পিগকাসো

নিম্ন বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীদের রুচিবোধ কেমন হয়?
রুচি বলতে কি কিছু থাকে? চিনামাটির তশতরী করে আইসবারগ লেটুসের সালাদ দিলে গরু কি সেটা পছন্দ করবে? খুশি হবে?
কলের গানে জোহরা বাইয়ের রেকর্ড বাজালে বানর কি সেটা পছন্দ করবে?
জীবজন্তুর আচরণ নিয়ে হরেক রকম গবেষণা হয় । বিভিন্ন জার্নালে পাই মজার মজার লেখা । নিন্ম মগজের প্রানিগুলো অবশ্য সব সময় বোকা হয় না। ওরা ইশকুলের লাস্ট বেঞ্চির ছাত্রদের মত। কিংবা বলা যায় ছাত্র ভাল কিন্তু হাতের লেখা খারাপ ।
মাঝে একবার থাইল্যান্ডের কয়েকটা হাতি নিয়ে বেশ গল্পগাথা ছড়িয়ে গেল ।
সেই হাতিগুলো ছবি আঁকতে পারে । তবে শুধু মাত্র হাতিরই ছবি । অন্য কিছু না ।
টুরিস্টদের সামনে আঁকে ওরা । ক্যানভাস থাকে সামনে । মুখে তুলি গুজে দিলেই আঁকা শুরু করে । তবে বাধ্যতামূলক ভাবে হাতির মাহুতকে থাকতে হয় ।
খুব নজর দিয়ে দেখলে বুঝা যায় মাহুত বাবু হাতির কান টেনে টেনে হাতিটাকে গাইড করছে। অর্থাৎ ট্রেনিং দেয়া হাতি । টুরিস্টদের মনোরঞ্জন করা এবং একই সাথে টাকা কামানোর জন্য লম্বা একটা সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ওদের ।
বিস্মিত হবার কিছু নেই । যেমন করে সার্কাসের বাঘ দর্শকদের সালাম ঠুকে বা পেল্লাই সাইজের ভাল্লুক যেমন করে পিচ্চি বাচ্চাদের সাইকেল চালায় তেমনই আর কি !

আরেকটা খবর পেয়েছিলাম অমুক ভদ্রলোকের একটা কুকুর ছবি আঁকতে পারে।
এটাও বাজে এবং বকোয়াজ নিউজ । কারণ কুকুরের মালিক পাশে দাড়িয়ে ক্যানভাসের উপর তর্জনী দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আর প্রভুভক্ত কুকুর সেই জায়গায় তুলির টান দিয়ে হিজিবিজিবিজবিজ বানিয়ে ফেলছে।
ঘটনা এখানে শেষ হলে ভাল হত । আরেকটা প্রাণীশিল্পী কিন্তু বেশ নাম কামিয়ে ফেলেছে । ওর ছবি বেশ দামেও বিক্রি হচ্ছে । জানোয়ারটা হচ্ছে ৪৫০ পাউনড ওজনের একটা মাদি শূয়র । আদর করে ওর নাম দেয়া হয়েছে পিগকাসো । কারণ শূয়রটা শূয়রদের জগতের পাবলো পিকাসো ।
পিগকাসো সাউথ আফ্রিকার একটা খামারে বড় হচ্ছিল । আর সব শূয়রের মত । ওর বয়স যখন চার সপ্তাহ তখন জোয়ান লেফসন নামে এক ভদ্রমহিলা ওকে কিনে সাথে করে নিয়ে যায় ।
খামারের ভেতরের অবস্থা ছিল বিচ্ছিরি রকমের । বানিজ্যিক ভাবে যে সব শূয়রের খামারগুলো পরিচালনা করা হয় সবগুলোর অবস্থা বেশ কাহিল। নারকীয় পরিবেশ । খামারগুলো লোক চক্ষুর আড়ালে রাখা হয় । গাদাগাদি করে ছোট ছোট খাঁচায় রাখা হয় । সারাক্ষণ দাড়িয়ে থাকে জানোয়ারগুলো । নড়তে চড়তে পারে না।
এইজন্য কারও বাসা বাড়ির অবস্থা খারাপ হলে আমরা টিটকারি মেরে শূয়রের খামার বলি ।
জোয়ান লেফসন জানিয়েছেন , আর্থিক সামর্থ্য থাকলে উনি সবগুলো শূয়র কিনে ফেলতেন।
বাড়ি নিয়ে যাবার পর পিগকাসো প্রথমে কয়েকদিন ফুটবল খেলতে পছন্দ করতো । তারপর রঙতুলি হাতে …ইয়ে মুখে তুলে নেয় ।
জোয়ান লেফসন ভদ্রমহিলার দাবি উনি কক্ষনই পিগকাসোকে ছবি আঁকার জন্য কোন রকম ট্রেনিং দেননি বা জোরজবস্তি করেননি । বেচারা নিজের মনের আনন্দে ব্রাশ আর রঙ ইচ্ছামত ক্যানভাসে মাখিয়ে একে গেছে একটার পর একটা মাস্টারপিস !
