সপ্তম শতাব্দীর গোড়ার দিকে মুসলিম শাসকদের আগমনের সাথে ভারতবর্ষে আবির্ভাব ঘটে ইসলামের। সেই সাথে ভারতবর্ষ পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায় মুসলিম শিল্প ও সংস্কৃতির সাথে। মূলত ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাশিম এর নেতৃত্বে সিন্ধু আক্রমণের মাধ্যমে ভারতবর্ষে মুসলিম যোদ্ধাদের আগমনের সূচনা হয়। এরপর সময়ের সাথে সাথে মুসলিমরা ভারতে রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং কয়েক শতক ধরে ভারতবর্ষ শাসন করে। মুসলিমরাই ভারতে প্রথম বিদেশী শাসক নয়। তাদের পূর্বে ইন্দো-গ্রীক, ইন্দো-পার্থীয়সহ অনেক শাসকদের দ্বারা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশ শাসিত হয়েছে।
মুসলিম পূর্ব সময়ের এসব শাসকেরা ভারতকে রাজনৈতিকভাবে শাসন করেছিল ঠিকই, কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে সনাতনী ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ভারতীয় সংস্কৃতি তার প্রভাবের মাধ্যমে এসব ভিনদেশী শাসকদের সম্পূর্ণ বদলে ভারতীয় করেই গড়ে তুলেছিল। এর কারণ ছিল এ সকল শাসকেরা সুসংজ্ঞায়িত কোনো ধর্মের অনুসারী ছিলেন না। তাই যখনই তারা ভারতের আধ্যাত্মিক আদর্শের সংস্পর্শে এসেছেন, তখনই কোনো দ্বিধা ছাড়াই একে আপন করে নিয়েছেন, হয়ে উঠেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একজন। কিন্তু মুসলিম শাসকদের ক্ষেত্রে এ চিত্র ছিল ভিন্ন ধরনের। যেহেতু ইসলাম সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন, রীতিনীতি এমনকি রাষ্ট্রীয় আইনের সমন্বয়ে গঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তাই মুসলিম শাসকগণ ভারতবর্ষে মুসলিমপূর্ব রাজাদের মতো সনাতন রীতিনীতির প্রভাবে হারিয়ে না গিয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখেন। মুসলিম শাসকরা তাদের আদালত, আমলাতন্ত্র, আইনি ব্যবস্থা, ভাষা, ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিজস্ব শৈলী ও রীতিনীতি বজায় রাখেন।
ভারতবর্ষে কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলিম সালতানাত এবং পরবর্তীতে মুঘলদের শাসনকালের এ সময়টা ছিল অনেক ঘটনাবহুল। ইতিহাস বলে ভিন্ন সংস্কৃতি ধারণ করা একাধিক সম্প্রদায় পাশাপাশি সহাবস্থান করলে তাদের সংস্কৃতিতে যতই পার্থক্য থাকুক না কেন, তারা পারস্পারিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অপরটিকে প্রভাবিত করবেই। একই বিষয় ঘটেছে মুসলিম ও ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও। সনাতন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় পরস্পরের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও চিন্তাধারা আত্মস্থ করতে শুরু করে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে হিন্দু-মুসলিম মিলিত এ সংস্কৃতির প্রভাব অনেক বেশী। চলুন এ সংমিশ্রণের কিছু স্বরূপ দেখে নেয়া যাক।
ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে মুসলিমদের প্রভাব:: স্থানীয় ও ইসলামিক সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হয় স্থানীয় ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে। আমরা আমাদের বাংলা ভাষার দিকে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই প্রচুর পরিমাণ আরবী, ফার্সি ও তুর্কি শব্দ জায়গা করে নিয়েছে আমাদের ভাষায়। অন্য স্থানীয় ভাষাগুলোর ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটেছে। হিন্দী, বাংলা, গুজরাটি, মারাঠি ইত্যাদি ভাষার শব্দসম্ভার সমৃদ্ধ হয়েছে শাসক সম্প্রদায়ের আরবি, ফার্সি ও তুর্কী ভাষা দ্বারা। শুধু শব্দসম্ভারই নয়, স্থানীয় ভাষাগুলোর ব্যাকরণ, অলঙ্কারের ক্ষেত্রেও এ প্রভাব সুস্পষ্ট।
