Site icon খিচুড়ি

বাক্সভর্তি পূবালী হাওয়া

কোন জলাভূমি না । মাঠের এক কোনে বড় একটা গর্ত হয়েছিল কোন সময়। বৃষ্টির জল জমে পিচ্চি মত জলাভূমি হয়ে গেছে। বড় না। বিছানার সমান সাইজ । কিন্তু আমি কল্পনা করি আলাস্কার কোন হ্রদ । বা আরিজোনার কোন জলাভূমি, শীতের শেষে বরফ জমে অমনটা হয়েছে। সারা গরম বেঁচে থাকবে। বাদামি বাছুর আর আনটিলোপ জল খাবে। আবার শীত এলেই জমে যাবে।
আমরা নাম দিয়েছি টিটিকাকা হ্রদ। নামটা সুন্দর তাই। অত কল্পনা করার দরকার ছিল না। এমনিতেই জিনিসটা বেশ সুন্দর। জলজ ঘাস জন্মে দারুন দেখায়। ঘাসগুলো লেবুপাতার মত সবুজ। তিনকোনা পাতার কচু গাছ আছে দূরে। জলজ ঘাসে অচেনা ভিন গ্রহের প্রাণীর ডিমের মত বা বিচ্ছিরি কোন শরবতের মত লেপটে আছে ব্যাঙের ডিম। ওখান থেকে পরিমিত তাপ পেয়ে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্গাচি বের হয়। ঝাঁক বেঁধে ওরা হাজার হাজার ভাই বোন ঘুরে বেড়ায়। ভাই বোন বেশি হবার কারন, একটা ব্যাঙ অ্যান্টি ৪০০০ ডিম দেয়। ওরা তখন পিচ্চি তিমি মাছের মত দেখতে। ডুবে থাকা জলজ ঘাসের তলায় সম্ভবত ওদের বাসা। দেখতে বেশ লাগে। আকাশের ধুমকেতু ঠিক ব্যাঙ্গাচির মত। অচেনা মহাকাশ থেকে ওরা নানান ধাতু আর বিচিত্র জীবের বীজ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এই ভাবেই হয়তো সারা গ্যালাক্সি ছড়িয়ে দেয় প্রাণ।
গ্যালাক্সি নাকি জিলিপির মত ।শুরু ও নেই। শেষও নেই। কি অদ্ভুত !
রোজ বিকেলে টিকিটাকা জলাভুমির পাড়ে না বসলে মনটা কেমন কেমন হয়। বললে হাসবে , ওখানের ব্যাঙ্গাচিদের দেখতে কিন্তু খারাপ লাগে না। গরমের আগে ওরা বড় হয়ে লাফিয়ে পালিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যায়। বাঁচে কতদিন ওরা ? শুনেছি ৪ বছর থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত। গ্লাস ফ্রগ নামে এক ব্যাঙ আছে। শরীরটা স্বচ্ছ। কাচের মত। ওর শরীরের ভেতরের নাড়ি ভূরি গিলা কলিজা সবই দেখা যায়।
আমি প্রথম ভেবেছি ব্যাঙেরা ঘাস লতা পাতা খেয়ে বাঁচে। পরে জানলাম ওরা মাংস ছাড়া কিছু খায় না। ঝি ঝি পোকা ওদের প্রিয়। মাছি, মশা , মশার ডিম, মথ, গঙ্গা ফড়িঙ ও খায়। বড় পেল্লাই সাইজের ব্যাঙ নাকি সাপের বাচ্চা খেয়ে ফেলে। ব্যাঙের আরেকটা মজার জিনিস- ওরা তেষ্টা পেলে মুখ দিয়ে জল খায় না। গায়ের চামড়া দিয়ে জল শুষে খায়। একেই বলে অবাক জলপান।
ব্যাঙ্গাচিদের দেখার জন্য মনটা কেমন করতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লাম। বাইরে রোদ নরম হয়ে গেছে। বাতাসে সাইবাবলা ফুলের ঘ্রান। যাবার আগে ভ্যাবলাকে ডেকে নেয়া যেতে পারে। অনেক দিন দেখি না। বাড়ির বাইরেই পেলাম ওকে। কাঠের একটা পিঁড়ির উপর বসা। হাতে লাঠি। সামনে পাটির উপর শুকনো চাঁদের মত একগাদা পাঁপড়। ওর দিদিমা বানিয়েছে। কালিজিরা দেয়া।

আমাকে দেখেই হাসল ভ্যাবলা।

‘ মাঠে যাবে নাকি ?’ জানতে চাইল।

‘ তুমি যাবে না ?’

‘ হু, কিন্তু দেরি হবে। কাজ ধরিয়ে দিয়েছে। পাঁপড় পাহারা দিতে হবে।’

‘ আর কতক্ষণ ?’

