তৎকালীন কায়রোর আমীর ছিলেন জনাব সুজাউদ্দীন। তিনি বলেন, একদিন আমি এক লোকের কাছে বসা ছিলাম। তখন তার বয়স বেশ হয়ে গেছে। গায়ের রং তামাটে বর্ণের। ঠিক সেই মুহূর্তে কয়েকটি ছেলে সেখানে এসে উপস্থিত হয়। ওরা ছিল ছড়ানো মুক্তার মতোই সুন্দর। গায়ের রঙ ছিল ধবধবে সাদা। আমি লোকটির কাছে জানতে চাইলাম, ওরা কারা? সে বলল, ওরা আমারই সন্তান। আমি বললাম, এ এলাকার ছেলেরা তো এমন ধবধবে সাদা হয় না। ওরা এমন সাদা হলো কেমন করে? জবাবে সে বলল, ওদের মা আসলে ইংরেজ। ওরা মায়ের রং পেয়েছে। ইংরেজ মহিলা আপনার স্ত্রী! কথাটা বিস্ময়ভরা কণ্ঠেই আমার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো। হ্যাঁ, ইংরেজ মহিলা আমার স্ত্রী! তবে তার সাথে আমার জীবন জড়ানোর এক চমকপ্রদ কাহিনী আছে! আমি কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। কাহিনীটা শুনতে চাইলাম। সে তার কাহিনী বলা শুরু করল এভাবে- আমার যৌবনের যখন ষোলকলা পূর্ণ হলো তখন আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে সিরিয়া গেলাম। সে সময় সিরিয়ায় চলছিল ফিরিঙ্গিদের দখলদারিত্ব। সেখানে গিয়ে আমি ভাড়ায় একটা দোকান খুলে বসলাম। আমার ব্যবসা ছিল কাতান বস্ত্রের। একদিন আমি দোকানে বসে আছি। এমন সময় ভেতরে প্রবেশ করলেন এক ইংরেজ মহিলা। তিনি ছিলেন এক নেতৃস্থানীয় ক্রুসেডার-পত্মী। আমি তার রূপ-লাবণ্য দেখে বিমোহিত হয়ে গেলাম। তাই তার কাছে যা বিক্রি করলাম, অনেক কম দামে বিক্রি করলাম। তিনি চলে গেলেন। কয়েক দিন পর আবার এলেন। আবারও তাকে আমি ভীষণ খাতির করলাম। এরপর থেকে তিনি নিয়মিতই আমার দোকানে যাতায়াত করতে লাগলেন। আমি দিল খুলে তাকে গ্রহণ করতাম। সুন্দর-সুমধুর আচরণ করতাম। আর অন্যদের তুলনায় অনেক কম দামে তার কাছে পণ্য বিক্রি করতাম। এভাবে সামনে চলতে চলতে আবিস্কার করলাম যে, আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমার এই ভালোবাসায় যখন প্লাবন সৃষ্টি হলো, নিয়ন্ত্রণের বাঁধ তখন ভেঙ্গে গেল। আমি আর নীরব থাকতে পারলাম না। অনুভব করলাম, আমার ভেতরে যেন একটা বৃক্ষ জন্ম নিয়েছে। কচি কচি সবুজ পাতায় তা ছেয়ে গেছে। সেখানে ছোট ছোট কলিরা চোখ মেলার অপো করছে। আমাকে নিয়ে আমার ভেতরে কিসের যেন একটা আয়োজন চলছে। আমি তখন মনপ্রাণ দিয়ে তার একান্ত সান্নিধ্য কামনা করতে লাগলাম! অনিন্দ্য সুন্দরী এই ইংরেজ মেম কখনোই একা আসতেন না। সঙ্গে আসত এক বৃদ্ধা। একদিন অধৈর্য হয়ে মনের কথাটা বৃদ্ধার কানে বলেই ফেললাম, আমি মেম সাহেবকে ভালোবেসে ফেলেছি! সামনে বাড়তে চাই! তুমি পথ বলে দাও! দেবে? বৃদ্ধা বিস্মিত হলো। চোখ উল্টে আমার দিকে তাকাল। আর বলল, উনি তো এক সেনাপতির স্ত্রী! তোমার ভালোবাসার কথা সেনাপতি জানতে পারলে শুধু তোমাকে নয় আমাদেরকেও আস্ত রাখবেন না! কিন্তু আমি হাল ছাড়লাম না। বুড়িকে রাজি করাতে