সাদিও মানে কেন লিভারপুল ছেড়ে বায়ার্ণ মিউনিখে যোগ দিলেন?

লিভারপুলে সাদিও মানে কি পাচ্ছিলেন না; টাকা, সম্মান, সতীর্থ, কোচ? ইংল্যান্ডের বনেদি ক্লাব লিভারপুল। একসময়ের সবচেয়ে বেশি প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়নও লিভারপুল। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৭ বার চ্যম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলটির নামও লিভারপুল। পাচ্ছেন সালাহ,ফিরমিনো, ভার্জিল ফন ডাইকদের মত বিশ্বমানের সতীর্থ। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোচ ইয়ের্গুন ক্লপ লিভারপুলের ডাগআউটে। তারপরও মানে কেন লিভারপুল ছেড়ে গেলেন? ইংল্যান্ডের ক্লাব লিভারপুল ছেড়ে জার্মান ক্লাব বায়ার্ণ মিউনিখে যোগ দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী সেনেগালিজ তারকা সাদিও মানে। কিন্তু কি তাকে জার্মানিতে উড়াল দিতে প্রেরণা যোগালো?

বেতন…….

 

ফুটবলে টাকা এখন খুব ভাইটাল একটা ফ্যাক্টর। কে কোন ক্লাবে খেলছে, মৌসুম শেষে কয়টি শিরোপা ঘরে তুলছে তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সপ্তাহ শেষে কে কত বেতন পাচ্ছে। আর এজন্যই প্যারিস সেন্ট জার্মেই, চেলসি,ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মত ক্লাবে ’গেম টাইম’ না পেলেও মোটা অঙ্কের বেতন পেয়ে সাইড বেঞ্চে সময় পার করতেও প্রস্তু অনেক খেলোয়াড়। গত ছয় বছরে লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ,প্রিমিয়ার লিগ, উয়েফা সুপার কাপ, ক্লাব বিশ্বকাপসহ সম্ভাব্য সব শিরোপা জিতেছেন সাদিও মানে। কিন্তু লিভারপুলের খেলোয়াড়দের বেতন চার্ট দেখুন। সেখানে উপরের সারিতে মানের নাম খুঁজে পেতে আপনার একটু কষ্টই হবে। সালাহ-ফিরমিনোদের সাথে ‘ত্রিফলা’ গঠন করে লিভারপুলের শোকেসে একের পর এক শিরোপা এনে দিলেও বেতনের দিক দিয়ে সালাহদের ধারে কাছেও নেই সাদিও মানে। ফাবিনহো, রাবার্টসন এমনকি দলে অনিয়মিত এলেক্স অক্সলেড চেম্বারলেনের চেয়েও তার বেতন কম।

লিভারপুলের সাথে তার চুক্তির মেয়াদ ছিল আরো এক বছর। অল রেডসদের সাথে নতুন চুক্তি করতে প্রস্তুতও ছিলেন সেনেগালিজ এই সুপারস্টার। ভার্জিল ভন ডাইক, মোহাম্মদ সালাহদের সমান না হলেও তাদের ধারে কাছে বেতন আবদার তিনি করতেই পারেন। কিন্তু লিভারপুল বোর্ড তা মানতে পারে নি। সামনের মৌসুমেই মোহাম্মদ সালাহর চুক্তির মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। সালাহও ইতিমধ্যে তার বেতন বাড়ানোর জন্য দরকষাকষি শুরু করে দিয়েছেন। দলের সিনিয়রে খেলোয়াড়দের বড় অঙ্কের বেতন দিতে গিয়ে বিপদে পরে যেতে পারে ক্লাব। অগত্যা সাদিও মানেকে ছেড়ে দেওয়াটাকেই উত্তম মনে করেছে লিভারপুল। 

 