‘ রোদটা সামনের বেড়ার গায়ে এসে পড়লেই ডিউটি শেষ।মাগনা করছি না। চার আনা দেবে দিদিমা। ’
সামনেই বাগান। হলুদ গাঁদা ফুল আর পাকাজামের ভেতরের রঙের মত সন্ধ্যামালতী ফুলের দঙ্গল। সন্ধ্যামালতী ফুলটাকে কি সেভেন ও ক্লক ফুল বলে ? ঠিক সন্ধ্যা সাতটার সময় ওরা কলের গানের চোঙ্গের মত ফুটে যায় ? কঞ্চি দিয়ে বেড়া দেয়া বাগানে। ওখানে রোদ চলে আসবে মিনিট দশেক পর। ভ্যান গগ ছবি আঁকার জন্য হলুদ রঙের সাথে ডিমের কুসুম মিশিয়ে নিত। দুপুরের রোদটা সেই রকমের হলুদ হয় । পশ্চিম দিকের জানালা দিয়ে রোদ আসে। তাই বন্ধ করে দেই। কেমন করে সরু একফালি রোদ ঢুকে যায় ফাটল দিয়ে। অন্ধকার রুমে সেই রোদের ফালির দিকে তাকালে অবাক হয়ে দেখি হাজারে হাজারে ধুলিকণা পাক খেয়ে খেয়ে উরে যাচ্ছে। মনে হয় গ্যালাক্সিটা দেখতে পাচ্ছি।
আমি ভ্যাবলার জন্য অপেক্ষা করব। ওকে রেখে গেলে খারাপ দেখাবে। আমরা খেজুরে গল্প শুরু করলাম।
‘ কাল রাত্রে সিক্স মিলিয়ন ডলার দেখেছিলে নাকি ?’ জানতে চাইল ভ্যাবলা।
‘ নাহ।’ মাথা নাড়লাম। ‘ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
‘ আজ দুপুর বেলা একটা বিমান উড়ে গেছে তুমি বোধহয় জানো না, বিমানের জানালার ভেতর থেকে একটা লোক হাত বাড়িয়ে আমাদের এই পাঁপড় তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ভাগ্যিস আমি দেখে ফেলেছি।’
‘ হায় হায়। তাই নাকি ?’ অবাক হলাম।
‘ আর বলছি কি । আমি ঢিল মারতেই লোকটা আই বাপ বলে জলদি হাত গুঁটিয়ে ফেলেছে। যে কয়টা পাঁপড় ধরেছিল ফেলে দিয়েছে। এই দেখ। ’
ভাঙ্গা দুটো পাঁপড় দেখাল ভ্যাবলা।
‘ ওর কথা বিশ্বাস কর না।’ বাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে বলল ভ্যাবলার বড়দা। ‘ ও অনেক গুল মারে।কাক এসে পাঁপড় নষ্ট করে। বিড়াল হেঁটে যায় সেই জন্য ওকে বসিয়েছি। চার আনা না মাত্র দশ পয়সা রফা হয়েছে ওর মজুরি । ’
ভ্যাবলা একটু চুপসে গেল।
‘ রোজ কাক আসে ?জানতে চাইলাম ’
‘ কিছু রোজ আসে। পাতি কাক। কিছু ব্রাহ্মণ কাক আছে । পচা বাসি খায় না। আর আছে দেশান্তরী কাক। ওরা দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায় ।’
‘ শ্মশান কাক আছে না ?’
‘ বেশি কথা বল তুমি। যাও ভ্যাবলাকে নিয়ে ভেগে যাও। সন্ধ্যার আগে ফিরে আসবে। সন্ধ্যার পর রক্তচোষা ধরে নিয়ে যাবে। অথবা ছেলে ধরাদের পাল্লায় পড়বে। বস্তায় ভরে নিয়ে যাবে। বিক্রি করে দেবে তোমাদের । ’
‘ কত করে বিক্রি করবে ? দুইজনকে নেয়ার মত বড় বস্তাও আছে ওদের কাছে ?’
‘ বেশি কথায় আয়ু ক্ষয় হয়। ভ্যাবলা তুই আসার সময় পাকরাশিদের দোকান থেকে চার আনার গুলটি সুতা নিয়ে আসবি । আমার প্যান্ট সেলাই করতে হবে। পারলে সোনামুখী সুই আনবি। ’
‘ সন্ধ্যার পর উনারা সুই বিক্রি করে না। বলে দোকানের লক্ষ্মী চলে যায়।’
‘ সন্ধ্যার আগে আনবি। আর সন্ধ্যার সময় আগর বাতি জ্বালিয়ে ধুপ ধুনা দিলেই লক্ষ্মী চলে আসে।’
‘ লক্ষ্মী রোজ সন্ধ্যায় আসে কেন ? সারাদিন কোথায় থাকে ?’
