখবি, যখন দৌড়াতে বলব তখন তুই সিয়াম কে নিয়ে পালাবি, তোর কাজ এততুকুই।

ইতিমদ্ধে দুপুরের খাবার দিয়ে গেল, যাইহোক করে তিনজনে তা খেলাম , এখন সুধু রাতের অপেক্ষা, যা প্লান করেছি তা ঠিক মত হলেই হয়।

আমি সিমুর দিকে ফিরলাম, ও অন্য দিকে তাকিয়া কি যেন ভাবছে, চোখে পানি টল টল করছে, আমার বেশ খারাপ লাগল, ওর নাম ধরে আস্তে করে ডাক দিলাম , আমার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে?

আমার উপর তোর ভরসা হচ্ছে না?

ও এবার আমার দিকে ফিরল, এতক্ষণে ওর চোখে জমে থাকা পানিটা গড়াতে শুরু করেছে, নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, জিসান!

আমার মনে হচ্ছে এখান থেকে আমরা আর কোনদিন বের হতে পারবনা, এতটুকু বলেই ও কান্নাই ভেঙ্গে পড়ল, ওর দেখাদেখি সিয়ামও কান্না শুরু করল, কিছুক্ষণ সান্তনার বানী শুনিয়ে দুজনকে ঠাণ্ডা করলাম। আস্তে আস্তে ভ্যানটিটেলার দিয়ে প্রবেশ করা আলোর প্রখর কমতে লাগল, বুঝতে পারলাম সন্ধ্যা হয়ে আসছে,  উঠে গিয়ে রুমের অল্প পাওয়ারের লাইটটা জালিয়ে দিলাম, এক সময় ভ্যানটিলেটারের ও পাশটা আঁধারের চাঁদরে ঢেকে গেল, সিমু ঘুমিয়ে ছিল ওকে আস্তে করে ডেকে তুললাম, আমার ভেতরটা কেমন জানি উত্তেজিত হয়ে উঠছে, বার বার ঘেমে জাচ্ছি, বাইরে মোটামুটি ভালই শীত।

সিমুকে বললাম সিয়ামকে ঘুম থেকে তুলতে, তারপর ভাল করে প্রস্তুত হতে , একটু পরেই আমাদের পালাতে হবে, ও পালনর কথা শুনে কিছুটা চমকে উঠল, তবে আমাকে কিছু বলল না।

হাত ঘরিতে তাকিয়ে দেখি রাত ৮ টা, তার মানে আর কিছুক্ষন পরেই খাবার দিতে আসবে? পায়জামার পকেটে হাত দিয়ে দেখি ফলডিঙ ছুরিটা জায়গা মতনই আছে, বাসা থেকে বেরবার সময় কখন যে ছুরিটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছি খেয়ালই নেই, ইতিমদ্ধে পাঞ্জাবি খুলে ভ্যানটিলেটার দিয়ে তা বাইরে ছুড়ে দিয়েছি।

হঠাৎ তালা খুলার শব্দ শুনে সজাগ হয়ে গেলাম, সিমু আমার হাতটা খামচে ধরল, ওর মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এলো আমার নামটা, আমি ওকে অভয় দিলাম।

এমন সময় রুমে একজন মাঝারি গড়নের লোক প্রবেশ করল, আমি সোজা দাড়িয়ে গেলাম সাথে ওরা দু ভাই বোনও, লোকটাকে উদ্দেশ্য করে দিলাম একটা ঝাড়ি, আর যাবে কোথায়? লোকটা ঠাস করে আমার গালে একটা চর বসিয়ে দিল, আমার মেজাজটা গরম হতে সময় লাগল না, যদিও এটা ছিল আমার একটা প্লান, ব্যাটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর ঘারে বসিয়ে দিলাম একটা কড়া হুক কিক, কারাতেতে আমি মোটামুটি ভালই পারদর্শী, ,লোকটা মুখ বিকৃতি করে মাটিতে বসে পরল, ব্যাস এই সুজগ গলার মাঝখানে বসিয়ে দিলাম একটা কারাতে কোপ, সাথে সাথে লোকটা জ্ঞান হাড়িয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরল, সুমি ভাবতেই পারিনি আমি জে বিপদের সময় এতটা ডেঞ্জার হয়ে উঠবো, তাই হা করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে, আমি ওর হাতটা ধরে টান দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম সাথে সিয়ামও, সোজা উত্তর দিকের গেট লক্ষ করে তিনজনে মিলে দিলাম দৌর, দরজাটার কাছাকাছি পোঁছাতেই, গেটটা খুলে একজন মধ্যবয়সি লোক বেড়িয়ে এলো, ওকে কোন সুজগ না দিয়ে ফ্লাইং শর্ট করলাম, লোকটা ছিটকে গিয়ে লোহার দরজার সাথে জোরে মাথায় বাড়ি খেল সেই সাথে মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল, ওকে এক পাশে ঠেলে দিয়ে মেন গেটের উদ্দেশে দৌর দিলাম, গেটটা পেতে বেশিক্ষণ লাগল না, গেটটা হাল্কা ভিড়ানো ছিল সেটা ধাক্কা দিয়ে খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলাম, কিন্তু বাইরে গাড় অন্ধকার আর চারিদেকে যা ঝোপঝাড় কোনদিকে যাব সেটা নিয়েই পরলাম মুশকিলে, তবে এখন থেমে থাকার সময় নেই যে কোন একদিকে পালাতে হবে।

সুমি আমার হাতটা সক্ত করে ধরে বলল, এখন কোথায় যাবি?

