কিং সোলাইমান এবং ডেমোনলজি (দ্বিতীয় পর্ব)

কিং সোলাইমানের অধীনে বাহাত্তরটি ডেমন ছিল। তিনি এই ডেমনদের দাস হিসেবে ব্যবহার করতেন এবং তাদের দ্বারা
নানা অসাধ্য কাজ সম্পাদন করাতেন। এরা ছিল জ্বীন সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে বিপদজনক এবং ক্ষতিকারক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তীতে এই ডেমনদের হাত থেকে সাধারণ মানুষদের রক্ষা এবং কোন মানুষ যেনো এদের ব্যবহার করে কোন খারাপ কাজ সম্পাদন করতে না পারে তার জন্য, তিনি এই ডেমনদের একটি পিতলের পাত্রে বন্দি করে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলেন। তবে, জানা যায়, পাত্রটি ব্যাবিলনীয়রা আবিষ্কার করেছিল, তারা মনে করেছিল এটিতে গুপ্তধন রয়েছে। যখন তারা পাত্রটির মুখ খুলল, তখন ডেমন এবং তাদের সৈন্যদল মুক্ত হয়ে যায় এবং তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যায়। কিন্তু বেলিয়াল নামে একটি ডেমন থেকে যায়। যিনি একটি ছবিতে প্রবেশ করেছিলেন। যারা তার পূজা বা সাধনা করার মাধ্যমে তাকে সন্তুষ্ট করতে পারতো তিনি তাদের ভবিষ্যৎ বাণী করতেন এবং গুপ্ত-রহস্য জগত সম্পর্কে নানা রকম তথ্য প্রদান করতেন।

লেমেগেটন, যা সোলাইমানের লেজার কী নামে পরিচিত। এটি এমন একটি কিতাব যেখানে এই বাহাত্তরটি ডেমনকে আহবান এবং তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। এই ডেমনদের ব্রাজেন ভেসেলের ডেমনও বলা হয়।

বাহাত্তরটি ডেমন বা প্রেতাত্মা সম্পর্কে লেমেগেটন এবং অন্যান্য বিভিন্ন জাদুর কিতাবে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে । এই বাহাত্তর ডেমনের যেসব নাম দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কিছু প্রাচীন প্যাগান দেব-দেবীর নামের অনুরুপ যেমনঃ”মারকুইস”,”আম্মোন”, “ডিউক” এবং ” অষ্টারোথ বা রাজা বাল”।

প্যাগানদের দেব-দেবীর নামে এসব ডেমনদের সংজ্ঞায়িত করার কিছু কারণ স্কলাররা তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এসব জাদুর কিতাবের লেখকরা অধিকাংশ-ই খ্রিষ্টান স্কলার বা পাদ্রি ছিলেন। আর, সিমেটিক ধর্মের অনুসারী এবং এর স্কলাররা মনে করেন, প্যাগানরা দেব-দেবীর নামে মূলত শয়তান কিংবা খারাপ জ্বীনদের পূজা করতো। উপরন্তু, বাহাত্তরটি ডেমনের মধ্যে কিছু ডেমনের নাম অজানা ছিলো। তাই, এসব গবেষকরা নিছক ধারণার উপর ভিত্তি এবং প্যাগানদের উপর তাদের ভিন্ন দৃষ্টভঙ্গি থেকেই, তারা এসব অজানা ডেমনদের নামের ক্ষেত্রে প্রচীন দেব-দেবীর নাম ব্যবহার করেছিলেন।

এসব দেব-দেবীর মূল ভক্তরা আজ যদি দেখতে পেতো যে, তাদের দেব-দেবী আজ প্রেতাত্মা হিসাবে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে তবে তারা হতবাক হয়ে যেতো । কিছু ক্ষেত্রে এই বিকৃতি এমন পর্যায় চলে গিয়েছে যে, তাদের লিঙ্গও পরিবর্তিত হয়ে গিয়ে ছিলো।

ইউরোপীয় খ্রিষ্টান স্কলাররা পুরোপুরি অজ্ঞানতাবসত শুধুমাত্র ধারণা উপর ভিত্তি এবং বিভিন্ন ডেমনলজিস্টদের মুখের কথার উপর ভিত্তি করে এই বাহাত্তরটি ডেমনের মধ্যে র‌্যাঙ্ক নির্ধারন করেছেন। তবে, এসব ডেমনের কার্যকারিতা এবং এক্সজিসটেন্স নিয়ে কোন স্কলারদের মধ্যে কোন দ্বীমত নেই।