‘ ভাগ এখান থেকে।’
আমরা পথে নামলাম। চারিদিকে হলুদ রোদ। আকাশটা এত ঘন নীল , যেন কাল রাতেই দেবতারা রঙ করেছে আবারও। বৃষ্টির পর উনাদের সব রঙের কৌটা শুকাতে দেয়। সেটাই তো রঙধনু। রাতের তারাগুলো ও বদলায় মাঝে মাঝে। বাতিল তারা ফেলে দেয়। ওগুলোই পড়তে দেখি আকাশ থেকে।
বাক্সা ঘাসে ভর্তি পথ। সাথে কিছু চিনা ঘাস। ঝোপমত কিছু গাছ আছে নাম জানি না। আমরা জংলা টম্যাটো গাছ বলি। পিচ্চি পিচ্চি টম্যাটো ধরে। সবুজ, কালচে বেগুনি আর কমলা রঙের। কালচে বেগুনিটা অন্যের দেয়ালে ঘষে দিলে সেই রঙ আর উঠে না। আমরা অন্যের দেয়ালে ঘষি না। ন্যাড়া মাথা কোন বাচ্চা পেলে ওর মাথায় কালচে বেগুনি ফল ঘষে দেই।
চুপিসারে দাড়িয়ে আছে পেল্লাই একটা গাছ। আমরা বলি জিলিপি গাছ। টুকটুকে লাল আর হালকা লাল সাদা রঙের জিলিপির মত একটা ফল ধরে। ওর ভাল নাম খইবাবলা গাছ। কিন্তু আমরা সব গাছের ভিন্ন এক নাম দেই। রেইন ট্রি গাছের নাম দিয়েছি- বৃষ্টি গাছ। সুন্দর না ? খই বাবলা গাছের ফল জলে ভিজিয়ে চিনি দিলেই নাকি এক রকম শরবত হয়। মেক্সিকোতে বানায়। আমরা মেক্সিকতে যাইনি। তাই অমন শরবত খাইনি।
এই সব গাছের তলা ভাল মত খুঁজলে চেনা অচেনা হরেক রকম পোকা পাওয়া যায়। সব পোকা খারাপ না। সুন্দর দেখতে পোকা অনেক আছে। তুমি যদি কুড়িটা আলাদা আলাদা পোকার নাম বলতে পার তবে বুঝব ওদের ব্যাপারে অনেক কিছু জানো। ওদের ব্যাপারে সব কিছু জানা যাবে না। লক্ষ লক্ষ বিভিন্ন ধরনের পোকা আছে সারা দুনিয়ার। প্রতিবছর নতুন পোকা মাকড় আবিস্কার হচ্ছে। বলতে গেলে দুনিয়াটা আসলে পোকামাকড়ের গ্রহ। ওদের সব জায়গায় পাওয়া যাবে । ঘন নিঝুম বন হতে মেরুর বরফের তলায়। মাটিতে। বাতাসে। এমন কি জলেও।
আমরা অমন কিছু প্রজাপতি দেখেছি যারা ডানা মেলে বসলে মনে হয় এক জোড়া ভয়াল চোখ কট মট করে চেয়ে আছে। ওটা ওদের কায়দা যাতে অন্য প্রাণীরা ভয় পেয়ে যায়।
এদের মধ্যে এত প্রজাতি আছে যে মাথা গুলিয়ে যাবে। প্রজাপতি আছে ১৭০০০ ধরনের। ফড়িঙ আছে ২০ থেকে ৩০ হাজার ধরনের। ভয়ংকর সব গুণাবলী নিয়ে অরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। মাছি লাফ দিয়ে অনেক দূর যেতে পারে। মশার ডানা সেকেন্ডে নাকি ৩০০ বার ঝাঁপটায় ! ফড়িঙ ঘণ্টায় ৬০ মাইল বেগে উড়তে পারে।
দূরে বড় কয়েকটা বেগুন গাছ । গাছ ভর্তি ফিকে বেগুনি রঙের অপূর্ব একটা ফুল। মাঝখানে হলুদ বৃত্ত। বেগুন ফুলে যদি সুন্দর কোন সৌরভ থাকতো মানুষজন ফুলদানিতে রাখত সেটা বলার দরকার দেখি না। সামান্য কিছু দিন পরই পিচ্চি বেগুন ধরবে। বেগুনের রঙ বৈশাখ মাসের প্রথম বিদ্যুৎ চমকের মত মায়াবী বেগুনি রঙের।
গাছের পাতার আড়ালে পিচ্চি একটা পাখি ওর ঠোঁট দিয়ে পাতা সেলাই করে বাসা বানাচ্ছিল। রঙ দেখে চড়ুই ভেবেছি প্রথম । চড়ুই অবশ্য বাড়ির কার্নিশ বা ঘুলঘুলিতে বাসা বানাতে পছন্দ করে। ভাল করে তাকিয়ে বুঝলাম ওটা চড়ুই না। টুনটুনি। চড়ুইয়ের পিঠ পাটকিলে রঙের হয়। আর টুনটুনির পিঠের পালক জলপাই রঙের। তবে মৌসুম বদলের সাথে সাথে পালকের রঙ হালকা বা গাঢ় হয়।
