পাত্রী নুরুন্নাহার ও তার মা হাফসা বেগম

পাত্রী দেখার আসরে শামিমের মনে একটা বিষয় খচ করে উঠল। এই খচ করে উঠা পূর্ব পরিচিতের কোনো বিষয় না। পাত্রী নুরুন্নাহারকে সে দেখেনি আগে। চেনেও না। কিন্তু নুরুন্নাহারকে তার খুব আপন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে খুব কাছের কেউ। বিয়ের পর শামিমের খুব কাছেরই হবে যাবে নুরুন্নাহার। কিন্তু বিয়ের আগেই কেন আত্মিক একটা টান অনুভব করছে শামিম তার জানা নেই। বিষয়ের কোনো কূলকিনারাও তার সম্ভব হচ্ছে না।
-আচ্ছা ভাইয়ের এসএসসি সাল কত?

নুরুন্নাহারের পাশে বসা মেয়েটা প্রশ্ন করে। কে হবে ও? জানা নেই। তবে মেয়েটার প্রশ্ন শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যায় শামিম। ভাবছিল বয়স কিছুটা লোকাবে। তার প্রকৃত বয়স শুনলে নির্ঘাত হারাতে হবে নুরুন্নাহারকেও। এর আগে অন্তত ৮ টা বিয়ে ক্যান্সেল হয়েছে এই দোষে। কিন্তু প্রশ্নকারী তো বিপদে ফেলে দিল শামিমকে। পরীক্ষার সন ভুল বললে ঠিকই বের হয়ে যাবে। অবশ্য এই মেয়েকে নিয়ে এত চিন্তা নেই। এতিম মেয়ে। মা বাবা নেই। নানা নানির কাছে বড় হয়েছে। যেভাবে যত দ্রুত পাত্রস্ত করা যায় সেটাই বর্তে যায়।
শামিম দোনামোনা করে বলেই ফেলল- ১৯৮৮।

পাশে বসা নুরুন্নাহারের নানি কিছুটা আৎকে উঠে বললেন, ৮৮ তে এসএসসি হলে তো বয়স অনেক। ছেলের কি দ্বিতীয় বিয়ে?

পাশে বসা শামিমের বাবা আবসার আলী হালকা কাশি দিয়ে কথাটা লোকোনের ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। তারপর বললেন, না না দ্বিতীয় বিয়ে হবে কেন। প্রথম বিয়েই। আসলে এখনকার সময়ে ছেলেরা একটু দেরিতেই বিয়ে করে। পয়সাপাতি হলে, একটা বাড়ি গাড়ি ঠিক করে তারপর। তাই আরকি ওর একটু দেরি হলো। তাছাড়া বয়স বেশি হলেও চেহারায় কিন্তু তা বলে না দেখুন না ভালো করে।
ছেলেকে উপযুক্ত পাত্র বানাতে সহায় সম্পত্তির ঝাপিও খুলেন বাবা। এই দেখুন এখনকার রাস্তাঘাট গাড়ির যে অবস্থা, নিজের একটা প্রাডো ছাড়া কি চলে, বলেন। আর একটা বাড়ি না হলে ঢাকা শহরে থাকা যায়? ছেলে মাশাল্লাহ নিজের টাকায় প্রতিষ্ঠিত। বণশ্রীতে ১২ শতাংশ প্লটের ওপর ডুপ্লেক্স বাড়ি। এসব করতেই তো ওর একটু দেরি হলো।

আবসার আলীর কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হয় পাত্রী পক্ষ। মেয়ে সুখে থাকুক সেটা সব অভিভাবকের প্রধান চাওয়া। তাছাড়া একটা কম বয়েসী ছেলে চাকরির পাঁচ সাত বছর নিজের ভবিষ্যত নিয়ে কনফিউজড থাকে। এই ভালো তো এই খেই হারানো দশা। সেখানে শামিমের একটু বয়েস হলেও মন্দ কি।

-আচ্ছা ওয়াশরুমটা কোন দিকে? জানতে চায় শামিম। ঠিক টয়লেটে পায়নি। বয়সের আলোচনা উঠতেই তার নিজেকে একটু লজ্জা লজ্জা লাগে। কিছুক্ষণের জন্য লুকাতে পারলে মনে হয় ভালো লাগতো।

