আলো ভুবন ভরা

অমন হয়েছে তোমার ? মা বলছে, বারান্দার আলোটা জ্বেলে দে তো । কিছু দেখতে পারছি না।
বা বন্ধু নেপাল বলছে- সূর্য ডুবে গেলে কিন্তু খেলা বন্ধ করতে হবে। চোখে কিছু দেখা যাবে না।
আলো ছাড়া আমরা চোখে দেখি না। আদিম মানুষও এটা জানতো। আরও জানতো তাদের জন্য সূর্য আছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আকাশে নানান জায়গায় ঝুলে আলো দেয়। তাই আদিম মানুষের কাজের রুটিন সেই সূর্য উঠা থেকে সূর্য ডুবে যাওয়া তক ছিল। তারপর আগুন আবিষ্কার হল। মানুষ দেখল- গুহার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে রাখলে বেশ ভাল আলো দেয়। কাজের কাজ হল একটা। গুহায় বসে বেশ গুলতানি করা যেত । তারপর নানা পথ পার হয়ে প্রদীপ, লন্ঠন অমন হাজার হাবিজাবি পার হয়ে মোমবাতি পর্যন্ত চলে এলো। দাদুর মুখে শুনেছি উনাদের সময়ে মহল্লার মোড়ে যে স্ট্রীটলাইট ছিল ওখানে নাকি রেডির তেলের প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে যেত পৌরসভার লোক। পরে নাকি গ্যাসের আলো জ্বলত।
শেষ মেষ তো বিদ্যুতের আলো চলে এলো সবার ঘরে ঘরে।
আলো যে কত দরকারি সেটা বিদ্যুৎ চলে গেলেই বুঝবে। কেমন আলকাতরার মত অন্ধকার। আর শুধু ভূতের গল্প মনে পরে। আলো খুব দরকারি। কিন্তু এই জিনিসটা আসলে কি ? প্লাংকের সুত্র মতে- আলো হচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ শক্তির তরঙ্গ। যেটা নিয়মিত বয়েই যাচ্ছে। বয়েই যাচ্ছে। আলোর পিচ্চি একটা কণার নাম- ফোটন।
বিজ্ঞানীরা মজার মানুষ। কেউ নতুন কিছু আবিষ্কার করলে অন্য বিজ্ঞানীরা সেই ব্যাপারে আরও নতুন নতুন জিনিস আবিস্কারের জন্য ব্যস্ত হয়ে পরে। ডেনিশ বিজ্ঞানী আলাস রমার আবিষ্কার করলেন, আলো ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল যায়। প্রতি সেকেন্ডে। যদিও উনি সামান্য ভুল করেছেন। কারন সেটা ১৬৭৫ সালের কথা। তেমন ভাল যন্ত্রপাতি ছিল না তার। আরও পরে আলবার্ট মাইকেলসন নামের এক আমেরিকান বিজ্ঞানী অনেক জটিল আর হিজিবিজি মার্কা পরীক্ষা করে প্রমাণ করেন- আলো প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,২৮৫ মাইল যায়। আরেক গোঁফঅয়ালা উসকো খুস্ক চুলের বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন আলোর গতি সবচেয়ে বেশি গতির জিনিস এই মহাবিশ্বে। এর চেয়ে দ্রুত কেউ ছুটতে পারে না।
আলো দেখা যায় না। তারপরও বেশ মজার একটা জিনিস। বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর পরীক্ষা করে আলোর হরেক রকম নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করছেন। আমার বিজ্ঞান ক্লাবে যন্ত্রপাঁতি তত কিছু নেই। শুধু কাচের একটা গ্লাস আর স্টিলের একটা চামচ নিলাম। কাচের গ্লাস পানিতে ভর্তি করে স্টিলের চামচটা ডুবিয়ে রাখলাম। জানালার পাশে রেখে নানান জায়গা থেকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। মনে হচ্ছে চামচটা ভাঙ্গা।
এমন দেখার কারন, আলো বাতাসের চেয়ে দ্রুত চলাচল করে। আলো যখন বাতাস থেকে ঘন জিনিসের মধ্য দিয়ে যায় যেমন পানি বা গ্লাস তখন ওর পথ খানিক বেঁকে যায়। বিজ্ঞানীরা আলোর এই স্বভাবকে বলেন- প্রতিসরণ।