ভাসমান ডিম ডুবে যাওয়া ডিম

এই পরীক্ষার জন্য দুটো ডিম লাগবে। কিসের ডিম ? আরে হাঁস বা মুরগীর যে কোন একটা হলেই হল।
একটা বাউলে কলের সাধারন পানি রেখে যত খুশি ডিম রাখ। দেখবে সব ডিম ডুবে গেছে। কিন্তু লবণ মেশানো পানিতে রাখলে কি ফলাফল অন্য রকম হবে ?
সামান্য লবণ মেশালে ফলাফল কি হতে পারে ?
একটা বড় কাঁচের গ্লাসের অর্ধেকের বেশি ভর্তি করে পানি নাও। আস্তে করে একটা ডিম ছেড়ে দাও ওতে।
স্বাভাবিক ভাবেই সাঁতার না জানা বাচ্চা ছেলের মত ডিমটা ডুবে যাবে।
এবার অন্য একটা গ্লাসের অর্ধেক পানি নাও।
৪ চামচ লবণ নিয়ে ভাল করে মেশাও সেই গ্লাসের পানিতে। এবার গ্লাসের বাকি
অংশটা পানি দিয়ে ভর্তি করে নাও।
দ্বিতীয় ডিমটা এই লবণ মেশানো পানিতে আস্তে করে ছেড়ে দাও। যেন ব্যাথা না পায়।
মানে ডিমটা যেন না ভাঙ্গে।
কি দেখতে পাচ্ছ ? লবণ মেশানো পানিতে ডিমটা ভেসে আছে তাই না ?
কেন এমনটা হল ?
অথচ তুমি তেমন কিছু কায়দা করনি। মাত্র কয়েক চামচ লবণ মিশিয়ে দিয়েছ
সেই পানিতে।
সাধারন পানিতে প্রথম ডিমটা ডুবে যাওয়ার কারন সাধারন পানির চেয়ে
ডিমের ঘনত্ব অনেক বেশি,। বেশি ঘন জিনিস পানিতে ভেসে থাকতে পারে না।
আবার পানিতে লবণ মেশানোর পর পানির ঘনত্ব ডিমের ঘনত্বের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে সেই জন্যই দ্বিতীয় ডিমটা ভেসে উঠেছিল।
এখন তুমি দুম করে আমাকে প্রশ্ন করে বসতে পার যে লবণ না মেশানো পানিতে
রাখার পর ও কিছু কিছু ডিম কেন ভেসে থাকে ?
সুন্দর প্রশ্ন।
যদি সাধারন পানিতেও ডিম ভেসে থাকে তবে বুঝতে হবে ডিমটা ভাল না।
নষ্ট।
আসলে ডিমের ভেতরটা কিন্তু শুধু একদম ঠাসা না। বেশ খানিক ফাপা জায়গা আছে। মানে সামান্য হলেও একটা ডিমের ভেতরে বাতাস আছে।
ডিম যত টাটকা থাকে এর ভেতরে বাতাসের পরিমাণ সবচেয়ে কম থাকে।
সকাল বেলায় মুরগিটা যে ডিম পারল সেটায় একদম বাতাস থাকে না।
ঘণ্টা খানেক পর একটু বাতাস জমে।
ডিমটা ২৫ দিনের মত পুরানো হলে বাতাসের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয়ে যায়।
এর পর একটা সময় এলেই ডিম নষ্ট হয়ে যায়।
তোমরা খেয়াল করে দেখবে ডিম ব্যবসায়ীরা বড় গামলায় পানিতে ডিম ডুবিয়ে ডুবিয়ে পরীক্ষা করে ডিম কতটুকু টাটকা।
আমরা বুঝলাম লবণ পানিতে জিনিস ভাল করে ভেসে থাকতে পারে।
সেই জন্যই দেখা যায় নদীর পানির চেয়ে সমুদ্রের পানিতে জাহাজ ভাল করে ভেসে থাকতে পারে।
এই মুহূর্তে হয়তো মনে প্রশ্ন আসতে পারে একটা বিশাল সাইজের জাহাজ কেন ভেসে
থাকে। আবার পিচ্চি একটা পাথরের টুকরো কেন ডুবে যায় ?
এ কথা মনে রাখবে প্রতিটা তরল পদার্থের ঘনত্ব আলাদা আলাদা।
একটা কাঁচের সরু গ্লাসে শর্ষের তেল, পানি আর কাশির সিরাপ আলাদা করে দেখ।
নানান স্তরে ওরা ভেসে থাকবে।
একটা জিনিস তখনই ভেসে থাকতে পারবে যখন সে সমান ওজনের পানি চাপ দিয়ে সরিয়ে দিতে পারবে।
জাহাজের খোলা এমন ভাবেই তৈরি হয় যাতে সেটা সমান ওজনের পানি দূরে সরিয়ে রাখে। নিজের খলের ভেতরে বিপুল পরিমানের বাতাস ধরে রাখে। পানির চেয়ে জাহাজের ঘনত্ব কমে যায়। তাই জাহাজ ভেসে থাকে।
সাঁতার না জানলে তুমি পুকুরে ডুবে যাবে।
কিন্তু দশ লিটার পানি ধরে অমন একটা খালি গ্যালন ভাল করে বুকে চেপে ধরে
পুকুরে নামলে দেখবে ওটা তোমাকে ভাসিয়ে রেখেছে।
পদার্থ বিদ্যার অনেক জটিল জিনিস সহজ ভাবে শিখে ফেললাম আমরা।