আমরা অনেকেই হয়তো ফ্রিল্যান্সিংয়ের ব্যাপারে জানি। আহামরি কিছু না জানলেও কিছুটা তো জানি! ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ, জনপ্রিয় এবং লাভজনক সাব-সেক্টর হলো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। মূলত আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটিকে সাজানো হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং রিলেটেড একটি পরিপূর্ণ গাইডলাইন নিয়ে। আশা করি পুরো আর্টিকেল জুড়েই আপনাদের পাশে পাবো। তবে তার আগে চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কি কি থাকছে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটিতে।
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি?
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কেনো করবো?
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিভাবে করবো?
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিভাবে শিখবো?
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব কতটা?
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে কত টাকা আয় করা যায়?
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি?
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অনলাইন ব্র্যান্ডকে প্রমোট বা মার্কেটিং করে বিভিন্ন পণ্য সেল করা মানেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কোটিং। এখানে সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফেইসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকড-ইন ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মকে।
যারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের উপর বেশ দক্ষতা অর্জন করে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করছে তাদের বলা হয় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার। বলে রাখা ভালো সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজ পাওয়ার অসংখ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। যেখানে ঠিকঠাকভাবে নিজের দক্ষতাকে তুলে ধরে কাজ করে যেতে পারলে ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করা সম্ভব।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কেনো করবো?
আপনার যদি নতুন কিছু করার ইচ্ছে থাকে, ঘরে বসে ইনকাম জেনারেট করার ইচ্ছে থাকে, আপনি যদি চান ইউনিক মার্কেটিং পলিসিগুলিকে কাজে লাগিয়ে নতুনকিছু করতে, এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কেবল আপনার জন্যই! নতুনকে ছড়িয়ে দিতে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং গুরুত্ব বেশ গভীর।
যারা ব্যবসায়ী মানুষ, উদ্যোক্তা মানুষ তারা সবসময় বিভিন্ন মার্কেটিং পলিসি মাথায় নিয়ে ঘুরে, চিন্তা করে। মূলত এই দলে থাকা মানুষগুলির ক্ষেত্রে প্রয়োজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সেক্টরটি। একজন সফল উদ্যোক্তার সবচাইতে বড় গুন হচ্ছে সে থেমে থাকতে জানে না।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও একই গুণ বা যোগ্যতার দরকার। সেল না আসা পর্যন্ত এখানে আপনাকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। বায়ারের ব্র্যান্ড একটি ভালো পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত (চুক্তি অনুযায়ী) আপনাকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
সেই সাথে যেসব মানুষ পাবলিক রিলেশনশিপের কাজটি ভালো পারেন এবং ৮/১০ জন মানুষকে একসাথে যেকোনো ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে পারেন তারাও এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে যথেষ্ট সফল হতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দরকারি কোর্স এবং কাজ করার জন্য ভালো ইন্টারনেট কানেকশন, পিসি বা ল্যাপটপ, কাজের প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিভাবে করবো?
বলা হয় থাকে ফ্রিল্যান্সিং জগতের সবচেয়ে সহজ কাজ হলো এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। যারা ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করতে চাচ্ছেন তারা এই সহজ কাজ অর্থ্যাৎ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার শুরুতে আপনাকে কাজের প্ল্যাটফর্ম খুঁজে নিতে হবে। আপনি কি ফেইসবুক নিয়ে কাজ করতে চাইছেন, নাকি টুইটার, ইনস্টাগ্রাম নাকি লিংকড-ইন নিয়ে কাজ করতে চাইছেন তা ঠিক করে নিতে হবে। তবে আপনি যদি নিজের কাজ না করে ক্লায়েন্ট বা বায়ারের কাজ করতে চান তবে আপনাকে বায়ারের দেওয়া প্ল্যাটফর্ম নিয়েই কাজ করতে হবে।
এবার আপনাকে প্ল্যানিং করতে হবে। কিভাবে কি করবেন, কিভাবে সেল জেনারেট করবেন তা নিয়ে প্ল্যানিং সাজাতে হবে। অনেকসময় ক্লায়েন্ট নিজেও আপনার এই প্ল্যানিং সম্পর্কে আগাম জানতে চাইবে। আবার মাঝেমধ্যে ক্লায়েন্ট নিজেই এই প্ল্যানিং আপনাকে রেডি করে দিতে পারে।
আবার আপনি যদি নিজের ব্র্যান্ড দাঁড় করানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের কাজ করতে চান তবে আপনাকের নিজের কাজের প্ল্যানিং নিজেই করতে হবে।
প্ল্যানিং রেডি হয়ে গেলেই কাজে নেমে পড়তে হবে। প্ল্যান অনুযায়ী সবার আগে নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে একাউন্ট, পেইজ, গ্রুপ খুলে নিতে হবে। যা হবে সাধারণ কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের নামে। পরবর্তী ধাপে আপনাকে অডিয়েন্স ধরে আনতে হবে। মনে রাখবেন কাজটি কোনোভাবেইজ জোর করে করানো যাবে না।
অডিয়েন্সকে পটিয়ে, তাদের মতো করে তাদের প্রয়োজনীয় ইনফো শেয়ার করে যেকোনোভাবে আপনার তৈরি করা সেই আইডি, পেইজ বা গ্রুপে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত প্রয়োজনীয় এবং তথ্যবহুল কন্টেন্ট শেয়ার করাটা সবচেয়ে ভালো টিপস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবশেষে সেল আসা পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিভাবে শিখবো?
