ম্যানচেস্টার সিটি কিভাবে এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারে !!!

“তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ চাই”।
২০০৮ সালের কথা। ইংলিশ ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মালিকানা হাতে আসলো আরব শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের হাতে। ফুটবলের প্রতি প্রবল অনুরাগ আর ফুটবলে বিনিয়োগ লাভজনক মনে করে ইংল্যান্ডের বনেদি ক্লাবটি বগলদাবা করলেন তিনি। ক্লাব নিজের মালিকানায় আসার পর তার প্রথম চাওয়াই ছিল ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা। ইউরোপের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক আসর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় হবে, ইউরোপে উড়বে আকাশী পতাকা,এটাই ছিল প্রথম চাওয়া।
এরপর ১৪ বছর কেটে গেছে। খরচা হয়ে গেছে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো। সই করানো হয়েছে ইউরোপের নামিদামি অনেকফুটবলার। বদল হয়েছেন ৪ জন বাঘা বাঘা কোচ। ঘরে এসেছে ৬টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা, ২টি এফএ কাপ। কিন্তু উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এখনো অধরাই রয়ে গেছে। ২০২১ সালে ফাইনালে গেলেও চেলসির কাছে পরাজিত হয়ে সিটিজেনদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।

গত মৌসুমে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় সিটি। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে জিততে জিততে হেরে যায় পেপ গার্দিওলার সদস্যরা। আরও একটি সেমিফাইনালের সামনে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। আবারও তাদের প্রতিপক্ষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবচেয়ে সফল ক্লাব রিয়াল। তবে সেই বাধা টপকে এবার সিটি তাদের কাঙ্খিত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরে তুলবে, তার ৬টি যৌক্তিক কারন পর্যালোচনা করা যাক।

ম্যান সিটি পেয়েছে একজন আর্লিং হলান্ড।

২০২১ সাল। টানা ১০ মৌসুম সিটিতে রাজত্ব করে সিটিকে বিদায় বললেন সের্হিও আগুয়েরো। তার বিদায়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে কোচ পেপ গার্দিওলা বলেছিলেন-আমরা তার রিপ্লেস কখনোই পাব না। তিনি হয়ত তখন বুঝতে পারেন নি তার হাত ধরেই সিটিতে আসবেন গোল মেশিন আর্লিং হলান্ড।
জার্মান ক্লাব বুরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে চলতি মৌসুমেই ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন হলান্ড। অনেকেই ভেবেছিলন প্রিমিয়ার লিগে এসে হয়ত এত সহজে গোল পাবেন না নরওয়েজিয়ান ‍সুপারস্টার হলান্ড। কিন্তু সকলকে ভুল প্রমাণ করে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছেন তিনি। করে যাচ্ছেন একের পর এক গোলের রেকর্ড। প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে তার উপর সিটির অনেক ভরসা।

পেপ এবার কৌশল কৌশল খেলা বন্ধ করবেন।

অনেক ট্যাকটিস দেখানো হয়েছে….এবার থামো বাবা! পেপ গার্দিওলার অধীনে ২বার সেমিফাইনাল আর ১বার ফাইনাল খেলেছে ম্যান সিটি। প্রতিবারই বড় কোন ম্যাচে হঠাৎ করে কৌশল বদল করে ফেলেন তিনি। চেলসির বিপক্ষে ফাইনালে ডিফেন্ডিভ মিডফিল্ডার না খেলিয়ে চরম মূল্য দিতে হয়েছে তাকে। ২০২২ সালেও তার কৌশলের কারনেই বাদ পড়তে হয় সিটিকে। এবার আর সে পথে হাটবেন না তিনি। এবার তিনি সিটিকে নিয়ে অনেক বেশি ‘পরিণত’। সিটির সহজাত খেলাটি দেখিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যানেঞ্চস্টারে আনবেন গার্দিওলা।

