পাতা ঝরার দিন

কল্পনা করতে পার , কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলে দুনিয়ার কোথাও
কোন গাছ পালা নেই।
কিংবা গাছের তৈরি কোন কিছুই নেই।
কল্পনা কর তো।
জেনে অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে দরকারি কত কিছুই না আসে প্রকৃতির
অমুল্য দান এই গাছ পালা থেকে।
গাছ যে আমাদের খাবার দেয় বা অক্সিজেন তৈরি করে সেটা নতুন করে বলার দরকার নেই। গাছ পালা আমাদের মাটি ও রক্ষা করে।
নইলে বাতাসে আর বৃষ্টিতে মাটি ক্ষয় হয়ে ভূমির প্রকৃতি বদলে যেত।
গরমে গাছ আমাদের ছায়া দেয়। আবহাওয়া আরামদায়ক করে তোলে আমাদের জন্য।
বুনো প্রানিদের খাবার আর আশ্রয় তৈরি করে দেয় গাছ পালা।
আমাদের রোজকার দরকারি কত কিছু যে গাছ পালা থেকে আসে বলার মত না।
কাগজ হতে শুরু করে জামা কাপড়, আসবাবপত্র, পেন্সিল, বই , রঙ এবং ওষুধপত্র পযন্ত।
এক গাদা গাছ পালা যেখানে জন্মে থাকে ওটাকে বন বা জঙ্গল বলে।
বনভূমি বা জঙ্গল খুব মজার জায়গা।
ওটা যেন আরেক জগত। জন্ম মৃত্যুর এক অফুরন্ত চক্র চলতে থাকে জঙ্গলের ভেতরে।
ঘাস, গুল্ম, ঝোপ, গাছ , পাখী , ব্যাঙ, সাপ, পোকা মাকড়, মাছ হরেক পাদের জীব জন্তু আর প্রাণী জন্মায় , বড় হয় আর মরে এই জঙ্গলের সমাজে।
যে কোন দেশের জন্য বন জঙ্গল খুব দরকারি।
তবে জানো বোধ হয় মানুষ বেড়ে যাওয়ায় বনভূমি কমে যাচ্ছে।
কিন্তু আমাদের ইকোসিস্টেমের জন্য বন জঙ্গল খুব দরকার।
গাছ পালার একটা বড় গুন হচ্ছে ওরা সূর্যের আলো নিজেদের পাতার মধ্যে নিয়ে কি এক বিদঘুটে কায়দা করে নিজেদের খাবার নিজেরা বানায়। এই কায়দাকে বলে
সালোকসংশ্লেষ ( photosynthesis)
সবুজ গাছ পালা একমাত্র প্রাণী যারা নিজদের খাবার নিজেরা বানাতে পারে।
শুধু এই কারনে গাছ পালা আমাদের খাদ্য চক্রের প্রথম ধাও।
সারা পৃথিবীর সব প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য কোন না কোন ভাবে গাছ পালার উপর নির্ভরশীল।
যত দূর সম্ভব গাছ পালা চেনার চেষ্টা করবে।
অচেনা গাছ দেখলেই বড় কাউকে গিজ্ঞেস করে নাম জেনে নেবে।
গাছ পালা চেনার সহজ উপায় হচ্ছে পাতা, বাকল, ফল , ফুল বা দানা।
গাছ পালার পাতা সংগ্রহ করাও একটা মজার শখ। বিজ্ঞাণ ক্লাবের অনেকেই করে।
বাইরের দেশে খুব জনপ্রিয় একটা ব্যাপার।
শীতের সময় যখন গাছের পাতার শুকিয়ে ঝরে পড়তে থাকে তখন পাতা সংগ্রহ
করা যায়। শুকনো পাতা বই বাঁধাই করা খাতার মধ্যে সাদা পরিষ্কার টেপ
দিয়ে আঁটকে রেখে বা আঠা দিয়ে সেঁটে পাশে নাম ধাম লিখে রাখলে ভাল একটা সংগ্রহ হয়।
ছেঁড়া বা পোকায় খাওয়া পাতা বাদ দিয়ে সংগ্রহ করলে ভাল হয়।
সংগ্রহ করা পাতার পাশে যা যা লিখে রাখবে তা হল-
১।কোথা থেকে সংগ্রহ করেছ
২।তারিখ, মাস,বছর।
৩।কোন জায়গায় এই ধরনের গাছ ভাল জন্মে- নদীর ধারে, পাহাড়ি জায়গায়,
নাকি বাগানে।
কাজ শুরুর আগে একটা ভাল মানের বাঁধাই করা খাতা, ছোট চাকু আর আঠা সামনে রাখবে।
পাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে গাছের ক্ষতি করবে না।
সংগ্রহ করা পাতাগুলো হালকা করে কলের পানিতে ধুয়ে নাও।
বেশি মুঠো করে ধরবে না। বোঁটায় ধরে নেবে।
কতগুলো খবরের কাগজের ভেতরে পরিষ্কার পাতাগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রেখে উপরে আরও খবরের কাগজ রেখে চাপা দিয়ে রাখবে । তারও উপর
শক্ত ভারি কোন কার্ড বোর্ড দিয়ে চাপা দিয়ে রাখবে খানিক সময়।
আমি পাথরের টুকরো রাখতাম।
মোটামুটি শুকিয়ে যাবার আগ পযন্ত চাপা দিয়ে রাখবে। যখন এখান থেকে
পাতাগুলো বের করবে তখন নোট বইতে সাঁটানোর জন্য ওরা তৈরি।
স্বচ টেপ বা আঠা যা তোমার মজি। ব্যবহার কর পাতা সেঁটে রাখতে।
একটা কায়দা করে অনেকে পাতার ছাপ সংগ্রহ করে।
এটাকে স্মোক প্রিন্ট বলে। কাজল ছাপ বলতে পারো।
একটা সাদা কাঁচের বোতল নাও। ভাল করে শর্ষে বা সয়াবিন তেল বোতলটার গায়ে মাখিয়ে নাও। বোতলটার ভেতরে কনকনে ঠাণ্ডা পানি ভরে ছিপি টাইট করে বন্ধ
করে দাও।
এবার বোতলটা মোমবাতির উপরে ধর। সাবধানে।
মাত্র কয়েক মুহুতেই দেখবে বোতলের গায়ে কালো কাজল তৈরি হয়ে গেছে।
এবার বাকি কাজ সহজ।
যে পাতার ছাপ নেবে সেই পাতাটা এমন করে রাখবে যারে শিরার দিকটা উপরে থাকে।
পাতার উপরে কাজল মাখা বোতলটা হালকা করে গড়িয়ে নাও।
এবার সাদা পরিষ্কার কাগজে বা তোমার নোট বইতে কাজল মাখা পাতা রেখে উপরে
খবরের কাগজ রেখে অন্য একটা পরিস্কার বোতল দিয়ে রুটি বেলার মত চাপ দিয়ে
নাও। দেখবে নোটবইয়ের পাতায় পাতার সুন্দর ছাপ ফুটে উঠেছে।
পাশে আগের মত বিস্তারিত লিখে নিলেই হয়ে গেল।