বাবাকে আমার মনে পড়ে ঠিকই। কিন্তু স্পষ্ট নয়। কেমন যেন ধোয়াটে ধোয়াটে একটা স্মৃতি। কয়েকটা স্মৃতি অবশ্য বেশ স্পষ্ট।
তখন আমার বয়স তিন কি চার। বাবার কাঁধে চড়ে প্রতিদিন সকালে বাজারে যেতাম।
ছোট্ট একটা দোকানে প্রতিদিন ভাজা হত গরম গরম পরোটা। বাবার কোলে চড়ে সেখানেই ঢুকতাম আগে।
বাবা খাইয়ে দিত। আর কত বায়না ধরতাম। হয়তো পরোটার টুকরো একটু বড় হয়ে গেছে ,বলতাম বড় করে দিলে খাবনা।
তখন ছোট করে নিয়ে মুখে তুলে দিতেন। কখনও বা আবার বায়না ধরতাম ,এটা বেশি ছোট ,এটা খাবনা।
এই তো গেল একটি স্মৃতি। তখন Meatsels বলে একধরনের চকলেট পাওয়া যেত। এটি ছিল আমার প্রিয় একটি জিনিস। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বালিশের নিচে হাত পেতে খুঁজতাম। ঠিক পেতাম। প্রতিদিন ৫টি চকলেট বাবা বাজার থেকে আসার সময় নিয়ে এসে আমার বালিশের নিচে রেখে দিত।
এভাবেই কাটছিল সময়। আবছা আবছা যতটুকু মনে পড়ে ,বাবা আমাকে কখনো বকেন নি! হয়তোবা বকা খাওয়ার বয়স হয়নি তখন! কিংবা বাবার স্নেহ ভালবাসা ওটা আকরে রেখেছিল।
২০০০সালের কোন এক সকাল। মায়ের কান্নায় ঘুম ভাঙ্গল। বাবাকে দেখলাম তখনও ঘুমিয়ে। মা তার মাথার পাশে বসে কাঁদছে। বাড়িতে অনেক লোক।
বালিশের নিচে হাত ঢুকালাম আমি। ১০টা চকলেট আজ। ধ্বক করে উঠল বুকটা। এটা বাবার শেষ দান! এটা কি বিদায়ের আগে শেষ একটু বেশি ভালবাসা।
মাঝে বাবাকে খুব মিস করি। বাবাকে আর ফিরে পাবনা। আর কখনও বাবার কাঁধে চড়ে বাজারে গিয়ে পরোটা খাওয়ায় বায়না ধরতে পারবনা। আর কখনই কেউ আমার বালিশের নিচে রোজ রোজ রেখে দিবেনা আমার প্রিয় চকলেট।
ভাবতেই কেমন লাগে বলুন তো ?
পিতৃহারা সন্তানরাই বুঝতে পারবে আমার অনুভূতি ,আমার হৃদয়ের ছোট্ট একটা কুঠুরে দীর্ঘ দীর্ঘ বছর ধরে জমে থাকা ব্যথা ,দুঃখের এক বুক ফাটা আর্তনাদ।
আজও বাবার সেই আবছা আবছা স্মৃতিগুলি মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই শ্রেষ্ঠ চারটি বছরের কথা ,যখন আমার বাবা বেচে ছিল। আমার সান্নিধ্যে ছিল। যখন আমি বাবার সাথে কথা বলতে পারতাম ,বায়না ধরতে পারতাম ,অন্তত বাবার সাথে হেটে হেটে মসজিদে যেতে পারতাম।