ডান হাতে বাম দিকে ইশারা করে ওয়াশরুম দেখিয়ে দেয় নুরুন্নাহারের পাশে বসা মেয়েটা। একটু টিপ্পনিও কাটে হয়তো। শামিমের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে দ্রুত পায়ে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে জীবনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ সংকীর্ণ ঘরে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে। কিভাবে কিভাবে ওর বয়সটা পার হয়ে গেল। টেরই পায়নি। হিসাব করে দেখলে যে কেউ আৎকাবে। শামিম কী করেছে এতদিন। কেন বিয়ে করেনি? আসলে বিয়ের প্রয়োজনটা হয়তো হয়নি। প্রয়োজনীয় সব ও পেয়েছে টাকার জোরে। একটা মেয়ের আবর্তে জীবনকে ঘিরে ফেলার অর্থ হয়তো তার কাছে অনর্থ ছিল। যাই হোক অনেক পাপ তো জীবনে হয়ে গেছে। এবার না হয় সেসব ভুলে আপন কুটিরে ডুব দেয়া যাক। সে ক্ষেত্রে নুরুন্নাহারকে পেলেই হয়। অনেক মেয়েই তো দেখা হলো। কেউ তো তাকে দেখে এগুচ্ছে না। একটা সময় মনে হয়েছে টাকা পয়সাতেই মানুষ টলবে। কিন্তু তা সব ক্ষেত্রে অবাস্তব।

ওয়াশরুম থেকে ফিরে সোফায় বসতেই বন্ধু মারুফ চিমটি কাটল। কানে কানে বলল, কিরে শালা ওয়াশরুমেই ২০ মিনিট পার করে দিলি। একটা কলেরা রোগীও তো ২০ মিনিট ওয়াশরুমে থাকে না।

শামিমের মনে হয়েছিল গেল আর এল। এর মধ্যে যে ২০ মিনিট কেটে গেছে টেরই পায়নি। বিষয়টা লজ্জার। শামিম দ্বিতীয়বার লজ্জায় আক্রান্ত হলো। তবে বেশিক্ষণ সে লজ্জা ধরে রাখা গেল না। টেবিলে চা নাস্তা দেয়া হয়েছে। কেউ একজন তাড়া দিল, চা নেন বলে। শামিম চা নিলো। প্রথম যে চুমুক দিল তাতে সুরুক করে একটা আওয়াজ হলো এবং শামিমের মনে হলো সে তৃতীয়বারের মতো লজ্জাজনক কাজ করলো।

জীবনের কত কত কাজ করা শামিম কখনো লজ্জিত হয়নি। কিন্তু মেয়ে দেখতে এসে এভাবে লজ্জাজনক কাণ্ড ঘটতে থাকবে সেটা তার কাছেই বেমানান ঠেকছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল আর কখনো ফেমেলিবেষ্টিত পাত্রী দেখবে না। একা এক ঘরে বা রেস্টুরেন্টে কাজটা সেরে নেবে।

নাস্তা পর্ব শেষে আবসার আলী বললেন, মেয়ে মাশাল্লাহ আমাদের পছন্দ হয়েছে। আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকলে কাজ এগিয়ে নেয়া যায়।
আবসার আলীর কথা শুনে মেয়ে পক্ষের লোকেরা কিছুক্ষণ ইশারা ইঙ্গিতে একে অপরে কথা বলল। তারপর নুরুন্নাহারের নানি বললেন, আমাদেরও তেমন কোনো আপত্তি নেই।

শামিমের জন্য একটা সুযোগ করে দিল মারুফ। দুই পক্ষের যেহেতু আপত্তি নেই আমাদের মনে হয় কাজ আগানো দরকার। তবে মেয়ে ও ছেলেকে একটু আলাদা সময় দেয়া দরকার কথা বলার জন্য। তারা না হয় একান্তে কিছু সময় কাটাক। নিজেদের কোনো বক্তব্য থাকলে আলোচনা করুক।

মারুফের প্রস্তাব মন্দ না। দুইজনকে একটা রোমে ঢুকিয়ে দেয়া হলো। যেখানে একটা বড় বারান্দা আছে। পাশে একটা সচল রাস্তা আর কিছু গাছ গাছালি চোখে পড়ছে। শামিম আর নুরুন্নাহার বারান্দাতেই দাঁড়ায়।