‘ তুমি কি টুনটুনি টুনটুনাল সাত রানীর নাক কাঁটাল গল্পটা শুনেছ ?’ জানতে চাইল ভ্যাবলা।
‘ না তো ! সাত রানীর নাক কাঁটা।সাংঘাতিক ঘটনা তো ! অবাক হলাম। ’
‘ চার আনার শনপাপড়ি কিনলে গল্পটা বলতে পারি।’ উদার একটা ভাব ভঙ্গি করে বলল ভ্যাবলা। তারপর বিন বিন করে ছড়ার মত বলল-
‘ চড়ুই পাখি বারোটা।
ডিম পেরেছে তেরোটা।
একটা ডিম নষ্ট।
চড়ুই পাখির কষ্ট।’
খ্যাঙরা মত এক লোক বেতের ঝাঁকা ভর্তি হলুদ পাকা কলা নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। চিৎকার করে বলছে- কলা আছে কলা ? আছে পাকা কলা ।’ আমি আর ভ্যাবলা অবাক।আজব তো। শেষে ভ্যাবলা বিরক্ত হয়ে বলল- ‘আরে মিয়া আপনি কানা নাকি? আপনার পাথি ভর্তিই তো কলা। আবার আমাদের জিজ্ঞেস করছেন কলা আছে কি না। ’
ভ্যাবলা মাঝে মাঝেই অমন কথা বলে । আমরা একবার নদীর তীরে হাঁটছিলাম। যেমনটা প্রায়ই যাই। নদীটা কিন্তু সব মৌসুমে এক রকম থাকে না। বদলায়। সেইজন্য নিয়মিত যাই।
শনঘাসের দঙ্গলের পাশেই এক লোক নৌকা উপুর করে রেখে নৌকার গায়ে কালো কি মাখাচ্ছিল। যেন কালো লোশন ।
‘কি করছেন ?’ ভারিক্কি চালে জানতে চাইলাম।
‘ আলকাত্রা মাখাই ।’ জবাব দিল লোকটা।
‘ কেন ? আলকাতরা নৌকার গায়ে মাখালে কি হয় ? ‘
‘ নৌকা ডুবে না । ভাইসসা থাকে।’
‘ তাহলে আমরা জামা প্যান্ট খুলে দাড়াই। আলকাতরা মাখিয়ে দিন। আমরা সাঁতার জানি না।আলকাঁতরা মাখালে ডুবে যাব না বলছেন তা হলে ?’ বলল ভ্যাবলা।
লোকটার চেহারা কেমন যেন তম্বা মত হয়ে গেল।
সরু রাস্তায় মস্ত অ্যালুমিনিয়ামের এক বোল নিয়ে আলুর দম বিক্রি করছে একটা লোক। মাঝে মাঝে হাক দিচ্ছে- “ আলুর দম । মশলা কম।”
বোলের ভেতরে হলুদ জলের ভেতরে গোল ফালি ফালি আলু ডুব সাঁতার দিচ্ছে। এক একটা ফালি দশ পয়সা। দশ পয়সা দেখতে নয়নতারা ফুলের মত। এক পিঠে পানের ছবি। আরেক পিঠে শাপলার ছবি। দশ পয়সাও অ্যালুমিনিয়ামের।
অর্ডার দিলেই সরু কাঠিতে গেথে একটা আলুর ফালি তুলে কালাই করা হলুদ টিনের প্লেটে তুলে দেয়। পাশেই দশ ইঞ্চি লাল দুটো ইট। ইটের উপর বসে আলুর দম খাও। ইচ্ছে হলে দাড়িয়ে খাও। তোমার যেমন মর্জি। জিনিসটা দারুন স্বাদ।
ছেড়া কার্পাস তুলার মত পাক খেয়ে মেঘের দল উড়ে যাচ্ছে । সারাদিন রোদে উড়ে ওরা কালো হয়ে যাবে। এত কালো হবে যে মেঘের মা ওদের বকাঝকা করবে। তখন ওরা হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলবে। ওটাই বৃষ্টি।
‘ মিষ্টি আলু কি ভাবে চাষ করে জানো ?’
জানতে চাইল ভ্যাবলা।
‘ জানি না।’
‘ ক্ষেতে চারা হওয়া মাত্র চাষি দুই তিন সের চিনি ঢেলে দেয়। ওতেই আলু মিষ্টি হয়ে যায়। আর সাধারন যে আলু আমরা খাই মানে গোলআলু ওগুলোর ডায়াবেটিক হয়েছিল ওরা ক্ষেতের চিনি খায়নি। তাই।’
‘ একটা জিনিস অদ্ভুত লাগে কিছু পেয়ারার ভেতরটা কেমন লাল টুকটুকে হয় ?’
‘ অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওগুলো ভ্যাম্পায়ার পেয়ারা।’ জবাব দিল ভ্যাবলা।
বিং করে কানের পাশ দিয়ে উড়ে গেল সোনালি মৌমাছি। মধু নিয়ে যাচ্ছে।
‘ মৌমাছি না ওটা।’ জানতে চাইলাম।
‘ হ্যাঁ তবে অনেকে বল্লা ও ডাকে।’ ভ্যাবলার জবাব।
‘ কেন ?’
