Site icon খিচুড়ি

গুহামানবের খাবার

তখনকার দিনগুলোই ভাল ছিল। মানুষজন তাদের পরিবার নিয়ে গুহায় থাকতো। একদম সাদাসিধে জীবন।

কোন রকম টেনশন নেই। সন্ধ্যা বেলায় ট্যাক্সি ধরে দামি কোন রেস্টুরেন্টে যেতে হত না রাতের খাবার খেতে। রাত জেগে টিভি দেখত না ওরা।

সকালের সূর্য উঠার সাথে সাথে ওদের জীবন শুরু হত। আবার কমলা রঙের সন্ধ্যায় ওদের দিন শেষ হত। তারপরই ছুটি।

আগুন জ্বালাত। গোল হয়ে সবাই আগুনের ধারে বসতো। সারা দিন ধরে শিকার করে আনা বাইসনের বড় ঠ্যাংগুলো আগুনে ঝলসাত। চমমন করা ঝলসানো মাংসের ঘ্রান ছড়িয়ে পড়তো চারি দিকে।

আকাশ ভর্তি চুমকির মত তারা। ঝিকিমিকি করতো।

একদম সহজ জীবন ছিল তাদের। তাই না ? কিন্তু খাওয়াটা হয়তো

সহজে মিলতো না। দৌড়ে গিয়ে পাশের মুদির দোকান থেকে কিছু কিনে আনতে পারতো না।
সুপার মার্কেটে গিয়ে পছন্দের প্যাকেট করা খাবার ও বাছাই করতে পারতো না।

তো তোমার কি মনে হয় ? গুহা যুগের মানুষেরা স্বাস্থ্যকর খাবার খেত ?

আজকের ক্লান্তিকর আর ব্যস্ত দিন গুলোর কথা মনে করে অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন অতীতের গুহামানবেরা আমাদের তুলনায় ভাল খাবার খেত। আমরা প্রসেস করা খাবার খাই। অতিরিক্ত লবণ দেয়া বা অন্য কোন বাজে ক্যামিকেল দেয়া। সেই তুলনায় গুহা মানবদের খাবার ছিল অনেক টাটকা।
কিন্তু আসলেই কি তাই ? গুহা মানবদের খাবারের মান ভাল ছিল ? তাদের ডায়েট স্বাস্থ্য সম্মত ছিল ?

অ্নুমান করা যায় ২০ লক্ষ বছর আগে গুহা যুগের আরম্ভ। এবং এই গুহা যুগ শেষ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে। যখন মানুষ পুরোপুরি চাষ বাস শিখে ফেলেছে। সেই সময়টা মানুষ জন বেশ ব্যাস্ত । আগে শুধু শিকার করতো । এখন ফসল ফলিয়ে শস্য জমায়। সবজী , বাদাম, ফল, মাশরুম হাবিজাবি। গুহামানবেরা তো লবণ, চিনি, শিম জাতীয় দানা বা মাখন টাইপের খাবারের ব্যবহার জানতো না। কৃষি যুগে মানুষ সেটা খাওয়াও শিখে গেছে।

 

আজকের যুগে তো আমরা কত রকমের অ্যান্টি বায়োটিকের ব্যবহার শিখেছি। জীবাণু সম্পকে জানি । খাবারের পুষ্টিমান নিয়েও বেশ মাথা ঘামাই। তারপরও ডায়াবেটিক , উচ্চ রক্তচাপ, এবং হৃদপিণ্ডের কত রকম রোগে ভুগছি সবাই।

গুহাযুগের মানুষদের কিন্তু অমন কোন অসুখ বিসুখ হত তেমন প্রমান পাওয়া যায়নি। তাতেও পোক্ত কোন যুক্তি হাতে আসে না। গুহা যুগের মানুষ বেশি হলে গড়ে ১৮ বছর বাঁচত। আজকের আধুনিক যুগে তো ৮০ বছর বাচা কোন ব্যাপারই না।

গুহা যুগের মানুষ বেশি দিন বাঁচত না। কারন শিকার করতে গিয়ে বুনো জন্তুর হাতে মারা যেত। বা শত্রু পক্ষের সাথে লড়াই করতে গিয়ে। বা জীবাণুর আক্রমণে । রোগে ভুগে।

আজকাল অমন জীবাণুর আক্রমণে হুট হাঁট করে মরি না আমরা। নতুন ধরনের রোগে মরি। যেমন ক্যান্সার।

প্রতি বছর ১৭৩০০০ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। মারা যায়। ডাক্তার কেলিয়ান পেট্রুসি নামে এক লেখিকা তার লেখা বইতে যুক্তি দেখান- সেই গুহাবাসি মানুষ বেশ ভাল খাবার খেত। অন্তত আজকের দিনের চেয়ে।

তবে অন্য অনেক বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে রায় দিয়েছেন, নাহ একদম ঠিক না কথাটা। শস্য আর শিম জাতীয় খাবার মোটেও পড়তো না তাদের পেটে।
সীমাবদ্ধ খাবার সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দেয় না।গুহা যুগের মানুষ জন মোটেও সুষম খাবার খেত না।

 

 

Exit mobile version