লজ্জায় আরষ্ট নুরুন্নাহারকে ডেকে শামিম রাস্তায় চলতে থাকা রিকশার দিকে ইশারা করে বলে, বলো তো ওই রিকশায় কয়টা পা।
-তিনটা।
-হয়নি, চারটা পা। রিকশাওয়ালার দুইটা বাকি দুইটা প্যাসেঞ্জারের।
-আপনি তো রিকশার কয় পা সেটা জিজ্ঞেস করছেন।
-আমি তো বলেছি রিকশায় কয় পা। হা হা হা, কথাটা বলেই শামিম হাসে।
-আচ্চা বাদ দাও, কেমন আছো বলো। জিজ্ঞেস করে শামিম।
-ভালো আছি। আপনি।
-এই তো চলে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ থেমে শামিমই আবার বলে, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। কিন্তু তোমার ব্যাপারটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমার যদিও বয়সটা একটু বেশি। কিন্তু আমার ভেতর এখনো তারুণ্য বসবাস করেন। আমার সব সময় মনে হয় আমি হয়তো রসিকতার বয়সটা পার করে যাইনি। তোমার জন্য আমি সবদিক থেকে ফিট। এখন তুমি বলো, আমাকে তোমার কেমন লাগছে। দশে কত দেয়া যায়।
কথা শুনে নুরুন্নাহার রাস্তার দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ আগেই ডুমুর গাছ থেকে একটা শুকনো পাতা রাস্তায় পড়েছে। সেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নুরুন্নাহার ভাবে, তার জীবন ওই পাতাটার মতো। বাবাকে দেখার সৌভাগ্য তার জীবনে হয়নি। কে তার বাবা সেটাও জানে না। মা ছোট বেলায়ই মারা গেছে বলে জানে। সে মানুষ হয়েছে নানা নানির কাছে। তার চাওয়া পাওয়ার খুব বেশি কিছু নেই। একটা খড় কুটো হলেই হলো যাতে সে বাকি জীবনটা পার করে দিতে পারে।
কী ব্যাপার কিছু বলছো না যে? উদাসী নুরুন্নাহারের মুখে প্রশ্ন ছুড়ে শামিন। বলে, আমি খুব স্পষ্টভাষী। সরাসরি সবকিছু বলতে পছন্দ করি। এই দেখো আমি। আমার জীবনে কিন্তু অনেক অন্যায় আছে। আমি অর্থ উপার্জনে বেপরোয়া ছিলাম। তবে এখন ঠিক হয়ে গেছি। বিয়ের পর তো পুরোপুরি অন্যরকম হয়ে যাবো। তোমাকে নিয়ে একটা স্বপ্নের দোতলা বানাবো। তুমি তোমার কথা ফ্রি মনে বলতে পারো। কোনো রাখঢাক আমার পছন্দ না।

নুরুন্নাহার কিছুটা ইতস্তত করে। একটা ভাবী সংসারমনযোগী পুরুষকে সবকিছু খুলে বলাই উচিত।

-কী ব্যাপার, কিছু বলো। শামিম তাড়া দেয়।
-আসলে আমার পছন্দ বলে তেমন কিছু নেই। আমার জীবনটা সুতোকাটা ঘুড়ির মতো। একটা ঠিকানা হলেই সেরে যায়। কোনো উচ্চাকাক্সক্ষাও নেই।
-একটা ছুটন্ত সংসারের দুইটা প্রাণ লাগে। দুইটা প্রাণ মানে দুইটা চাকা। বাইসাইকেল যেমন। দুইটা চাকা সচল থাকলেই সাইকেল চলে, সংসার গতি পায়। তুমি হবে আমার একটা চাকা। সে জন্য তোমার চপলতা সংসারে জরুরি। আমি মেরামত করে করে সে চাকা সচল করতে পারবো না যদি না তোমার ভেতর সজীবতা থাকে।

-আপনি খুব গুছিয়ে কথা বলেন। স্পষ্টবাদীও। সে জন্য আমার সবকিছু আপনাকে খুলে বলতে ইচ্ছে করছে। যাতে ভবিষ্যতে এটা নিয়ে কোনো আফসোস তৈরি না হয়। বলে নুরুন্নাহার।
-হ্যাঁ, আমি তো তাই বলছি। আমরা একটা নির্মিমেষ জীবন গড়তে চাই। সেখানে আলো আঁধারি যেন প্রবেশ করতে না পারে।
-কিন্তু আমার একটা অতীত যদি আপনার কাছে মনে হয় খুব বাজে, যেটা সহজে মেনে নেয়ার মতো না হয়। তাহলে? তাহলে তো আপনার সংসার, স্বপ্ন দেখার অর্থটা ভেস্তে যাবে।

-আমি জীবনের চরম বাস্তবতায় বড় হয়েছি। তুমি হয়তো ধীরে ধীরে জানবে। আমারও খুব বাজে একটা সময় গেছে। কলেজের আড্ডাবাজ ছেলেদের সঙ্গ পেয়ে আমি বখেই গিয়েছিলাম। তারপর…

