নাইজেরিয়ার কোন এক প্রদেশে দুর্ভিক্ষের উপর গবেষণা করার জন্য একবার মার্কিন বিজ্ঞানী সেন্ট লুইস আইজ্যাক প্রায় তিন মাস অতিবাহিত করেন। এ সময় ওনি এ বিষয়ে একটি এসাইনম্যান্ট পেপারও তৈরি করে ফেলেন, যাতে ঐ অঞ্চলের দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের এক সহজ পথ বাতলে দেন তিনি। তার বিশ্বাস, নতুন এ ফর্মুলা খুব সহজেই নাইজেরিয়া বাসীকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।
যাই হোক, এখন তাকে ফিরে যেতে হবে মার্তৃভূমিতে। ইচ্ছে আছে আগামিকাল সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি নাইজেরিয়া ত্যাগ করবেন। কাজেই আজকের দিনটা রেখে দেয়া হল কেনা-কাটা আর ঘুরা-ঘুরির জন্য।
মি. আইজ্যাক একজন নামকরা বিজ্ঞানী- তবুও কেনা-কাটা আর ঘুরা-ঘুরির প্রতি তার একটা বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। নতুন যেখানেই যাবেন, অন্তত একটা দিন তিনি ঠিক বের করে নেবেন এর জন্য। তিনি মনে করেন, একটানা কাজ করার পর যে কারো উচিত নিজেকে লোড ফ্রি করে নেয়া। আর এজন্য কেনা-কাটা অথবা ঘুরা-ঘুরিই হতে পারে আদর্শ সহায়ক। কারণ এতে চাপমুক্ত হওয়া যায় সহজেই।
উদ্দেশ্য অনুযায়ী মি. আইজ্যাক তাই সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র কিনে নিলেন নিজের আর গবেষণার জন্য। এরপর পূর্ণ বোঝাই করা গাড়ি সমেত রওনা হলেন আবাস স্থলের দিকে।
এরই মধ্যে রাত নেমে এলে মি. আইজ্যাক খুব দ্রুত ড্রাইভ করতে লাগলেন তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য। এসময় নির্জন এক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাত্ হেড লাইটের আলোয় কিছু দূরে রাস্তার ঠিক মাঝখানটায় যেন কি একটা পরে থাকার ইঙ্গিত পেলেন। কাজেই গাড়ির স্পীড কমিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন জিনিসটা কি দেখার জন্য।
কাছে এসে গাড়িটা থামিয়ে যেই জানলা দিয়ে উঁকি দিলেন, ওমনি চমকে ওঠলেন- এ যে জলজ্যান্ত একটা বাচ্চা শিশু মনে হচ্ছে! তত্ক্ষণাত গাড়ি থেকে নেমে এলেন তিনি! এরপর বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে চারদিকটা ভাল করে দেখলেন। কিন্তু যতদূর দেখা যায়, কাউকেই দেখতে পেলেননা!
বাচ্চাটির দিকে ভাল করে তাকাতেই বুঝা গেল বাচ্চাটি স্বাভাবিক নয়- একটি বডি থাকলেও দু-দু’টো মাথা ওর! যারা পরষ্পর জট বাঁধা অবস্থায় রয়েছে! তবে প্রতি মাথায় একটি করে কেবল দু’টি চোখ, কিন্তু মুখ দু’টো! এছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক আছে।
মি. আইজ্যাক ধারণা করে নিলেন, হয়তো কোন হা-ভাতে পরিবারে জন্ম শিশুটির- তার উপর আবার বিকলাঙ্গ। তাই বোধ হয় ফেলে রেখে চলে গেছে ওকে। অথচ শিশুটিকে দেখলেই মায়া হয়, কি সুন্দর ঘুমুচ্ছে সে।
কাজেই বাচ্চাটিকে সাথে নিয়ে নিলেন তিনি। সেইসাথে পণ করলেন- বিয়ে যেহেতু করলেনইনা, তাই না হয় কুড়িয়ে পাওয়া এই বিকলাঙ্গ শিশুটিকেই বড় করে তুলবেন স্বস্নেহে। সাথে সাথে একটা নামও ঠিক করে ফেললেন তিনি- টুইন আইজ্যাক। যেহেতু সে পুং লিঙ্গের অধিকারী, সেহেতু তার বৈশিষ্টের সাথে মিল রেখেই এই নাম রাখা হল তার।
দেখতে দেখতে টুইন আইজ্যাক এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। তবে ছোট থেকেই কিছু অসাধারণ গুণের সমন্বয় ঘটেছে তার মাঝে। তার উপর মহাকাশ বিষয়ে জানার আগ্রহও ছিল ব্যাপক। তাই মি. আইজ্যাক চেয়েছিলেন পড়া শোনা শেষ করিয়ে তাকে নাসায় কাজে লাগাবেন। কিন্তু শারিরীক বিকলাঙ্গতার কারণে নাসার বিজ্ঞানীরা তাকে পাত্তা দেয়নি।
তাই বলে থেমে যাননি মি. আইজ্যাক। তিনি বিশ্বাস করতেন, টুইনের মধ্যে যে মেধার স্ফুলিঙ্গ রয়েছে তা একদিন পুড়িয়ে ছাই করে দেবে সমস্ত বাঁধা বিঘ্নতাকে। ফলে ছেলেকে নানাভাবে উত্সাহিত করতে থাকেন তিনি। টুইনও বাবার উত্সাহ আর নিজের মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে একসময় আবিষ্কার করে ফেলল “দ্যা টুইন স্পেস” নামে এক অভাবনীয় দ্রুতগতিসম্পন্ন নভোযান। যা পৃথিবী থেকে যে কোন আবিষ্কৃত গ্রহে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে!