ম্যান সিটির জমাট বাঁধা রক্ষণ

কোয়ার্টার ফাইনালে বায়র্ন মিউনিখকে ধরাশয়ী করেছে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। বায়ার্ণের বিপক্ষে জয়ে হলান্ড সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব পাচ্ছেন তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে, জয়টা এসেছে মূলত রক্ষনভাগের অসাধারণ নৈপুণ্যে।
ম্যান সিটির জমাট বাঁধা রক্ষণ বায়ার্ন আক্রমণকে অবশ করে দেয়। বায়ার্ন স্ট্রাইকাররা প্রথমার্ধে সিটির গোলমুখে মাত্র একটি শট নিতে পারে। প্রথমার্ধের পর যদিও বাভারিয়ানরা আক্রমণে ধার বাড়ায় তবে তাদের অধিকাংশ শটই ছিল দুরপাল্লার।সেই শটগুলো বগলদাবা করতে খুব বেগ পেতে হয়নি ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এডারসকে।
সেন্টারব্যাক রুবেন ডায়াস দৈত্যের মতো গোলমুখে আসা শটগুলো ব্লক করতে থাকেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন নাথান একে, ম্যানুয়েল একেন্জি আর জন স্টোনস। তাদের ভালো বোঝাপড়া পেপ গার্দিওলাকে আশা দেখাচ্ছে ।

মধ্যমাঠে আছেন একজন কেভিন ডি ব্রইনা।

বেলজিয়ান মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রইনা যেন একটি যন্ত্র; জার্মান যন্ত্র। তার কোন ক্লান্তি নেই, অহতাবস্তা নেই, স্বার্থপরতা নেই। তার একমাত্র কাজ হচ্ছে মধ্যমাঠ নিজের দখলে রাখা আর আক্রমনে গিয়ে একের পর এক গোলে সহায়তা করা। কয়েকদিন আগেই তিনি প্রিমিয়ার লিগে দ্রুততম ১০০ গোলের সহায়তাকারী হওয়ার মাইলফলক স্পর্শ করেন।ইতিমধ্যে এ মৌসুমেও ৯টি গোল আর ২২ গোলে সহায়তা করেছেন ব্রইনা। হলান্ড আর ব্রইনার মধ্যে দেখাযাচ্ছে দারুণ বোঝাপড়া। তাদের যোগ্য রসায়নে সিটি পেতে পারেন প্রথম ইউরোপ সেরার মুকুট।

১০০ মিলিয়ন ম্যান জ্যাক গ্রিলিশ

রাহেম স্টার্লিয়ের মত লেফট ইউংগার সিটির স্কোয়োডে আছেন; তবুও সিটিতে ভেড়ানো হলো জ্যাক গ্রিলিশকে। যেন তেন দামে নয়,রেকর্ড ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডে। প্রথম মৌসুমে সিটির হয়ে তেমন সুভিদা করতে না পারলেও হালে পানি পেয়েছেন গ্রিলিশ। সমালোচকরা শুরুতেই বলেছেন, পেপ গার্দিও্রলা যেরকম খেলোয়াড় চান ঠিক সেরকম খেলোয়াড় হচ্ছেন গ্রিলিশ। এ মৌসুমে হাল্যান্ডের পর তাকে সিটির সেরা সফল খেলোয়াড় ধরা হচ্ছে। গ্রিলিশ জ্বলে উঠলে জ্বলে উঠবে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি।

সিটির একমাত্র বাঁধা রিয়াল মাদ্রিদ।

কোয়ার্টার ফাইনালে যখন বায়ার্ন মিউনিখের নাম আসলো তখন অনেকেই বলেছিল কঠিন বাধা টপকাতে হবে সিটিকে। সেই বাধা সিটিজেনরা ভালোভাবেই উতরেছেন।
এবার সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ আরও শক্তিশালি প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল ইউরোপের সবচেয়ে সফল দল। তাদের ঝুলিতে রয়েছে ১৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। গত মৌসুমেও রিয়ালের কাছেই বাদ পড়তে হয়েছিল সিটিকে।
তবে এবার সিটিতের সামনে বড় সুযোগ হচ্ছে,সিটি দ্বিতীয় লেগ খেলবে নিজেদের মাঠ ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে। মাদ্রিদ মিরাকলের ৩টিই ঘটেছিল রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। ৩টি ম্যাচেই রিয়াল পিছিয়ে পড়েও জয় তুলে নিয়েছিল। এই সুযোগ এবার সিটি ভোগ করতে পারে।

ফুটবলে মাস্টারম্যান পেপ গার্দিওলার হাতে উঠবে নতুন ইউরোপিয়ান শিরোপা আর আরব শেখদের মনের খায়েশ মিটিবে।