ইকরামুল হাসান।একজন মাদ্রাসা ছাত্র।বয়স আনুমানিক ১৪ বছর।সবাই ওকে আদর করে ইমু বলে ডাকে।দুর্দান্ত সাহসী আর বুদ্ধিমান সে।একটু চঞ্চল স্বভাবের।তবে যথেষ্ট ভদ্র আর অমায়িক ছেলে।ধর্মীয় দিক থেকেও জুড়ি নেই তার।পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে।কখনো মিথ্যে বলতে শোনা যায়নি তাকে।কারো কোন অভিযোগও শোনা যায়নি ওর বিরুদ্ধে।সকলের সাথে মিশুক আর আলাপ প্রিয়।তবে তার একটি অদ্ভূত শখ আছে।তা হলো রহস্য উদঘাটনের নেশা।একটু আলামত পেলেই হলো।শুরু হয়ে যায় গোয়েন্দাগিরি।যদিও এ পর্যন্ত কোন রহস্যেরই সে কুল কিনার করতে পারেনি।তবুও নেশা বিন্দুমাত্র কমেনি ছেলের।একটাই বক্তব্য তার- যখন আল্লাহ তাকে অনুগ্রহ করবেন,তখনি সে সফল হতে পারবে।এর আগে নয়।কাজেই সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসা রেখেই সে আগামী সোনালি দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে।তার বিশ্বাস একদিন সে-ই হবে বিখ্যাত গোয়েন্দা ব্যক্তিত্ব।সেদিন দেশ বিদেশে তার নাম ডাক ছড়িয়ে যাবে।সকলে এক নামে চিনবে তাকে- ডিটেক্টিভ ইমু হাসান!ভাবতেই কেমন যেন সুখ অনুভব হচ্ছে!
এদিকে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে আজ দুদিন।হাতে এখন প্রচুর সময়।প্রায় মাস দেড়েক।কিন্তু সময় যেন যেতে চাচ্ছেনা কিছুতেই।একটা কেইস পেয়ে গেলে ভালো হতো।তাহলে সময়টাকে কাজে লাগানো যেত।একটা বিখ্যাত ডিটেক্টিভ বই নিয়ে পাতা উল্টাচ্ছে আর মনে মনে এসব ভাবতে শুরু করেছে ইমু।হঠাত্ করেই টেবিলে পড়ে থাকা পত্রিকাটার দিকে চোখ গেল ওর।এই পত্রিকাগুলোও হয়েছে!যত বাজে খবর ছেপে পাতা ভরে রাখে।সকালে একবার অবশ্য প্রধান শিরোনাম গুলো পড়া হয়েছে।তাই এবেলা আর পড়তে ইচ্ছে হয়েও কেন জানি হলোনা।এর মধ্যে আসরের আযান পড়ে গেছে।কাজেই পাঞ্জাবীটা পড়ে টুপিটা প্যান্টের পকেটে করে বেরিয়ে গেল মসজিদের দিকে।মসজিদে গিয়ে দেখা হল তারেকের সাথে।তারেক ও পাড়ায় থাকে।ইমুর ক্লাস ম্যাট।সেইসাথে ভালো বন্ধুও বটে।যাই হোক,নামায শেষ করে দুবন্ধু নদীর পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে।উদ্দেশ্য- মাগরিব পর্যন্ত নদীর পাড়ে বসে দুজনে গল্প করবে।তারেক প্রায়ই বিকেল বেলা এ পাড়ায় আসে ইমুর সাথে গল্প করার জন্য।ইমুও মাঝে মধ্যে ও পাড়ায় যায়।দুজনে এরই মধ্যে নদীর পাড়ে এসে গেছে।এসে বসেও পড়েছে একটা ভাল জায়গা দেখে।আহ!কি চমত্কার বাতাস বইছে!বসে থাকতে বেশ ভালোই লাগছে।তাছাড়া গল্পও জমে উঠেছে।হঠাত্ তারেকের কাছ থেকে একটা দারুন রোমাঞ্চিত সংবাদ পেয়ে ইমুর কান দুটো শিকারি বাঘের মতো খাঁড়া হয়ে গেল।ওদের পাড়া থেকে নাকি কদিন আগে একটা ৫ বছরের বাচ্চা নিখোঁজ হয়েছে।কিন্তু অনেক খোঁজা খুঁজি করেও আর পাওয়া যায়নি তাকে।পুলিশ অবশ্য এখনো আশা ছাড়েনি।তবে সবচেয়ে গরম খবর হলো- আজো নাকি একটা বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।কিন্তু কেউ একজন দেখে ফেলায় আর পারেনি।রেখে পালিয়ে গেছে।বেটা চালাক আছে ,ধরা পরেনি।এর বেশি কিছু বলতে পারল না তারেক।তবে ইমুর ধারণা এতেই তার কাজ হয়ে যাবে।কাল থেকে একটা ভয়ানক গেম শুরু করা যাবে- মিশন ছেলে ধরা।কিন্তু তারেককে এব্যাপারে কিছু জানানো যাবে না।তাহলে আবার বাড়ি থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে।কাজেই এখন সবকিছু চেপে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।এদিকে মাগরিবের আযানের সময় হয়ে যাওয়াতে আজকের মতো উঠতে হলো।
পরদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইমু শুধু ভেবেই গেল।আসলে কি করে কি করবে?।যাই হোক,আসরের নামায শেষ করে অতিরিক্ত দুরাকাত নফল নামাযও পড়ে নিল।কারণ ইমু জানে!এরূপ করলে আল্লাহ সদয় থাকেন।ফলে কঠিন কাজও অনেক সহজ হয়ে যায়।এবার আল্লাহর নাম করে বেরিয়ে পড়ল তারেকদের পাড়ার উদ্দেশ্যে।যদি কোন ক্লু পাওয়া যায়!ইমু এমুহূর্তে সে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে,যেখান থেকে ইদানিং বাচ্চা চুরি হচ্ছে।এখানে সে আগেও এসেছে।জায়গাটা বেশ নীরব থাকে প্রায়শই।যদিও একটা ছোট খাট পার্কের মতো জায়গা!কিন্তু লোকজনের আনাঘোনা একেবারে নেই বললেই চলে।যদিও এ পথটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার জন্য।আর এ সুযোগটাই ব্যবহার করেছে কুচক্রি দল।ইমু মনে মনে এসব ভাবছে আর অপেক্ষা করছে।কিন্তু নাহ!কিছুতেই কিছু হলো না।এদিকে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এল।তাই ইচ্ছে করলেও আর থাকা গেলো না।দেরি করে বাড়ি ফিরলে আবার জেরার মুখে পড়তে হবে।তাই আর সময় নষ্ট না করে বাড়ির পথে রওনা দিল ইমু।তবে মনে মনে ঠিক করে নিল যে,আগামিকাল ইনশাআল্লাহ সকালেই এসে পড়বে এখানটায়।তাহলে যদি কোন ক্লু পাওয়া যায়!এদিকে পাড়ায় ঢুকেই চোখে পড়ল একজন অচেনা লোককে।যে কি-না মসজিদের আশ পাশটাতে এদিক সেদিক করছে।আযান হচ্ছে অথচ লোকটার মসজিদে যাওয়ার কোন লক্ষণই নেই।দেখেতো মুসলমানই মনে হচ্ছে।তবে কেমন যেন একটু ভয়ানক টাইপের।যদিও ভালো করে খেয়াল করা হয়নি,তবুও লোকটার চোখ দুটো যে কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছিল তা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছিল।যাই হোক,এবিষয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় এখন আর হাতে নেই।আযান হয়ে গেছে।কাজেই নামায শেষ করে বাড়ি ফিরতে হবে।
সকাল ৮ টা ৫ মিনিট।ইমু তারেকদের পাড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছে মাত্র।কিছুদূর এগুতেই চোখে পড়ল সেই লোকটিকে।যাকে গতকাল সন্ধ্যের সময় দেখেছিল।আজ আবার এখানে।কিন্তু লোকটা কে?যেই হোক!আমার এতে জানার কি আছে।আমি যে কাজে যাচ্ছি,যাইনা।শুধু শুধু একটা ফালতু লোককে নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করছি।যেই আবার একটু জোড়ে হাঁটা দিয়ে এগুতে শুরু করলো,তখন হঠাত্ করেই মাথায় এলো- আরে!এ জায়গাটাতো ঠিক তারেকদের পাড়ার ও জায়গাটার মতো!তবে কি আজ এ পাড়ায় এসেছে !কেমন যেন সন্দেহ হলো ইমুর।তাই ঠিক করে ফেললো আজ আর ও পাড়ায় যেয়ে কাজ নেই।বরং এখানেই লোকটাকে চোখে চোখে রাখা যাক।প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে এলো।কিন্তু লোকটা এখান থেকে একচুলও নড়ছেনা।তার মানে ইমুর সন্দেহই ঠিক।দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি ঘটে।এমন সময় এ দিক দিয়ে একটা ৬-৭ বছরের বাচ্চা স্কুলে যাচ্ছিল।রাস্তাটাও তখন একদম ফাঁকা।কাছে আসতেই দেখা গেল,লোকটা একবার এদিক ওদিক চোখ ঘোরালো।তারপর কি যেন একটা চেপে ধরল বাচ্চাটার মুখে।সাথে সাথে বাচ্চাটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।এ সুযোগে লোকটা হাতে থাকা মাঝাড়ি সাইজের সুটকেসটা খুলে আরেকবার এদিক সেদিক তাকিয়ে বাচ্চাটাকে এর ভিতর ভরে নিল।এরপর দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগল ইমুর দিকে।ইমু ভেবেছিল লোকটা তাকে দেখে ফেলেছে।কিন্তু না!লোকটা আসলে এ পথ ধরে তারেকদের পাড়ার দিকে যাচ্ছে।ইমুও লুকিয়ে পিছু নিল।