এবার আসি শেখার ব্যাপারে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের কাজ মোটামুটি সহজ হলেও কোনোভাবেই কাজ না শিখে মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করা যাবে না। এক্ষেত্রে খারাপ রিভিউ আপনার ক্যারিয়ারের ১২ টা বাজিয়ে দিতে পারে। কাজ শিখে তবেই মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংসহ যেকোনো টেক রিলেটেড কোর্স বা অন্যান্য কোর্স আপনি সাধারণত ৩ ভাবে শিখতে পারেন। চলুন এই ৩ টি টেকনিক সম্পর্কে এবারে জেনে নেওয়া যাক।
অফলাইন কোর্স
যারা সরাসরি কোনো কিছু শেখালে তা দ্রুত ক্যাচ করতে পারেন এবং আশেপাশে ভালো মানের একাডেমি রয়েছে তারা চাইলে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের উপর অফলাইন কোর্স করতে পারেন।
তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভালো কোর্স খুঁজে বের করতে হবে। এলাকায় যদি কেউ আগে থেকেই কোর্স করে থাকে তবে তার সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাড় করে নিতে পারেন।
অনলাইন কোর্স
যারা ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখতে চান তারা বিভিন্ন অনলাইন কোর্সে অংশ নিতে পারেন। অফলাইনে কোর্সে যে খরচ পড়বে অনলাইন কোর্সে তার অনেক কমই চার্জ আসবে। তবে এক্ষেত্রে আপনার নিজেকেই সবসময় শেখার প্রতি সচেষ্ট থাকতে হবে। যারা ইংরেজিতে ভালো তারা বিদেশি কোর্স এবং যারা ইংরেজিতে দূর্বল তারা আমাদের দেশী কোর্সের সাহায্য নিতে পারেন।
অনলাইন ফ্রি রিসোর্স
এবার আসি যারা শেখার মতো কোর্স ফি কোনোভাবেই ম্যানেজ করতে পারছেন তা তাদের ব্যাপারে। অর্থের অভাবে শেখার মতো কাজটি অফ হয়ে থাকবে তা তো হয় না! আপনি চাইলে ফ্রিতে বিভিন্ন অনলাইন রিসোর্সের সাহায্য নিয়ে ঘরে বসেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখে নিতে পারেন।
ইউটিউব, গুগল, ফেবুসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন। বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আজকেল বিভিন্ন পর্বে ভাগ করে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের কাজ শেখানে হয়ে থাকে।
চাইলে সেসব ফ্রি রিসোর্সের সাহায্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখে নিতে পারেন। তবে চেষ্টা করবে ইংরেজি রিসোর্সের সাহায্য নিয়ে প্র্যাকটিস করার। এতে করে আপনার ইংরেজি দক্ষতা তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব কতটা?
সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব কেবল তারাই বুঝবে যারা একটি ব্র্যান্ড বা কোম্পানিকে জনপ্রিয় করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে না এমন কোনো ব্যাক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। সেদিক দিয়ে এতো বড় অডিয়েন্সের সামনে নিজের কোম্পানিকে তুলা ধরার মতো বুদ্ধিমানের কাজ কে হাতছাড়া করতে চাইবে?
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে কত টাকা আয় করা যায়?
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে আপনি শুরুর দিকে প্রতি মানে ২০-৩০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারেন। তবে যারা এক্সপার্টদের দলে রয়েছেন তারা প্রতি মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করতে সক্ষম হয়। তবে ইনকামের এই পরিমাণটি অর্ডারভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।
ইতি কথা
তো কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং রিলেটেড গাইডলাইনটি? আশা করি ভালো লেগেছে! পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।