ইস্তাম্বুলের কথা বললেই মনে পড়ে যায় ১৮ বছর আগের সেই লিভারপুল মিরাকলের কথা। যেখানে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের স্বপ্ন ভঙ্গ করে শিরোপা ছিনিয়ে এনেছিল ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল। ইস্তাম্বুলে আবার বসছে ইতালি-ইংল্যান্ড দ্বৈরথ। শনিবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইংলিশ ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মোকাবেলা করবে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান। সাম্প্রতিক ফলাফল, সাফল্য আর টাকা-পয়সার খরচাপাতির দিক দিয়ে হিসেব মিলালে সবদিক থেকে এগিয়ে থাকবে সিটি। কিন্তু ম্যাচটি যেহেতেু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল তাহলে মিলান কি এত সহজেই সিটিকে ছেড়ে দিবে?
ম্যানচেস্টার সিটির শক্তিমত্তাঃ
আর্সেনালকে হতাশ করে প্রিমিয়ার লিগ ঘরে তুলেছে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি। এফএ কাপের ফাইনালে সিটিজেনরা পরাজিত করেছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে। ঘরোয়া দুটি শিরোপা জিতে এখন পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা ট্রেবল জয়ের দ্বারপ্রান্তে।চলতি মৌসুমে আর মাত্র একটি জয় দরকার কেভিন ডি ব্রনি, ইকাই গুন্দোয়ানদের । সেই পরম আরাধ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা উঁচু করে ধরবে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির কোন অধিনায়ক। যদি তারা জয়ী হতে পারে তবে এটা হবে ইউরোপের দশম কোন ক্লাবের ট্রেবল জয়ের নজির।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গার্দিওলার খুব পরিচিত যুদ্ধক্ষেত্র। এটি তার চতুর্থ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। বার্সেলোনার হয়ে দুটি ফাইনালে জয়ী হলেও সিটির কোচ হয়ে প্রথম ফাইনালে চেলসির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। বড় কোন ম্যাচে কৌশলের ওদল-বদল করার খুব বাজে ইতিহাস আছে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার। চেলসির বিপক্ষে কোন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার না খেলানোর খেসারত তাকে দিতে হয়েছিল পরাজয়ের মাধ্যমে। এমৌসুমে কৌশল নিয়ে তাকে খুব একটা আনাড়িপান করতে দেখা যায়নি।
মৌসুমের প্রথম ও দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলার পর সিটি খেলোয়াড়রা আছেন ফুরফুরে মেজাজে। রক্ষণে রুবেন ডায়াস যে দক্ষতা দেখাচ্ছেন তা যে কারো নজর কাড়বে। ম্যানুয়েল একেন্জি, নাথান একে, কাইল ওয়াকারকে সাথে নিয়ে সিটির রক্ষণকে প্রতিপক্ষের জন্য একটি দূর্গে পরিণত করেছেন ডায়াস। জন স্টোনসকে আমরা দেখছে রদ্রির সাথে মধ্যমাঠ দাপিয়ে বেড়াতে। কেভিন ডি ব্রনি ও ইকাই গুনোয়ান এই মুহুর্তে ইউরোপের সেরা দুই মিডফিল্ডার। ইউনাইডেটের বিপক্ষে একাই দুই গোল করেন অধিনায়ক গুন্দোয়ান। জ্যাক গ্রিলিশ আর বেনার্দো দুই শক্ত ইউঙ্গার। আর সিটির আছে একজন আর্লিং হালান্ড। ১-৩-২-৪-১ ফর্মেশনটিই গার্দিওলা বেছে নিবেন বলে মনে হচ্ছে।
ইন্টার মিলানের শক্তিমত্তা ও কৌশলঃ
গ্রুপ পর্বে ইন্টার মিলান যখন বায়ার্ণ মিউনিখ ও বার্সেলোনার সাথে পরেছিল,তখন অনেকেই ধারণা করেছিল ইন্টার মিলান হয়ত প্রথম ধাপ থেকেই বিদায় নেবে। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচটি হেরে যাওযার পর সেই ধারানা আরও পোক্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রতিযোগিতাটির নাম যেহেতেু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেখানে কারো সম্ভব্যতাই বাতিল করে দেওয়া যায় না। ইন্টার মিলান সেটা প্রামণ করেই ইস্তম্বুলের টিকিট কেটেছে।
ইন্টার সিরি আ’তে তৃতীয় হয়ে মৌসুম শেষ করেছে। কোপা ইতালিয়ায় ফিওরেন্টিনাকে পরাজিত করে ইতিমধ্যে একটি শিরোপাও পকেটে পুরেছে। প্রতিপক্ষ সিটি বল নিজেদের দখলে রেখে খেলার মন্ত্র নিলেও ইন্টার মিলান খেলবে মূলত প্রতিআক্রমণ করার পণ নিয়ে। একসময়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলা হেনরিক মিখিতারিয়েন, এডিন জেকো ও রোমেলু লুকাকুরা কোন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবেন না। ইন্টার কোচ সিমিওনে ইনজাগি অবশ্য প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল ও কোপা ইতালিয়ায় নেরাজ্জুরিরা যে ফুটবলের প্রদর্শনী দেখিয়েছেন তাতে ইন্টার মিলানের ইতিহাসে দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার আশা করতেই পারেন কোচ ইনজাগি। ১-৪-৩-২-১ ফর্মেশনটি হয়ত বেছে নিতে পারেন ইন্টার কোচ ইনজাগি।
ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন কোন খেলোয়াড়?
আর্লিং হালান্ড
ম্যাঞ্চেস্টার সিটি স্কোয়াড প্রতিভা ও তারকায় ঠাসা। কিন্তু তাদের মধ্য থেকেও বাড়তি করে নজর কাড়বেন চলতি মৌসুমে সিটিতে যোগ দেওয়া আর্লিং হালান্ড। সিটির হয়ে প্রথম মৌসুমেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১২টি গোল করেছেন হালান্ড। তিনি খুব দ্রুত গোলে মুখে যেতে পারেন ও গোল মুখে শট নিতে পারেন। তার পায়ে ভর করে সিটি প্রিমিয়ার লিগে দারুণ সাফল্য পেয়েছে। শনিবার ইস্তাম্বুলে আতাতুর্ক স্টেডিয়ামে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন নরওয়েজিয়ান সুপারস্টার হালান্ড।
লাউতারো মার্তিনেজ
ইন্টার মিলানের সর্বোচ্চ গোলদাতা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাউতারো মার্তিনেজ। তাকে বলা হয় বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। জাতীয় দলের হয়ে খুব একটা নজর কাড়তে না পারলেও মিলানের ক্লাবটির সাথে কিন্তু তার সম্পর্ক খুব নিবিড়। সিটির আধিপত্য থেকে বল পায়ে পাওয়া তার জন্য দুঃসাধ্য হতে পারে। তবে কাউন্টার এটাকে দলকে এগিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর থাকবেন মার্তিনেজ।