সুটকেসটা হাতে নিয়ে লোকটি হন হন করে এগিয়ে যাচ্ছে । ইমুও নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে পিছু নিচ্ছে । এমন সময় দেখা গেল একটা পুলিশ জিপ । লোকটি মনে হয় কিঞ্চিত ভয় পেয়ে গেছে । কারণ হঠাত্ করেই থমকে গেল লোকটি । এরপর কি একটা ভেবে যেন আবার হাঁটা ধরলো । ইমু এবার আর এগোল না । আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল । চোখ সোজা লোকটির দিকে । লোকটি যখন পুলিশের গাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল , তখন একজন পুলিশের চোখ পড়ল তার দিকে । জিজ্ঞেস করল- কিহে ভায়া ! সুটকেসটা খুব ওজন মনে হচ্ছে ? তা ভেতরে কি? -না স্যার!তেমন কিছুনা।বলে চলে যেতে উদ্ধত হল- এমন সময় অন্য একজন পুলিশ চিত্কার করে বলে উঠল , হোল্ড । লোকটি ভাবল এই বুঝি বুঝে গেছে সবকিছু । এখনি বুঝি ধরা খাবে । কাজেই সুটকেসটা ফেলে রেখেই লাগাল রাম দৌড় । একছুটে চোখের আড়াল হয়ে গেল।দেখতে ভয়ানক হলে কি হবে , আসলে একটা ভীতুর ডিম সে।পুলিশটি আসলে এমনিতেই হোল্ড বলেছিল।ওনি আসলে দিবা স্বপ্ন দেখেন । সবসময় ভাবতে থাকেন , এই বুঝি এখনি চোর ডাকাত তাড়া করছেন । তাই কিছুক্ষণ পর পর এরকম হোল্ট বলে চিল্লিয়ে উঠেন । যাই হোক , লোকটির এভাবে সুটকেস ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশ ওয়ালাদের সন্দেহ হল । তাই তারা জিপটাকে একটু দাঁড় করিয়ে নিচে নেমে এল । সুটকেসটার পাশে এসে নেতা গোছের পুলিশটি অন্য একজন পুলিশকে সুটকেসটা খুলতে বলে বিস্ময় চোখে দাঁড়িয়ে রইল।সুটকেসটা খুলতেই দেখতে পেল একটা বাচ্চা ছেলে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে।সকলের চোখ ছানা ভরা হয়ে গেল।নেতা গোছের পুলিশটি- ওহ!শীট বলে আক্ষেপ করে উঠল।ওহ!নো।নিজেদের অসাবধানতার জন্যই লোকটি পালাতে সমর্থ হয়েছে।যাই হোক,ছেলেটিকে এখনি হসপিটালে এডমিটের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন।এরপর যার ছেলে তার কুলে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে- বলেই , ছেলেটিকে প্রথমে জিপে তুলল । এরপর স্টার্ট করল হসপিটালের উদ্দেশ্যে ।
এদিকে লোকটা যখন পালানোর জন্য দৌড় লাগালো , তখন ইমুও কৌশলে তার পিছু নিল । পিছু নিতে নিতে একেবারে চলে এল তাদের আস্তানায় । এখানে আরো অনেকগুলো বদমাশ টাইপের লোক দেখতে পেল ইমু । গোপনে জানতে পারল , আজ রাতের বেলা না-কি তাদের বস আসবে এখানটায় । এরপর চুরি করা বাচ্চাদের কি করা হবে তার সিদ্ধান্ত সেই নেবে । ইমুর আগ্রহ এবার চরমে উঠে গেল । সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল , যত রাতই হোক তাদের বসটাকে একবার দেখা চাই ই চাই । তাছাড়া চুরি করা বাচ্চাগুলো কোথায় আছে তা তাকে জানতেই হবে । রক্ষা করতে হবে নিষ্পাপ শিশুদের । তাই সে গোপনে আস্তানার এমন একটি জায়গায় লুকিয়ে রইল যাতে এখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে এ বিষয়ে সবকিছু শুনতে ও দেখতে পায় ।