থামে শামিম। মনে করে এর বেশি বলা তার উচিত নয়। একটা ঘৃণ্য অতীত তারও আছে। সেই হাফসার কথা তার মনে পড়ছে। যার সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল। ডেটও হয়েছে। নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময় তখন। আজ থেকে ২০ বছরের বেশি সময়। হাফসা সন্তানসম্ভবাও হয়েছিল। যদিও পরে তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি বলে শামিম তার আপডেটও রাখেনি।
-বখে যাওয়ার পর কী? বলুন।
-ওই তো যা হয় আরকি। উড়ালপঙ্খী জীবন। বলে উড়িয়ে দেয় নিজের গোপন জীবন। তুমি বলো, তোমার কথা। একটু নড়েচড়ে দাঁড়ায় শামিম।
বারান্দার গ্রিলে হাত রেখে নুরুন্নাহার বলে। সব কিছু কি বলা ঠিক। বিপদ তো ডেকে আনতে পারে।

শামিম ফিক করে হাসে। ভাবসাবে বোঝায় ওর কোনো সম্পর্ক থাকলে বা একটু আধটু ডেট ফেট হলেও কোনো আপত্তির কিছু নাই। ওসব তো নিজের জীবনেও কত হয়েছে। তুমি নির্ভয়ে বলে যাও। আমাদের সুন্দর আগামীর জন্যই তো বলবে।
-আমি যতদূর শুনেছি, আমার বাবা বলে কেউ নেই। মা আমাকে জন্ম দিয়েছিলেন একটা হাসপাতালে। কিছুদিন নিজের বাড়িতে থেকেছেন। কিন্তু এমন একটা বিষয় নিয়ে তার বাবা মার সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। খুব কটু কথা শুনতে হতো তাকে। এটা হয়তো সহ্য করতে পারেননি। একদিন আমাকে ফেলে তিনি চলে গেছেন। আর ফেরেনি। কোথাও ফেলে দেয়া সম্ভব হয়নি বলে বাড়িতে ঘর ঝাড়ু দেয়ার যন্ত্রের মতো তারা আমাকে পুষেছে।

শামিমের মনে হলো মাত্র ভূতের স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙল। এখন কী বলা উচিত এমন ধারণা জ্ঞানও তার নেই। মাথায় কিছুই আসছে না। এতটা ভয়ঙ্কর কিছু শুনতে হবে সে জন্য হয়তো তার কান প্রস্তুত ছিল না।

-কী ব্যাপার, শকড হয়ে গেলেন? বলছিলাম না শুনলে ভিন্ন কিছু ভাববেন। আমি নিজে প্রতারিত এক জীবন বয়ে বেড়াচ্ছি। উচ্ছন্নে যাওয়া কাকের মতো আমি ঠিকানাহীন। কাউকে এ প্রতারণার ভাগিদার করতে চাই না। তাই আপনাকে বিষয়টা বললাম। আমার রূপ রঙ দেখে অনেকেই পাগল হয়। কিন্তু ভেতরের গল্পটা কেউ মানতে চায় না জানেন? অথচ এইযে আমাকে বিয়ে করতে আসা অনেক ছেলেই কিন্তু এসব করে বেরাচ্ছে। তাদের কারণেই আমাদের জন্ম হচ্ছে। সেখানে আমার কী দোষ ছিল বলুন তো? বলতে বলতে কেঁদে ফেলে নুরুন্নাহার।
হাফসার কথা মনে পড়ে যায় শামিমের। নুরুন্নাহারের ছুড়ে দেয়া গালি তার শরীরেও বিদ্ধ হয়। তার শরীরও সে দোষের ক্রিয়া বহন করছে। নুরুন্নাহারকে সে সান্ত¦না দেয়। আমি আরও শুনতে চাই। তোমার ব্যাপারে আর কী জানো? বলো সব।

-মার তো বাকি জীবনটাই কষ্টের। আমার নানারা আগে থাকতো উত্তরা। আমার জন্মও হয়েছিল এখানকার একটা মেডিকেলে। জন্মের পর অনেক অকথ্য শুনতে হয়েছে ওদের। একটা সময় বাসাটা ছেড়ে দিতে হয়েছেন। ধানমন্ডিতে এসেছেন। তবে তারা আমাকে ফেলে দেয়নি। পড়িয়েছেন। বড় করেছেন।

-তোমার মায়ের কোনো স্মৃতি?
-মায়ের কোনো স্মৃতি আমার নেই। সম্ভবত আড়াই তিন বছরের মাথায় তিনি আমাকে ছেড়ে যান। শুধু তার নামটা মনে আছে। হাফসা।

