Site icon খিচুড়ি

ভ্যাট

রহিম সাহেব মৃত্যু শয্যায় শোয়ে। বাড়ি ভর্তি লোক সমাগম। এখন তখন মরে অবস্থা।
একজন আত্মীয় আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলো, ভাই রোগীর কি অবস্থা।
অপরজন উত্তর দিল, ভালোনা। ভ্যাট টা দেয়া হলেই মারা যাবেন। ভ্যাটের জন্য আটকে আছেন?
আত্মীয় চিন্তার স্বরে বলল, বড়ই চিন্তার বিষয়। তা ভ্যাটের ব্যবস্থা কি হয়েছে?
ওপাশ থেকে আরেকজন গলা বাড়িয়ে বলল, বড় ছেলে গেছে জমা দিতে।
আত্মীয় হাফ ছেড়ে বললেন, যাক! তাহলে তো আর সমস্যায় রইলনা। বুঝলেন খুব কাছের আত্মীয় তো কষ্ট আর সহ্য হয়না।
এদিকে কথা শেষ হতেনা হতেই বাড়ি জুড়ে কোলাহল পড়ে গেল। সবাই বলল, কি হয়েছে! কি হয়েছে!
ভেতর থেকে খবর এলো রোগীর অবস্থা আরো খারাপের পথে। ভ্যাট না দিয়েই বুঝি মারা যায় আর কি!
সকলে বলল, সর্বনাশ! ডাক্তার ডাকো! বদ্যি খবর দাও! ফকিরবাবা , সাধুবাবা যার মাধ্যমেই হোক ভ্যাট না আদায় পর্যন্ত রোগীকে মরতে দেয়া যাবেনা। শোর গোল কমে বাড়তেই লাগল।
রহিমের স্ত্রী ফিস ফিস করে রহিম সাহেবের কানে বললেন, ওগো আরেকটু সবর কর! তোমার বড় ছেলে ভ্যাট দিয়ে এলো বলে!
রহিম সাহেব হাত পা ছড়িয়ে মটকা মেরে পড়ে রইলেন। এদিকে মৃত্যুদূত এসে সে কখন থেকে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। রহিম সাহেব মৃত্যু দুতকে অনুরোধ করলেন, ভাই একটু বস। সোফাতে আরাম করে বস। আমাদের অর্থমন্ত্রী বেজায় ভাল মানুষ জান তো। ভ্যাট নিতে বেশি দেড়ি করবেনা।
মৃত্যুদূত বিরাট বিরুক্ত হয়ে কপাল কুচকে সোফার উপর বসে রইলেন। এদিকে তার বেশ কয়েকটা কাজ পড়ে রয়েছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। ভ্যাটের রশিদ নিয়ে রহিমের সাহেবের ছেলেও আর ফিরেন না, রহিমের সাহবের মরাও হয়না।
আত্নীয়দের মাথায় হাত। রহিম সাহেব বুঝি ভ্যাট না দিয়েই মরে যাবেন। এবার বুঝি অর্থমন্ত্রীর কোপানল থেকে কারো বাঁচোয়া নেই।
একজন অধৈর্য হয়ে বললেন, এতো দেড়ি হচ্ছে কেন? পোলাপান পাঠানো ঠিক হয়নি। বোঝদার মানুষ যাওয়া উচিত ছিল। ডান হাতে মাল-পত্র দিলে তো কাম হবেনা। বা হাতে কিছু না ঝারলে কি সময় মতো কাজ আদায় করা যায়।
অজ্ঞতা ভ্যাট আদায়ের জন্য অফিসে পাঠানো হল একজন বয়স্ক বোঝদার লোককে।
তো তিনি গিয়ে দেখলেন জাতীয় ভ্যাট ভবনের সামনে মহা লাইন। লোকজন লাইন ধরে ভ্যাট দিচ্ছে। রোগীর ছেলেকে পাওয়া গেল বিশতম সারিতে দুইশ নম্বর সিরিয়ালে।
বয়স্ক লোক তার ডান বাম হাত কাজ লাগিয়েও কোন কিছু করতে পারলেননা। বললেন, চলো দেখি ব্ল্যাকে ভ্যাট রশিদ পাওয়া যায়না।
ছেলে আর কি করে, এদিকে ভ্যাট না দিয়েই তার বাবা যায় যায়।
শেষ মেষ বিক্রয় ডট কম থেকে চড়া দামে একটা ভ্যাট রশিদ মিলল।
আনন্দের বন্যা বয়ে গেল রোগীর বাড়িতে। রহিম সাহেবের স্ত্রী খুশিতে গদ্গদ হয়ে বললেন, ওগো তোমার ছেলে ভ্যাট রশিদ পেয়ে গেছে!
শুনে রহিম সাহেব হাফ ছেড়ে মরে গেলেন!
এর এক ঘন্টা পরপর মৃত্যুদূত ঈশ্বরের কাছে তাকে যেন বাংলাদেশে আর না পাঠানো হয় সে ব্যাপারে আবেদন পত্র জমা দিয়ে আসল।

যে বইগুলো কিনতে পারেন ডিস্কাউন্ট রেটে থেকে:

Loading books...
Exit mobile version