Site icon খিচুড়ি

সেই সময়

পৃথিবী নিয়ন্ত্রন করছে মানুষ। নতুন করে বলার দরকার নেই।
জীবজগতের অন্য কোন প্রাণী মগজ আর হাত ব্যবহার করে উন্নতির এত দূর পর্যন্ত আসতে পারেনি। চাঁদে পৌঁছে গেছে। মানুষের বানানো মহাকাশ যান চলে যাচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহে। ওখানের বৃষ্টি আর মেঘের খবর আমরা জানতে পারছি ।
কিন্তু জানি না কেমন ছিল আমাদের আগের মানব সভ্যতা ? কি করে ভাবছি জ্ঞানবিজ্ঞানে আমরাই তাদের চেয়ে সেরা ? তারা কি কোন নমুনা ফেলে রেখে গেছে যা দেখে আমরা বুঝতে পারি আমাদের চেয়েও তারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান ছিল ? পিরামিডের মত । নাজকার সেই লম্বা লম্বা আঁকিবুঁকিওয়ালা উপত্যাকার মত । মায়ানদের মন্দিরের মত । জ্ঞানে বিজ্ঞানে অবিশ্বাস্য একটা স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল ? কি ভাবে আমরা জানব , আমাদের চেয়ে উন্নত সভ্যতা ছিল অতীতে ? এবং হারিয়ে গেছে কালের ধাক্কায় ?
বিজ্ঞানীদের হিসাবে, ৪০০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে প্রানের আবির্ভাব হয়েছিল।
তো, এত পুরানো দিনের কথা আমরা জানব কেমন করে ? ভাঙ্গাচোরা ধ্বংসাবশেষ , প্রাসাদ, হাবিজাবি দেখে আমরা দুই হাজার বছরের হিসাব পর্যন্ত পেতে পারি। বা সহজে পেয়ে যাই । ভূতাত্ত্বিক গঠন, মাপ আমাদের হারিয়ে যাওয়া বিশ লক্ষ বছরের ছবি চোখের সামনে তুলে ধরতে পারে।
যদি হারিয়ে যাওয়া অতীতের মহান সভ্যতার পোক্ত প্রমান চাই , কি করতে হবে আমাদের ? কিভাবে পেতে পারি ? কিভাবেই জানব তাদের ভাগ্যে কি হয়েছিল ? আর নিজেদের সেই পরিণতি থেকে কিভাবেই বা দূরে রাখতে পারব ?
অপ্রয়োজনীয় হলেও কিছু কথা বলা দরকার। যেমন , আমাদের এই মহাজগতের বয়স মাত্র ১৩.৮ বিলিয়ন বছর, আর পৃথিবীর বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর। মানুষ উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা শিখেছে মাত্র তিনশো বছর ধরে। পিছনে কত হাজার হাজার কোটি বছর আমাদের একদম অজানা। কিছুই জানি না , কি হয়েছিল সেই সময়ে। খুবই স্বাভাবিক সেই বিশাল হারিয়ে যাওয়া সময়ে ডজন ডজন উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এবং স্বাভাবিক নিয়মেই ধ্বংস হয়ে বেমালুম হারিয়ে গেছে। তার ও অনেক অনেক পরে আমরা এসেছি।
শুনতে বিদঘুঁটে মনে হলেও একদম অবিশ্বাস্য না কিন্তু।
এখন অতীতের সভ্যতার নিদর্শন হিসাবে পোক্ত প্রমান বলতে তাদের বানানো কোন ইরামত বা নির্মাণশৈলীর ছাপ আছে অমন কিছু পেলে ভাল হয়। কিন্তু সমস্যা হল তেমন জিনিস চাইলেই গণ্ডায় গণ্ডায় পাওয়া যায় না। আমরা আজকাল যেইসব দালান বাড়ি বানাচ্ছি সেটা যত পোক্ত মজবুত হোক সেইসব যে চিরস্থায়ী তেমনটা ভাব্বেন না। একটা সময়ে বিস্কুটের গুঁড়ার মত হয়ে যাবে সব। সবচেয়ে শক্ত ধাতু ও ক্ষয় হয়ে হারিয়ে যাবে সেইসব মহামুল্যবান আর চোখ ধাঁধানো ইমারত। আমাদের সব শহর, বন্দর কিন্তু পৃথিবীর মাত্র ১ ভাগ ভূমি দখল করে আছে। বাকি সব অতল সাগর। সেই হিসাবে অতীতের অপূর্ব হারানো কোন শহর আজও লুকিয়ে থাকতে পারে মহাসাগরের তলায়। বাকি জীবন আমাদের চোখের আড়ালেও থেকে যেতে পারে। অসম্ভব না মোটেও।
খুব খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন আমাদের বানানো যে কোন জিনিসই যদি রোদে, বৃষ্টিতে অবহেলায় ফেলে রাখি- তবে দশ লক্ষ বছর পর সেই জিনিসের একটা কণাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু কোটি বছর আগের ফসিলও তো আমরা পাই ? তা পাই। কিন্তু সেটা সংখ্যায় কয়টা ? হাজারে বিজারে না কিন্তু। কোটি জিনিস হারিয়ে একটা ফসিল পাই। আর ফসিল কিন্তু সামান্য সুত্র দেয় আমাদের। একটা ফসিল পাওয়া আর একশো পাতা বইয়ের একটা পৃষ্ঠা পাওয়া সমান কথা।
গত ১ লক্ষ বছর আগে যদি কোন আধুনিক সভ্যতা থেকেই থাকে তবে তাদের ব্যাপারে তেমন কোন প্রমান পাওয়া একদম অসম্ভব হয়ে যাবে। কোন ফসিল বা যন্ত্রের কোন ভাঙ্গা টুকরো ? সেটাও পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তারা তাদের উপস্থিতির প্রমাণ হিসাবে কিছুই রেখে যেতে পারবে না।
আচ্ছা আমরা যদি এই মুহূর্তে হারিয়ে যাই। ধ্বংস হয়ে যাই , কি প্রমাণ রেখে যাব ?