‘ ওদের হাতে একটা করে বল্লম থাকে। কেউ বাগড়া দিলেই বল্লম দিয়ে ঘাই মারে। সেই জন্য।’
ঘাসের ভেজা ডগা চিবুতে চিবুতে বলল ভ্যাবলা।
বাঙলার মাঠে যাবার আগেই একটা নিঃসঙ্গ বাড়ি। হিন্দু বাড়ি বলে। বড়দের মুখে শুনে যা বুঝেছি বাড়ি চার প্রকার।
১। হিন্দু বাড়ি। ওখানে সন্ধ্যাবেলায় সন্ধ্যাপূজার প্রদীপ জ্বালানো হয়। একটা তুলসির গাছ থাকে।
২। মুসলমান বাড়ি। ওখানে খুব ভোরে বুড়ো মত কেউ আরবি পড়ে।
৩। খ্রিসটান বাড়ি। এই বাড়ি দেখলেই চিনি । একটা ক্রুশ থাকে। আর বছরে একবার যীশুর জন্মদিনে অনেক মোমবাতি দিয়ে বাড়ি সাজায়। আর
৪। ভুতের বাড়ি। ওখানে কেউ থাকে না। ভুতেরা থাকে।
নিঃসঙ্গ বাড়িটা বেশ পুরানো। নতুন কালে বাড়িটার রঙ নয়নতারা ফুলের মত ছিল। ঘন গোলাপির সাথে সাদার মিশ্রণ। সময়ের সাথে সাথে সব রঙ জ্বলে যায়। বাড়িটারও হয়েছে। ফ্যাকাসে গোলাপি রঙ। দরজা জানালা ভারি কাঠের। সবুজ রঙ করা। জানালার পাল্লায় ঘুনপোকার বাসাবাড়ি। ক্যারত কুরুত শব্দ হয়। আর শর্ষের দানার মত মিহি গোল গোল গুড়ো কাঠ বের হয়ে আসে। জানালার লোহার শিক মরচে পড়ে ক্ষয় হয়ে সরু হয়ে গেছে। দেয়ালের সিমেন্ট খসে ইট বের হয়ে গেছে। মনে হয় বাড়িটা ইটের ভুট্টার তৈরি।
আমরা কখনো কখনো জানালা দিয়ে বাড়ির ভেতরে উঁকি দেই। ভেতরে একটা বুড়ো মত মানুষ সারাদিন চেয়ারে বসে থাকে। উনার নাম অবনীবাবু। হাতে বই। দেয়ালে কাঠের আলমারি। সেটা ভর্তি হরেক সাইজের শিশি। কাগজের লম্বা বরফি আকৃতির লেবেল লাগান । ওগুলো নাকি ওষুধের শিশি। আমার অমন এক আলমারি ভর্তি শিশি থাকলে ভাল হত। ফেরিওয়ালাকে দিয়ে গাঁট্টা মেঠাই খেতে পারতাম।
একজন মানুষের এত ওষুধ লাগে ? এক জীবনে কি এত ব্যাধি হয় ? কেন ঈশ্বর ব্যাধি দেয় ?
অবনীবাবু চেয়ারে বসে বই পড়ে। সারাক্ষণ। কি সব বই কে জানে। সঞ্চয়িতা বইটা চিনি। উপরে বুড়ো দাড়িওয়ালা এক দরবেশের ছবি। উনার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারন উনি রোববারে জন্মে ছিলেন। সোমবারে জন্ম নিলে উনার নাম হত সোমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মঙ্গলবার হলে মঙ্গেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই ভাবে বুধেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইত্যাদি ইত্যাদি।
অবনীবাবুর বাড়িতে উনার গিন্নি ছাড়া আর কোন লোক নেই। উনার মেয়ে বিয়ে কোলকাতায় হয়ে গেছে। একটা ছেলে ছিল সেটাও নাকি বিয়ে করে দূরে চলে গেছে। অনেক বছর আগে।কোন খোঁজ নেয় না সেই থেকে সারাদিন বসে বই পড়েন অবনীবাবু। উনাদের টাকা পয়সা নেই। পোস্ট অফিসে কিছু টাকা আছে। সামান্য সুদ পায়। আর কোলকাতা থেকে মেয়ে দুর্গাপূজার দশমীর সময় কিছু টাকা পাঠায়। তাতেই চলে। শুধু লাউ, কুমড়া, ফুলকপি ,পুঁইশাক অমন সস্তা সবজি বাজার থেকে কিনে আনেন। ইলিশ মাছ যখন ১০ টাকা হয় তখন আনা হয় একজোড়া। অবনীবাবুকে দেখলেই মনে হয় কষ্টগুলো উনার বাসার ঘুলঘুলিতে বাসা বেঁধে আছে।
আমরা শুনেছি উনি মারা যাবেন।পাড়ার ডাক্তার অমনটা বলেছেন। পাড়ার ডাক্তার ভবেশ কর। ইয়া মোটা । বসে থাকলে মনে হয় সিঙ্গেল সোফাসেট। মোড়ের সামনে বড় ল্যাম্পপোসটের নিচে উনার দোকান। সন্ধ্যার পর রোগী দেখেন। দোকানের অবস্থা কাহিল। ভাঙ্গা আলমারি ভর্তি শিশি বোতল। দেয়ালে ক্যালেন্ডার। টুলে রোগীরা বসে। উনি একটা চেয়ারে বসে থাকেন, সামনে টেবিল। টেবিলের উপর একটা পেটমোটা বাদামি চামড়ার ব্যাগ। ওটা নিয়ে রোগী দেখতে যান। ভেতরে কিছু যন্ত্রপাতি আছে বটে। কাচের থার্মোমিটার। ভেতরে পাদর।কারও জ্বর হলে সেই থার্মোমিটার মুখে ঠুসে দেন ভবেশ কর। লাফ দিয়ে পারদ উঠে যায় উপরে। বলে দেয় কতটুকু জ্বর আছে। দারুন জিনিস এই থার্মোমিটার ।
