আবহাওয়ার খোঁজ খবর

সকালে ঘুম ভাংলেই জানালা দিয়ে প্রথম বাইরের দিকে তাকাই । আকাশের অবস্থা কেমন ? দিনটা কেমন যাবে ? ইস্কুলে যেতে পারব তো ? শীতের কাপড় পরতে হবে না তো ?
মানুষ যখন গুহাতে থাকতো তখন থেকেই কিন্তু সকালে উঠে সেইদিনের আবহাওয়াটা নিয়ে ভাবতো। শিকার করতে যেতে পারবে তো ? আজও হাজার পেশার মানুষের রুজি রুটি আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল। একজন জেলে বা কৃষকের কথা চিন্তা কর । রোদ, বৃষ্টি সবই তাদের পেশার উপর প্রভাব করে। বড় বড় জাহাজ সমুদ্র পাড়ি দেয়ার আগে আবহাওয়ার খোঁজ নেয়। বিমানের পাইলট আকাশে বিমান নিয়ে উড়ার আগেও সেইদিনের আবহাওয়া নিয়ে খোঁজ করে।
আজকের দিনে হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবন আর জীবিকার জন্য আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে।এই জন্য বিজ্ঞানে এক নতুন শাখার জন্ম হয়েছে। মিটোরোলোজি ( meteorology) বা আবহবিদ্যা। যে বিজ্ঞানীরা এই শাখায় কাজ করেন তাদের আবহাওয়া বিজ্ঞানী বা আবহাওয়াবিদ বলে।
পৃথিবীর সব দেশেই এখন বড় বড় আবহাওয়া আপিস রয়েছে। সেখানে এই বিজ্ঞানীরা কাজ করেন। এবং আগাম বলে দেন কবে ঝড় বা বৃষ্টি হবে। কালকের তাপমাত্রা কেমন হবে। গরম পড়বে কিনা ? নাকি সারাদিন গরম থাকলেও বিকেল বেলা বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হবে। আচমকা কোন ঘূর্ণিঝড় এসে আঘাত করবে কিনা। হেন তেন।
আবহাওয়া বদলায়। কারন পৃথিবী সমতল বা চ্যাপ্টা না । গোল। সূর্যের আলো মাটি বা সাগরের সব জায়গায় সমান পরে না। বিষুবরেখায় সূর্যের আলো বেশি পরে। মেরু অঞ্চলে কম। যেখানে বেশি পরে সেখানে গরম । এর কম পড়লে ঠাণ্ডা। সহজ হিসাব। এর ফলেও আবহাওয়া বদলায়।
আবহবিদরা কিন্তু জাদুর আয়নার সাহায়্যে বা তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে এইসব জানে না। তাদের কাছে হরেক পদের যন্ত্রপাঁতি আছে। এই যন্ত্রপাঁতি দিয়ে তারা তাপমাত্রা মাপে্ন। বাতাসের চাপ মাপেন । গতি এবং দিক ও জানেন। কি পরিমাণ বৃষ্টি হয় সেটা মাপেন। আকাশে কি ধরনের মেঘ উড়ে বেড়ায় সেটার খবর নেন। সব জেনে হিসাব করে আবহাওয়া নিয়ে তথ্য দেন আমাদের। বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
আর এই কাজ করতে গিয়ে নতুন নতুন সব জিনিস আবিষ্কার করেন তারা।
যেমন – আবহাওয়ার মতিগতি বদল হয়। ঘুরে ফিরে আসে গরমের যুগ। সেই বছরগুলোতে খুব গরম লাগে। ঠাণ্ডার যুগ। খুব ঠাণ্ডা পরে সেই সময়গুলোতে। এবং বরফ যুগ। আইস এইজ। এটা এমন একটা সময় যখন সারা পৃথিবী বরফের চাদরে ঢেকে যায়। একদম অপরিচিত দেখায় আমাদের পৃথিবী। শেষ বরফ যুগ পার হয়ে এসেছি ১৮ হাজার বছর আগে। মানুষ ছিল তখন। শীতের হাত থেকে কিভাবে টিকেছে বলা মুশকিল। কি ভাবে আগুন জ্বালাত তাও বলা মুশকিল। সম্ভবত কোন ভাবে আগুন জইয়ে রাখতো নিরাপদ জায়গায়, বুনো জানোয়ার শিকার করে চলত। মাংস খেত। চামড়া দিয়ে পোশাক বানাত। পশুর রগ সুতা হিসাবে ব্যবহার করতো। অতিরিক্ত চামড়া কম্বল হিসাবে ব্যবহার করতো। হাড় দিয়ে বানাত অস্ত্র। জন্তুর পাকস্থলীতে জল জমিয়ে রাখতো। চেষ্টা করতো বেশি শিকার করতে। অতিরিক্ত মাংস জমিয়ে রাখত বরফ খুঁড়ে। চারিদিকটাই তো একটা ফ্রিজ তখন। পাথরের ছুরি এর তীরের ফলা পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। বরফ যুগের মানুষদের আমলের।
এর আগেও পৃথিবীতে অনেকবার বরফ যুগ এসেছিল। জীববৈচিত্র ধ্বংস করে গেছে। এই ছকটাকে অয়েদার প্যাটার্ন বলে। একটা রুটিনের মত। বদলায়। এই বদলটা হয় নানান কারনে। পৃথিবী তার কক্ষপথ ধরে ঘুরে যাচ্ছে। সূর্যের চারিদিকে। লম্বা একটা পথ ধরে। অনেক অনেক বছর পর পৃথিবী তার মেরুরেখা বা অক্ষদণ্ডের এদিক অদিক সামান্য ঝুকে পরে। চলে যায় সূর্যের একটু কাছে । বা দুরে। তখনই এই বরফ যুগ বা গরমের যুগ চলে আসে।
এই মুহূর্তে আমরা একটা বছর যুগ শেষ করে গরমের যুগে আছি। দেখবে কেমন গরম পরে বছর বছর। এবং আবার বরফের যুগ আসবে। বিজ্ঞানীদের মতে এর আগে আমরা পাঁচবার বরফ যুগ পার করছি। দুম করে কাল বা পরশু থেকে বরফ যুগ শুরু হবে না। সময় লাগবে। অনেক সময়। হয়তো লক্ষ বছর। কাজেই চিন্তার কিছু নেই।