প্রতিদিন কত ঘটনাইতো ঘটে আমাদের পৃথিবীতে। কারো বাড়িতে হয়তো কেউ মারা গেছে তাই কান্নার রোল, আবার কারো বাড়িতে হয়তো আনন্দের ধুম লেগেছে কোন অনুষ্ঠান পালনে। এপ্রিলের এক তারিখ এমনি একটা তারিখ। বলা যায় গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে একটা চরম বিতর্কিত দিন। কারো কাছে এপ্রিলের তারিখ একটা মজার দিন, অন্যকে বোকা বানিয়ে মজা করার দিন। আবার কেউ কেউ মনে করেন এইদিনে মোটেই উদযাপনের কিছু নেই, এই দিন বরং কষ্টের একটা দিন। যারা এসব নিয়ে আলোচনা সমালোচনায় মেতে উঠেন তারা আবার নিজ নিজ মতামতের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রমাণ হাজির করে থাকেন। তাঁর কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তা খোঁজে বের করা মুশকিল। তাই আমরা বরং দেশে দেশে বিভিন্ন কালে ঘটে যাওয়া এপ্রিল ফুলের বিভিন্ন ঘটনা জেনে নেই।
এপ্রিল ফুলের উৎপত্তিঃ
যেহেতু এপ্রিল ফুল এই ব্যাপারটা সাথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনার সাথে মিলে একেবারে খিচুড়ি বনে গেছে, সেহেতু খিচুড়ি চাল ডালের মতো এইসব ঘটনার ডালপালা পৃথকভাবে খোঁজে বের করা মুশকিল।
রোমান হিলারিয়া উৎসব থেকে ধরে ভারতীয় হোলি উৎসব, মধ্যযুগীয় ফুল ফেস্ট এর মত অনুষ্ঠানগুলোর সাথেও এই ব্যাপারটি কিছুনা কিছু জড়িত আছে। ইরানে পার্সি ক্যালেন্ডার অনুসারে নববর্ষের ১৩তম দিনে আনন্দ মজা করা হয়। এই দিন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১লা এপ্রিল ও ২রা এপ্রিল সদৃশ্য। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৫৬৪ সালে ফ্রান্সে নতুন ক্যালেন্ডার চালু করাকে কেন্দ্র করে এপ্রিল ফুল ডে’র সুচনা হয়। ঐ ক্যালেন্ডারে ১লা এপ্রিলের পরিবর্তে ১লা জানুয়ারীকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে কিছু লোক তার বিরোধিতা করে। যারা পুরনো ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী ১লা এপ্রিলকেই নববর্ষের ১ম দিন ধরে দিন গণনা করে আসছিল, তাদেরকে প্রতি বছর ১লা এপ্রিলে বোকা উপাধি দেয়া হতো। ফ্রান্সে পয়সন দ্য আভ্রিল(poisson d’avril) পালিত হয় এবং এর সাথে সম্পর্ক আছে মাছের। এপ্রিলের শুরুর দিকে ডিম ফুটে মাছের বাচ্চা বের হয়। এই শিশু মাছগুলোকে সহজে বোকা বানিয়ে ধরা যায়। সেজন্য তারা ১ এপ্রিল পালন করে পয়সন দ্য এভ্রিল অর্থাৎ এপ্রিলের মাছ। সে দিন বাচ্চারা অন্য বাচ্চাদের পিঠে কাগজের মাছ ঝুলিয়ে দেয় তাদের অজান্তে। যখন অন্যরা দেখে তখন বলে ওঠে পয়সন দ্য আভ্রিল বলে চিৎকার করে। কবি চসারের ক্যান্টারবারি টেইলস(১৩৯২) বইয়ের নানস প্রিস্টস টেইল এ এই দিনের কথা খুজে পাওয়া যায়।
প্রাচীন রোমে এপ্রিল ফুলঃ
এপ্রিল ফুলের সবচেয়ে পুরনো উদাহরণটা মেলে প্রাচীন রোমের ইতিহাসেই। এই দিনে প্রাচীন রোমে মূলত হিলারিয়া নামে একটি অনুষ্ঠান উদযাপন করা হতো যেখানে সবাই একে অপরের সাথে হাস্য কৌতুকে মেতে উঠতো এবং মজার ছলে অন্যকে বোকা বানানোর চেষ্টা করতো।
ইরানে এপ্রিল ফুলঃ
ইরানে, পার্সি ক্যালেন্ডার অনুসারে নববর্ষের ১৩ তম দিনে আনন্দ মজা করা হয়ে থাকে। হিসেব করলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে এটি এপ্রিল এর এক অথবা দুই তারিখ হয়। সেই হিসেবে এই অনুষ্ঠানকেও এপ্রিল ফুলেরই একটি সংস্করণ হিসেবে ধরা হয়।
যুক্তরাজ্যে এপ্রিল ফুলঃ
যুক্তরাজ্যে কবে কোন ঘটনার প্রেক্ষাপটে এপ্রিল ফুলের শুরু হয়েছিল সেটা কোন সূত্র খোঁজে পাওয়া যায়না। তবে এখনও বেশ আড়ম্বরেই সেখানে এইদিনটি পালন করা হয়। এই দিনে অভিনব সব উপায়ে একে অপরকে বোকা বানিয়ে মজা করার আনন্দে মেতে উঠে মানুষজন।
আয়ারল্যান্ডে এপ্রিল ফুলঃ
ঐতিহ্যগতভাবেই আয়ারল্যান্ডে এইদিনটি উদযাপন করা হয়। তবে আয়ারল্যান্ডে এইদিনে মজা করার জন্য একটা অদ্ভুত উপায় অবলম্বন করা হয়ে থাকে।
করা কি হয়, এইখানকার জনগণ একটা খামের উপরে “খুব জরুরী পত্র” লিখে বিভিন্ন মানুষকে পাঠিয়ে দিন। প্রাপক যখন পত্রটি পান, তিনি খুলে দেখেন পত্রের ভেতরে লেখা আছে, “এই চিঠিটা পরবর্তি বোকার কাছে হস্তান্তর করুন”।
পোল্যান্ডে এপ্রিল ফুলঃ
পোল্যান্ডে মজা করার দিন হিসেবে এপ্রিল ফুল ডে পালিত হয়। অবশ্য সেখানে এর নাম প্রাইম এপ্রিল।
এপ্রিল ফিসঃ
ইতালী, ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং সুইজারল্যান্ড ও কানাডার ফ্রেঞ্চভাষাভাষী জনগণ এপ্রিলের প্রথমদিনকে এপ্রিল ফিস নামে পালন করে।