রাত ১২ টা । এমন সময় বাইরে গাড়ির হর্ণ শোনা গেল । ভিতরে থাকা নর পিশাচরা বলা বলি করতে লাগলো যে , মনে হয় তাদের বস এসেছে । এজন্য তারা সবাই বাইরে বেরিয়ে গেল বসকে অভিনন্দন জানানোর জন্য । ইমু এবার আরো সিরিয়াস হল । এতক্ষণে তার অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে । এইভেবে একটু আনন্দও পাচ্ছিল । কিন্তু পরক্ষণেই সতর্ক হয়ে গেল । মনে পড়ে গেল কুরানের আয়াত- “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন ।” অতএব , ধৈর্য্যহারা হলে চলবেনা কিছুতেই । তাহলে হয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে । এসব ভাবতে ভাবতেই , “যালিমদের দল তাদের বস সহ ভিতরে প্রবেশ করল ।” তখনো ইমু আগের জায়গাতেই লুকিয়ে আছে । এবার আরো সতর্ক হয়ে গেল ও । তাকে এখন ওদের সব কথা পাই পাই শুনতে হবে । একটা কথাও মিস করা চলবেনা । কিন্তু আশ্চর্য্য হয়ে গেল তখন , যখন দেখতে পেল ঐ পাপিষ্ঠদের সাথে আফজল চাচাকে । আরো বেশি অবাক হল , যখন জানতে পারল ইনিই ওদের বস । এতদিন আফজল চাচার প্রতি ইমুর যে শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছিল , তা মুহূর্তের মধ্যে বালির বাঁধের মত তলিয়ে গেল । ছি ! আফজল চাচা ভাল মানুষের আড়ালে এমন জঘণ্য কীট ! কোনদিন ভাবতেই পারেনি ইমু । আসলে আফজল চাচা এলাকায় একজন সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত । মুখে লম্বা দাঁড়ি । পরণে সাদা পাঞ্জাবী , পাজামা আর টুপি । পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন । দান খয়রাতেও তার জুড়ি নেই । লোকেরা তাকে গরীবের বন্ধু বলেই জানে । শোনা গেছে তিনি না-কি গত বছর হজ্বও করে এসেছেন । ওনার মাঝে এত বড় শয়তান লুকিয়ে আছে তা কি কখনো ভাবা যায় ! ওনি যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকেও হার মানিয়ে দিয়েছেন । ইমু এবার বুঝতে পারল , যে কেন আল্লাহ মুসলমানদেরকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করতে বলেছেন । এদের মত জঘণ্য মুনাফিকদের প্রতি ইঙ্গিত করেই হয়তো তিনি কুরানে এরূপ ঘোষণা দিয়েছেন ! যাই হোক , আফজল চাচার ভাল মানুষী রূপ এবার সবার সামনে টেনে হিঁচড়ে ছাড়াতে হবে । কাজেই বেশি বিচলিত না হয়ে খুব মনোযোগের সাথে শুনতে লাগল পাপিষ্ঠদের সব কথা । সেইসাথে পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে খুবই সতর্কতার সাথে ভিডিও করতে শুরু করে দিল । কেননা পরবর্তীতে এটা আফজল চাচার কুকর্মের বড় সাক্ষি হতে পারবে । এদিকে নরপিশাচরা সিদ্বান্ত নিল যে , আজ রাতটা কোনরকম এখানে পাড় করে কাল খুব ভোরে চুরি করে আনা বাচ্চাদেরকে চালান করে দেবে হংকংএ । কারণ হংকং এর এক পার্টি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পেমেন্ট নিয়ে আফজল চাচা এসব করে থাকেন । সেখানে না-কি বাচ্চাদেরকে অপারেশন করে শক্তিশালী রোবটে পরিণত করা হয় । যা সাধারণ রোবটের চেয়ে দশ গুণ বেশি কর্মক্ষম হয়ে থাকে । ভাবতেই খারাপ লাগছে মানুষ কি করে এত নির্মম আর পাষাণ হয় ! কেন বুঝতে চায়না এসব বাচ্চাদেরও সাধারণ জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে ! আল্লাহই জানেন ! পরকালে এসব পিশাচদের কত ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে !
রাত ২ টা । এখনো ইমু বাড়ি ফিরেনি বলে ইমুর আম্মু খুব কান্না কাটি করতে লাগলেন । আসলে এর আগে ইমু কখনো এত রাত করেনি বাসায় ফিরতে । সম্ভাব্য সব জায়গায়ই খোঁজ করে ইমুকে না পেয়ে ইমুর বাবা উতলা হয়ে থানায় গেলেন পুলিশকে ব্যাপারটা জানানোর জন্য । যদি তারা কিছু একটা করতে পারে ! ওদিকে ইমু দুষ্কৃতিকারীদের সব দূরভিসন্ধি জেনে নিয়ে সুকৌশলে পাকা গোয়েন্দার মতো আস্তানা থেকে বেরিয়ে এল । এরপর সিদ্ধান্ত নিল যে,একবার থানায় যাবে।গিয়ে সবকিছু জানাবে পুলিশকে।কিন্তু ইমুর মন তাকে নিষেধ করল।যদি এই ফাঁকে দুষ্কৃতিকারীরা বাচ্চাগুলোকে নিয়ে অন্য কোন গোপন জায়গায় বেরিয়ে যায়!তাহলে এত কষ্ট,সবই বিফলে যাবে।
ইমু শুধু ভেবেই যাচ্ছে । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখন কি করা উচিত তা বুঝতে পারছেনা । স্নায়ুবিক চাপ আসলে খুবই সিরিয়াস একটা ব্যাপার । এসময় অনেক সহজ সহজ বুদ্ধিও মাথায় আসেনা । তাই বলে এভাবে আর বেশিক্ষণ হাত গুটিয়ে বসে থাকাও যাবেনা । একটা না একটা উপায় বের তাকে করতেই হবে । আইডিয়া ! দুরাকাত নফল নামায পড়ে নেয়া যাক । আসলে বিপদের সময় আল্লাহই আমাদের শিখিয়েছেন নামায আর ধৈর্য্যের মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে । কিন্তু এত রাতে ওযূ করার জন্য পানি পাবো কোথায় ! আশে পাশে কোন পানির ব্যবস্থা নেই বলেই মনে হচ্ছে । তাছাড়া এ মুহূর্তে পানির খোঁজ করার জন্য দূরেও যেতে পারবেনা ইমু । তাহলে এখন কি করবে সে ! নামায তাকে পড়তেই হবে । কাজেই মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করে নিল । এরপর সুবিধা মত জায়গায় দাঁড়িয়ে গেল নামায পড়ার জন্য । নামায শেষ করে মোনাজাত ধরল আল্লাহর দরবারে । আশ্চর্যের বিষয় ! মুনাজাত শেষ হতে না হতেই মাথায় একটা চমত্কার আইডিয়া এসে গেল । তা হচ্ছে পকেটেতো মোবাইল ফোনটা রয়েছেই ! তাহলে বাবাকে একবার ফোন দেই না কেন ! যেই ভাবা সেই কাজ । পকেট থেকে বের করল ফোনটা । ওহ ! নো । ইটস ডিসগাস্টিং ! আসলে চার্জ না থাকায় মোবাইলটা কখন যে বন্ধ হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি ইমু । তাহলে ! এখন কি করবে সে ? যাই হোক আল্লাহর উপর থেকে ভরসা হারালে চলবেনা । তিনিই একটা ব্যবস্থা করে দিবেন । হয়তোবা এখন তিনি ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন । হঠাত্ তাঁর মাথায় আরেকটা দারুন বুদ্ধি এল । আরে ! আমি ওদের গাড়িটার চাকার হাওয়া ছেড়ে দিচ্ছি না কেন ! তাহলেইতো বেটাদের পালানোর পথ বন্ধ হয়ে যায় । এত রাতে এখান থেকে পালানোর আর দ্বিতীয় কোন উপায় নিঃসন্দেহে মিলবেনা । ভাবনা মত করে ফেলল কাজটি । সত্যিই চমত্কার একটা আইডিয়া । এখন আর ভয়ের কোন কারণ নেই । মনে মনে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা পেশ করে থানার উদ্দেশ্যে দৌড় লাগালো সে ।
রাত ৩ টা । ভোর হয়ে এল প্রায় । তাই আফজল চাচা তার চেলাদের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যস্ত হল । আর চেলাদেরকে এও জানিয়ে দিল , ঠিক ৪ টা ১০ মিনিটে একটা বড় আকারের কাভার্ট ভ্যান আসবে এখানে । সেটাতে করেই যেন তারা বাচ্চাগুলোকে জায়গামতো পৌঁছে দেয় । তাহলেই ব্যাস । ঝামেলা শেষ । এরপর পকেট থেকে দুটো টাকার বান্ডিল বের করে তাদের দিকে ছুঁড়ে মারল । টাকা পেয়েতো তারা দারুন খুশি । আপনি কোন চিন্তা করবেন না বস । সব কাজ হয়ে যাবে । আপনি এখন নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারেন । – দেখিস কিন্তু । খুব সাবধানে ! যেভাবে যেভাবে বলেছি , সেভাবে সেভাবে করবি । আর কাজ শেষ হয়ে গেলে পেয়ে যাবি