পুরানো বন্ধু পাথর

বাড়ি বেশ খানিক দুরেই রেললাইন।
নির্জন মত জায়গা। দুই পাশে কড়ই আর শিশুগাছের সারি। ওরা দাঁড়িয়ে আছে হাত ধরা ধরি করে। একটা পুকুর। বরফের মত শীতল কালো পানি।
সারাক্ষণ পূবালী হাওয়া বয়ে যায় ওখানে।
বিকেলে হাঁটতে যাই।
অনেক অনেক দূর পযন্ত চলে যাই । রেল লাইন ভর্তি চকমকি পাথর।
রোদ লেগে চিক মিক করে উঠে। মনে হয় মহা মূল্যবান কোন পাথর।
পকেট ভর্তি করে পাথর নিয়ে বাড়ি ফিরি। সাজিয়ে রাখি আমার বিজ্ঞান ক্লাবে।
বিদেশে অনেক ক্লাব আছে, যেখানে ছোট বাচ্চারা অমন বিচিত্র ধরনের পাথর
সংগ্রহ করে। বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যরাও এই কাজ করে। এটাও একটা শখ।
ভূবিজ্ঞানীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই বিচিত্র ধরনের পাথর সংগ্রহ করা।
পৃথিবীর গঠন সম্পকে অনেক কিছু জানা যায় পাথরের টুকরো দেখে।
কিছু পাথর দেখবে একদম মসৃণ। কিছু এবড়ো থেবড়ো। নানারকম খনিজ উপাদান
জমাট বেঁধে পাথর হয়। এক টুকরো পাথরের ভেতরে লবণ, লোহা হতে শুরু করে চেনা অচেনা হরেক পদের ধাতু থাকতে পারে।
যে কোন পাথর মুখে দিয়ে দেখ। নোনতা স্বাদ পাবে। ভেতরে লবণ আছে যে।
প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে কঠিন জিনিসটাই হল পাথর।
আদিম মানুষ যে জিনিসটা প্রথম ব্যবহার করতে শিখেছিল সেটা হল পাথর।
পাথর দিয়ে অস্ত্র আর দরকারি যন্ত্রপাতি বানাত তারা। এমনকি চকমকি পাথর ঠুকে
আগুন ও ধরাত। আজও আমাজন জঙ্গলের ভেতরে লুকিয়ে থাকা আদিম বাসিন্দারা পাথর ঠুকে আগুন জ্বালায়। ওদের তো আর দেশলাই নেই আমাদের মত।
পাথর অনেকভাবেই তৈরি হয়। প্রতিটা পাথরের জন্মের মধ্যে রয়েছে আলাদা রকম
গল্প। যেমন ধর – পাললিক শিলা।
সমুদ্র না জলাভূমির তলায় জমে থাকা কাঁদামাটি জমাট বেঁধে চাপ খেয়ে এই ধরনের পাথর তৈরি হয়।
তাই বেশির ভাগ সময় পাললিক শিলার মধ্যে জীবজন্তু , মাছ বা গাছের ছাপ পাওয়া
যায়। বা হাড়ের অংশ।

পাথরের মধ্যে পাওয়া এই ছাপকে ফসিল বলে।
এই ফসিল দেখে আদিম কালের হারিয়ে যাওয়া সব জীবজন্তু আর গাছের খোঁজ
পাওয়া যায়।
যারা কোটি কোটি বছর আগে ছিল আমাদের পৃথিবীতে। এখন নেই। হারিয়ে গেছে।

এই ফসিলের কারনেই আমরা ডাইনোসরের মত বিশাল প্রানিদের ব্যাপারে জানতে পেরেছি।
ফসিল আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবে একটা পাথর কমপক্ষে দুই ধরনের ধাতু মিলিয়ে তৈরি হয়।
পাথরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটা পাওয়া যায় সেটা হল, আগ্নেয় শিলা।
নামেই বুঝা যায় আগ্নেয়গিরির লাভা জমে এই পাথরের জন্ম।
বেশির ভাগ সাগরের তলা আর হাওয়াই দ্বীপ এই আগ্নেয় শিলায় তৈরি।
এই পাথর চাঁদেও পাওয়া গেছে। আরও অবাক কাণ্ড , মঙ্গলগ্রহ আর শুক্রগ্রহেও এই পাথর পাওয়া গেছে।
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সৌর জগতের সব জায়গায় এই আগ্নেয়শিলাটা পাওয়া যাবে।
মাঝে মাঝে উল্কাপাতের পর পৃথিবীতে নতুন ধরনের পাথরের টুকরো এসে পড়ে।
এই ধরনের পাথর একদম নতুন। পৃথিবীতে পাওয়া যায় না। বেশির ভাগই লোহার
তৈরি। বা মিশ্র কোন ধাতুর।
বিজ্ঞানীরা এঁকে মহাজাগতিক পাথর বলে।
তোমার ক্লাবের জন্য পাথর সংগ্রহ করতে হলে যে সব ধরনের
পাথরের নাম জানতে হবে তেমন কোন কথা নেই।
বিদেশে বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যরা নানা জায়গা থেকে পাথর সংগ্রহের পর সেগুলো আকার, আকৃতি আর রঙ হিসাবে আলাদা করে রাখে।
পাথর সংগ্রহের পর সময় নিয়ে পরীক্ষা করবে। আতশি কাঁচের সাহায়্য নেবে এই কাজে।
কালচে চ্যাপ্টা পাথর হলে অনুমান করবে পাললিক শিলা হবে। বয়স হয়তো দশ লক্ষ
বছর পুরানো।
পাথরে যদি বালির পরিমাণ বেশি থাকে তবে ধরে নেয়া যায় ওটা বেলেপাথর।
কোন পাথর যদি গোলাকার আর মৃসণ হয় তবে ধরে নেবে পাথরটা বহু বছর ধরে
নদী বা ঝর্ণার পানিতে গড়িয়েছে। শেষ তোমার বাসায় চলে এসেছে।
কোন পাথরের ভেতরে যদি ফুটি ফুটি চিহ্ন আর স্ফটিকের দানার মত দেখ
তবে অনুমান করবে অনেক বছর ধরে সেটা পৃথিবীর গভীরে উঁচু চাপের মধ্যে ছিল।
সময় নিয়ে ভাল করে প্র্যেক্তা পাথর পরীক্ষা কর।
সব পাথরের আলাদা আলাদা গল্প আছে। তুমি পড়তে পারবে।
আপাতত কোন জুতার বাক্সে বা টেবিলের ড্রয়ারে খবরের কাগজ বিছিয়ে
পাথর সংগ্রহ করে রাখতে পার।
বড় হলে কাঠের খোপ কাটা বাক্স বানিয়ে নেবে। উপরে কাঁচ থাকতে পারে।
সেখানে পাথর জমাবে।
পেল্লাই সাইজের পাথর জমানর দরকার নেই। ছোট ছোট পাথরই ভাল।
এক সময় তোমার এই পাথরের সংগ্রহশালা বেশ বড় হয়ে উঠবে। বন্ধ আর ভাই বোনদের দেখতে পারবে।
পাথর সংগ্রহ খুব প্রাচীন এক শখ। মানুষ যখন গুহায় থাকতো তখন থেকেই পাথর জমাত।
বিদেশে এটা খুব জনপ্রিয় একটা শখ। প্রকৃতির কাছা কাছি থেকে পাথর সংগ্রহের আনন্দ আলাদা।