সর্বাÍক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম। এক সময় বুড়ি ফোকলা মুখে হাসল! আমার কাছে পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রা দাবি করল। বলল, মেম সাহেবের সাথে আমার কথা হয়েছে। তাকে পেতে হলে পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রা দিতে হবে। আমি অনেক কষ্টে পঞ্চাশটি স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করলাম এবং বুড়ির হাতে গুজে দিলাম। বুড়ি স্বর্ণমুদ্রাগুলো গ্রহণ করল এবং কোন্ রাতে মেম সাহেবকে আমার বাড়ীতে পাঠাবে তাও বলে দিল। যে রাতে মেম সাহেবের আসার কথা সে রাত শুরু হতেই আমি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপোর প্রহর গুনতে লাগলাম। অবশেষে অপোর পালা শেষ হলো। মেম সাহেব এলেন। সাজগুজ করে আরো আকর্ষণীয় হয়ে এলেন! কুশল বিনিময়ের পর আমরা একসঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করলাম। ইতোমধ্যে রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল। আমার ঘরে আমি ও মেম সাহেব ছাড়া আর কেউ নেই। বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে দেখে মনে মনে বেশ পুলক অনুভব করলাম! মেম সাহেব নিজকে আমার মধ্যে হারিয়ে ফেলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রস্তুত আমিও। ঠিক এমন সময় আমার মনে বিবেকের বাধা অনুভব করলাম। আমার ঘুমন্ত বিবেক জাগ্রত হলো। বিবেক যেন আমাকে বলল, তুমি কি আল্লাহকে ভয় পাও না? এক পরনারীর দিকে এমন নির্লজ্জভাবে হাত বাড়াতে তোমার কি একটু বাধছেও না? যে আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, যে আল্লাহ তোমাকে সুস্থ রেখেছেন, যে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া একটি মুহূর্তও কাটানো তোমার পক্ষে সম্ভব নয়; সে আল্লাহর নাফরমানি করছ? তাও এক খৃস্টান নারীর প্রেমে পড়ে? বিবেকের চোখ-রাঙানিতে আমার প্রেম-তরীটা সম্পূর্ণ উল্টে গেল। ফলে মেম সাহেবকে ঘাটে ভিড়ানো আর সম্ভব হলো না। সম্ভব হলো না তাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করার! সম্ভব হলো না তার গায়ে হাত দেয়ার! আমি আকাশের দিকে তাকালাম। তখন চোখটা একটু ভিজা। মনটা বেশ নরম। মনো হলো, আল্লাহ যেন আকাশ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, মালিক আমার! আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, এই খৃস্টান নারীর সাথে আমি কোনো অসংলগ্ন আচরণ করব না! কেননা আমি তোমাকে ভয় পাই। তোমাকে লজ্জা পাই! তোমার শাস্তিকে ভয় করি! এরপর আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম। চলে গেলাম অন্য কামরায়। যাওয়ার সময় বলে গেলাম, আপনি চলে যান। আপনার সাথে কোনো অসৎ কর্মে লিপ্ত হওয়া আমার পে সম্ভব নয়। কেননা আমি আমার মাওলা আল্লাহ পাককে ভয় করি। ভয় করি তার কঠিন শাস্তিকে। মেম সাহেব আমার এই আচরণ ও ভাবান্তর