আরো দুটো গরম গরম বান্ডিল । লোভে সকলের চোখ চিকচিক করে উঠল । এরপর তিনি বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে আস্তানা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে যেয়ে বসল । যেই গাড়ি স্টার্ট দিল , বুঝতে পারল গাড়ি একচুলও নড়ছেনা । কি হয়েছে বুঝতে না পেরে গাড়ি থেকে নেমে নিচে এল । ডেম ইট ! পেছনের দুটো চাকারই হাওয়া নেই । চাকার হাওয়া যাওয়ার আর সময় পেলনা ! কিন্তু যে করেই হোক বাড়ি তাকে ফিরতেই হবে । ফজরের নামাযটা তাকে জামাতের সাথে পড়তেই হবে । আসলে এভাবে লোকটা সবার কাছ থেকে নিজের কুত্-সিত রূপটা আড়ালে রাখতে চায় । যাই হোক , সিদ্ধান্ত নিল হেঁটেই বাড়ি ফিরবে । তবে খুব সাবধানে যেতে হবে । পথে যেন কেউ দেখে না ফেলে আবার । তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে । কিন্তু গাড়ি ! এটার কি হবে ? সকালে লোকজন যখন গাড়িটা এখানে দেখবে , তখনতো জেনে যাবে গোপন এ আস্তানার কথা । কিন্তু তাতো আর এত সহজে হতে দেয়া যায়না ! শাগরেদদেরকে ডেকে বলল , গাড়িটা যে করেই হোক আস্তানার ভিতরে নিয়ে যেতে । এরপর নাম্বারটা খুলে রেখে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গাড়ির কালার বদলে ফেলতে । যাতে কেউ চিনতে না পারে এটা তারই গাড়ি । কারণ সাবধানের মার নেই ! এরপর একটা বিশেষ ধরণের স্টিকার পেপার বের করে দিয়ে বলল , এটা লাগিয়ে দিলেই না-কি কালার চেঞ্জ হয়ে যাবে । কথা শেষ করেই বেরিয়ে পড়ল আস্তানা থেকে । গন্তব্য নিজ বাড়ি । এখান থেকে হেঁটে যেতে বেশি সময় লাগবেনা ।
এদিকে হাঁপাতে হাঁপাতে থানায় ঢুকল ইমু । একেবারে অফিসার ইনচার্জের কক্ষে ঢুকে গেল সে । তখনো ইমুর বাবা সেখানেই বসা । তার একটাই কথা । ছেলের কোন একটা খবর না পেয়ে তিনি এখান থেকে একচুলও নড়বেন না । এদিকে ওসি সাহেব বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে যাচ্ছেন ইমুর বাবাকে । কিন্তু এ মুহূর্তে কার সাধ্য আছে তাঁকে বুঝাতে পারে ! ঠিক এমন সময় একটা ১৪ বছরের ছেলেকে দৌড়ে থানায় ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে গেলেন ওসি । ইমুর বাবা সেদিকে খেয়াল করেনি । ইমুও খেয়াল করেনি বাবাকে । ইমু হাঁপাতে হাঁপাতেই বলতে লাগলো , ওসি সাহেব ! এক্ষুনি চলুন আমার সাথে । নইলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ! ওসি সাহেব কিছুই বুঝতে পারলেন না । জিজ্ঞেস করলেন , কে তুমি ? এত রাতে কোথা থেকে ? আর কিসের সর্বনাশ হয়ে যাবে ? ইমু কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় বাবা পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলে উঠল , ইমু ! সোনা আমার ! তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি ? বলতে বলতে ইমুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন তিনি । আই সি ! তুমিই তাহলে ইমু ! – হ্যা । আমিই ইমু । – এখন খুলে বলতো দেখি ! আসলে কি হয়েছে ! – এত কথা বলার মত সময় এখন আমাদের হাতে নেই । আপনি এখনি একবার আমার সাথে ফোর্স নিয়ে চলুন । একটা গ্যাঙ গ্রুপকে ধরতে হবে ! দেরি করবেন না প্লিজ ! এখনি চলুন । ইমুর বাবা এবার কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন । তাই তিনিও ওসি সাহেবকে অনুরোধ করলেন । ওকে ! রিল্যাক্স ! আমি যাচ্ছি । বলেই তিনি ফোর্স রেডি করে পুলিশ কারে উঠতে যাবেন , এমন সময় ইমু বাধা দিয়ে বলল- আমাদেরকে হেঁটে যেতে হবে । নতুবা গাড়ির শব্দ শুনে ওরা পালিয়ে যেতে পারে । তাছাড়া আমাদেরকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে । তবে ওদের আস্তানাটা বেশি দূরে নয় । ও পাড়ায় । – গুড জব । তুমিতো দেখছি ডিটেক্টিভদের মত কথা বলছ । ইউ আর রাইট ইমু । আমরা হেঁটেই যাবো । – ইমু ছোট্ট করে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠল , আমাদেরকে যথেষ্ট তাড়াতাড়ি পৌঁছুতে হবে । – ওকে ! মাই বয় ! লেটস গো হারিয়াপ । ইমুর বাবাও তাদের সঙ্গে যাচ্ছে । সামনে ইমু আর পেছনে সবাই । যেন এ মুহূর্তে ইমুই সবার লিডার । তারা খুবই সতর্কতার সাথে এগিয়ে যেতে লাগল আস্তানার দিকে ।