আমি ডান দিকটাই বেছে নিলাম, সুনেছি ডান দিকে সব সময় ভাল থাকে, সুমিকে বললাম তুই সিয়ামের হাতটা ভাল করে ধর আমি তোর হাত ধরছি, তারপর আল্লার নাম নিয়ে দিলাম দৌর , চেষ্টা করলাম যতটুকু পারাযাই নিঃশব্দে দৌরাতে , বেশিক্ষণ দৌরাতে হলনা, গাড়ির আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম রাস্তা অতিনিকটেই।

হঠাৎ সুমি “আউ” শব্দ করে দাড়িয়ে গেল।

কিরে কি হয়েছে? আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

মনে হয় পাটা কেটে গেছে, অনেক জ্বলছে।

আমি পায়ে হাত দিয়ে অনুমান করার চেষ্টা করলাম কোথায় কেটেছে, যা ভেবেছিলাম তায়, টাখনুর একটু ওপরে অনেকটাই কেটে গেছে, আর রক্তও বের হচ্ছে , সুমি আমাকে তারা দিয়ে বলল।

চল…চল…ওগুলো পরে দেখেলও হবে, তারাতারি রাস্তা খুজে বের কর।

আর দাড়ান সম্ভব না, আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলাম, কিছু দূর জেতে

না জেতেই মেন রাস্তা পেয়ে গেলাম্‌ রাস্তার পাশের দোকানপাট ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে , এবার সত্যিই আমার কপালে চিন্তার ভাজ পরে গেল, এখন কোথায় যাব? জাইগাটা কোথায় তাও চিনিনা , এমন সময় সুমি পাশ থেকে বলে উঠল, এই আমারা চট্টগ্রাম বিয়ানি বাজার এলাকাই আছি, ঐ  দেখ দোকানের সাইন বোর্ডের নিচে লেখা, ঠিকাটা পরে আমার চোখে একটা আনন্দের ঝিলিক খেয়ে গেল, এই বিয়ানি বাজারেই আমার আপন ফুফুর বাশা, আমার এই ১৮ বছর জীবনে মাত্র ৩ বার এসেছি এদিকে, এখন ফুফুর বাসা চিনার কোন প্রশ্নয় ওঠেনা , আসেপাসে একটা মোবাইলের দোকান পেলেই হয়। ফোন করে জানিয়ে দিলেই চলে আসবে।

সুমিকে কথাটা বলবো বলে ডানে ফিরে দেখি সুমি নেই, আমি এদিক অদিক তাকাতে লাগলাম, কোথায় গেল? ।

হঠাৎ সিয়ামের গলা শূণে পিছন ফিরে তাকালাম, দেখি সুমি গাছের সাথে হেলাণ দিয়ে চোখ বন্ধ করে পরে রয়েছে, আর সিয়াম আপু আপু বলে ডাকছে, আমি এক প্রকার দড়ে গেলাম ওর কাছে, লেম্পপষ্টের আলোই ওর পায়ের ক্ষতটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে, দেখে কিছুটা আঁতকে উঠলাম, তারাতারি পকেট থেকে রুমালটা বের করে ওর ক্ষত স্থানটা বেধে ফেললাম, পেছনে কার পদশব্দ পেয়ে ফিরে তাকালাম, দেখি একজন মধ্য বয়সি লোক এদিকেই এগিয়ে আসছে তার একটু দুরেই টয়টার এলিয়েন দার করানো, দেখেই বুঝা জাচ্ছে লোকটা উচ্চবিত্ত পরিবারের।

কি হয়েছে তোমাদের? লোকটা প্রশ্ন করল।

আমি ওনাকে সব ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করে, আমার ফুফুর কাছে কল দেওয়ার অনুরধ করলাম।

তিনি আমদের ঘটনা শুনে বিস্মিত হয়ে সাথে সাথে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে আমার হাতে দিলেন, আমি ফুফুর কাছে কল দিলাম, দু তিন বার কল হতেই ওপাস থেকে ফুফুর গলা ভেসে এলো ।

হ্যালো……কে?

