Site icon খিচুড়ি

অন্তরালের ইতিহাস

অ্যালবার্ট পাইক ১৮০৯ সালের ২৯-ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং এপ্রিল-২, ১৮৯১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি একজন আমেরিকান লেখক, কবি, বক্তা, আইনজীবী এবং ফ্রি-ম্যাসনের বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কনফেডারেটেড স্টেট’স আর্মির সিনিয়র অফিসার ছিলেন।

এই ব্যক্তির এতো গুনের মধ্যে সবথেকে বড় হচ্ছে তিনি গুপ্ত গোষ্ঠী ফ্রি-ম্যাসনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। মূলত, তিনি শুধু সদস্য-ই ছিলেন না, ফ্রি-ম্যাসনিক সর্বোচ্চ পদ তিনি অর্জন করেছিলেন। তিনি ৩৩° ডিগ্রি ম্যাসন ছিলেন। তার-ই পরিকল্পনা অনুযায়ী উনিশ শতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং মুসলিম বিশ্বে ইসলামিক জংগীবাদের সূচনা হয়। তার-ই নেতৃত্বে মিশরের আল-আজহার ইউনিভার্সিটি ইলুমিনাতির গুরুত্বপূর্ণ ঘাটিতে রুপান্তরিত হয়েছিলো। এই ইউনিভার্সিটি-তে ইসামাঈলী ফেরকার স্কলাররা ইলুমিনাতির লবি হিসাবে কাজ করতো। বলাবাহুল্য, মিশরের আল-আজহার ইউনিভার্সিটি এখন ফ্রি-ম্যাসন বা ইলুমিনাতির গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি হিসাবে পরিগনিত হয়।

পাইক প্রথম ১৮৪০ সালে “ভ্রাতৃসংঘ ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্ডার অব অড ফিলো”-তে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ম্যাসনিক লজে যোগদান করেন এবং উক্ত সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য হিসাবে কার্য সম্পাদন করতে থাকেন। ১৮৫৯ সালে তিনি স্কটিশ রাইটের দক্ষিণাঞ্চলীয় সার্বভৌম গ্র্যান্ড মাস্টার হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি তার বাকি জীবনের মোট বঁত্রিশ বছর সার্বভৌম গ্র্যান্ড মাস্টার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ১৮৭১ সালে ফ্রিম্যাসনারি-র প্রাচীন এবং স্বীকৃত “স্কটিশ রাইট অব মোরালস এন্ড ডগমা” নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। যার বেশ কয়েকটি সংস্করণ পরবর্তীতে প্রকাশ করা হয়।

আমেরিকাতে পাইক-কে এখনো বিশিষ্ট এবং প্রভাবশালী ফ্রিম্যাসন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পাইকের ভাস্কর্য-ও রয়েছে আমেরিকাতে। স্থানীয় আমেরিকানরা এই ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার জন্য একটা সময় আন্দোলন করেছিলো কিন্তু আমেরিকান সরকার এই ভাস্কর্য না সরানোর ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। এ থেকেই বোঝা যায় আমেরিকান সরকার এবং পার্লামেন্টে ফ্রি-ম্যাসন বা ইলুমিনাতির প্রভাব কতটা দৃঢ়।

পাইক আমাদের আলোচনার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব কারণ, এখন দুনিয়াতে যা কিছু সংগঠিত হচ্ছে বা হবে তা এই স্ব-ঘোষিত শয়তান পূজারিদের এজেন্ডা মোতাবেক। শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। আসলে, আমরা মূলত কিছুই দেখি না বা বুঝি না। বরং, আমাদের যা দেখানো হয় এবং শোনানো হয়, তার-ই একটি ছোট্ট নমুনা তুলে ধরা হলোঃ
অ্যালবার্ট পাইক আগস্ট ১৫, ১৮৭১ সালে একটি চিঠি মাজ্জিনির কাছে প্রেরণ করেন। যেখানে তিনি কিছু ভবিষৎবাণী এবং পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছিলেন। তার, দাবি মতে এসব ভবিষ্যৎবাণী এবং পরিকল্পনার ব্যাপারে তাকে স্বপ্নযোগে লুসিফার অবহিত করেছিলেন।

তার, এই চিঠিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কাদের মাঝে সংগঠিত হবে, কিভাবে হবে এবং যুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীর অবস্থা কি রূপ হবে তা নিয়ে সাম্যক ধারণা প্রদান করা হয়েছিলো। এই চিঠি বৃটিশ মিউজিয়ামে এখনো সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৭৭ সালের আগ অব্দি এ চিঠি সর্ব সাধারণের কাছে প্রদর্শন উম্মুক্ত ছিলো। কিন্তু, বর্তমানে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আসুন দেখা নেয়া যাক তিনি এই চিঠিতে কি লিখেছিলেনঃ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধঃ

রাশিয়ায় ইলুমিনাতির সদস্যদের জারদের ক্ষমতাচ্যুত করার অনুমতি দেয়া হোক৷ এবং, পরবর্তীতে রাশিয়াকে নাস্তিক্যবাদী কমিউনিজমের দূর্গ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ অবশ্যই ঘটাতে হবে। ব্রিটিশ এবং জার্মান সাম্রাজ্যের মধ্যে ইলুমিনাতির এজেন্টদের দ্বারা সৃষ্ট বিভেদগুলি এই যুদ্ধকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যেতে ব্যবহৃত হবে। যুদ্ধ শেষে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা অন্য দেশের সরকার প্রধানদের ধ্বংস করার জন্য এবং প্রচলিত ধর্মগুলোকে দুর্বল করার জন্য ব্যবহৃত হবে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবশ্যই ফ্যাসিবাদী এবং রাজনৈতিক জায়োনিস্টদের মতাদর্শিক পার্থক্য-র সুযোগ নিয়ে প্ররোচিত করতে হবে। এ যুদ্ধ অবশ্যই সংগঠিত করতে হবে যাতে নাৎসিবাদ ধ্বংস হয় এবং রাজনৈতিকভাবে ইহুদিদের ফিলিস্তিনে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দাবী যথেষ্ট শক্তিশালী হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, আন্তর্জাতিকভাবে কমিউনিজমকে শক্তিশালী করতে হবে যাতে খ্রিষ্টান ধর্মের বিস্তৃতিকে ব্যালেন্সড পর্যায়ে রাখা যায়। এবং, তা ততক্ষণ পর্যন্ত-ই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যতক্ষণ আমাদের প্রয়োজন।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটি হবে ইহুদি এবং মুসলিম বিশ্বের নেতাদের মধ্যে ইলুমিনাতির এজেন্টদের দ্বারা সৃষ্ট পার্থক্যের সুযোগ গ্রহণ করে। একে অবশ্যই এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যেন ইসলাম (মুসলিম রাষ্ট্র) এবং ইহুদি ( ইজরায়েল রাষ্ট্র ) একে অপরকে ধ্বংস করে দেয়। এবং অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোও যেন শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে পরে। এক্ষেত্রে আমরা নিহিলিস্ট এবং নাস্তিকদের পক্ষে থাকবো এবং এর মাধ্যমে এক বিশাল সামাজিক বিপর্যয়কে উস্কে দিবো, যা সকল ক্ষেত্রেই নাস্তিকতার নিরঙ্কুশ ভয়াবহতা এবং এর ফলে সৃষ্ট অশান্তির প্রভাব পুরো জাতিকে প্রদর্শন করাবে । যার ফলে সাধারণ জনগণ এই বিপ্লবীদের থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বাধ্য হবে এবং তাদের নির্মূল করবে। সেই সময় খ্রিস্টধর্মের সাথে জড়িত জনতা, দিকহীন হয়ে পরবে। তারা একটি আদর্শের জন্য উদ্বিগ্ন থাকবে কিন্তু কোথায় তারা তা খুঁজে পাবে সে সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান থাকবে না। অবশেষে লুসিফার তাদের মধ্যে সত্য আলোর প্রকাশ ঘটাবে এবং তাদের উদ্বিগ্ন আত্মা তা সহজেই গ্রহণ করবে। এর বহিঃপ্রকাশ সাধারণ প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলনের মাধ্যমে ঘটবে যা ক্রিশ্চিয়ানিটি এবং নাস্তিকতার ধ্বংস ঘটাবে। এবং এরা একই সাথে বিজয়ী এবং নির্মূল হবে।

এবার, পাঠকরা চিঠিতে উল্লেখ্য বক্তব্য গুলোর সাথে পৃথিবীতে সংগঠিত বিশ্বযুদ্ধ গুলোর প্রেক্ষাপটের উপর সাম্যক ধারণা এবং বর্তমান পৃথিবী ঠিক কোন দিকে অগ্রসর হচ্ছে তা নিয়ে একটু চিন্তা করলেই দিনের আলোর মত সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। আসলে, পৃথিবীতে কোন ইতিহাস পূর্ব পরিকল্পনা ব্যতীত তৈরি হয় না, বরং প্রেক্ষাপট, ঘটনার উৎস প্রস্তুত করা হয় ইতিহাস তৈরি করার জন্য।

[su_box title=”বই টই” style=”soft”]
বইঃ অন্তরালের ইতিহাস
প্রকাশনীঃ পেপার ভয়েজার
লেখকঃ কাজি ম্যাক[/su_box]

Exit mobile version