বেশির ভাগ সময় রোগী থাকে না। কড়ির মত সাদা রঙের মোম জ্বেলে একা বসে তাস খেলেন তিনি। দুই হাতেই তাস থাকে। নিজেকে দুইজন কল্পনা করে তাস খেলেন। মাঝে মাঝে ডান হাত খেলায় জিতে। আবার কখনো বাম হাত।আর এর মধ্যে রুগী চলে এলে দারুন খুশি হন। খুব যত্ন করে রোগী দেখেন। ওষুধ কম দিয়ে পথ্য বেশি দেন। অদ্ভুত সব খাবার খেতে পরামর্শ দেন। খাওয়ায় নাকি রোগ ব্যাধি ভাল হয়ে যায়।
ডাক্তার ভবেশ কর বাবুকে আমরা সবাই পছন্দ করি। কারন উনি একটা সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। ডাক্তারের ভুমিকায়। সিনেমায় নায়িকার বাবা চৌধুরী সাহেবের কাছ অপমানিত হয়ে নিজের বুক খামচে ধরে পরে যায়। নায়িকা চৌধুরী সাহেবকে কড়া কড়া কথা বলে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। কড়া কথাগুলো এই রকম- ‘ টাকার আভিজাত্য চিরদিন থাকে না চৌধুরী সাহেব। সব জালিমের পতন হয় । একদিন আপনাকে প্রতিদান দিতে হবে ।’ তখন ভবেশ কর হাসপাতালে নায়িকার বাবার কব্জি ধরে মাথা নেড়ে বলেন- ‘দুঃখিত রোগীকে আমরা বাচাতে পারলাম না।’
তারপর সাদা ফকফকা একটা চাদর দিয়ে নায়িকার বাবার মুখ ঢেকে দিয়ে দ্রুত চলে যান। মাত্র এইটুকু উনার অভিনয়। কিন্তু তাতে কি উনি ভীষণ জনপ্রিয়। আমরাও পছন্দ করি। কারন উনি অনেক কিছু জানেন। দারুন সব গল্প বলতে পারেন।
একবার উনার চেম্বারে বসে পাটকিলে রোগা মত একটা লোক গল্প করছিল। সেই লোকের গ্রামের বাড়িতে মস্ত উঠান আছে। প্রতি জোসনা রাতে সেই উঠানে সাপ এসে হাজির হয়। চাঁদ উঠলেই সাপ হাজির। সারা রাত উঠানে বসে থাকে। সকালে চলে যায়। সে এক ভীষণ রহস্যময় ব্যাপার।
শুনে ভবেশ বাবু বললেন- মোটেই রহস্যময় ব্যাপার না। অমনটা তিনি আগেও দেখেছেন। সেই উঠান ভাল করে মাটি দিয়ে লেপা হয়। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো পরে পরিষ্কার লেপানো উঠান জ্বলজ্বল করতে থাকে। তখন আলো দেখে পোকা মাকড় হাজির হয়। আর পোকা খাবার লোভে সাপ এসে পরে।
শুনে আমরা ভবেশ বাবুর তারিফ না করে পারলাম না।
সবাই গল্প করতে পারে না। যারা পারে তাদের খুব পছন্দ হয়। যেমন ধর বাংলার মাঠের দারোয়ান আত্মারাম । উনি সব সময় গল্প বলে তাও না। মুড ভাল হলে বলেন। বা যেইদিন নিড়ানি দিতে গিয়ে দেখে জমিতে আগাছা কম সেইদিন বলে।
উনার প্রিয় হচ্ছে বাঘের গল্প। হরেক পদের বাঘের গল্প জানেন।
একবার গাড়োয়াল এলাকায় আচমকা হাজির হল এক চিতা বাঘ। গাড়োয়াল কোথায় ? হিমালয়ের কাছে উত্তরাখণ্ড জায়গার একটা জেলা গাড়োয়াল। আরেকটা হচ্ছে কুমায়ুন। খুব বিখ্যাত জায়গা। অনেক মানুষ বেড়াতে যায়।
তো একবার এক চিতা বাঘ এসে মানুষ খেয়ে ফেলল অনেকগুলো। চেষ্টা করেও চিতাটাকে মারা যাচ্ছে না। বাঘটা যাদের খেয়েছে তাদের আত্মীয় স্বজনরা মহাক্ষেপে আছে। এমন সময় কে যেন বলল – অমুক একটা সাধু এসে আস্তানা গাড়ার পর থেকেই চিতাবাঘটা এই তল্লাতে হাজির হয়েছে। নিশ্চয়ই সেই সাধুবাবাই রাতের বেলা বাঘ হয়ে সবাইকে খেয়ে ফেলছে।
সাথে সাথে কয়েকজন পোঁ ধরল- আরে তাইতো, এই সাধু তো দিনের বেলা পড়ে পড়ে ঘুমায়। আর কেউ কখন খাওয়া দাওয়া করতে দেখেনি তাকে!