ছবি আঁকার ফাঁকে ফাকে পিগকাসো স্ট্রবেরি, পেয়ারা, আর চকলেটের প্রলেপ দেয়া ভুট্টার দানা খায়।
মোদ্দা কথা শূয়রদের স্বর্গে আছে । খাবারের বিনিময়ে ছবি আঁকে সে । পেশাদার শিল্পীদের মতই ।
কানেক্টিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিজ্ঞানী অ্যালিসন কাউফম্যান । প্রাণীদের মধ্যে উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতার অধ্যয়ন করেন ভদ্রলোক । জীবজন্তু ছবি আঁকতে পারে- এই ব্যাপারটা উনার কাছে তেমন পোক্ত বলে মনে হয় না। কারণ ছবি আঁকতে গেলে দুটো জিনিস শিল্পীর জানতে হবে । অর্থ, স্ব-প্রকাশ বা সৌন্দর্য । কিন্তু মানবেতর প্রাণীদের মধ্যে এইসব গুন আছে , কাউফম্যান এর প্রমাণ কখনও দেখেনি ।
তবে পিগকাসোর আচরণ উনার কাছে মজার এবং সৃজনশীল বলেই মনে হয়েছে।
রঙচঙা ছবিগুলো দর্শক বেশ পছন্দ করছে ।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টিনা হরব্যাক জোর দিয়ে বলেছেন, অনেক প্রাণীর মধ্যেই শিল্প ও সৃজনশীলতার প্রতি প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি রয়েছে।
উদাহরণ হিসাবে তিনি পুরুষ বোরবার্ড পাখির কথা উল্লেখ করেন । এই পাখি বাসা বানিয়ে মাশরুম, বাদাম, গুবরে পোকা এমনকি শুঁয়োপোকের মল যোগার করে নিয়ে আসে বাসার ভেতরে শো পিস হিসাবে সাজিয়ে রাখার জন্য ।
হরব্যাক মনে করেন বেশির ভাগ জীবজন্তুই বেশ রুচিশীল ।
২০১৭ সালে পিগকাসোর আঁকা ছবি দিয়ে একটা প্রদশনীর আয়োজন করা হয়েছিল । চড়া দামে বিক্রি হয়েছে ছবিগুলো । বিক্রির টাকা ব্যয় করা হয়েছে খামারে বন্দি শূয়রদেরস্বাভাবিক আরামদায়ক বাসস্থানের জন্য ।
এই কাজে নিযোগ করা হয়েছে সেরা উকিলদের ।
গড়া হয়েছে ‘ দক্ষিণ আফ্রিকার খামার অভয়ারন্য’ নামে প্রতিষ্ঠান ।পিগকাসোর আঁকা সবচেয়ে কমদামী ছবিটার মূল্য ১২ হাজার রেনড মানে ৮৯৪.৮৪ আমেরিকার ডলার । সবচেয়ে দামি ছবিটা ১ লাখ রেনড অর্থাৎ ৫৮২৩.৭০ মার্কিন দলার।
বেশ উঁচুদরের শিল্পী এই পিগকাসো ।
কাজেই পিগকাসোর ছবি কেনার মধ্য দিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে । এবং এই ছবি বিক্রি করে পরবর্তীতে আরও মুনাফা লাভ করা যাবে এটাও অনেকে ব্যবসায়িক চোখে জুলজুল করে দেখছে।
খারাপ কি!