রূপসী কিংবা ভয়ঙ্কর মেডুসা

গ্রীক মিথোলজির এক ভয়ঙ্কর দানবী ছিলো, যার নাম মেডুসা। মেডুসা কিন্তু প্রথমে দানবী ছিলো না।  একসময় সে অত্যন্ত সুন্দরী ছিলো। সে অতি সুন্দরী ছিলো; ছিলো তাঁর দিঘল সোনালী চুল। দেবী অ্যাথেনার সেবায় ব্রতী হয়ে সে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলো যতক্ষণ না পসাইডন-এর সাথে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক হয়। একসময় সে তাঁর ব্রতের বিরুদ্ধে গিয়ে পসাইডনের সাথে মন্দিরের ভেতরেই শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এই কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে দেবী অ্যাথেনা মেডুসাকে নৃশংস শাস্তি দেয়। দেবী অ্যাথেনা অভিশাপ দিয়ে মেডুসাকে ভয়ানক গর্গনে পরিণত করেন। তাঁর চোখ হয়ে যায় রক্তরাঙা, চেহারা হয়ে যায় নৃশংস। অতিসুন্দর চুলগুলো পরিণত হয়ে এক-একটা বিষধর সাপ হয়ে যায়। তাঁর সাদা দুধে আলতা গায়ের রঙ হয়ে যায় সাপের মতো সবুজাভ। মেডুসাকে সবাই অতি অপছন্দ আর এড়িয়ে চলতে শুরু করে।  অ্যাথেনার অভিশাপ এতোই প্রকট ছিলো যে কেউ তাঁর দিকে সরাসরি তাকাতে পারতো না। কেউ সরাসরি তাকালেই সে পাথরে পরিণত হতো কিংবা মেডুসা কারো উপর অসন্তুষ্ট হলেই তাঁর চোখের দৃষ্টি দিয়ে পাথর বানিয়ে দিতো।

