মাঝেমধ্যে আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন আসে কিংবা আমাদের চোখের সামনে হঠাৎ এমন কিছু ঘটে যার কোনো ঠিকঠাক উত্তর আমরা খুঁজে পাই না। অজানাকে জানার চেষ্টা করা যায় কিন্তু সব রহস্য নিজের খোলসের আবরণ খুলে নিজেকে জানান দিতে চায় না। বিজ্ঞানমনষ্ক লোকজন হয়তো অতিপ্রাকৃত ব্যাপার স্যাপারে তেমন একটা পাত্তা দেন না, কিন্তু যখন তা নিজের চোখের সামনে ঘটে যায় তখন হয়তো বিশ্বাসের ভিতটা একটু হলেও নড়ে যায়।
![](https://khichuri.net/wp-content/uploads/2019/04/img_5cab43495eff6.png)
ডিপ্রেশন কিংবা স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়ার অযৌক্তিক একটি পন্থা হচ্ছে আত্মহত্যা। আমার মনে হয়, দুর্বল মানুষরাই এই পদক্ষেপটি নিয়ে থাকেন যাদের নিজের উপর কোনোপ্রকার আত্মবিশ্বাস নেই। কিন্তু আপনি কি কখনো শুনেছেন কুকুরকে আত্মহত্যা করতে? অবাক হলেও সত্যি যে, স্কটল্যান্ডে কুকুরও আত্মহত্যা করে!
কি অবাক হচ্ছেন? আচ্ছা ধরুন, আপনার কুকুরটি আপনার বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেলো; আপনি সেটা হয়তো স্বাভাবিক ভাবেই নিবেন। কিন্তু আপনার সাথে সেটা যদি বারবার একই পন্থায় ঘটে তাহলে আপনি কি ভাববেন?
হ্যাঁ! এমনটাই ঘটে স্কটল্যান্ডের ডাম্বারটনে অবস্থিত ওভারটন ব্রীজে। ক্লাইডে নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত ডাম্বারটন শহরটি। ক্লাইডের শাখা নদীটি লেভেন। তার উপরেই রয়েছে এই ব্রীজ। ১৮৯৫ সালে তৈরি হয় সেই ব্রীজ। কুকুর এই ব্রীজে উঠলেই সেখান থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যায়। কুকুরগুলো যেইখানটাতে লাফিয়ে পড়ে সেই জায়গাটা পাথর। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ব্রীজের ডান দিকের একটিমাত্র জায়গা থেকেই লাফ দেয় কুকুরগুলো। নিউইয়র্ক টাইমসের স্থানীয় পরিসংখ্যানে জানা যায়, এ পর্যন্ত ৬০০টি কুকুর এই সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়েছে নিচে, অল্প পানির পাথুরে জমিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রতিটি কুকুরেরই। এমন ঘটনা শুরু হওয়ার পর ব্রীজটির নাম দেয়া হয় ‘ডগ সুইসাইডাল ব্রীজ’।
অনেকেই মনে করেন, অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তি কিংবা মহাজাগতিক কোনো কিছু কুকুরদের এই আত্মহত্যার জন্য দায়ী। তাঁরা মনে করেন- এই ব্রীজটি এমন জায়গায় অবস্থিত যেখান থেকে স্বর্গের দরজা বেশি দূরে নয়। সেতুটির পাশেই রয়েছে ওভারটন হাউজ। স্থানীয়দের দাবি, সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের প্রেতাত্মাদের দেখা পেয়েই নাকি কুকুরগুলো ঝাঁপ দেয়! এই ব্যাপারে বায়োলজিস্ট শেফার্ড বলেন, কুকুরের আত্মহত্যার পেছনে সাইকোসিস নামক একটি মানসিক রোগ থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে একটি দেশ থেকে একই ব্রীজ থেকে বারবার কেনো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে?
ডক্টর ডেভিড স্যান্ড প্রাণী আচরণের গবেষক। তিনি বলেছেন, ব্রীজটি কিন্তু অসাধারণ দেখতে। মারাত্মক মজবুত পাথরকুচি দিয়ে তৈরি প্রাচীন এই ব্রীজ। ব্রীজের দুই পাশেই রয়েছে পাথরের তৈরি ৪০ ফুট উঁচু দেয়াল; কুকুরগুলো তাই বুঝতে পারে না ব্রীজের নিচে কি আছে। এই বিভ্রান্তি থেকেও লাফিয়ে পড়তে পারে। বিষয়টি দেখার জন্য ড. ডেভিড স্যান্ড তার কুকুর হেনন্ড্রিক্সকে কে নিয়ে এই ব্রিজটি পরিদর্শনে যান। স্যান্ড যখন তার কুকুরটিকে নিয়ে ব্রিজটি পার হচ্ছিলেন ঠিক তার শেষ মুহুর্তে এসে তার কুকুরের মধ্যে অস্বাভাবিক চাঞ্চল্যতা লক্ষ্য করেন। পরবর্তীতে তিনি এর কারণ হিসেবে বলেন, কুকুরদের দর্শন ও ঘ্রাণশক্তি অনেক বেশি। ব্রিজটি পার হওয়ার সময় তার কুকুরটি এমন কিছু আঁচ করতে পেরেছিলেন যার কারণে কুকুরটি এরকম আচরণ করেছিলো। ডেভিড স্যান্ড সহ আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞের ধারণা, ঝাঁপ দেয়ার কারণ অ্যাকচ্যুয়ালি আত্মহত্যা নয়। ব্রিজটির আশেপাশেই ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ইঁদুর আর বেজীজাতীয় প্রাণী। রোদের দিনে এসব প্রাণীদের গন্ধ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ছড়িয়ে যায়। কুকুরগুলো সেইসব গন্ধের আকর্ষণেই ব্রীজের দেওয়ালে চড়ে আর উচ্চতা বোঝার আগেই লাফ দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পুরো স্কটল্যান্ডে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি এই জাতীয় প্রাণী রয়েছে, কিন্তু শুধু ওই নির্দিষ্ট ব্রীজ থেকেই কেনো কুকুরগুলো লাফ দিচ্ছে?
প্রাণীদের অদ্ভুতুড়ে আচরণ নিয়ে কাজ করা স্কটিশ সোসাইটি কুকুরদের এমন অদ্ভুত আচরণের কারণ খুঁজে বের করতে ওভারটনে এ পর্যন্ত অনেক গবেষককেই পাঠিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকৃত কারণ অজানাই রএ গেছে সবার। কুকুরের অদ্ভুতুড়ে এই আচরণটির কারণ যাই হোক না কেনো; ওভারটন এলাকা দিয়ে কুকুর নিয়ে যেতে একপ্রকার মানা করেছে স্কটিশ সোসাইটি। বলা হয়েছে, এই রাস্তা দিয়ে গেলে নিজের কুকুরকে সামলে রাখতে। তাই কুকুর মালিকদের ব্যবহার করতে হচ্ছে বিকল্প রাস্তা।