ভাষার পাশাপাশি সাহিত্যে এর প্রভাব আরো ব্যাপক। সেই সময় ভারতের বিভিন্ন ভাষার মহান সাহিত্যকর্মগুলোগুলো অনুদিত হয়েছে শাসকদের ভাষায়। এর মধ্যে ছিল অর্থ ভেদ, রামায়ণ, মহাভারতের মতো গ্রন্থগুলো। প্রভাবিত হয়েছিল মুসলিম সাহিত্যও। এ সময় আরব্যরজনীর উপন্যাসে সিনবাদের উপাখ্যান যুক্ত করা হয় যা ছিল আংশিকভাবে ভারতীয় উৎস থেকে উদ্ভূত। তৎকালীন দাপ্তরিক ভাষা ফার্সি থাকায় ভারতবর্ষের ইতিহাস তখন ফার্সিতেই লেখা হয়েছিলো। সেই গ্রন্থগুলো এখনো ইতিহাসের অমূল্য উৎস হয়ে আছে। এছাড়া সেই সময়কার অধিকাংশ শাসকই সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। তারা পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে সাহিত্যে অবদান রেখেছিলেন। তখনকার ভারতীয় কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সুন্দর দাস, চিন্তামনি, কবীন্দ্র আচার্য, জগন্নাথ ত্রিপাঠী প্রমূখ। এছাড়া আমির খসরু, আমির হাসান, দেহলভী প্রমুখ ফার্সি কবিরাও এ সময়েই তাদের অমর কীর্তিগুলো লিপিবদ্ধ করেন। তবে লেখালেখি এক নতুন মাত্রা পেয়েছিল মুঘল আমলে এসে। আবুল ফজল, নিজামুদ্দিন আহমাদের মতো কাহিনীকারদের পাশাপাশি তখন কলম ধরেছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর ও গুলবদন বেগমের মত রাজপরিবারের সদস্যরাও।
উর্দু ভাষার উৎপত্তিঃ
ভারতে মুসলমান ও সনাতন সংস্কৃতির সংমিশ্রণের একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে উর্দু ভাষার জন্ম। তখনকার সময়ে রাজপুত এবং মুসলমান সৈন্যরা সম্রাজ্যের হয়ে একসাথে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিতেন। রাজপুতদের ভাষা ছিল হিন্দী, অন্যদিকে মুসলমান সৈন্যদের ভাষা ছিল প্রধানত তুর্কী ও ফার্সি। এছাড়া সাম্রাজ্যের দাপ্তরিক ভাষাও ছিল ফার্সি। বছরের পর বছর ধরে এ ভাষাগুলোর মধ্যে নিয়মিত মিথস্ক্রিয়ার ফলে জন্ম নেয় উর্দু। যুদ্ধের ক্যাম্পে উৎপত্তি বলে একে তখন ‘ক্যাম্পের ভাষা’ বলা হত। এ ভাষার লেখার পদ্ধতি অনেকটা ফার্সির মতো, আর অনেকাংশে মিল আছে হিন্দীর সাথে। ব্রিটিশ শাসনামলে এসে এ ভাষার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। একসময় এটিকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়া হয়। তখন থেকে এটি ভারতবর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাষা।
স্থাপত্যশিল্পে মুসলিম শৈলীর প্রভাব:: মুসলিম শাসকদের অধিকাংশই স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাই মুসলমান শাসনামলে ভারতবর্ষের স্থাপত্য শিল্পে উল্লেখযোগ্য অর্জন পরিলক্ষিত হয়। তারা ভারতকে পরিচিত করেন ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীর সাথে। ভারতের স্থাপত্যে স্থান পায় গোলাকার গম্বুজ, খিলান, সুউচ্চ মিনার, খোলা আঙ্গিনা, বিশাল দেয়াল। কিন্তু এ স্থাপত্যগুলো তৈরী করা হয়েছিল ভারতীয় হিন্দু কারিগরদের দ্বারা, ফলে এক্ষেত্রে ইসলামিক ও সনাতনী শৈলীর সংমিশ্রণ ঘটে। এ মিথস্ক্রিয়ার ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের শিল্পধারার জন্ম হয়। জন্ম হয় ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীর।