তার এ বিশেষ নভোযানটির পরীক্ষামূলক সাফল্যের পর নাসার বিজ্ঞানীরা ভীষণভাবে লজ্জায় পরে গেলেন। তাই তারা মি. আইজ্যাকের কাছে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে টুইন আইজ্যাককে নাসার প্রধান গবেষকের পদে অধিষ্ঠিত করতে চাইলেন। মি. আইজ্যাকও ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যত আর বিশ্ববাসীর কথা চিন্তা করে ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন নাসায়।
এদিকে এ ঘটনার পর সারা দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে গেল। পৃথিবীবাসী নতুন করে বুঝতে পারল যে, ভাল সুযোগ-সুবিধা পেলে বিকলাঙ্গরাও তাদের মেধার যথেষ্ঠ সাক্ষ্য রাখতে সক্ষম হয়!
ওদিকে নাসার প্রধান গবেষকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে টুইন আইজ্যাক যে বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করছিল, তাহল মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা। এজন্য সে ঐ গ্রহে একটি বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন অতি সূক্ষ্ম উড়ন্ত ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করে দিয়েছিল তার নিজস্ব উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রায় মাসখানেক ধরে যা মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন স্থানের ভিডিও ক্লিপগুলো লাইভ টেলিকাস্ট করে আসছিল পৃথিবীতে। যা থেকে অনেকটাই শিওর হওয়া গেছে যে, মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব আছে এ কথা ৯৯ ভাগই সত্য। এখন কেবল অপেক্ষার পালা ঐ দিনটার , যেদিন পৃথিবীবাসী স্বচোখে দেখবে মঙ্গলে প্রাণীদের হাঁটা চলার এক জীবন্ত দৃশ্য । আর এর সব কৃতিত্বই যাবে বিজ্ঞানী টুইন আইজ্যাকের ঝুলিতে ।
এরই মধ্যে হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পরলেন বিজ্ঞানী সেন্ট লুইস আইজ্যাক। খবর পেয়ে বাবাকে দেখতে ছুটে গেল টুইন। ঠিক এসময় নাসা থেকে ফোন এল তার কাছে। রিসিভ করতেই তার সহকারী বিজ্ঞানী বলে ওঠল, ‘স্যার! উয়ি হ্যাভ ডান ইট!’ এইমাত্র ক্লিপ এল মঙ্গল গ্রহ থেকে, যাতে এক ধরণের বিশেষধর্মী প্রাণীর জীবন্ত চলচ্চিত্র দেখা যাচ্ছে!
কথাটা শোনার সাথে সাথে উপরের দিকে তাকিয়ে টুইন আইজ্যাক স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাবা লুইস আইজ্যাককে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠল, বাবা আমি পেরেছি! আর এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট তোমার! কেননা যখন সবাই আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে, তখন তুমিই আমাকে সাহস যুগিয়েছ। তুমি আমার আদর্শ, আমার অনুপ্রেরণা।
ছেলের এরকম কথা শুনে বিজ্ঞানী সেন্ট লুইস আইজ্যাক শুধু নিঃশব্দে হেসে ওঠে জয়ের প্রতীক ইংরেজি ভি বর্ণকে হাতের অঙ্গুলির মাধ্যমে নির্দেশ করে আমাদের একটা কথাই বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, আমি গর্বিত, আমি উচ্ছ্বসিত! আমি একজন পিতা! আর টুইনই হল আমার জীবনের সেরা আবিষ্কার!