সবাই দল বেধে হাজির হল। বেচারা সাধু ধ্যান করছিল। তাতে কি ধরে নিয়ে গাছের সাথে বেধে ফেলে হল। এখন মেরে ফেললেই ঝামেলা শেষ। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারলে ভাল হয়। সাধু যতই চিল্লা ফাল্লা করে লাভ নেই। কিন্তু ভাগ্য ভাল ফিলিপ মেসন নামে এক ইংরেজ ছিলেন সেই সময়ে গাড়োয়ালের জেলা প্রশাসক। খানিক দুরেই ভদ্রলোক তাবু ফেলেছিলেন। কেওয়াজ শুনে হাজির হলেন। তিনি উত্তেজিত জনতাকে বললেন- সাধুকে মারার আগে এক সপ্তাহ সাধুকে বেঁধে রাখা হোক। কয়েকজন মিলে দিনরাত সাধুকে পাহারা দিয়ে রাখবে। তাহলেই বুঝা যাবে সাধু চিতাবাঘ নাকি ।
সবাই রাজি হল। বেঁধে রাখা হল সাধুকে। হাফপ্যান্ট পড়া পুলিশ দিনরাত চোখ বড় বড় করে নজর রাখলো সাধুর উপর। আর কি অদ্ভুত , এর মধ্যে চিতা বাঘটা আর একটা মানুষও মারেনি। একদম হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে চিতাটা। টানা সাতদিন সাতরাত নজর রাখা হল সাধুর উপর । আটদিনের দিন সকালবেলা খবর এলো বেশ কয়েক মাইল দূরের এক গ্রামে একজন মানুষকে চিতাবাঘটা ধরে খেয়ে ফেলেছে।
তখন রাগে ফুটন্ত জনতা সাধুকে ছেড়ে দিল। সাধু হাউ মাউ করে বলল- সে সারারাত ধ্যান করতো তাই দিনে ঘুমাত। আর উপোষ থাকায় সব সময় না খেয়ে থাকতো। এই সামান্য কারনে তাকে সাতদিন বেঁধে রাখা হল। হায়রে মানুষ।
সাতদিনের টেনশনে সাধু শুকিয়ে আমের ফলির মত হয়ে গেছে। সাধুর জন্য আমি আর ভ্যাবলা খুব আফসোস করলাম। তবে সেই থেকে আমি উপোষ থাকি না। নেহি চাইয়ে উপবাস।
দারোয়ান আত্মারাম আগে নাকি সুন্দরবনে কোন এক ডাক বাংলোর দারোয়ান ছিল। বাংলোটাতে ফরেস্ট অফিসাররা থাকতো। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে জালের মত যে সব নদী বয়ে গেছে সেই সব নদীতে অনেক অফিসার মোটরবোটে করে ঘুরে বেড়াত । পেট্রল বোট বলত। আর অফিসারদের বাওয়ালীরা বলত পিতেল বাবু।
তো একবার ভয়ংকর শীতে পড়েছিল। আত্মারাম শীতের কামড়ে ঘুমাতে পারছিল না। পরে মনে হল- একটা অফিসারের কামরা তো খালি । সেই বিছানায় দামি কম্বল আছে। গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেই হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বিছানায় শুয়ে গায়ের উপর কম্বল টেনে নেয়া মাত্র কম্বলটা লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে দৌড় দিয়ে জঙ্গলে ভেগে গেল।
অবাক চোখে আত্মারাম দেখল- ওটা আসলে একটা ডোরা কাটা বাঘ !
বাংলার মাঠে বসতেই আমাদের মনটা ভাল হয়ে গেল।
এই সব বিজন ঘাস, জোনাকি ফুল, নিম গাছ সব ভাল লাগে আমার। আমার প্রিয় দুটো জিনিসই আছে পাশাপাশি। নদী আর এই মাঠ। রোদ যেন রাংতার মত। নিমগাছে রোদ পড়ে সবুজ লাগছে সব। মিষ্টি বাতাস।
এক ফালি জমিতে ভুট্টার দানা বুনছিল আত্মারাম। আমাদের উদ্দেশ্য করে বলল, এই আইজগের যে হাওয়া বইছে এই হাওয়াকে কি বলে জান ?’