সালতানাতের সময়ে স্থাপত্য (১২০৬ থেকে ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দ)
কুতুব মিনারঃ
এ সময় কেন্দ্রীয়ভাবে সম্রাটের অধীনে দিল্লী ও তার আশেপাশে অনেক উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নির্মিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য হচ্ছে কুতুব মিনার। ৭৩ মিটার উঁচু এ মিনারটি ভারতের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার। এটি তৈরী শুরু করেছিলেন কুতুব উদ্দিন আইবেক। কিন্তু তিনি কেবলমাত্র এর ভিত্তিই তৈরী করেছিলেন। পরবর্তীতে ইলতুতমিশ এবং তারও পরে ফিরোজ শাহ তুঘলক এর কাজ সম্পন্ন করেন। তাই এ মিনারেই আইবেক থেকে তুঘলক এর সময় পর্যন্ত স্থাপত্যশৈলীর বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এ মিনারটির প্রথম তিনটি তলা তৈরী করা হয় লাল বেলেপাথর দিয়ে। আর পরবর্তী দুটি মার্বেল পাথর ও বেলে পাথর এর সমন্বয়ে।এছাড়া এ সময়ে নির্মিত উল্লেখযোগ্য কিছু স্থাপত্যকর্ম হলো কুওয়াত-উল-আলম মসজিদ, কালী মসজিদ, বেগমপুরি মসজিদ ইত্যাদি।
সালতানাতের পতনের পর প্রাদেশিক শাসনকর্তাগণ নিজ নিজ প্রদেশে স্থাপত্য নির্মাণে মনোযোগী হন। এসব স্থাপত্যকর্মে বিভিন্ন প্রদেশের স্বাতন্ত্র্য ফুটে ওঠে যা ছিল দিল্লীর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এ সময় বিভিন্ন প্রদেশে নির্মিত স্থাপত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ
১। শাহ রুকনে আলমের সমাধি, পাঞ্জাব
২। বাংলার আদিনা মসজিদ, ছোট সোনা মসজিদ ও বড় সোনা মসজিদ।
৩। জামে মসজিদ, আহমদ শাহের সমাধি, গুজরাট
৪। জাহাজ মহল, আশরাফি মহল, হোশঙ্গ সাহের সমাধি, মালওয়া
মুঘল শাসনামলে স্থাপত্য শিল্প (১৫২৬ থেকে ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দ)
এ সময়টাকে ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের স্বর্ণযুগ বলা যায়। শাসকদের শিল্পের প্রতি গভীর অনুরাগ ও এ খাতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ের ফলে স্থাপত্যশিল্প এ সময় সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করে। মুঘল আমলে জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ, সুতনু গম্বুজ, সরু স্তম্ভ সজ্জিত সদর দরজাগুলো ছিল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। এগুলোতে ফুটে উঠেছে পার্সিয়ান ও ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর সংশ্লেষণ, ইসলামিক কাঠামো ও সনাতনী সজ্জার অপূর্ব সংমিশ্রণ। এ সময়ের প্রখ্যাত মুঘল স্থাপত্যগুলো হচ্ছেঃ
১। দিল্লীর পুরানা কেল্লা
২। সাসারামে শের সাহের সমাধি
৩। ফতেহপুর সিক্রি
৪। সম্রাট আকবরের সমাধি, সিকান্দারা।
৫। বাদশাহ হুমায়ুনের সমাধি, দিল্লী।
৬। দিল্লী জামে মসজিদ।
৭। দিল্লী এবং আগ্রার লাল দুর্গ।
৮। আগ্রার তাজ মহল ইত্যাদি।
বাদশা হুমায়ুনের সমাধি।
একই বিষয় ঘটছিল মুদ্রার অপর পিঠেও। ষোড়শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে হিন্দু ভবনগুলোতেও দেখা যায় মুঘল স্থাপত্যের ছাপ। অ্যাম্বার এর রোমান্টিক শহর, বিকানের প্রাসাদ, যোধপুর এবং অর্চনার দুর্গ এই শৈলীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
চিত্রকলায় মুঘলদের প্রভাব