নামটা শুনেই শামিমের মনে হলো তার গায়ে কেউ শক্ত পাথর ছুড়লো। কোন হাফসা? তিতুমীর কলেজের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের? যার সাথে তার দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল। রুমডেটেও গরিয়েছিল। যার ফলে সে সন্তানসম্ভবা হয়েছিল। নাহ এ হাফসাকে নুরুন্নাহারের মায়ের সাথে মেলাতে চায় না শামিম। তাহলে ভয়ঙ্কর এক খেলার সম্মুখিন হয়ে যাবে সে।

প্রথম দিনের মতো দেখালাপ শেষ হয়। শামিম বাসায় ফিরলেও তার মন পড়ে থাকে সিক্সটি নাইন ধানমণ্ডির থ্রি ফ্লোরের ঝুল বারান্দায়। যেখানে হাফসা কেন্দ্রিক জটিল ধাঁধার এক জট সে রেখে এসেছে। আসার পর এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও শামিম বা তার পরিবার থেকে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। শামিম নুরুন্নাহারের নাম্বারও এনেছে। সেও রেখেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কথা বলেনি কেউ। দেখতে দেখতে দ্বিতীয় সপ্তাও পার হলো। শামিম ভাবছে নুরুন্নাহারকে কিছু জানানোর আগে হাফসা কেন্দ্রিক জটিলতা আগে মেটাতে হবে। নিশ্চিত হতে হবে এই হাফসা ওর এক্স জিএফ নয়।

হাফসাকে বের করার মোটামুটি দুটি উপায়। এক হলো যে হাসপাতালে প্রসব করেছে সেখানকার রেকর্ড বের করা। সেটা বেশ কঠিন। আরেকটা সহজ উপায় নুরুন্নাহারের নানা বা নানির কাছে জেনে নেয়া। এটাও কঠিন কেননা তারা এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইবে না।

ফোনটা বেজে ওঠল। শামিম পকেট থেকে বের করে দেখল নুরুন্নাহারের কল। কয়েকবার ধরবে না ধরবে না করেও রিসিভ করে ফেলল।
-কী ব্যাপার আপনি তো স্পষ্টবাদী, তবু যে পিছিয়ে গেলেন? রাখঢাকা না রেখেই নুরুন্নাহারের আক্রমণ।
-না, আসলে আমার একটা বিষয় ক্লিয়ার হওয়া দরকার। সে কারণেই একটু সময় নিচ্ছি। তবে আমি এটা শিউর, তোমার কোনো ব্যাপারেই আমার কোনো আপত্তি নেই।
-তাহলে আপত্তিটা কোথায়, সেটা কি বলবেন?
-আচ্ছা তোমার মা কোন কলেজ থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছিল সেটা কি বলতে পারবে?
-না, বিষয়টা আমার জানা নেই।
-বাসা থেকে জেনে নিতে পারো।
-এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলতে আগ্রহী নই। তারাও এসব নিয়ে কথা বলে না আমার সঙ্গে।
-আচ্ছা আমি কি তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি?
-হ্যাঁ, সেটা পারেন। আমি টিএন্ডটি নাম্বার দিচ্ছি। নানু ধরবে।
পরদিন দুপুরে ফোন করে শামিম।
-হ্যালো, কে বলছেন?
-আমি শামিম। ওই তো সেদিন নুরুন্নাহারকে দেখতে গেলাম।
-ও হ্যাঁ, কী খবর তোমরা তো কিছু জানালে না?
-এই তো আজ জানাবো বলে ফোন করা।
-তো সব পজেটিভ তো? আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
-হ্যাঁ, আমাদেরও নেই। আমরা এগুতে পারি বিষয়টা নিয়ে।
-তাহলে শুভকাজটা কবে করা যায়?
-আচ্ছা নুরুন্নাহারের মা সম্পর্কে একটু জানার ছিল। একচুয়েলি সে শুধু তার মার নাম বলতে পেরেছে।
-আসলে আমরা এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না।
-আচ্ছা আপনার মেয়ে হাফসা, ও কি তিতুমীরে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে ছিল? ১৯৯২/৯৩ এর দিকে?
-হ্যাঁ তুমি কী করে জানলে?

আর কোনো কথার প্রয়োজন হয় না শামিমের। কান থেকে ফোন নামিয়ে কল কেটে দেয়। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। দ্রুত বাসা থেকে নিচে নামে। গ্যারেজ থেকে সদ্য কেনা প্রাডোটা বের করে শা করে টান দেয়। দুই চোখ যেদিকে যায় ছুটতে থাকে শামিম। এই দূরন্ত গতির কাছে মৃত্যু এসে ধরা দিলেও আজ তার আপত্তি নেই।