এক সময়ের ফারাও রাজাদের রাজ্য মিশর মূলত পিরামিডের জন্য বিখ্যাত। আর পিরামিডের কথা শুনলেই আরও দুটো বিষয় চোখের সামনে ভেসে উঠে। ব্যান্ডেজে মোড়ানো সংরক্ষিত মৃতদেহ বা মমি এবং বহু বছরের লুকিয়ে রাখা গুপ্তধন।
এগুলো তো প্রাচীন মিশরের বহুল চর্চিত বিষয়, এর বাইরেও আরো অদ্ভুত কিছু বিষয় আছে এই রোমাঞ্চকর ভূমি মিশরকে ঘিড়ে। তাহলে চলুন আজকে আমরা প্রাচীন মিশর সম্পর্কে এমন দশটি বিষয় জেনে নেই যা হয়তো আপনাদের অজানা।
১। প্রাচীন মিশরীয়রা উটে যাতায়াত করতোনা।
![](https://khichuri.net/wp-content/uploads/2019/03/img_5c9f6ceea13f6.png)
প্রাচীন মিশরীয়রা সচরাচর উঠে আরোহন করে কোথাও যেতে সাচ্ছন্দবোধ করতো না। বিভিন্ন মালপত্র বহনের জন্য তারা সাধারনত গাধার ব্যবহার করত আর নিজেদের যাতায়াতের জন্য তাদের প্রথম পছন্দ ছিল নৌপথে নৌকায় ভ্রমন।
২। প্রতিটি মৃতদেহকেই মমি করা হতোনা
প্রাচীন মিশরের এক অবিচ্ছেদ্য বিষয় হচ্ছে মমি। মৃতদেহকে বিশেষ উপারে বছরের পর বছর সংরক্ষন উপযোগী করে রাখার একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে এই মমি। কিন্তু যেহেতু একটি মৃতদেহকে মমিতে রুপান্তরিত করতে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হত কারগরদের এবং সে অনযায়ী খরচও হত বেশ সেহেতু কেবল সমাজের বিত্তবানদের কেউ মারা গেলেই সে মৃতদেহকে মমিতে রুপান্তরিত করা হত। আর বাকিদের মরদেহ চিরাচরিত পদ্ধতিতে কবর দেয়া হত মরুভূমিত বুকে।
৩। মৃতদের প্রতি খাবার উৎসর্গ করত প্রাচীন মিশরীয়রা
![](https://khichuri.net/wp-content/uploads/2019/03/img_5c9f6ea57388e.png)
মমি রাখার জন্য নির্মিত সমাধী সৌধে পরবর্তীতেও প্রবেশের জন্য যাতাযায় রাস্তা রাখা হতো। যাতে করে পরিবারের সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং মন্দিরের পুরোহিতগণ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন এবং মৃতদেহদের প্রতি খাবার উৎসর্গ করতে পারেন।
৪। নারী-পুরষের সমান অধিকার বহাল ছিল
তৎকালীন মিশরে নারী এবং পুরুষকে সামাজিক দৃষ্টিকোণ এবং আইন অনুযায়ী সমান অধিকার দেয়া হতো। পুরুষদের মতো নারীরাও কাজে করে উপার্জন করে পারত এবং উপার্জিত অর্থ দিয়ে নিজেদের নামে সম্পত্তিও ক্রয় করতে পারত।
এমনকি প্রাচীন মিশরে নারীরা তাদের স্বামীর অবর্তমানে ব্যবসা দেখাশুনা ও পরিচালনা করার অধিকারও রাখত।
৫। হাইরোগ্লাফিক লিপি কেবল গুরুত্বপূর্ণ নথী লিপিবদ্ধ করতেই ব্যবহৃত হতো
![](https://khichuri.net/wp-content/uploads/2019/03/img_5c9f6ef180e4c.png)
প্রাচীন মিশরে দৈনন্দিন কাজের লেখা জোখার কাজে সাধারণত হাইরোগ্লাফিক লিপি ব্যবহৃত হতোনা। চমৎকার দেখতে এই হাইরোগ্লাফিক লিপিতে ছিল প্রায় কয়েকশো বর্ণ বা চিহ্ন যা সচরাচর কাজে ব্যবহারের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ছিল। এই কারণে মিশরীয় হায়ারোটিক নামে মূলত হাইরোগ্লাফিক লিপিরই একটি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য রুপ উদ্ভাবন করেন। দৈনন্দিন বিভিন্ন লেখাজোখার কাজে এই হায়ারোটিক লিপিই ব্যবহৃত হতো।
৬। মেয়েরাও রাজ্যভার গ্রহন ও পরিচালনা করতে পারত।
সাধারনত প্রাচীন মিশরের রাজার ছেলেদের মধ্যেই একজন পরবর্তী রাজ্যভার গ্রহণ করত। কিন্তু সবসময় যে এই নিয়ম মানা হতো তা নয়। নিয়মের ব্যত্যয়ও ঘটত কখনো কখনো।
ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া অত্যন্ত তিনবার এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছিল, যেখানে রাজার ছেলের বদলে মেয়ে রাজ্যভার গ্রহণ করেছিল।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার রাজ্য পরিচালনায় বেশ সফলও ছিলেন। যেমন ধরা যাক রানী হাটসেপসুট এর কথা। তিনি টানা প্রায় ২০ বছর মিশরের শাসকের আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
৭। ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ প্রথা
যদিও প্রাচীন মিশরের সাধারণ জনগণের মধ্যে এই বিষয়টির খুব একটা প্রচলন দেখা যায়না, তবে এটা সত্য যে মিশরের কিছু রাজা তাদের আপন এবং সৎ বোনদের বিয়ে করেছিলেন। মূলত এটা করা হয়েছিল রাজবংশের রক্তকে শুদ্ধ রাখতে।
যাতে করে পরবর্তী প্রজন্মদের মাঝে কেবল রাজ বংশের রক্তই সঞ্চারিত হয় এবং তারা রাজ পরিবারের প্রতি তার আগের প্রজন্মের মতোই অনুগত থাকে।
৮। সকল ফারাও রাজারাই নিজেদের মমি রাখার জন্য পিরামিড তৈরি করেননি।
![](https://khichuri.net/wp-content/uploads/2019/03/img_5c9f6f1beaf5d.png)
২৬৮৬ থেকে ২১২৫ এবং ২০৫৬ থেকে ১৬৫০ খ্রিস্টপূর্ব সময়কালীন সময়ের প্রায় প্রতিটি ফারাও রাজাই নিজেদের জন্য পিরামিড তৈরি করেছিলেন। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ১৫৬০ এর পরবর্তী সময় থেকে সমাধীসৌধ হিসেবে পিরামিড নির্মাণের রীতি বন্ধ হয়ে যায়। তার বদলে ফারাওরা নতুন ধরনের সমাধীসৌধ তৈরিতে মনোযোগী হোন।
৯। পিরামিড ক্রীতদাসদের দিয়ে তৈরি হয়নি।
ইতিহাসবেত্তা হিরোডোটাস এর মতে প্রাচীন মিশরের পিরামিডগুলো মূলত প্রায় এক লক্ষ ক্রীতদাসের অমানুষিক পরিশ্রমের দ্বারা তৈরি। তার তত্ব সাহিত্যিক এবং চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেলেও পুরাতত্ববিদরা তার ধারনার সাথে একমত নন।
বর্তমান পুরাতত্ববিদদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে আদতে পিরামিড প্রায় পাঁচ হাজার স্থায়ী এবং আরো প্রায় বিশ হাজার অস্থায়ী বেতনভুক্ত শ্রমিকদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
১০। ক্লিওপেট্রা সম্ভবত অতটা সুন্দরী ছিলেননা যতটা তাঁকে বলা হয়
![](https://khichuri.net/wp-content/uploads/2019/03/img_5c9f6f7546d9a.png)
ক্লিওপেট্রা, প্রাচীন মিশের শেষ রানী। তিনি যেহেতু একই সাথে রোম সামাজ্রের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব জুলিয়াস সিজার এবং মার্ক এন্টনির হৃদিয় হরণ করেছিলেন সেহেতু ধরা হয়ে থাকে তিনি অপরুপ সুন্দরী এক নারী ছিলেন। শেক্সপিয়র থেকে ধরে আরো যতো সাহিত্যিক তাদের লেখায় ক্লিওপেট্রা-কে তুলে ধরেছেন প্রত্যেকেই তাঁকে বর্ণনা করেছেন অপরুপ সুন্দরী হিসেবে।
কিন্তু অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ক্লিওপেট্রার ছাপচিত্র সম্বলিত মুদ্রা কিন্তু তা বলেনা। মুদ্রায় ক্লিওপেট্রার যে চিত্র সম্বলিত আছে তাতে তাঁকে বেশ সাধাসিধা ধরনের একজন নারী রুপেই দেখা যায়।
অবশ্য, ক্লিওপেট্রার আসল সৌন্দর্য মুদ্রার প্রতিচ্ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই, কারণ নিখুতভাবে মুদ্রায় প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলার প্রযুক্তি তখন ছিলনা।