চিত্রকলা প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরা মূর্তি এবং চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্য বহন করতো। তবে মুঘল শাসনামলে ভারতের চিত্রকলায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়। এটি শুরু হয় বাদশাহ হুমায়ুনের সময়কাল থেকে। তিনি চিত্রকলার একজন বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। সেসময়ে মুঘল চিত্রকরদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মীর সৈয়দ আলী, দোস্ত মোহাম্মদ, মনসুর, আবুল হাসান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
তখনকার চিত্রকলার বিষয়বস্তুও বেশ বৈচিত্রময় ছিল। তখনকার উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মগুলো হলঃ
১। রাযম-নামা (মহাভারতের ফারসি অনুবাদের ভিত্তিতে রচিত),
২। হামজা-নামা ( মুহাম্মদের(সাঃ) চাচা আমির হামজা (রাঃ) এর গল্প),
৩। তুরিক-ই-আলফি (ইসলামের প্রথম হাজার বছর গল্প)
৪। পাদশাহনামা (আদালত অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনা) ।
তখনকার সময়ে ভারতের পেইন্টিং স্কুলগুলোতে চিত্রকলা শেখার পদ্ধতিও মুঘলদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বদলে যায়। এভাবে এক্ষেত্রেও দুই সম্প্রদায়ের মিথস্ক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় অনন্য এক ধারার।
সঙ্গীত এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে মুসলমান সংস্কৃতির প্রভাবঃ
বীণা।
মুসলমান শাসকদের সঙ্গীতের প্রতিও অনুরাগ ছিল। তাদের শাসনকালে সংমিশ্রণ ঘটে ইসলামিক ও ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের মধ্যে। এর একটি উদাহরণ হলো ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র বীণা ও ইরানিয়ান যন্ত্র তাম্বুরার সমন্বয়ে সৃষ্ট বাদ্যযন্ত্র সেতার। এছাড়া ভিন্ন স্বাদের মুসলিম শ্রোতাদের মুগ্ধ করার জন্য পরিবর্তন আসে ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাগ, রাগিনীতে। ঠুমরি, খেয়াল, রাগ ধ্রুপদ ইত্যাদি যুক্ত হওয়ায় ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত আরো শ্রুতিমধুর হয়ে ওঠে।
এছাড়া ভারতে শখ এবং সৌন্দর্যের বশে বাগান করার সংস্কৃতিও চালু করেন মুঘলরা। মুঘল শাসকরা শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই ছিলেন না, তারা দৈনন্দিন জীবনের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যও বাগান করতেন। তাদের অনিন্দ্যসুন্দর বাগানগুলো উন্মুক্ত থাকো দর্শনার্থীদের জন্যও। মুঘলদের প্রভাবে ভারতে আরো অনেক ধরনের শিল্পের উদ্ভব ঘটে। সোনার সাথে অন্যান্য মূল্যবান মুক্তার পাথর যোগ করে বিভিন্ন নকশার গয়না তৈরীর শিল্প পূর্ণতা পায় এ সময়। পোষাকের উপর এমব্রয়ডারির মাধ্যমে বিভিন্ন নকশা করা, বিভিন্ন দেয়াল বা পাথরে ইত্যাদিতে নকশা অঙ্কন করার শিল্পের উদ্ভবও হয় এসময়।
এভাবেই শতকের পর শতক ধরে সহাবস্থানের ফলে ভারতীয় সংস্কৃতির পরতে পরতে মিশে গেছে মুসলিম সংস্কৃতি। ভাষা, সাহিত্য, স্থাপত্য, চিত্রকলা বা সংগীত শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রই ঋদ্ধ হয়েছে মুসলিম ও ইসলামিক সংস্কৃতির দ্বারা। তাই শতকের পর শতক ধরে বহমান এ মিথস্ক্রিয়ার ফলে ইসলামিক সংস্কৃতি আর ভারতের কাছে বিজেতার বা বিদেশী সংস্কৃতি নয়। এটি ভারতের প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িয়ে থাকা নিজস্ব একটি সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে।