একটি গতকাল রাতের গল্প

কাল প্রচন্ড গরমে ঘুম ভাঙ্গলো। ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে এত গরম পড়ার কারণ কি বুঝতে পারছিনা। ক্লাইমেটের আচরন কি উল্টে যাচ্ছে?
লাইট জ্বাললাম। এইবারে ব্যাপার কিছুটা ক্লিয়ার। সন্ধ্যায় জ্বর জ্বর লাগছিলো; রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ায় গরমটা টের পেয়েছি। শার্ট খুলবো, তার আগে একটা দৃশ্য দেখে মোটামুটি চমকে গেলাম। চেয়ারে পা তুলে কফির মগ হাতে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!

আমাকে তাকাতে দেখে বললেন, শার্ট খুলে ফেলো বাছা। ঘাম না শুকালে সর্দি লাগবে।
আমার চমক দ্রুত কেটে যায়। এবারেও কেটে গেলো।

–স্যার আপনি এখানে?
রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,
–আমাকে স্যার ডাকিওনা, স্যার ডাকে এলার্জি!
–কি ডাকবো তাহলে? গুরুজ্বী?
–রবিদা ডাকতে পারো…
–কবিগুরু রবিদা? নাকি রবিগুরু কবিদা? কোনটা ডাকলে খুশি হবেন? নাকি ওস্তাদ ডাকবো? এই ডাকে খাঁটি দেশীয় ফিল পাবেন…

রবীন্দ্রনাথ আবারও দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমার বিটলামীতে মনে হয় সামান্য বিরক্ত!

–Anyway my boy, তোমার বাসার কফিটা বেশ ভালো, খেয়ে মজা পাচ্ছি, একটু ঠান্ডা লেগেছিলো।
–কবিদা আপনি বাংলিশে এবং চলিত তে কথা বলছেন, এইটা কিন্তু সময়ের দাবী ছিলো!
–একটা ফেসবুক খুলে দিবা? ইদানীং ভাল্লাগেনা রোগে পেয়েছে। শুনেছি ফেসবুক নাকি সমস্যার সমাধান দেয়!?
–সে খুলে দিবো, বাট আপনার মেজাজ খারাপ হবে ফেসবুকে ঢুকলে।
–কেনো?
–ওখানে পাবলিক নিজের মনে করে আপনার গল্প কবিতার চব্বিশটা বাজিয়ে দেয়!
–I see…

রবীন্দ্রনাথের মুখটা বিমর্ষ। কেন কে জানে, দেখে মনে হয় গলায় কবিতার খাতা আটকে গেছে। গরম কফিও সেটা গলাতে পারেনি…
–তা কবিদা, এত রাতে আমার রুমে পদধূলি দিচ্ছেন যে? কাহিনী কি?
–মনটা একটু বিমর্ষ হইয়াছে, তোমার সাথে গল্প করিবার মানসে আসিয়াছি।
উনি আবার সাধুতে ব্যাক করেছেন। এইটা ভালো লক্ষণ।

–আমার সাথে গল্প করলে মন ভালো হবে গুরুজ্বী?
–লোকে তো তাহাই বলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমি নাকি লোকদিগকে হাসাইয়া মারো?
–হাসাই, মারি না। তবে ওটা সোশ্যাল মিডিয়াতেই, বাস্তবে আমি তো জোকার না, চেহারাও জোকার টাইপ না, বাস্তবে আমি বেশ ম্যাচিউরড; দেখতেই পাচ্ছেন…

রবিগুরু কবিদা হকচকিয়ে গেলেন। উনার সামনে কেউ নিজের প্রশংসা করবে এটা মনে হয় তিনি আশা করেন নি। বড় বড় লেখক কবিরা ভাবেন, তাদের সামনে সকলে তাদেরকেই প্রশংসায় ভাসাবে!

কবিদাকে হকচকিয়ে দিয়ে ভালো লাগছে।
–মন খারাপের কারণটা খুলে বলুন কবিদা, দেখি সমাধান করা যায় কিনা।

রবীন্দ্রনাথ পায়ের উপর পা তুলে আবার বসলেন। খেয়াল করলাম উনি কোয়ার্টার প্যান্টের সাথে স্নিকার পরেছেন। দেখতে ভালো লাগছে।
–আসলে বৎস, হইয়াছে কি। স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসিয়া ছিলাম। এক ললনার প্রবেশ ঘটিলো। তাহার রুপ দেখিয়া আমার মাথা ঘুরাইয়া গেলো। আমি আগ্রহের সহিত তাহার দিকে তাকাইয়া গলা খাকারি দিলাম। কিন্তু সে ফিরিয়া চাইলোনা। নানানভাবে তাহার দৃষ্টি আকর্ষনের তাগিদে উৎকীলপনা করিয়া চলিলাম।
–উৎকীলপনা কি?
–হইবে কিছু একটা। ধরিয়া নাও, কবিরা যাহা বলেন তাহারই ভাবার্থ থাকে। ভেবে ভেবে ভাবার্থ বাহির করো।
–তারপর?
–একটা ঘন্টা ললনা বসিয়া রহিলো। একবারও ফিরিয়া চাইলোনা। তাহার জন্য কবিতা লিখিতে চেষ্টা করিলাম;

“একাকি বালিকার চুল ওড়ে বাতাসে
আমি বসিয়া রই কার পানে হুতাশে!”
–শীতের দিনে রুমের মধ্যে চুল ওড়ে ক্যামনে বাতাসে?
–জানিনে বাছা,
‘মনে যাহা আসে তাই
আমি হুদাই বলিয়া যাই!’
-বালিকা পটিলো না। সেই থেকে আমার মন খারাপ।

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের মন খারাপ। সেই মন ভালো করতে হবে আমাকে! টাফ খুব টাফ। কূলকিনারা না পেয়ে বললাম:
–ওস্তাদ চলেন ছাদে যাই।
–ওস্তাদ?
–জ্বি, চলেন…
–ছাদে যাইয়া করিবোটা কি? এমনিতেই ফ্যাতফ্যাতে ঠান্ডা লাগিয়াছে!
–ফ্যাতফ্যাতে ঠান্ডা কি জিনিস?
–ঠান্ডা লাগিবার পর নাক দিয়া গড়াইয়া পড়া সর্দি টানিয়া লইবার শব্দ হচ্ছে ফ্যাত; বারবার টানার কারণে ফ্যাত ফ্যাত শব্দ হইয়া নাম হইয়াছে ফ্যাতফ্যাতে ঠান্ডা। তা ছাদে যাইয়া কি করিবো বলিলা না?
–চাঁদ উড়াবো, চাঁদ উড়াইসেন কখনো?
–নাহ নাহ, উহা কিভাবে উড়ায়? উহা তো আকাশেই উড়িয়া থাকে তাইনা?

রবীন্দ্রনাথকে চাঁদ উড়ানো শেখাতে ছাদে নিয়ে গেলাম। নাটাই আছে একটা সেটাও নিলাম। নাটাইয়ে সুতা নাই। অবশ্য সুতা লাগেনা চাঁদ উড়াতে।
আকাশে চাঁদ নাই। কয়েকটা তারা আছে। চাঁদ উড়ানো গেলোনা বলে মনে হয় রবীন্দ্রনাথ খুশিই হয়েছেন। খুকখুক করে কাশছিলেন। ছাদে বেশিক্ষন থাকলে কাশিটা বাড়তে পারে…