সাদিও মানে যেন লিভারপুলের নেইমার……

কাজ করছি সমান, মর্যাদা পাচ্ছি অর্ধেক। এরকম পরিস্থিতিতেই ক্লাব বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে যোগ দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার নেইমার জুনিয়র। যেখান একসাথে ফ্যাক্টর হয়ে দাড়িয়েছিল অভিমান আর টাকা।সাদিও মানের লিভারপুল ছাড়ার কারনও যেন একই রকম। ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে নেইমার কিন্তু কম করেন নি । কিন্তু দিন শেষে প্রাদ প্রদিপের আলোটা গিয়ে পড়ত লিওনেল মেসির দিকে। লিভারপুলের হয়ে সাদিও মানিও কম করছিলেন না। কিন্তু দিন শেষে প্রদি প্রদিপের আলোটা পাচ্ছেন মোহাম্মদ সালাহ। লিভারপুলের হয়ে মোহাম্মদ সালাহর ১০০ প্রিমিয়ার লিগ গোল ঘটা করে উদযাপন করা হয়। কিন্তু সেই একই রেকর্ড যখন সাদিও মানে করেন, লিভারপুল বোর্ড যেন তা একদম ভুলে যান। 

মানেকে সময় মত বল না দেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে বেশকয়েক বার উভয়ের মধ্যে মনোমালিণ্য হয়েছে। বস ক্লপের কাছে বেশ কয়েকবার অভিমানের কথা জানিয়েছিলেন মানে। অভিযোগ সরুপ ম্যাচ শেষে একবার ক্লপের সাথে হ্যান্ডশেক করা থেকেও বিরত থেকেছেন মানে। মানের সেই অভিমান জমে জমে পাহাড় পরিমাণ হয়ে গেছে। সেই অভিমান ক্ষয়ে ক্ষয়ে না পড়ে দিনকে দিন আরো বৃদ্বি পেয়েছে। সতীর্থদের দ্বারা পুরোপুরিা সহযোগিতা তিনি পাচ্ছেন না। লিভারপুল বোর্ড তার আবদার মেটাতে রাজি হচ্ছে না। প্রকৃত সম্মান আর কৃতজ্ঞতা যেখানে নেই, মানে সেখানে আর নিজেকে দেখতে চাচ্ছেন না। 

 

 সেনেগালিজদের ইচ্ছা…….

Sadio Mané Named AFCoN's Best as Senegal Triumph Over Egypt - The Liverpool  Offside

আফ্রিকার দেশ সেনেগাল থেকে উঠে এসেছেন সাদিও মানে। বল পায়ে গোটা বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেও নিজের দেশ, নিজের গ্রামকে ভুলে যান নি তিনি। দারিদ্রপিড়ীত নিজের গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন হাসপাতাল ও স্কুল। সুযোগ পেলেই চলে যান নিজের দেশে। ঘুরে ঘুরে দেখেন নিজের গড়া সব প্রতিষ্ঠান আর মিশে যান গ্রামের মানুষের সাথে। শুধু মানে নয় সবাই হয়ত তখন ভুলে যান, এই মানে ইউরোপের সবচেয়ে সম্মানজন শিরোপা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ফুটবলার। তিনি এখনো লিভারপুলের বড় তারকাদের একজন। চলতি বছরেই সেনেগালের হয়ে আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্স জয় সাদিও মানে। আফ্রিকা মহাদশে থেকে সামনের কাতার বিশ্বকাপের টিকিটও নিশ্চিত করেছে তার দেশ।

চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রানার্স আপ হলেও লিভারপুলের হয়ে এফ এ কাপ ও লিগ কাপে জিতেছেন সাদিও মানে। ইয়ের্গুন ক্লপের অধীনে লিভারপুলের প্রতিটি সাফেল্যে সাদিও মানের রয়েছে প্রত্যেক্ষ অবদান। কিন্তু সাদিও মানের প্রতি ক্লাব ও খেলোয়াড়দের ভূমিকায় সেনেগালিজরা খুবেএকটা সন্তুষ্ট হতে পরে নি। সাদিও মানের কি লিভারপুল ছাড়া উচিৎ- এরকম একটি অনলাইন ভোটাভুটিতে অংশগ্রহনকারী অধিকাংশ সেনেগালিজরা মনে করেছেন, সাদিও মানের লিভারপুল ছাড়া উচিৎ। সাদিও মানে তার স্বাদেশীদের কথা রেখেছেন। ইংল্যান্ড ছেড়ে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছেন সেনেগালিজ মুসলিম এই তারকা ফুটবলার।

 

জার্মানিতে তোমাকে শুমকামনা সাদিও মানে…….