প্রথমত কিছু রাসায়নিক উপাদান।যেই সব ক্যামিকেল আমরা ব্যবহার করেছি চাষাবাদের কাজে, রাসায়নিক পরীক্ষা করতে , বোমা বানাতে , সব গিয়ে জমা হবে সাগরের তলায়। স্তরে স্তরে পাললিক গাদ জমবে। কোটি বছর পরের নতুন সভ্যতার একদল বিজ্ঞানী সেইসব কিম্ভুত পাললিক শিলা দেখে অবাক হয়ে যাবে। ভাববে বিচিত্র এই পলির গঠন অমন হল কি করে ? আমাদের ব্যবহার করা আণবিক বোমার কিছু রেডিও একটিভ কণা পাবে। আরও পাবে টনে টনে প্ল্যাস্টিক। ‘ওরা’ আমাদের কাণ্ড দেখে অবাক হবে। রাগ করবে। গালিও দিতে পারে। হাসাহাসিও করবে।
যেভাবে আমরা নিজেদের ধ্বংস করার খেলায় মেতে উঠেছি মেরু ভাল্লুকের মত হারিয়ে যাবার সময় হয়ে আসছে আমাদের। জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার করে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ বাড়াচ্ছি আমরা। কার্বনের জন্য গাছ আর প্রাণীদেহের গঠন ভয়ংকর রকম বদলে যাবে আগামী ভবিষ্যতে। অনেক ভয়াল হবে আমাদের আগামী বিবর্তন। আমাদের বায়ুমণ্ডলে জমে থাকবে কার্বন। সেটা দেখেও পরের সভ্য বিজ্ঞানীরা ধরে ফেলবে অতীতে মানুষ নামে বোকা একদল প্রাণী থাকতো এই মিষ্টি গ্রহে।
এখনও সময় আছে আমরা একটু সতর্ক হলে বাঁচতে পারি। হারিয়ে যাওয়া সেই সভ্যদের মত আমাদের পরিণতি না ও হতে পারে।
এমন ও তো হতে পারে অতীতে অনেকবার আমাদের মত সভ্যতা তৈরী হয়েছে। নিজেদের ধ্বংস করেছে বোকামি করে। লক্ষ কোটি বছর ধরে খালি খেলার মাঠের মত পরে থাকতো আমাদের পৃথিবী মা। আবার পাকচক্রে নতুন প্রাণী আসতো। গুহা থেকে যাত্রা করতো ওরা। চাষবাস শিখতো। বোমা বানাত। নিজেদের ধ্বংস করতো। এইভাবেই চলছে এই পৃথিবী। জন্ম।মৃত্যু।আবার জন্ম। আবার মৃত্যু।
আরেকটা কথা। এত কিছুর পরও আমরা প্রমাণ পাইনি অতীতে আমাদের চেয়েও উন্নত কোন সভ্যতা ছিল যারা হারিয়ে গেছে।
তারমানেই এই না, কেউ ছিল না।
হয়তো ছিল। আর তারা ছিল আমাদের চেয়েও চোস্ত। বুদ্ধিমান। সতর্ক। তাদের মগজের কাছে আমরা শিশু মাত্র। তারা হয়তো তাদের সব আবর্জনা পরিষ্কার করে বাতিল এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে দূর কোন মহাশূন্যে। সবাই মিলে। বিচিত্র কোন মহাকাশযান চেপে।
তারা জানেও না। তাদের বাতিল পৃথিবীতে নতুন প্রানের বীজ এসে নতুন সভ্যতা তৈরি হয়েছে।
হতে পারে না এমন ?
Exit mobile version