দেখে বিস্মিত হলেন। তারপর আমার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। সকালে যথারীতি আমি দোকানে গেলাম। বেলা কিছুটা গড়িয়ে যেতেই দেখলাম, মেম সাহেব আমার দোকানের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। চেহারায় প্রচণ্ড েক্ষােভ ও অসন্তুষ্টির ছাপ। মেম সাহেবের রূপের কথা না বলে পারছি না! যেনো এক টুকরো চাঁদ আকাশ থেকে নেমে এসেছে! ওকে দেখে আমার মনে নতুন করে ভালোবাসার চারা অঙ্কুরিত হলো। এবং আশ্চর্য! অল্প সময়ের মধ্যেই সেই চারাটা বিশাল বৃেক্ষ পরিণত হলো। সেই সাথে তা ছায়া দিয়ে আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। আমি আবারও কাবু হয়ে গেলাম! মনকে বললাম বরং শয়তান আমাকে দিয়ে বলাল, কে তুমি? এতো সাধু হয়ে গেলে যে! এ চন্দ্রমুখীর চন্দ্র-সৌন্দর্য এড়িয়ে যাওয়ার মানে কি? তুমি কি খলীফা আবু বকর? উমর? নাকি বনে গেছ মহা সাধক জুনাইদ বোগদাদী? কিংবা মহা তাপস হাসান বসরী? তার জন্য আমার মনটা ভীষণ তোলপাড় করতে লাগল। ও যখন আমাকে অতিক্রম করে চলে গেল, আমি তখন ছুটে গিয়ে সেই বুড়িকে ধরলাম। আবার অনুরোধ করলাম- আজ রাতে আবার তাকে আমার বাড়ীতে নিয়ে এসো! সে ঠোঁট উল্টে বলল, তাকে আবার পেতে হলে একশ দিনার গুণতে হবে! আমি আবার দীনার সংগ্রহে লেগে গেলাম এবং সফল হলাম। তাকে দিয়েও দিলাম। এল রাত। দ্বিতীয় রাত। চলল অপো। অনেকক্ষণ পর মেম সাহেবের শুভাগমনে (?) অপোর পালা শেষ হলো। তাকিয়ে দেখলাম, সত্যিই যেন আমার বাড়িতে আকাশের চাঁদ নেমে এসেছে! চাঁদের বুকে তো একটা কালিমা আছে; কিন্তু তার চেহারায় শুধু রূপ ঝরানো লালিমা! আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। কিন্তু তার পাশে বসতেই আল্লাহর ভয় এসে আমার ঘুমন্ত বিবেককে আবার জাগিয়ে তুলল। বিবেক যেন চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ছি! এমন দুঃসাহস কী করে হলো তোমার? তুমি কি তাহলে এক খৃস্টান ললনার জন্য বিলিয়ে দেবে নিজের দীন ও ঈমান?! তুমি না আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছিলে, এই মহিলার সাথে কোনো অশালীন আচরণ করবে না! তাহলে কেন তাকে আবার নিয়ে এসেছ? কেন তার দিকে আবার হাত প্রসারিত করতে চাচ্ছ! তবে কি তুমি আল্লাহ পাকের কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কথা ভুলে গেছ। ভুলে গেছ, জাহান্নামের দাউ দাউ করা লেলিহান অগ্নিশিখার কথা! ভুলে গেছ বিষাক্ত সাপ-বিচ্ছুর কথা! আফসোস! তোমার জন্য শত আফসোস! কীভাবে তুমি ভুলে গেলে ওয়াদা ও শাস্তির কথা!! কিভাবে তুমি লিপ্ত হতে যাচ্ছ আল্লাহর নাফরমানীতে!!! আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তাই আগের মতোই তাকে চলে যাওয়ার কথা বলে অন্য কামরায় চলে গেলাম! সকালে দোকানে গেলাম। হৃদয় জুড়ে বিরাজ করছিল- মেম-চিন্তা। বেলা বাড়তেই তার দেখা