ডেমোনোলজি বা প্রেততত্ত্ব হ’ল ডেমন বা প্রেত সম্পর্কিত অধ্যায়ন । প্রেতাত্মাদের তাদের উৎস এবং কর্মক্ষমতার উপর ভিত্তি করে ডেমোনলজিস্ট বা সাধকেরা শ্রেনিবিন্যাস করে থাকেন। প্রাচীন কাল থেকেই নানাভাবে মানুষ এসব ব্যাখ্যা করে আসছে। বেশিরভাগ ডেমোনোলজিস্টই পেশায় ধর্মতত্ত্ববিদ, পাদ্রি এবং দার্শনিক ছিলেন। সাধারণ মানুষও ইচ্ছা করলে কোন প্রশিক্ষিত পণ্ডিত বা গুরু-র সাথে কাজ করে এবং দীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে ডেমোনোলজিস্ট হতে পারেন।
তবে জনশ্রুতি আছে, একজন ব্যাক্তি কখনোই নিজ থেকে ডেমনলজিস্ট হওয়াকে বেছে নেন না বা যে কেউ হুট করেই ডেমন সাধক হতে পারেন না। যেসব ব্যক্তির মাঝে ডেমনিক চরিত্র বিদ্যমান বা লুসিফেরিয়ান ব্লাড লাইনের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে, কেবল তারাই প্রকৃত এবং স্বয়ং সম্পূর্ণ রুপে ডেমনলজিস্ট বা প্রেত সাধক হতে পারেন।
ডেমন বা প্রেত সাধনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারন মনে করা হয় খারাপ আত্মার প্রভাব, ডাইনিদের নিয়ন্ত্রন, এবং কোন ব্যক্তিকে জাদু বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ডেমনদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে পুরো ইউরোপ জুড়ে ডেমোনলজি প্রচন্ডভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো ।
উদাহরণস্বরূপ, একজন প্রখ্যাত ইউরোপীয় ডেমোনোলজিস্ট জোহান ওয়েয়ার ঘোষণা করেছিলেন যে, তার কিং সোলাইমানের বাহাত্তরটা ডেমন তার দখলে রয়েছে। এই বাহাত্তর ডেমন-কে Princes of Hell বলা হয়। তিনি আরও বলেছিলেন যে, তার অধীনে প্রায় ৭,৪০৫,৯২৬ টি ডেমনিক মিনিয়নস রয়েছে।
তবে, হঠাৎ করে ইউরোপে হিস্টিরিয়া জাতীয় রোগ হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে , ডেমোনোলজির গুরুত্ব কমে যেতে থাকে। তবে এক্সরসিজমের (জ্বীন ছাড়ানো) আচার অনুষ্ঠান করা তখনো অব্যাহত ছিল। প্রথম দিকে ক্যাথলিক চার্চ ডেমোনলজিকে প্রচন্ডভাবে প্রোমট করেছিলো কিন্ত পরবর্তীতে তারা এর প্রচার প্রচারণা থেকে নিজেদের সরিয়ে আনেন। কারণ, তাদের আশঙ্কা ছিলো,এভাবে ব্যাপকভাবে ব্যাপারটার প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখলে একটা পর্যায় গিয়ে সাধারণ মানুষের এর প্রতি ভয় কেটে যাবে।
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ডেমোনোলজি আবার প্রচন্ডভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই জনপ্রিয়তার কারণ ছিলো উইলিয়াম পিটার ব্লাট্টির লেখা বেস্ট সেলিং বই “দ্য এক্সজোরিস্ট”। এটা লেখা হয়েছিল একটি সত্য ঘটনার উপর নির্ভর করে, যা ” সেন্ট লুইস এক্সজর্সিম কেস”-নামে পরিচিত ।
এই সময় অনেক “ডেমোনিক হান্টিংস” বা “প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন”- নামে নানা রকম সংগঠন গড়ে ওঠে। এসব সংগঠনের সংগঠকদের কোন প্রকার জ্ঞান-ই ছিলো না ডেমোনলজি সম্পর্কে। তারা নিছক কৌতুহলবশত এসব কাজ এবং নানা রকম অতিরঞ্জিত গল্প প্রচার করে বেড়াতো। এদের মধ্যে কিছু তদন্তকারী খুব বেশি অধ্যয়ন বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজেদেরকে “ডেমোনোলজিস্ট” হিসাবে পরিচয় দিতো ।
হাজার হাজার মামলার তদন্ত এবং পাদ্রিদের সাথে দীর্ঘ সময় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য যারা সর্বাধিক পরিচিত তারা হলেন এড, লোরেন ওয়ারেন এবং এডের ভাগ্নী জন জাফিস। ডেমনোলজির অন্বেষণ অত্যন্ত বিপজ্জনক কাজ। এটি সবাই অনুধাবন করেছিলো যখন একজন সন্ন্যাসীকে ডেমনরা পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে ।
এরপর, ক্যাথলিক এক্সোরিস্টরা সুপারিশ করেন যে, ডেমোন সাধাকদের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে নতুবা তাদের এই কাজ থেকে বিরত থাকতে হবেঃ
• তাদের অবশ্যই ইশ্বরের দেয়া প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ডাকতে হবে।
• অবশ্যই ইশ্বরের কাছ থেকে বিশেষ অতিপ্রাকৃত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
• তাদের বৈধ গীর্জার দিকনির্দেশ এবং কর্তৃত্বের অধীনে কাজ করতে হবে।
• তাদের নিজ জীবন এবং ইচ্ছা ইশ্বরের প্রতি উৎসর্গ করতে হবে।
• তাদের অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে। কারণ অল্প বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এই ধরণের সাধনা অত্যন্ত বিপদজনক।