বৃষ্টি মাপার যন্ত্র

তিদিন সকালে দাদু রেডিওর সামনে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। হাতে পঞ্জিকা আর চায়ের পেয়ালা। পেয়ালা ভর্তি লাল আদা চা। এই চা নাআকি বোমাইবুরুর জঙ্গল থেকে
আনা।
রেডিওতে অনেক মনোযোগ দিয়ে আবহাওয়ার খবর শুনে দাদু। বাজখাই গলায় একজন বলে- আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে আজ সারা দিন আকাশ মেঘলা থাকবে। হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। গত কালের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল …হেন তেন।
অবাক হতাম।
রোজ বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টির পরিমাণ মাপে কি ভাবে ওরা। মাপের এই
কায়দা কি ভাবে আবিষ্কার হল ?
সেই পুরানো যুগে প্রথম দিকে গ্রিকরা বৃষ্টির পরিমাণ মাপতো।
অনেক আগে। তা যীশুর জন্মের ৫০০ থেকে ৪০০ বছর আগে হবে।
প্রাচীন ভারতের লোকজন ২ হাজার বছর আগে বৃষ্টি মাপত। তাদের এক প্রাচীন বিদ্যা অর্থশাস্ত্র।
সেই অর্থশাস্ত্রে জমির পরিমাণ আর ফসল উৎপাদনের জন্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জানা দরকার ছিল।
বৃষ্টি মাপার যন্ত্র হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন আবহাওয়া সংক্রান্ত যন্ত্র।
আমার গবেষণাগারে একটা বৃষ্টি মাপার যন্ত্র বা রেইন গেইজ থাকলে ভাল হত।
নেই। নিজেই বানিয়ে নিলাম।
দুই লিটার পানি ধরে অমন একটা প্ল্যাস্টিকের বোতল যোগার করলাম।
অমন বোতলের অভাব নেই। ছিপিটা ফেলে দিলাম। লাগবে না।
বোতলটার গলার কাছে সমান করে কেটে নিলাম। কাটা অংশটা যেন ফ্যানেলের মত
হয়।
এবার ফ্যানেলের মত উপরের অংশটা উপুর করে বোতলের উপর রেখে দিলাম। তোমরা চাইলে সাদা টেপ দিয়ে জুড়ে দিতে পার।
বোতলের গায়ে স্কেল ঠেসে ধরে মার্কার পেন দিয়ে ইঞ্চি আর হাফ ইঞ্চি হিসাবে দাগ দিয়ে নিলাম।
বয়স তৈরি হয়ে গেল আমার বৃষ্টি মাপার যন্ত্র।
বাগানের এক কোনে নিয়ে রেখে দিলাম। বৃষ্টির তোড়ে যাতে পড়ে না যায় সেই জন্য বড় বড় কতগুলো পাথরের টুকরো দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখলাম বোতলের গায়ে।
এখন বাকি কাজ সোজা।
বৃষ্টি হলেই গিয়ে দেখতাম পানি কোন দাগ ছুয়ে আছে।
যদি এক ইঞ্চি দাগে পযন্ত পানি জমে থাকে তবে সেইদিনের বৃষ্টিপাটের পরিমাণ এক ইঞ্চি।
একটা মোটা খাতা নিলাম। ওতে তারিখ লিখে পাশে আমার হিসেব করা বৃষ্টির পরিমাণ ও লিখে রাখলাম।
মাঝে মাঝে দাদুকে গিয়ে জানাতাম এই মাসের বা সপ্তাহের বৃষ্টির পরিমাণ অত।
দাদুর চোখ গোল্লা গোল্লা হয়ে যেত।