পেলাম। আমার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে আগের মতোই ক্ষদ্ধ ভঙ্গিতে। তাকে দেখামাত্রই সেদিনের মতো আজো প্রবৃত্তির কাছে পরাজিত হলাম। তাকে রাতের বেলা হাতের কাছে পেয়েও হারানোর বেদনায় আপে করতে লাগলাম। নিজেকে তিরস্কার করতে লাগলাম। আক্ষেেপ আক্ষেেপ কেটে গেল কিছু বেলা। বেশিক্ষণ সইতে পারলাম না। হৃদয়ে পুনরায় জেগে উঠল প্রেমের দহন জ্বালা! আবার হাজির হলাম বুড়ির কাছে! বুড়ি এবার ভীষণ চটা! রাগে ফেটে পড়ার উপক্রম!! আমি অনুনয়-বিনয় করলে সে বলল, পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রার থলে ছাড়া ওকে পাওয়া সম্ভব নয়! পাচঁশত স্বর্ণমুদ্রার থলে!! আমি যে একেবারে ফতুর হয়ে যাবো! তবুও বললাম, তাই হবে। তাই দেব! তবুও তুমি ব্যবস্থা করো! আমি দোকানটা বিক্রি করে পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা তার জন্য আলাদা করে রাখলাম। এ সময় আমার বিবেক তৃতীয় বারের মতো আমাকে আবার ধমকাল। আবার শাসাল। আবারও সেই কথাগুলো বলল যা বলেছিলÑ আগের দু’রাতে। অবশেষে মনের সাথে দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ করে আল্লাহর ভয়ে যখন আমি এই অপকর্ম থেকে বিরত থাকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম, ঠিক তখনি আমার কানে একটা ঘোষণা এলো। এক খৃস্টান ঘোষক বলছিল, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমাদের সাথে আমাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ। তাই এখানকার মুসলিম ব্যবসায়ীদেরকে অনুরোধ করে বলছি, তোমরা এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিজ নিজ এলাকায় চলে যাও। এই ঘোষণা ছিল আমার জন্য মহা এক বিপদ, বিশাল এক ঝড়। কিন্তু স্বীয় চরিত্র সংরণের উপায় হিসেবে এই বিপদ ও ঝড়কে আমি স্বাগত জানালাম এবং মাল-পত্র গুছিয়ে তিন দিনের মাথায় সিরিয়া ত্যাগ করলাম! যদিও সিরিয়াকে ‘বিদায়’ বলতে অনেক কষ্ট হলো; তথাপি এই বিদায়কে আমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিরাট এক নেয়ামতই মনে করলাম। দেশে ফিরে আমি বাঁদীর ব্যবসা শুরু করলাম। এর ভেতর দিয়ে আমি মেম সাহেবকে ভুলে থাকার চেষ্টা করলাম। এভাবে কেটে গেল তিনটি বছর। তারপর সংঘটিত হলো হিত্তিন যুদ্ধ। মুসলমানরা ফিরে পেল উপকূলীয় শহরগুলো। বিজয়ী বাদশাহের জন্য বাঁদী তলব করা হলো আমার কাছে। একশত দীনারের বিনিময়ে আমি এক অপরূপা বাঁদীকে তার হাতে তুলে দিলাম। আমাকে নব্বই দিনার পরিশোধ করা হলো। বাকি রাখা হলো দশ দিনার। দশ দিনার কম কেন? জানতে চাইলে বাদশাহ আমার দিকে ইশারা করে এক লোককে বললেন, একে নিয়ে চলো আমাদের সাথে। যেখানে আমরা খৃস্টান মহিলাদের বন্দী করে রেখেছি সেখানে। ও ওর বাকী দশ দিনারের পরিবর্তে ইচ্ছামতো সেখান থেকে একটা খৃস্টান বাঁদী বেছে নিবে! আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো সেই গৃহে। ঢুকতেই দেখলাম, হায়! এ যে আমার হারানো মেম! তিনি বন্দিনী!! তিনি আমাকে চিনলেন না। কিন্তু আমি তাকে চিনলাম। আমি দশ দিনারের বিনিময়ে তাকেই বেছে নিলাম। মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহর ভয়ে যাকে আমি হাতের মুঠোয় পেয়েও পরিত্যাগ করেছিলাম, যার এক রাতের সান্নিধ্য লাভের জন্য পাঁচশত দিনার পর্যন্ত দিতে রাযী হয়েছিলাম, আল্লাহ পাক দয়া করে সেই মেম সাহেবকে আজীবনের জন্য আমার মালিকানায় দিয়ে দিলেন মাত্র দশ দিনারের বিনিময়ে! হে আল্লাহ! তুমি বড়ই দয়াময়। তোমার ভয়ে তোমার নাফরমানী কেউ থেকে বিরত থাকলে তুমি তাকে উত্তম বদলা দাও। হে পরাক্রমশালী খোদা! আমি তোমার কাছে চির কৃতজ্ঞ! যাহোক, মেম সাহেবের পূর্ণ মালিক হয়ে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে চেনেন? জবাবে তিনি বললেন, না। আমি আপনার সেই কাতান ব্যবসায়ী! যার কাছ থেকে আপনি দু’বারে একশ বিশ দীনার নিয়েছিলেন। তৃতীয়বার বলেছিলেন, আমাকে পেতে হলে পাঁচশত দিনার দিতে হবে! এই যে আমি আজ মাত্র দশ দীনারে আপনার মালিক হয়ে গেলাম!! আমার কথা যখন শেষ হলো, তখন দেখলাম, তার দৃষ্টি ঝাপসা। ঠোঁট দু’টি কাঁপছে। আমি বললাম, আপনি কি কিছু বলবেন? তিনি বললেন, আমি বিস্মিত হচ্ছি একথা ভেবে যে, আল্লাহর ভয়ে আমার সাথে অবৈধ কর্মে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার কারণে তিনি কীভাবে আপনার খেদমতে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন! যে আল্লাহ এতবড় মেহেরবান, এতবড় দয়ালু আমি তার উপর এক্ষুণি ঈমান এনে ইসলাম ধর্ম কবুল করতে চাই। এই বলে তিনি উচ্চ কণ্ঠে পড়তে লাগলেন- আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু। আমার মেম সাহেব মুসলমান হয়ে যাওয়ার পর আমরা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। কিছুদিন যেতেই তার মা একটা ছোট্ট বাক্স পাঠালেন। তাতে দুটি থলে পাওয়া গেল। একটিতে পঞ্চাশ দিনার অপরটিতে একশত দিনার। কুদরতের কারিশমায় আমি মনে মনে হাসলাম। বুঝলাম, সব হয়েছে তাঁরই ইশারায়। সবই ফেরত পেয়েছি তাঁরই ইশারায়। মজার ব্যাপার হলো, যে দু’টি সুন্দর জামা পড়ে মেম সাহেব দু’রাতে আমার কাছে এসেছিলেন, ছোট্ট এই বাক্সে সেই জামা দুটোও ছিল। হ্যাঁ ভাই! তোমাকে আমি অনেক লম্বা কাহিনী শুনিয়ে ফেললাম। আমার আশেপাশের এই ছেলেগুলো মেম সাহেবেরই সন্তান! প্রিয় ভাই ও বোনেরা! উপরোক্ত ঘটনায় দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার হয়ে গেল যে, বান্দা যদি আল্লাহর জন্য কোনো নাফরমানী তরক করে, তাহলে আল্লাহ পাক তাকে অবশ্যই এর বদলা দেন। উত্তম বিনিময় দান করেন। লোকটি আল্লাহর ভয়ে মেম সাহেবকে গভীরভাবে ভালোবেসেও আপন চরিত্রকে কুলষিত হতে দেয়নি। তাই আল্লাহ পাক তাকে উত্তম বদলা দিয়েছেন। [সূত্র : মাতালিয়ুর বুদূর, আল্লামা দামেশকী রহ.]
মেম সাহেব!
Loading books...