বল্টু ভাইয়ের হাঁচি

আমাদের পাড়াতো ভাই বল্টু। আমার নাম মানে ‘পল্টু’র সাথে ওনার নামের বেশ মিল থাকলেও আদতে ওনার সাথে আমার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। থাকলেও হয়তো স্বীকার করতাম কিনা কে জানে। কারণ, ওনার মতো পাগলাটে মানুষ এই তল্লাটে আর একটাও নেই।
এইতো সেদিন বল্টু ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। দেখি ওনি কানে ম্যাচের শলা দিয়ে খোচাচ্ছেন আর একটু পরপর হ্যাচ্ছো… হ্যাচ্ছো… করে চেচাচ্ছেন।
: সে কি বল্টু ভাই ! আপনার কানে এভাবে খোচাচ্ছেন কেন ?
প্রশ্নটা করেই ভড়কে গেলাম আমি। ওনি কান খোচানো থামিয়ে রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। যেন আমি ওনাকে ভয়ানক খারাপ একটা গালি দিয়েছি।
: আমার কান খোচাব না তো তোর কান খোচাব ?
শেষমেষ প্রশ্নটা শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। ভাগ্যিস মুখে বলেছেন ,হাতে বলেন নি। ওনার আবার মুখের চেয়ে হাত চলে বেশি। অনেক দিন পর দেখা হলে ভালো আছিস জিজ্ঞেস করার আগেও ওনি পিঠে এমন একটা চাপড় দিয়ে বসেন যে দু চোখ একেবারে অন্ধকার হয়ে আসে।
যাহোক, আমি বললাল, তা তো ঠিকই। কিন্তু লোকে তো দেখি নাকে খুঁচিয়ে হাঁচি দেয় !
খানিকটা মিনমিনে শুনালো আমার গলা।
: ইয়া ..ইয়া ..পল্টু ..মনে পড়েছে…
এবার আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম আমি। পাগল হয়ে গেলেন নাকি ওনি ? এই দেখি রাগেন এই দেখি আবার হাত পা তুলে নাচানাচি শুরু করেছেন।
এই যখন ভাবছি ,দেখি বল্টু ভাই এবার বেশ করে নাকেই নাক খুঁচাতে শুরু করে দিয়েছেন। আর একটু পর পর ধমাধম একটার পর একটা হাঁচি দিয়ে চলেছেন।
কয়েকমিনিট এভাবে চলার পর ওনি এবার একটু শান্ত হয়ে বললেন, বুঝলিরে পল্টু ..ভুলেই গিয়েছিলাম সব! বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম!
কিসের কথা বলছেন আর কিইবা ভুলে গিয়েছেন কিছু বুঝতে পারলাম না। যদিও খানিকটা কৌতূহল হচ্ছিল তারপরও আমি চুপ করেই রইলাম। কি জানি আবার কি করে বসেন।
: বুঝলি ..আজকে দোকানের হিসেব নিয়ে যেই বসেছি অমনিই মনে হল হাঁচি আসছে।
ওনি বলতেই থাকলেন। আমি শ্রবনে মনযোগী হলাম। সেইসাথে একটু চিন্তিতও। কালকে টুসিকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে ওনার দোকান থেকে শ খানেক টাকা মেরে দিয়েছিলাম। ব্যাটা কি সেই হিসাব ধরে ফেলল নাকি?
: ভাবলাম যে খাতাটা বন্ধ করেই হাঁচিটা দেই। থুথু ছিটিয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হিসাবের খাতাটা বন্ধ করে ..
আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। যাক খাতাটা বন্ধ তো হল।
: পুরো দশ মিনিট বসে রইলাম। কত চেষ্টা করলাম। কই হাঁচি? ব্যাটা কই উধাও হয়ে গেছে। তাই আবার খাতাটা খুলে বসলাম .
আবার আতকে উঠলাম। আবার খাতা খোলা কেন?
: খুলতে না খুলতেই আবার হাঁচি এসে হাজির। তারাতারি খাতাটা বন্ধ করে যেই আবার হাঁচি দিতে যাব অমনিই আবার লাপাত্তা !
হাসিতে আমার পেট ফেটে যাচ্ছিল। কোনরকমে হাসি চেপে রেখে করুন মুখ করে বললাম, তারপর? তারপর কি হল বল্টু ভাই?
: হাবলুটাকে ডেকে বললাম ,ঐ হাবলু হাঁচি দেয় কেমনেরে ? হাবলু কি জানি খুঁচা খুঁচির কথা বলল দূরে থেকে বুঝলামই না। তোদের নিয়ে হয়েছে আরেক ঝামেলা। গার্লফ্রেন্ডের সাথে আসতে করে টুকুস টুকুস কথা বলে এমন অভ্যেস গড়ে তুলিস, পড়ে ভাল কথাও এতো আস্তে করে বলিস যে কিছু বুঝাই যায়না। যত নষ্টের গোড়া মোবাইল …
আমি প্রমাদ গুনলাম। হাতে রাখা মোবাইল পিছিয়ে নিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলাম।
: যাক গে ! হাবলুর কথা বুঝতে না পেরে এইবার আমি গিয়ে ডিটেকটিভ সূত্র প্রয়োগ করলাম। বুঝিস নাকিরে ..ডিটেকটিভ কি জিনিস ?
আমি মাথা নেরে সায় দিলাম। গোয়েন্দা।
: হুম! ভাবলাম কোথায় কোথায় খোঁচানো যায়। আমরা কোথায় কোথায় সচরাচর খুঁচিয়ে থাকি। ওপাড়ার দাদিকে দেখতাম দাঁত খুঁচাতে। ভাবলাম দাঁত দিয়েই শুরু করি। ঘন্টা খানেক দাঁতে বেশে করে খোঁচালাম, বুঝলি?
আমি সায় দিলাম।
: দাঁতে খুঁচিয়ে লাভ না হওয়ায় শুরু করলাম কানে খোঁচানো। ভাবলাম গাড়ি যেমন মাঝে মাঝে ঠেলে স্টার্ট করতে হয় ,হাঁচিটাও ওরকম কিনা। তাই ‘হ্যাচ্ছো হ্যাচ্ছো’ করেও বার কয়েক চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কাজ হচ্ছিলনা কোনভাবেই।
আর সেইসময়ই না তুই এলি। তোর একটু কথা শুনেই কেমন বুদ্ধিটা খাটালাম বল! সোজা নাকে ঢুকিয়ে দিলাম। আমার যে গোয়েন্দাগিরির গুনটা আছে এইটা আগে থেকে ভেবে দেখিনিরে!
এরপর তিনি বেশ খানিকখন একা একাই নিজের বিভিন্ন গুন নিয়ে আমাকে লম্বা একটা বয়ান দিলেন।
তারপর ক্যাশবাকসো খুলে আমার হাতে নতুন কড়কড়ে একটা একশো টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এইটা তোর আজকের কেসের পারিশ্রমিক। বল্টু গোয়েন্দার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে আজ থেকে তোকে নিযুক্ত করলাম।
টাকা পেয়ে আমি বানরের মত এমন একটা লাফ দিলাম যে চার্লস ডারউইন বেঁচে থাকলে বানর থেকে মানুষ নয় বরং বলতেন মানুষ থেকেই বানরের সৃষ্টি।