মহাকাশের আবর্জনা

শুনতে কেমন লাগে ?
মহাকাশে আবার আবর্জনা আসবে কেমন করে ? ওখানে তো কেউ থাকে না।
তোমার বাড়ির সামনে যে ময়লা ফেলার বিন আছে সেটা কত দ্রুত ভর্তি হয়ে যায়। হয়তো তিন দিন পর বা রোজ বা প্রতি সপ্তাহে ময়লা সংগ্রহের লোক এসে নিয়ে যায় সেগুলো। বিন ভর্তি হয়ে যায় পুরানো বোতল, ময়লা কাগজ, পাউরুটির ব্যাগ, কলার খোসা, পানীয়ের ক্যান , ছেঁড়া স্যান্ডেল , খাবারের এঁটো এমন বহু হাবিজাবিতে।
কিন্তু মহাশূন্যের আবর্জনা ? সেটা কি ?
গত ৫০ বছর ধরে প্রতিবার পৃথিবী থেকে মহাকাশ যান যখন মহাশূন্যে চলে যায় তখন সেখান থেকে প্রচুর বাতিল জিনিস ফেলা হয়।অনেক কিছুই। নষ্ট হয়ে যাওয়া যন্ত্র, পুরোনো ইঞ্জিন অংশ, খালি জ্বালানীর ট্যাংক, এমন কি নভোচারীর হাতের দস্তানাও । মহাকাশযাত্রীরা কাজ করার সময় নানান জিনিস ফেলে দিচ্ছে । জেনে না জেনে। নভেম্বর ২০০৮ সালে নভোচারী হাইড পিপার স্পেস স্টেশনের সোলার পাওয়ার সিস্টেম মেরামত করছিলেন। তার হাত ফস্কে ৩০ পাউনড ওজনের যন্ত্রপাতি ভর্তি ব্যাগটা পড়ে যায়। যার দাম ১ লক্ষ ডলার।
বাতিল হয়ে যাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহ ও আবর্জনা। কোন কাজেই আসে না। ঘুরতে থাকে পৃথিবীর কক্ষপথের চারিদিকে। আবার কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট মহাশূন্যে না পাঠিয়েও কোন উপায় নেই। প্রতি বছর মোবাইল ফোন কোম্পানি অমন ডজন ডজন স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে মহাশূন্যে। ২০১২ সালে শুধু রাশিয়াই ১৪৪৬ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে মহাশূন্যে।
এত বেশি আবর্জনা হয়ে গেছে যে প্রতি মুহূর্তে ঘোরার সময় নিজেদের মধ্যে ঠোকাঠুকি হচ্ছে। আর ফলে ভাল স্যাটেলাইট গুলো নষ্ট হচ্ছে। একটা স্যাটেলাইট বানানো বেশ খরচের ব্যাপার। ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয় একটা স্যাটেলাইট বানাতে। সেটা মহাশূন্যে জায়গা মত রেখে আসতে খরচ পরে আরও ৫০ মিলিয়ন ডলার।
এই মুহূর্তে নাকি ২০ হাজার নষ্ট স্যাটেলাইট ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের কক্ষপথে। এবং ৫ লক্ষ ভাঙ্গা টুকরো ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই টুকরোগুলো ঘণ্টায় ১৭৫০০ মাইল বেগে ছুটে চলেছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে নাট বলটু আর ছোট ছোট ভাঙ্গা লোহার টুকরো।
মাঝে মধ্যেই দুই একটার টুকরো খসে পড়ছে পৃথিবীতে। ব্যাপারটা বিপদজনক। ভাগ্য ভাল বেশির ভাগ স্যাটেলাইট খসে মহাসাগরে গিয়ে পড়ছে বা মরুভূমিতে।

যে পরিমাণে আবর্জনা ঘুরছে তাতে কয়েক বছর পরই মহাশূন্যে নতুন কোন স্যাটেলাইট পাঠানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমন কি কোন আমরা যদি চাঁদে বা মঙ্গল গ্রহে যেতে চাই তখনও আব্রজনার টুকরো আঘাত করে আমাদের মহাকাশ যান ধ্বংস করে দিতে পারে। বিজ্ঞানীরা ভাবছেন । কি করা যেতে পারে। কয়েক বছরের মধ্যে মহাশূন্যে ভেসে বেড়ান ময়লা পরিষ্কার করতে নতুন কোন কোম্পানি এগিয়ে আসবে। যারা ময়লা সংগ্রহ করে ডাম্প করবে মাটির পৃথিবীতে। বা চাঁদে।
দেখা যাক কি হয় ।