Site icon খিচুড়ি

কাইকো বিজ্ঞানী

আসলে নামটা জানি কেমন কেমন লাগে তাই না?
কি আর করার একবার যেহেতু দিয়ে ফেলেছি কষ্ট করে মেনে নেন। তবে এ নাম দেওয়ার পেছনে কোন বিশাল এক রামায়ন কাহিনী না তবে ছোট্ট একটা কাহিনী আছে। একদিন বিকেলবেলা বেড়াতে গেলাম আমার গ্রামের দুই গ্রাম পরে সেখানে এক ছেলেকে দেখা। গ্রামের ছায়াঘেরা নীরব রাস্তা দিয়ে হাটছি হঠাৎ পিছন থেকে “ওই বিজ্ঞানী খাড়া আমিও যামু”বিজ্ঞানী বলে যে ছেলেটিকে সম্বোধন করা হচ্ছিল সে ছেলেটা সাইকেলের প্যাডেল ঘুড়িয়ে আমার পেছন দিকে থেকে আসছিল। নামটা শুনে আমি খুব কৌতুহলী হয়ে উঠলাম। ওকে বিজ্ঞানী বলে ডাকা হয় কেন? যাইহোক ওকে ডাকলাম ও ভাই একটু এদিকে আসতো-কে শুনে কার কথা কোন পাত্তা ই দিল না। আমিও সেদিকে আর নজর দেইনি। বেশ কয়েকদিন পর আবারো এ গ্রামে আসা। দেখতে পেলাম মাঠে একদল ছেলে খেলছে। ছেলের দলের মধ্যে বিজ্ঞানী বলে ডাকা ছেলেটাও আছে। বসে রইলাম এবং ভাবলাম আজকে ই রহস্য উদঘাটন করেই যাব। অনেক্ষন অপেক্ষা করার পর জানতে পারলাম ছেলেটার না কাইকোবাদ। তবে সবাই আদর কিংবা মজা করে কাইকো ডাকে। ছেলেটির নাম শুনে তাকে জানার কৌতুহল আরও একগুন বেড়ে গেল। মাঠের পাশে পুকুরপাড়ে বসা আমি। হঠাৎ ফুটবলটা পুকুরের মাঝে গিয়ে আছড়ে পড়ল। সবাই দলবেধে পুকুরপাড়ে হাজির। অনেক বলাবলি করছে পুকুরে নেমে যাই। পেছন থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম, “এখন কেউ পুকুরে নামিস না,আমাদের শরীরের তাপমাত্রা এখন অনেক বেশি আর শরীরও অনেক আদ্র বা ঘার্মাক্ত। জ্বর-ঠান্ডা হতে পারে।”
আমি শুনে বেশ অবাক ই হলাম। তবে কথাবলা ছেলেটিকে সবার ভিড়ে দেখতে পাইনি। একটু পরে একই ছেলে আরও একটি বানী নিয়ে সামনে এগিয়ে আসে”আমরা যদি ৪৫ডিগ্রি কোণ করে বলটাতে ঢিল ছুড়তে পারি তাহলে বলটা ওই পাড়ে পৌছে যাবে”। এবার নিশ্চিত হলাম ছেলেটা কাইকোবাদ ই। ওই দিন সন্ধ্যার বাড়ি ফিরে এলাম। কয়েকদিন পর একদিন গেলাম আবার ওই গ্রামে-বন্ধুদের সাথে খেলছিলাম,হঠাৎ দেখি কাইকো হাজির বলে উঠল”ভাই আমাকে নিবেন”। অনেকে মানা করল কিন্তু আমি ডেকে এনে বললাম তুমি আমার দলে খেলবে? বললো জি ভাই।
এখন থেকে ওই গ্রামে গেলেই কাইকোর সাথে দেখা হয়। আমি মাঝেমধ্যে ওকে ডাক দেই আর ও ভাই বলে ডাকে। একদিন রাস্তার মোড়ে আমি বসা হঠাৎ কাইকো উড়ে এসে বললো ভাই আমাকে একটু সাহায্য করবেন। আমি বললাম -তুমি বল দেখি করতে পারি কি না! কাইকো বললো ভাই আমার পদার্থবিজ্ঞানে এবং জ্যামিতিক কিছু সমস্যা আছে। আপনার কাছে যদি যাই একটু দেখিয়ে দিবেন। আমিও সংকোচ না করে বলে ফেললাম বেশ তাহলে কাল বিকেলবেলা এসো। ও তুমিতো আমার বাড়ি চেন না?!
“অ কোন ব্যপার না চলে যাব নে”। পরদিন তিনটা কি সাড়ে-তিনটায়  কাইকোর আগমন।
মা ডেকে বললেন, “তোর সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে”। বুঝতে পারলাম যে কাইকো এসেছে,ডাকলাম ওকে ঘরে।
ঘন্টা দুয়েক কিছু সমস্যা দেখাল আমাকে আর রীতিমতো প্রশ্নঝড় তুললো আমার উপর। আমিও বেশ কয়টি প্রশ্নের উত্তর বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করলা। এই ধরা যাক,  টাইম ট্রাভেল কি সম্ভব? বয়স হলে মানুষের চুল পেলে যায় কেন? সিলিং ফ্যান আস্তে ঘুরলে বিল বেশি আসে না জোরে ঘুরলে? মৃত সাগরে সকল বস্তু ভেষে থাকে কেন?  রকেট কিভাবে উড়ে?