ফুফু আমি জিসান।

জিসান কোথায় তুই?! কি হয়েছে তোর? ওদিকে তোর মা কাঁনতে কাঁনতে পাগল প্রাই।

ফুফু আমি এখন তোমাদের বাসার আসে পাশেই আছি, তবে চিনতে পারছি না তোমাদের বাসা, তোমাদের বাসায় যাওয়ার একটা বেবস্থা কর।

আচ্ছা তোর আসে পাসে কেও থাকলে তাকে মোবাইলটা দে, জাইগাটা কোথায় তা জেনে নিচ্ছি।

আমি মোবাইলটা তার হাতে দিয়ে, তাকে একটু কথা বলতে বললাম।

তিনি ফোনটা নিয়ে কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিলেন এবং গাড়িতে উঠতে বললেন, আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম, আবার কিডন্যাপ হয়ে জাই কিনা, উনি সম্ভত আমার মনের কথাটা পরতে পারলেন তাই মুচকি হেসে বললেন। ভয় নেই, তোমার ফুফুর সাথে কথা হয়েছে, তোমাদের কে বাসাই পৌছে দেব, আমি সুমিকে আস্তে করে গাড়িতে বসিয়ে দিলাম, আমারা তিনজন পিছনেই বসলাম, গাড়ি চলতে শুরু করল , কিছুক্ষন পর ভদ্র লোকটা আমাকে জিজ্ঞাসা করেলন।

আসাদ মঞ্জিলে তোমার কে থাকে?

আমার ফুফুর বাসা।

তোমার ফুফার নাম কি ?

আসাদুর রাহমান।

আরে তাই নাকি? আসাদ সাহেবত আমার কলিগ, আমরা একই অফিসে কাজ করি।

আমি মনে মনে আল্লাহর সুকরিয়া আদায় করলাম। এতক্ষন পরে সুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আমার এখন কোথায় যাচ্ছি, আমি ওকে সংক্ষেপে সব কিছু বললাম, দুমিনিট পরেই গাড়িটা থেমে গেল, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, ফুফুর বাসাই এসে পরেছি, বাসার সামনে ফুফা ফুফু দাড়িয়ে রয়েছে, গাড়ি থেকে নামতেই ফুফু আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলান।

ফুফুর কোন ছেলে মেয়ে না থাকাই আমাকেই অনেকটা ছেলের চোখে দেখেন পরে সুমি কে দেখে আমাকে ছেড়ে ওর কাছে ছুটে গেলেন এবং হাত ধরে আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনলেন, আর সিয়াম এমনিই নেমে এসেছে, ফুফা তার কলিগের সাথে কুশল বিনিময় করে তাকে বিদায় জানালেন, ঘরে ঢুকে ফুফা ফুফুকে সব ঘটনা বললাম। সুনেত দুজনেরই চক্ষু চড়ক গাছ, সুমির পায়ের ক্ষতটা নজরে পরতেই ফুফু ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে হাজির হয়ে গেলন।

আমি ফুফুকে উদ্দেস্য করে বললাম ঘরে যা আছে জলদি খেতে দাও খিদেই নারি ভূরি হজম হয়ে গেল।

ডাইনিং টেবিলে আগে থেকেই খাবার হাজির ছিল, সুমিকে আসতে বলে সিয়ামের হাত ধরে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পরলাম।

সুমি আমার খাওয়া দেখে মিটিমিটি হাসতে লাগল, আস্তে করে বলল দেখেত মনে হচ্ছে কাচের প্লেট গুলও গিলবি।

ঐ রাতেই সুমিদের এবং আমাদের বাসাই ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হল, আগামিকাল আমারা ঘরে ফিরছি।

পরদিন সকালে ফুফু আমাদের কে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়া হলেন, ফুফা বাসাতেই থেকে গেলেন অফিস ছুটি না থাকায়।

মাগরিব নাগাত বাশার গেটে পৌছে গেলাম , সুমি প্রথমে আমাদের বাসাই আসতে না চাইলেও পরে জোরাজুরি করাতে রাজি হয়েছে।

বাসাই কলিং বেল দিতেই আম্মু গেট খুলে সেকি কান্না, এই কন্না বিরহের নই এই কান্না আপন ফিরে পাওয়ার কান্না,।

একবার এক বন্ধু বলেছিল, জানিস মানুষ বেশি রেগে গেলে হেসে দেই আর, আর বেশী খুশি হলে কেঁদে দেই, এখন দেখি বাস্তবেও তাও।

কিছুক্ষন পর খালা সুমিদেরকে ওদের বাসাই দিয়ে আসল  তারপর অবশ্য আর জানতে পারিনি ওদের বাসাই কি কাহিনি ঘটেছিল।

তারপর থেকে ওদের সাথে পারিবারিক ভাবে আমাদের একটা ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল, আর সুমিত দুদিন পরে পরে আমাদের বাসাই একবার হাজিরা না দিলে ওর ভাতই হজম হয়না, অবশ্য আমার আম্মুও একটু অবসর পেলেই ওদের বাসাই গিয়ে গল্প গুজব করেন, ওদের বাসা আমদের বাসা থেকে দু মিনিটের রাস্তা।

 

পরিশিষ্ট

বেশ কিছুদিন ধরে একটা জিনিষ লক্ষ করছি, প্রতদিন একই সময় আমাদের বাসার সামনে একটা লাল গাড়ি দাড়িয়ে থাকে, ব্যাপারটা একদিন সুমিকে জানালাম ও বলল ওদের বাসার সাম্নেও নাকি এমন একটা লাল গাড়ি প্রাই সময় দেখা জাই, ড্রাইভার তাকে ও একবার দেখেছিল মনে হল ওদের কিডন্যাপ কারি সেই লোকটা।

তাহলে কি আমাদের কে আবার কিডন্যাপ করবে?