এরই মধ্যে কাভার্ট ভ্যানটা এসে পড়েছে । ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে একে একে কাভার্ট ভ্যানে তোলা হচ্ছে । কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় এই যে , বাচ্চাদের কেউতো কাঁদছেইনা বরং একটু টু শব্দও করছেনা । ইদানিং বাজারে আবার একধরণের রাসায়নিক মিশ্রণ পাওয়া যাচ্ছে , যা নাকের সামনে ধরলে মুহূর্তেই যে কেউ বেখেয়াল হয়ে যায় । তার সাথে যাই করা হোকনা কেন , প্রতিক্রিয়া শূন্য । তাছাড়া বেশ কদিন ধরে এর প্রভাব থাকে শরীরে । সম্ভবত ! ঐটাই প্রয়োগ করা হয়ে থাকতে পারে ! প্রায় ৫০ জন বাচ্চাকে এক এক করে কাভার্ট ভ্যানে উঠানো শেষ । এবার বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে সিল লাগিয়ে দেয়া হল- জরুরী শিশু খাদ্য । এরপর সব কয়টা বদমাশ উঠে বসল অন্য আরেকটি গাড়িতে । কেবল স্টার্ট করতে যাবে , এমন সময় পুলিশের এটাক । তারা আগেই পজিশন নিয়ে ছিল । এবার সবকটাকে হাতে হ্যাংকাপ পড়িয়ে কোমরে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে গেল থানার দিকে । কিন্তু ওদের বস , মানে- আফজল চাচা কই ? নিজেকে নিরব জিজ্ঞাসা ইমুর । মনে হয় আগেই কেটে পড়েছে । ভিতর থেকে একটা উত্তর বেরিয়ে এল । এদিকে ইমু , তার বাবা আর ওসি সাহেব , এই তিনজন ঢুকে গেল আস্তানার মধ্যে । উদ্দেশ্য ক্রাইমের আরো কিছু আলামত পাওয়া । এমন সময় শোনা গেল কোন একটা মোবাইল ফোনে রিং হচ্ছে । পাওয়াও গেল ফোনটি । মনে হয় পাপিষ্ঠদের মধ্য থেকে কারো একজনের ফোন এটি । হয়তো মনের ভুলে ফেলে গেছে । রিংটা ক্রমাগত বেঁজে যাচ্ছে দেখে রিসিভ করে ওসি সাহেব ওটাকে কানে ধরতেই ওপার থেকে শুনতে পেল একটা পুরুষ গলা , বলছে- কিরে কালু ! রওয়ানা হয়ে গেছিস নিশ্চয়ই । যা যা বলেছি , সব ঠিকঠাক মনে আছে ? কাভার্ট ভ্যানটা নিয়ে মধুপুর যাবি । সেখানে মি. হুন্ডুরাস নামে এক ভদ্রলোক তোদের সাথে সাক্ষাত করবেন ঠিক বিকেল ৪ টায় । তার কাছে বাচ্চাগুলোকে তুলে দিয়ে সোজা আস্তানায় ফিরে আসবি । এরপর ও প্রান্ত থেকে লাইনটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল । কেটে দিয়েছে বোধ হয় । আই সি ! ঘটনা তাহলে এতদূর ! আন্তঃ গ্যাং সদস্যরাও জড়িত এর সাথে । ইমু বলে উঠল , স্যার ! এখানে বেশিক্ষণ বসে থাকলে চলবেনা । আমাদেরকে এক্ষুনি মধুপুর যেতে হবে । ওসি সাহেব : আমি জানি বাবু ! মোবাইল ফোনে এতক্ষণ তাই শুনছিলাম । মি. আশফাক সাহেব ! চলুন , এবার তাহলে যাওয়া যাক । এখানে আর কিছুই নেই । ইমুর বাবা- তাই চলুন । আস্তানা থেকে বেরিয়ে ওনারা উঠে বসলেন বাচ্চাদেরকে আটকে রাখা কাভার্ট ভ্যানে । এরপর ওসি সাহেব ড্রাইভ করে সোজা চলে এলেন হসপিটালে । সেখানে বাচ্চাদের ট্রিটমেন্টের একটা ব্যবস্থা করে ফিরে আসলেন থানায় । এবার তাহলে আপনারা যেতে পারেন মি. আশফাক । হ্যা ! তাই বরং যাই । সমস্ত রাত কম ধকল যায়নি । কিন্তু স্যার ! আমাদেরকে বিকেল ৪ টার আগে অবশ্যই মধুপুর পৌঁছাতে হবে ! ইমু বিস্ময় মাখানো চোখে স্মরণ করিয়ে দিল ওসি সাহেবকে । হ্যারে বাবা ! আমার মনে আছে । আমি সময়মত ফোর্স নিয়ে চলে যাব । তুমি এবার লক্ষি ছেলের মত বাবার সাথে বাড়ি যেয়ে রেস্ট নাও । হাসি মাখা মুখে কথাগুলো বললেন ওসি সাহেব । ইমুর বুঝতে বাকি রইলনা যে , বাকি কাজটুকু ওসি সাহেব একাই করতে চান । মনে হয় পুরো গ্যাংটাকে ধরার কৃতিত্ব ওনি একাই নিতে চান । তাই বাধ্য ছেলের মত ইমু বাবার সাথে বাড়ি এসে পড়ল ।