‘ জানি না।’ সত্য কথাই বললাম।
‘ এর নাম পুবালি হাওয়া। এই হাওয়ায় সইলের সব রুগ বেধি ভাল হইয়া যায়।’
‘ তাই নাকি ?’ অবাক হলাম।
‘ মিছা কতা কওনের মানুস এই আত্মারাম না।’
‘ বাতাস লাগলেই শরীরের সব রোগ ব্যাধি ভাল হয়ে যাবে ?’ তখনও বিস্ময় কাটছে না।
‘ হতে পারে।’ বলল ভ্যাবলা। ‘ একে বলে বায়ু সেবন। এটাও একটা টোটকা।’
‘ আমরা অবনী বাবুকে বাংলার মাঠে আনতে পারি না।’
‘ উনি হাঁটা চলা করতে পারেন না।’ নিজের কপালে ঠাস করে চাপড় মেরে আফসোস করলো ভ্যাবলা।
‘ আমরা কিছু পূবালী হাওয়া নিতে পারি না উনার জন্য ?’
‘ বুদ্ধি খারাপ না। কিন্তু নেবে কি ভাবে ? বিদেশে বা হাসপাতালে সিলিন্ডারে করে বাতাস নেয় সিনেমায় দেখেছি। ’
‘ বাক্সে করে নিয়ে যাই ।’ আইডিয়া দিলাম।
বাংলোর পাশে এক পিচ্চি কামরায় বাতিল জিনিস রাখে আত্মারাম। বেলচা, কোদাল, অমন অনেক কিছু। ওখানে ছোট একটা বাক্স পড়ে আছে অনেক দিন ধরে। ফুল পাখির নকশা ছিল। রঙ জ্বলে গেছে । ধার চাইলাম জিনিসটা আত্মারামের কাছে।
দিয়ে দিল।
বাক্সের ডালা খুলে ভাল করে খোলা মাঠে রেখে পূবালী হাওয়া ভরলাম। তারপর দুই বন্ধু বাক্স ধরা ধরি করে হাঁটা শুরু করলাম । একদম ওজন নেই। বাতাসের ওজন আছে। কিন্তু খুব কম।
‘ অবনী বাবু নিশ্চয়ই খুশি হবেন ?’ জানতে চাইল ভ্যাবলা।
‘ উনি সুস্থ হলেই আমরা খুশি।’ বললাম।
পথ বেশি না। কিন্তু উনার বাড়ির সামনে আসতেই দেখি বাড়ির সামনে একটা কচ্ছপ গাড়ি থেমে আছে। কে এলো ?
ভাল করে চেয়ে দেখি অবনী বাবু লম্বা একটা ছেলেকে ধরে কাঁদছেন। এই প্রথম দেখলাম উনি চেয়ারে বসে নেই। দাড়িয়ে আছেন। উনার বউ একটা মহিলা আর গুলুমুলু একটা বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে । বাচ্চাটা খুব সুন্দর। কমলা রঙের ধুতি আর পাঞ্জাবী পড়ে আছে বাবুটা । ঈশ্বরের মত সুন্দর লাগছে ওকে। কারা এরা ? রাজ্যের সব লোক ভিড় করে উনাদের দেখছে।
‘ অবনী বাবুর ছেলে, বউ আর নাতি ফেরত এসেছে।’ ভিড়ের মধ্য থেকে মদনটাক পাখির মত গলা বাড়িয়ে কে যেন বলল। ‘ বুড়ো বাপ মায়ের সাথেই থাকবে ওরা।’
আমরা দেখলাম সব কেমন সুন্দর লাগছে। বাড়িটার মন খারাপ দুর হয়ে গেছে। দেয়ালের শ্যাওলা যেন কার্পেটের মত হয়ে গেছে। আতা গাছটা সজীব হয়ে গেছে। রোদটা নরম । পুরো বাড়িতে পূবালী হাওয়া খল খল করে বয়ে যাচ্ছে।কয়েকটা পাখি সুযোগ বুঝে তুলসি গাছের দানা খেয়ে যাচ্ছে লাগাতার।
‘ মানুষের পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে বড় ওষুধ । ‘ সর্বজান্তা কিসিমের এক লোক বলল । ‘ দেখ দেখ বুড়ো বুড়ি একদম সুস্থ হয়ে গেছে। কি অবনী বাবু আজ একটা নিমন্ত্রণের ব্যবস্থা করলে কেমন হয় ? লুচি, পাঁঠার মাংস, বেগুন আর কুমড়ার ছক্কা, সাথে এক হাতা করে দৈ। আমি আবার আগের মত খেতে পারি না।’
হা হা করে সবাই হেসে ফেলল।
Exit mobile version