প্রেম এবং এর বর্তমান প্রেক্ষাপট ।

প্রেম ! দুটি বর্ণের সংমিশ্রণে তৈরি বিশাল একটি অর্থবোধক বা ভাবজ্ঞাপক শব্দ । যা শোনা মাত্রই মানব মন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় আবেগী রঙ আর ঢঙে । সত্যি , প্রেম স্রষ্টার পক্ষ থেকে দেয়া সৃষ্টিকুলের জন্য এক বিশেষ উপহার ! ছোট্ট এ বস্তুটির কিছু অলৌকিক ক্ষমতা বলে-ই মানুষ যুগ যুগ ধরে একে অন্যকে ভালবাসতে পেরেছে । কাছে আসতে পেরেছে হৃদয়ের গভীর থেকে আরো গভীরে । কেবল এর জোরেই সৃষ্টি হয়েছে এত সুন্দর আকাশ-বাতাস , চাঁদ-সুরুজ , গ্রহ-তারা এবং আরো অসংখ্য উপাদানের সমন্বয়ে সুসজ্জিত অপরূপ মায়াবী ধরা । ধরা নামক এই ছোট্ট গ্রহেরই একমাত্র বোধশক্তিসম্পন্ন সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত মানব জাতি । যাদের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি প্রেম নামক অদ্ভূত শব্দটি স্পষ্টতই জড়িত । যা পবিত্র , যা স্বর্গীয় । এমন একটিও মানুষ পাওয়া যাবেনা যার মধ্যে সরিষা পরিমান হলেও প্রেম নেই । এটি সৃষ্টিগত । এটি স্বভাবজাত ।

তবে আফসোসের বিষয় এই যে , এ প্রেম নামক ছোট্ট শব্দটির এখন নোংরা ব্যবহার হচ্ছে হরদম । যা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে গেছে সমস্ত পৃথিবীতে ! কুলষিত করেছে লাখো-কোটি নারী-পুরুষের কোমল হৃদয়কে ! ফলে বাড়ছে কামনা , পুরছে জৈবিক বাসনা ! ঘটছে অহরহ অশ্লীলতা আর নির্লজ্জ বেহায়াপনা ! আধুনিককালে একটি বাচ্চা ছেলে বা মেয়ে বোধ হওয়ার পর প্রথম যে শিক্ষাটা পায় , তাহল এই কুলষিত প্রেম বা ভালবাসা । যাতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে সহজলভ্য মিডিয়াগুলো । অথচ পরিবারের অন্যরা এক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করি । কেননা , প্রত্যেকেই এখন নেশাতুর । চোখ মেলে তাকাবার সাধ্য নেই কারোর । উপর্যপুরি এটি এখন হাই ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে । যা নতুন রূপ লাভ করেছে বয় ফ্রেন্ড এবং গার্ল ফ্রেন্ড-এর আদলে । আজকাল কারো বয়ফ্রেন্ড না থাকা মানে আদীম যুগের অশিক্ষিত বর্বর কোন এক অঁজো পাড়া গাঁয়ের হাবা গোবা টাইপের নিতান্ত সহজ সরল এক কেবলা বালিকার খেতাব জেতা । আর গার্লফ্রেন্ড না থাকা মানে ভয়াবহ-মারাত্নক জীবন সংহারক কোন জটিল ও কঠিন গোপন রোগে ভোগা এক অসহায় মৃত্যুপথযাত্রীর উপাধি লাভ করা । আরো পরিষ্কার করে বললে বলা যায় , এইডস কিংবা ধাতু দুর্বলতার চাক্ষুস শিকার হওয়া কোন নিঃসঙ্গ একলা পথিকের নিরন্তর পথ চলার মত নির্জীব জীবন যাপন করা । কাজেই একটু ভাবলেই বুঝা যায় , এখন মানুষের রুচিবোধের কতটা অবধমন হয়েছে । সভ্যতার আড়ালে কতটা অসভ্য হয়ে পরেছে তারা ।

ভাবতেই অবাক লাগে , নারীরা কি করে তাদের সৌন্দর্য বিতরন করে বেড়ায় অবলীলায় ! কেন বুঝতে চায়না নিজের অজান্তে যে অমূল্য ধন অবহেলায় হারিয়ে ফেলছে , তার জন্য একদিন কড়া মাশুল দিতে হবে তাদের ! যেমন দুনিয়াতে , তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা হবে আখিরাতে । এ চরম সত্যিটা আজ কতিপয় শিক্ষিত সুশীল সমাজের কাছে নিতান্তই বেদনাদায়ক । একে তারা আখ্যায়িত দেন পুরুষতান্ত্রিক হীন মন মানষিকতা হিসেবে । বড় পরিতাপের বিষয় এই যে , আজ আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়েও এর ছিটে ফোঁটাও মেনে চলিনা । ভুলেও কোনদিন চেঁখে দেখিনা এর হুকুম আহকামগুলো । যারা নামি দামি বুদ্ধিজীবী , সংকটকালে সমাধান উগরে দেই , অপরকে নিজেদের দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলি , তাদের কাছে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা – আপনারা স্ব-স্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কতটা সচেতন ?

আসলে অন্যের দোষগুলো সহজেই চোখে পরে আমাদের , কিন্তু নিজেদেরটা এক সেকেন্ডের জন্যও নয় । এর কারণ , শয়তানের শিষ্যতা গ্রহণ আর নিজেদের স্বকীয়তা বিসর্জন । হয়তোবা অনেকেই আমার বক্তব্যে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠছেন অথবা আমার ওপর ভীষণভাবে রেগে যাচ্ছেন , তাদের প্রতি আমার আন্তরিক অনুনয় , দয়া করে একটিবার সুস্থ্য মস্তিষ্কে চিন্তা করে দেখুন আমার কোন কথাগুলো অপ্রাসঙ্গিক বা মনগড়া ! বিশ্লেষণ করে দেখুন , সমসাময়িক অরাজকতা , হিংস্রতা আর সন্ত্রাসীপনার মূল রহস্য – এর একটাই উত্তর , তাহল কুরআন-হাদীস থেকে দূরে , বহুদূরে শতকোটি পথ দূরে চলে যাওয়া ! তাই সকলের প্রতি সম্মানপূর্বক আরজি , আসুননা একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলি নিজেদের সুস্থ চিন্তা ধারার মাধ্যমে । কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে সৃজন করি অপরাধমুক্ত এক স্বপ্নীল পৃথিবী । সাঁজিয়ে নেই মনের মত করে । ভুলে যাই অশ্লীল চিন্তাধারা , দূর করি অবৈধ প্রেমের পাড়া আর গ্রহণ করি সাম্যের অপ্সরা । ভালবাসি স্বামীকে অথবা স্ত্রীকে , বয়ফ্রেন্ড কিংবা গার্লফ্রেন্ড কে নয় । রক্ষা করি একে অন্যের অধিকার , বজায় রাখি নিজের আত্নহংকার । সেইসাথে গর্জে ওঠি আরেকবার । গেয়ে যাই , আমরা মুসলিম দুর্বার / নইতো স্ফূলিঙ্গ নির্বার !