এদিকে ওসি সাহেব ফোর্স নিয়ে মধুপুর এসে পজিশন নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল মি. হুন্ডুরাসের জন্য । কিন্তু যেখানে পজিশন নেয়ার কথা সেখানে না নিয়ে অন্য একটা জায়গায় ! আসলে মি. হুন্ডুরাস কোন জায়গায় আসবেন এটাতো ওসি সাহেব জানেন না ! ওনি কেবল জানেন মধুপুরের কথা । কাজেই ৫.৩০ বেজে গেছে অথচ মি. হুন্ডুরাসের আসার নামই নেই । এমন সময় উপর মহল থেকে একটা ফোন এল । বলা হল আপনি যে কাজের জন্য মধুপুর গেছেন তা হয়ে গেছে । আন্তঃ গ্যাঙ গ্রুপের সকলে ধরা পড়ে গেছে । কাজেই ওখানে মশা না মেরে থানায় ফিরে আসুন । – জি স্যার ! এক্ষুণি আসছি । বলে ফোনটা রেখে ওসি সাহব ফোর্স নিয়ে ফিরে আসতে লাগলেন ।
এদিকে পুলিশের কমিশনারকে ঐ রাতের ঘটনা মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও আকারে দেখালে , কমিশনার সাহেব অবাক হয়ে যান ! আফজল সাহেব ! ওনার মত একজন মানুষ এ ধরণের নোংরা কাজের সাথে জড়িত । ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে । কিন্তু কি আর করার । প্রমাণ যে একেবারে হাতের মুঠোয় । সুতরাং এরেস্ট ওনাকে করতেই হবে । কারণ আইনের চোখে ওনি এখন অপরাধি । ঘটনাটা জানাজানি হলে সকলের মধ্যে ছিঃ ছিঃ রব পড়ে গেল । আফজল সাহেব এতটা নীচ ! অথচ কি ভালই না সেজে থাকতেন । কারো কারো মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল যে , আফজল সাহেব এ ধরণের কাজের সাথে জড়িত । তিনি এরকম লোক নয় । নিশ্চয়ই কোথাও একটা ভুল হচ্ছে । কিন্তু পুলিশ তা মানবে কেন ? তাদের কাছে চাক্ষুস প্রমাণ আছে । কাজেই গ্রেপ্তার করা হল আফজল সাহেবকে । কিন্তু আফজল সাহেব তার বিরুদ্ধে আনীত সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেন । তিনি এর কিছুই জানেন না বলে সবাইকে বার বার বুঝাতে চাইলেন । কেউ তার কথা শুনলনা । তাকে যাবত্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হল । এই শোকে তিনি পাগল হয়ে গেলেন । এখন তিনি পুলিশি হেফাজতে পাগলাগারদে চিকিত্সারত । বাকি আসামিদেরকেও উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হল । আর মি. হুন্ডুরাসকে তার দেশের সরকারের কাছে প্রেরণ করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি করা হল । বন্ধ হয়ে গেল ছেলে ধরার মত জঘন্য একটি ঘটনা । এদিকে পুরো গ্যাং গ্রুপটাকে হাতে নাতে ধরিয়ে দিতে পারায় ইমুকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে পুরস্কৃত করা হল । সেইসাথে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা তাকে গোয়েন্দা বিদ্যার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণের অফার দিল ।
ইমু এখন এমেরিকায় । গোয়েন্দা বিদ্যায় তার যথেষ্ট দক্ষতা অর্জিত হয়েছে । সে এখন ২০ বছরের টগবগে তরুন । সারা বিশ্বের লোক তাকে এক নামে চিনে- ডিটেক্টিভ ইমু হাসান । তার নাম শুনলে সন্ত্রাসীরা এখন ভয়ে চুপসে যায় । একটা বিশেষ কেইস নিয়ে তাকে এমেরিকায় আসতে হয়েছে । এখানে সে তদন্ত করতে এসে এমন এক লোকের হদীস পেয়েছে যার চেহারা হুবহু তার বাবার মত । অথচ লোকটা তার কেইসের মূল আসামি । ইমু এবার ভয়ে আত্-কে উঠল । মনে পড়ে গেল আফজল চাচার কথা । এখন তার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন- আফজল চাচা কি সত্যিই অপরাধি ছিলেন ?