রকেটের জ্বালনি বানানো হয় কি দিয়ে? ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে মজার ব্যাপার হলো কতগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারিনি। আসলে এ সকল প্রশ্নের উত্তর আমার তখনও জানা ছিল না।
যেমন-বৃষ্টির ফোটা এত উপর থেকে পড়লেও আমরা তেমন ব্যাথা পাই না কেন?
বৃষ্টির পানিতে আমপাতা ভিজলেও, কচুপাতা ভিজেনা কেন? ইত্যাদি। আমার তখনও আসঞন বল আর সংশক্তি বলের ব্যাপারে কোন ধারনা ছিল না। তারপর থেকে মাঝেমাঝেই বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসত কাইকো।
বুঝতে পেরেছিলাম বিজ্ঞানের প্রতি প্রবল ঝোক তার। তবে তা আরও পরিষ্কার হলো তার বাড়িতে গিয়ে। এক বিকেলে কাইকোদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখনও জানতাম না এটা কাইকোদের বাড়ি। পেছন থেকে ডাক পড়ল। পিছনে ফিরে দেখলাম কাইকো,বাড়িতে যাওয়ার জন্য জোড় করছিল। আমি প্রথমে যেতে রাজি হয়নি। কিন্তু পরে তার প্রবল আপত্তির মুখে যাতে হলো। ওর ঘরে ঢুকতেই আমি পুরো থ!! টিনের দেয়ালটা ভরা বিজ্ঞানের সকল সূত্রে,বড়-বড় ক্যালেন্ডারে লেখা। সাথে কতগুলো রকেট,জীবজন্তু আর খেলোয়াড়দের পোষ্টার। ঘরের এককোণে একটি পড়ার টেবিল। টেবিলের উপরের প্রথম বইটা দেখে আমি খুব আবাক ই হলাম। বইটার নাম-“স্পেস বয় এন্ড হিজ ডগ”-। জিজ্ঞেস করলাম কোথায় পেলে তুমি এ বই?উত্তরে বলল স্কুলের এক স্যার খুশি হয়ে তাকে এ বই উপহার হিসাবে দিয়েছেন। টেবিলের উপর রাখা আরও একগাদা বই। ঘরের আরেক কোনায় চোখ পড়তে আমি আরও আবাক। দক্ষিন কোনায় একটি কাঠের তাক। তাকটা তিনটি সারি বিশিষ্ট। প্রথম সারিতে কতগুলো ইলেকট্রিক জিনিসপত্র রাখা যেমন-ছোট কয়েক ধরনের মোটর,হরেক রকমের বাতি,কয়েক ধরনের ব্যাটারি, একগুচ্ছ তার আরও কত কি। দিত্বীয় তাকে কতগুলো সচ্ছ বইয়ুম বন্দি ফড়িং,ব্যাঙ,রংবেরঙের পানি আরও অনেক কিছু। তৃতীয় তাকের অনেকগুলো জিনিসের মধ্যে একটি জিনিস আমার দৃষ্টি আকর্ষন করল। বস্তুটি হলো-আনুমানিক দুই ইঞ্চি পুরু আর ছয় ইঞ্চি লম্বা একটি প্লাস্টিকের পাইপ। পাইপটা হাতে নিয়ে দেখলাম পাইপটার ভেতরে দুগ্ধসাদা কি যেন ঠাসানো। জিজ্ঞেস করলাম কি এটা? “রকেট”। এবার আমি আপনাদের বিষয়টা বুঝিয়ে বলি-পাইপটার মাঝবরাবর বারুদে ঠাসা দুই পাশে চিনি এবং ধানক্ষেতে দেওয়া সারের লেই। আমার কাছে যেদিন প্রশ্ন করেছিল রকেটের জ্বালনি কি দিয়ে বানানো হয়,ওই দিন আমি বলেছিলাম যে-পটাশিয়াম নাইট্রেড দিয়েও জ্বালানি বানানো সম্ভব। সেদিন থেকেই শুরু তার এ রকেট বানানো। অনেকবার বানিয়েছে কিন্তু কোনবার ই রকেট উড়েনি। আগুন নিচের দিকের সলতেটা দিয়ে বারুদে পৌছাবার আগেই নিভে যায়। ও আরেকটা জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি। সেটা হলো কাইকোর সাইকেল। তার সাইকেল কে সে নিজে রকেট বলে ডাকে। মজার ব্যাপার হলো সাইকেল রকেটে অনেক গতিতে ছুটে বলে না,সে এ নামটা দিয়েছে কারন রকেট তার অনেক পছন্দের একটা জিনিস। আশেপাশের পাচ গ্রামের যে কেউ তার সাইকেল দেখেই চিনতে পারে। সবাই তার সাইকেলের একটা ঝলক দেখতে পেলেই বলে উঠে ওই দেখ কাইকো বিজ্ঞানীর সাইকেল।

Exit mobile version