ঈশ্বর কে খোলা চিঠি

তুমি নাকি সর্বত্র বিরাজমান।
তাহলে তো তুমি আমার জন্ম দেখেছো যখন মা অজ্ঞান হয়ে বেডে শুয়ে। প্রথম হাঁটতে শেখা বাচ্চাটির হাত হয়তো তুমিই ধরো। তুমি আগুন জ্বালাতে শিখিয়েছো পাথরে পাথরে ঘষে। সেদিন তুমি ছিলে যখন আদম-হাওয়ার শরীর ছুঁলো আবছা আলোয়। আপেল পড়লো নিউটনের অবসরে। তুমি নোবেল দিলে ঠাকুরঘরে। তুমি বৃষ্টি দিলে আমার পাশের বাড়ির টিনের চালে। তুমি ভাঙলে দেয়াল বার্লিনের উন্মাদনায়! তোমার সামনে অচৈতন্য হলেন মহাপ্রভু। তুমিই দেখেছো বঙ্গবন্ধুকে শেষবার। তোমার চোখের সামনে এভারেস্টে উড়লো প্রথম পতাকা। তুমি দেখেছো আর্যভট্ট কে গোল আঁকতে। কলম্বাসের জাহাজের পালে হাওয়া লাগিয়েছো তুমি। তুমি কাঁদতে দেখেছো মুমতাজকে শাহজাহানের অপেক্ষায়। তুমি সাহস জুগিয়েছো প্রেমিকদের বুকে। তুমি নারীদের দেখেছো মেক-আপ ছাড়া, ভেজা চুলে। তুমি আলো দেখিয়েছো হেলেন কেলার এর অন্ধকারে। তোমায় ভরসা করে বাচ্চাগুলো ঝাঁপ দেয় বুড়িগঙ্গার বুকে। তুমি দেখেছো- প্রথম চন্দ্রগ্রহণ, ছিয়াশির বিশ্বকাপ, চর্যাপদের প্রথম পংক্তি, মাশরাফির গর্জন, বিদ্যাসাগরের সাঁতার, চণ্ডিদাশের প্রেম, সিলেটের প্রথম চা এর কুঁড়ি, সদ্য গোঁফ গজানো ছেলেটির প্রথম উপন্যাস, ডায়নোসরের ডিম ফুটে বেরোনো, মোবাইল, ভায়াগ্রা, ব্রোথেল!!!
তুমি আরো অনেক কিছু দেখেছো।
সেদিন যখন ওই মেয়েটির যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিলো ওরা, তুমি দেখেছো। তুমি শাহবাগ আন্দোলনে ছিলে। তুমি ছিলে যখন ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে শকুনের মানুষ-মাংসে অরুচি হয়েছিলো। তুমি জীবনানন্দের ট্রামে ধাক্কা খাওয়ার আগে ওই ড্রাইভারের ঠিক পাশে দাঁড়িয়েছিলে। তুমি আমাকেও সেদিন দেখেছো, প্রথমে চিনতে পারোনি। তুমি ছিলে আমার অপ্রেমের ভয়ে। তুমি দেখেছো সুকান্তকে রক্তবমি করতে। তুমি দেখেছো! তুমি দেখেছো নজরুলকে জেলখানায়। তুমি দেখেছো রেল লাইনের মাঝে ঝাঁপ দেওয়া সেই মহিলাটিকে। তুমি গডসেকে ট্রিগারে চাপ দেওয়ার সময় আটকাওনি। তুমি কমাওনি টাইটানিকের গতি। তুমি আটকাওনি নেহেরু জিন্নাহ কে। তুমি তাকাওনি তনুর নিষ্পাপ মুখের দিকে। তোমার কানে যায়নি সিরিয়ার কান্না। তুমি খুব সুন্দর ভাবে এড়িয়ে গেছো তারেক মাসুদের সড়ক দূর্ঘটনা। হুমায়ূন আহমেদ এর বাড়ির সামনে থমথমে মুখগুলো দাঁড়িয়েছিলো, তুমি তাকাওনি। যখন স্টিফেন হকিন্স চেয়ার থেকে আর উঠল না তখন তোমার হাতটা বাড়িয়েছিলে? যখন আমার চোখের সামনে একটার পর একটা মানুষ চিরনিদ্রায় চলে যাচ্ছিলো, কই তখন তো তোমায় দেখলাম না!
আসলে তোমায় দেখেনি কেউই, দেখবেও না কখনো! তুমি মিথ্যাও নও, সত্যিও নও। তুমি আসলে মানুষের মতোই। একটা সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী, স্বার্থপর। তুমিও ভয় পাও। তোমার কাম-ক্রোধ-লালসা আছে। কিন্তু তোমার কোনো আকার নেই, হৃদয় নেই, অক্সিজেন নেই, ইন্টারনেট নেই, ল্যাপটপ নেই, ফেসবুক নেই।
আসলে তোমার কাছে তুমি নিজেই নেই। তাই তুমি হয়তো আজও শুধু বিশ্বাসেই রয়ে গেলে। রাস্তায় বেরিয়ে বন্ধুর আধখাওয়া সিগারেটে সুখটানের আনন্দ তুমি কি বুঝবে?
যাই হোক, আর আমার নষ্ট করার মত সময় নেই বলে দুঃখিত। তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো না।

ইতি ———-
তুমি সবজানতা! নাম লিখে আর লজ্জা দিলাম না।

[পুনশ্চ : আমি আশীর্বাদ করি, ঈশ্বর তোমার ভালো হোক!!!]