মেডুসা

মেডুসা সম্পর্কে বিশেষ তথ্যঃ

  • সমুদ্রের দেব-দেবী ফোর্সিস এবং কেটোর কন্যা ছিলো মেডুসা।
  • স্থেনো এবং ইউরিয়ালে নামে তাঁর আরো দু’জন বোন ছিলো। উল্লেখ্য, সেই দু’জন বোনও গর্গন ছিলো তবে মেডুসা মরনশীল হলেও বাকি দু’জন অমর ছিলো।
  • মেডুসা কিছুদিন আফ্রিকাতেও বিচরণ করেছিলো। অনেকের মতে, মেডুসা যখন সেখানে ছিলো তখন তাঁর মাথা থেকে বাচ্চা সাপ পরে যায় এবং সেজন্যই মিথ আছে আফ্রিকা পৃথিবীর অন্যতম ভয়ানক বিষধর সাপের আখড়া।
  • অনেক শিল্পী মেডুসাকে নিয়ে তাদের শিল্পকর্ম তৈরি করেছে।
  • মেডুসাকে নিয়ে বিখ্যাত শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ক্যানভাসে একটি অয়েল পেইন্টিং করেছিলেন।
  • মার্বেল এবং ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য রয়েছে মেডুসার।
  • পম্পেইস হাউজ অফ দ্য ফন-এ আলেকজান্ডার মোজাইকে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর একটি বুকের বর্ম পাওয়া যায় যেখানে মেডুসার প্রতিকৃতি দেখা যায়।
  • চেক প্রজাতন্ত্রের দোহালিস গ্রামের পরিচায়ক চিহ্নে মেডুসার মাথা চিত্রিত ছিলো।
  • সিসিলি’র পতাকা এবং প্রতীকেও মেডুসার মাথার বৈশিষ্ট্য ছিলো।
  • সাপের দুইটি প্রজাতি তাঁর নামে রাখা হয়েছে। যথাঃ ভেনমাস পিটভাইপার বোথ্রিওপসিস মেডুসা এবং অ্যাট্রাকটাস মেডুসা।
  • মেডুসা দর্শন, সৌন্দর্য এবং শিল্পের প্রতিনিধিত্ব করে।
  • প্রাচীন পুরাণ রচনা থেকে শুরু করে আধুনিক সাহিত্য রচনায় মেডুসা ছিল কবি সাহিত্যিকদের এক প্রেরণার নাম।
  • অনেক স্থাপত্য আর প্রাচীন মুদ্রায় স্থান পেয়েছে মেডুসা।
  • ইতালির ফ্লোরেন্স শহরের প্রধান নগরচত্বরে পার্সিউস এবং মেডুসার বিখ্যাত স্থাপত্য কর্মটি দেখা যায়।
  • ইতালির বিখ্যাত ফ্যাশনব্র্যান্ড ভার্সাচি-এর লোগোতেও ব্যবহৃত হয়েছে মেডুসার মাথা।
  • মেডুসা মিথ নিয়ে আলাদা আলাদা সংস্করণ শোনা যায়।
  • মেডুসা মিথের প্রায় প্রত্যেকটা সংস্করণে পাওয়া যায় যে, সেরিফাস দ্বীপের রাজা পলিডেক্টেস গ্রীক ডেমি-গড পার্সিয়াসকে পাঠিয়েছিলো তাঁর মাথা নিয়ে ফেরত আসার জন্য।
  • মেডুসাকে বিনাশ করার জন্য পার্সিয়াসকে হার্মিস দিয়েছিলো ডানাযুক্ত জুতা আর তরবারি, অ্যাথেনা দিয়েছিলো আয়নাযুক্ত বর্ম।
  • পার্সিয়াস ডানাযুক্ত জুতায় উড়ে অ্যাথেনার দেওয়া বর্মে মেডুসার প্রতিকৃতি দেখতে দেখতে হার্মিসের তরবারি দিয়ে মেডুসার গলা কেটে ফেলে।
  • তারপর উপহার পাওয়া ওয়ালেটে মেডুসার মাথা ঢুকিয়ে জাদুর টুপি পড়লেন য্যানো অন্য দুই বোন তাকে দেখতে না পায়।  
  • রিক রোর্ডানের বেস্ট সেলিং পার্সি জ্যাকসন  সিরিজটি আসলে পার্সিয়াসের থেকে অনুপ্রাণিত। প্রথম বইটি তো পুরোপুরিই পার্সিয়াসের মিথের ছায়া, মেডুসাও আছে সেখানে। এই গল্প নিয়ে একটা সিনেমাও আছে, “percy jackson and the lightning thief”
  • নারীবাদে উল্লেখ আছে, মেডুসা ক্রোধের প্রতীক হলেও সে অতীব সুন্দরী ছিলো।
  • দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শতকে একটি রোমান ক্যামেওতে তাঁর মাথার প্রতিকৃতি দেখা যায়।
  • পসাইডনের সাথে যখন মন্দিরের ভেতর সঙ্গম করেছিল মেডুসা, তখন সে হয়ে পড়েছিল অন্তঃসত্ত্বা।
  • পার্সিয়াস যখন সমুদ্রের ওপর দিয়ে মেডুসার কাটা মাথা নিয়ে উড়ে আসতে থাকে, তখন সেখান থেকে দু’ফোটা রক্ত পড়ে সমুদ্রের পানিতে। সেখান থেকে জন্ম হয় পেগাসাস নামক এক আশ্চর্য পাখাওয়ালা ঘোড়ার।
  • পেগাসাসের সঙ্গে আরও একজনের জন্ম হয় তখন, তার নাম ক্রাইসেওর।

 

মেডুসা গ্রিক পুরাণের সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্রগুলির মধ্যে একটি। এটি প্রমাণিত হয়েছে কারণ মেডুসা পপ সংস্কৃতিতে চিত্রিত হচ্ছে। তিনি কেবল গল্পেই নয় বরং ইতিহাসেও অমর।