Site icon খিচুড়ি

উড়ে যাওয়া মেঘের গল্প

শরতের বিকেলে ছাদে উঠি। বা হেমন্তের হলুদ রঙা বিকেলে। এই সময় আকাশ অনেক বেশি নীল থাকে। দেখতে কি ভাল লাগে। তোমরা যারা আকাশ না দেখ তাদের বুঝাই কি করে ?
তুলার মত করে ভেসে যায় মেঘের দলা। অনেক অনেক দূরে চলে যায় ওরা।
এই মেঘ আসলে কি ?
মেঘ আর কিছুই না। মিহি পানির কণা। এত পাতলা যে ওরা ভেসে যেতে পারে দূরে দূরে বহু দূরে। কোন অসুবিধে হয় না।
এই যে বৃষ্টি, তুষার আর শিশির ঝরে পরে ওরা সবই এই ভেসে যাওয়া পানির কণা।
একটা মেঘের পোঁটলায় কত খানি পানি থাকতে পারে ?
অনেক। এক বালতি হতে শুরু করে ১০ লক্ষ টন পযন্ত পানি থাকতে পারে।
কি কাণ্ড!
কুয়াশাও এক ধরনের মেঘ। ওরা মাটির খুব কাছে থাকে বলে অমন সাদা চাদরের মত দেখায়।
অন্য গ্রহের আকাশেও মেঘ উড়ে বেড়ায়। বিজ্ঞানীরা বলেন বৃহস্পতি আর শনি গ্রহের
আকাশে কত মেঘ।
হরেক রকম রাসায়নিক পদার্থের মেঘ ঐ সব। পৃথিবীর মেঘের মত পরিষ্কার পানির মেঘ না।
Boost Post
8 people reached
তো মেঘের এই পানিগুলো আসে কোত্থেকে ?
খুবই দারুন প্রশ্ন।
ট্যাঁপ খুলে এক গ্লাস পানি নাও তো। ভাবতে পারো তোমার গ্লাসে রাখা এই পানির বয়স কত ?
হতে পারে গত সপ্তাহের বৃষ্টির সময় আকাশ থেকে ঝরে পরা পানি এটা। কিন্তু এই পানির বয়স পৃথিবীর সমান। যখন প্রথম পানি তৈরি হয়েছিল পৃথিবীতে।
যখন সেই আদিম যুগে মাছেরা কানকোতে ভর দিয়ে মাটিতে উঠে এসেছিল তখন
এই গ্লাসের পানি মহাসাগরে ছিল।
যখন ব্রনটোসরাস মাঠের মধ্যে ঘুরে ঘুরে সবুজ রসালো ঘাস খাচ্ছিল তখন এই
পানি ছিল কোন জলাভূমিতে।
যখন পুরানো ঢাকায় নওয়াব আর জমিদাররা বসবাস করতেন তখন এই পানিই
ছিল তাদের বাড়ির উঠানের কুয়াতে।
পৃথিবীতে পানি কিন্তু অঢেল নেই।পানি শুধু ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পানির এই ঘুরে বেড়ানোকেই পানি চক্র বা ওয়াটার সার্কেল বলে।
পানি চক্রের প্রথম জিনিসটাই বাষ্পীভবন। শুনতে যত কঠিন বলে মনে হয়
তা নয় আসলে। সূর্যের তাপে প্রতিদিন সমুদ্র, নদী , জলাভূমি আর পুকুর থেকে হাজার হাজার টন পানি বাস্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে। এটাকেই বাষ্পীভবন বলে।
যেটাকে সাদা মেঘের মত দেখি আকাশে।
তারপরের ঘটনাকে বলে ঘনীভবন।
মানে সেই বাস্প আকাশে জমা হয়ে ঘন হতে থাকে।কালো হয় রঙের।
আরও মেঘ জমা হয়। আরও। আরও। জমতে জমতে মেঘের ভেতরে পানির ওজন এত বেশি হয়ে যায় যে ওরা আর উড়ে বেড়াতে পারে না। হুড় মুড় করে পড়ে যায় ওরা।
সেটাই বৃষ্টি।
ভিজে যায় মাঠের ঘাস। ইশকুল বাড়ি। পোস্ট অফিস। দালানবাড়ি।
বেশির ভাগ পানি আবার গিয়ে পড়ে সাগরে, নদীতে, পুকুরে। জলাভূমিতে।
মাঠে যে পানি পড়ে মাটি সেই পানি শুয়ে নেয়।
যাক অনেক কথা বলা হল।
এবার পরীক্ষা।
হাজার প্যাঁচাল পাড়ার চেয়ে পিচ্চি একটা পরীক্ষা করা অনেক ভাল।
আমাদের লাগবে
১। কাঁচের একটা বয়াম বা জার।
২ এক কাপ গরম পানি।
৩। টিনের বা সিরামিকের একটা প্লেট।
৪। সামান্য বরফের কিউব। তো পরীক্ষার আগে ফ্রিজে একটা ট্রে ভর্তি পানি রেখে
বরফের কিউব বানিয়ে রাখতে হবে।
সব নিয়ে শুরু করি।
প্রথমে বয়ামের ভেতরে সাবধানে গরম পানি ঢালি। হাত যেন পুড়ে টুরে না যায়।
এই বার বয়ামের খোলা মুখে প্লেট দিয়ে ঢেকে ফেলি। সেই প্লেটের উপরে সাজিয়ে রাখি বরফের কিউব।
অপেক্ষা করি।
বেশিক্ষণ লাগবে না।
গরম পানির বাস্প পাক খেয়ে বয়ামের উপরে উঠে যাবে। বের হতে পারবে না ওরা।
প্লেট আছে যে।উপরে আবার বরফ। ওখানে গিয়েই বাস্প ঠাণ্ডা হয়ে টুপ টাপ করে পানির ফোঁটা হয়ে এবার ঝরে পড়বে বয়ামের ভেতরে।
এইতো বৃষ্টি। আর পানির চক্র।আর উড়ে যাওয়া মেঘের গল্প।

 

 

ছবিসূত্রঃ Paintings of Cloudscapes by Ian Fisher

Exit mobile version